
Economics Short Questions and Answers-3
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের বিশেষ অনুশীলনী
ব্যষ্টিগত অর্থবিজ্ঞান (Microeconomics)
Economics Short Questions and Answers Part 3
প্রশ্ন ১। উপযোগ কাকে বলে ? অথবা, উপযোগিতার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। কোন দ্রব্যের যদি এমন ক্ষমতা থাকে যার সাহায্যে অভাব মোচন করা যায়, তবে সেই দ্রব্যের অভাব মোচন করার ক্ষমতাকে উপযোগ বলে। ভোক্তার কাছে কোনও দ্রব্যের উপযোগ না থাকলে ভোক্তা সেই দ্রব্য ক্রয় করবে না ।
প্রশ্ন ২। উপযোগ কি পরিমাপযোগ্য ?
উত্তর। উপযোগ পরিমাপযোগ্য নয়।
প্রশ্ন ৩। মোট উপযোগ ও প্রান্তিক উপযোগের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর। মোট উপযোগ যতই বাড়তে থাকে, প্রান্তিক উপযোগ ততই কমতে থাকে, যখন মোট উপযোগ সর্বাধিক হয়, তখন প্রান্তিক উপযোগ সর্বনিম্ন হয়।
প্রশ্ন ৪। ব্যবহার–মূল্য ও বিনিময়–মূল্যের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর। যে কোন দ্রব্য ব্যবহার করলেই তার একটি ব্যবহার–মূল্য থাকে ;যেমন নদীর জল। স্বাধীন দ্রব্য (free goods) ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহার–মূল্য বাবদ অর্থ প্রদান করতে হয় না। কিন্তু যদি দ্রব্যের জোগান সীমিত থাকে অথচ তারজন্য চাহিদা থাকে তবে সেই দ্রব্য ব্যবহার করার জন্য বিনিময়ে অর্থ প্রদান করতে হয় ; এটাকে বলা হয়–বিনিময়–মূল্য।
প্রশ্ন ৫। মোট উপযোগ যখন সর্বাধিক হয় তখন প্রান্তিক উপযোগ কত হয় ?
উত্তর। মোট উপযোগ সর্বাধিক হলে প্রান্তিক উপযোগ শূন্য হয়।
প্রশ্ন ৬। প্রান্তিক উপযোগ কাকে বলে?
উত্তর। প্রান্তিক উপযোগকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—
MU =ΔTUΔX
অর্থাৎ, মোট উপযোগ এর পরিবর্তনদ্রব্যের একক এর পরিবর্তন
কোন দ্রব্যের অতিরিক্ত এক ইউনিট ক্রয় করলে অন্যান্য অবস্থা স্থির (other things remaining constant) ধরে নিয়ে মোট উপযোগ যতটা পরিবর্তিত হয় ততটাই হল প্রান্তিক উপযোগ ।
প্রশ্ন ৭। ভারসাম্য দাম বলতে কী বোঝ ?
উত্তর। যে দামে বাজারে কোনও পণ্যের চাহিদা তার জোগানের সমান হয় সেই দাম হল ভারসাম্য দাম।
প্রশ্ন ৮। পরিমাণবাচক উপযোগ (Cardinal utility) এবং স্তরবাচক উপযোগের (Ordinal utility) বিশ্লেষণের মধ্যে পার্থক্য কর।
উত্তর। পরিমাণবাচক উপযোগ তত্ত্বের মূল কথা হল ভোক্তার উপযোগ পরিমাপযোগ্য ; অর্থাৎ, উপযোগের হ্রাস–বৃদ্ধি সংখ্যাগতভাবে পরিমাপ করা যায়। অপরদিকে স্তরবাচক উপযোগ তত্ত্বের মূল কথা হল, উপযোগ পরিমাপযোগ্য নয়। উপযোগ হল একটি মানসিক অনুভূতি (Psychological Phenomenon), এটা পরিমাপযোগ্য নয়।
প্রশ্ন ৯। ফার্মের উৎপাদন–বন্ধের বিন্দু বলতে কী বোঝ?
উত্তর। যে বিন্দুতে দাম গড় পরিবর্তনীয় ব্যয়ের সমান হয় সেই বিন্দুকে বলা হয় উৎপাদন বন্ধের বিন্দু। কারণ, দাম গড় পরিবর্তনীয় বায়ের চেয়ে কম হলে উৎপাদকের ক্ষতি হবে এবং তখন উৎপাদক উৎপাদন বন্ধ করে দেবে।
প্রশ্ন ১০। একটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের গড় স্থির ব্যয় রেখা তুমি কীরূপে অঙ্কন করবে ?
উত্তর। একটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের গড় স্থির ব্যয় রেখা হল নিম্নরূপ,
১নং চিত্রে AFC রেখা হল গড় স্থির উৎপাদন ব্যয় রেখা ।
প্রশ্ন ১১। সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক চাহিদা রেখার আকৃতি কীরূপ? চিত্রের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর। ২নং চিত্রে AR রেখা হল সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক চাহিদা রেখা। চাহিদা সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক হলে চাহিদা রেখা অনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল একটি সরলরেখা হয়।
প্রশ্ন ১২। দাম স্থির থাকলে মোট আয় রেখার আকৃতি কীরূপ হয় ?
উত্তর। দাম স্থির থাকলে মোট বিক্রয়লব্ধ আয় রেখা তার মূলবিন্দু থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে একটি সরলরেখা হিসাবে অঙ্কিত হয় ;৩নং চিত্রে এটা দেখানো হয়েছে। এই চিত্রে TR রেখা হল মোট আয় রেখা। TR রেখার ঢাল (slope) থেকে দেখানো যায় যে দাম স্থির আছে।
প্রশ্ন ১৩। জোগান রেখা ডানদিকে সরে গেলে ভারসাম্য মূল্য বাড়বে না কমবে?
উত্তর। জোগান রেখা ডানদিকে সরে গেলে ভারসাম্য মূল্য কমবে।
প্রশ্ন ১৪। ভেবলেন প্রভাব কী?
উত্তর। ভেবলেনের (Veblen) মতে অনেক সময় ক্রেতার অস্বাভাবিক বা দৃষ্টি আকর্ষক | (conspicuous) আচরণ থেকে দেখা যায় যে কোনও দ্রব্যের দাম বেশি হলেও তার জন্য | চাহিদা বেশি হয়। অর্থবিজ্ঞানী ভেবলেনের (Veblen) নাম অনুসারে এটাকে বলা হয় ‘ভেবলেন প্রভাব’।
প্রশ্ন ১৫। ভোক্তার ভারসাম্যের শর্তগুলির বিবৃতি দাও যখন বাজারে দুটি মাত্র দ্রব্য আছে।
উত্তর ৷ যখন বাজারে দুটি মাত্র দ্রব্য থাকে তখন এই দুটি দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ ও দামের অনুপাত সমান হলে ভোক্তার ভারসাম্য অর্জিত হয়। যদি বাজারে a এবং b দুটি দ্রব্য থাকে,
তবে ভোক্তার ভারসাম্যের শর্ত হল, MuaPa=MubPb
এখানে Mu এবং P যথাক্রমে সংশ্লিষ্ট দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ ও দাম বোঝাচ্ছে।
প্রশ্ন ১৬। যে কোনও দুই ধরনের ব্যবসায় সংগঠনের নাম লেখ ।
উত্তর। অংশীদারি কারবার এবং যৌথ মূলধনি কারবার হল দুই ধরনের ব্যবসায় সংগঠন।
প্রশ্ন ১৭। ব্যষ্টিগত ও সমষ্টিগত অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর। যখন কোন ফার্ম অথবা কোন ক্রেতাকে কেন্দ্র করে অথবা নির্দিষ্ট কোন শিল্প বা কোন ইউনিটকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা হয়, তখন তাকে বলা হয় ব্যষ্টিগত অর্থনীতি। আবার যখন সামগ্রিকভাবে জাতীয় আয়, মুদ্রাস্ফীতি অথবা অর্থনীতির কোন সমস্যা মিক নিয়ে আলোচনা করা হয় তখন তাকে বলা হয় সমষ্টিগত অর্থনীতি।
প্রশ্ন ১৮। প্রান্তিক উপযোগ এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর। মার্শালের মতে, দাম = প্রান্তিক উপযোগ।
প্রশ্ন ১৯। চাহিদা নির্ধারক যে কোনও দুটি বিষয় উল্লেখ কর।
উত্তর। (১) আয়ের পরিবর্তন এবং (২) উপযোগের পরিবর্তন হলে চাহিদার পরিবর্তন হয়।
প্রশ্ন ২০। গিফেন দ্রব্য কী?
উত্তর। যদি অন্যান্য বিষয়সমূহ অপরিবর্তিত থাকাকালে কোন দ্রব্যের দাম বেড়ে গেলেও সেই দ্রব্যের জন্য চাহিদা বেড়ে যায় অথবা দাম কমে গেলেও তার ক্রয়ের পরিমাণ কমে যায়, তবে সেই দ্রব্যকে (রবার্ট গিফেনের নাম অনুযায়ী) গিফেন দ্রব্য বলা হয়।
প্রশ্ন ২১। একটি স্বাভাবিক দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা রেখার আকৃতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর। চাহিদা রেখা নিম্নাভিমুখী আকৃতির হয়। দাম কমে গেলে কোনও দ্রব্যের জন্য চাহিদা বেড়ে যায়। ৪নং চিত্রে দাম OP থেকে OP, এবং OP, পর্যন্ত কমে গেলে চাহিদার পরিমাণ OA থেকে যথাক্রমে OB এবং OC পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
প্রশ্ন ২২। ‘নিকৃষ্ট‘ দ্রব্য কাকে বলে?
উত্তর। যখন কোন দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম কমে গেলেও চাহিদা বাড়ে না, (যেমন, বাজারে পচা মাছ) তখন সেই দ্রব্যকে ‘নিকৃষ্ট’ দ্রব্য বলা হয়।
প্রশ্ন ২৩। সমস্ত নিকৃষ্ট দ্রব্যই কি চাহিদার সূত্র পালন করে?
উত্তর। না।
প্রশ্ন ২৪। চাহিদা রেখার ঢাল বলতে কী বোঝ?
উত্তর। চাহিদা রেখার ঢাল হল ΔPΔQ; নিম্নাভিমুখী চাহিদা রেখার যে কোন একটি বিন্দুতে একটি স্পর্শক (tangent) অঙ্কন করলে তার ভিত্তিতে ΔPΔQ; বা দাম পরিবর্তন ও চাহিদার পরিবর্তনের অনুপাত নির্ধারণ করে চাহিদা রেখার ঢাল নির্ধারণ করা যায়।
প্রশ্ন ২৫। চাহিদার মূল্য–স্থিতিস্থাপকতার সংজ্ঞা প্রদান কর। অথবা, চাহিদার দামগত স্থিতিস্থাপকতা কী?
উত্তর। চাহিদার মূল্য–স্থিতিস্থাপকতা হল,
ep = –ΔQQΔPP অথবা, ep = – ΔQQ . PΔP =ΔQΔP . PQ
আবার চাহিদার মূল্য–স্থিতিস্থাপকতা = – চাহিদার শতকরা পরিবর্তনমূল্যের শতকরা পরিবর্তন
প্রশ্ন ২৬। চাহিদার মূল্য–স্থিতিস্থাপকতা = ১ বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর। চাহিদার মূল্য স্থিতিস্থাপকতা = ১ বলতে বোঝায় যে হারে দামের পরিবর্তন হবে, সে হারেই চাহিদার পরিবর্তন হবে। যদি কোন দ্রব্যের দাম ৫ শতাংশ হারে হ্রাস পায়, তবে সেই দ্রব্যের জন্য চাহিদা ৫ শতাংশ হারে বাড়বে।
গশ্ন ২৭। চাহিদা রেখার ঢাল এবং চাহিদার মূল্য স্থিতিস্থাপকতার মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর। চাহিদা রেখার ঢাল (ΔPΔQ) হল চাহিদার মূল্য স্থিতিস্থাপকতার প্রথম অংশটির বিপরীত (reciprocal of the first term of Price elasticity of demand)।
অর্থাৎ, ΔQΔP এর বিপরীত।
সুতরাং চাহিদার মূল্য–স্থিতিস্থাপকতা হল ep=ΔQΔP . PQ
প্রশ্ন ২৮। উৎপাদনের কয়টি উপাদান ও কী কী?
উত্তর। উৎপাদনের চারটি উপাদান। যথা—জমি, শ্রম, মূলধন এবং সংগঠন বা ব্যবস্থাপনা ।
প্রশ্ন ২৯। চাহিদার চাপ–স্থিতিস্থাপকতার সংজ্ঞা কী?
উত্তর। চাহিদার চাপ স্থিতিস্থাপকতা:
(Arc Elasticity of Demand) = Q0 − Q1Q0 + Q1 ÷ P0 − P1P0 + P1
=Q0 − Q1P0 − P1 × P0 + P1Q0 + Q1
এখানে P এবং Q যথাক্রমে দাম এবং ক্রয়ের পরিমাণ বোঝাচ্ছে।
প্রশ্ন ৩০। চাহিদার আয়গত স্থিতিস্থাপকতার সংজ্ঞা প্রদান কর।
উত্তর। চাহিদার আয়গত স্থিতিস্থাপকতা = চাহিদার শতকরা পরিবর্তনআয়ের শতকরা পরিবর্তন
প্রশ্ন ৩১। ভোগ্যদ্রব্য এবং মূলধন দ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।
উত্তর। যে–সব দ্রব্য একবার ব্যবহার করলে তার সাহায্যে অন্য কোনও দ্রব্য উৎপাদিত হয় না, সেটা হল ভোগ্যদ্রব্য। আবার যে–সব দ্রব্যের সাহায্যে অন্য দ্রব্য উৎপাদন করা যায়, অর্থাৎ, যে–সব দ্রব্য অন্য দ্রব্য উৎপাদনের উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়, সে–সব দ্রব্য হল মূলধন দ্রব্য।
প্রশ্ন ৩২। অস্বাভাবিক চাহিদা রেখা কখন পরিলক্ষিত হয় ?
উত্তর। ‘গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক চাহিদা রেখা পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে দাম বেড়ে গেলে চাহিদা বাড়ে এবং দাম কমে গেলে চাহিদা কমে।৫নং চিত্রে এটা দেখানো হল।
এক্ষেত্রে চাহিদা–রেখা ধনাত্মক এবং ঊর্ধ্বমুখী।
প্রশ্ন ৩৩। সম–ব্যয় রেখা কাকে বলে ?
উত্তর। যে কোন সম–ব্যয় রেখার দ্বারা দুটি উপাদানের সমন্বয়ে একটি নির্দিষ্ট আর্থিক বরাদ্দ বাঁ একটি নির্দিষ্ট উৎপাদন ব্যয় (a given amount of money expenditure) বঝায়।
প্রশ্ন ৩৪। কোন দ্রব্যের চাহিদা ও পরিবর্ত দ্রব্যের মধ্যে কী সম্পর্ক?
উত্তর। অন্যান্য জিনিস অপরিবর্তিত ধরে নিলে পরিবর্ত দ্রব্যের দাম কমলে কোন দ্রব্যের চাহিদা কমে (চায়ের দাম কমলে কফির চাহিদা কমতে পারে) এবং পরিবর্ত দ্রব্যের দাম বাড়লে
কোন দ্রব্যের চাহিদা বাড়ে।
প্রশ্ন ৩৫। কোন দ্রব্যের চাহিদা এবং তার পরিপূরক দ্রব্যের দামের মধ্যে সম্পর্ক কীরূপ?
উত্তর। অন্যান্য জিনিস অপরিবর্তিত থাকলে পরিপূরক দ্রব্যের দাম কমে গেলে কোন দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ বেড়ে যায় (যেমন চায়ের দাম কমে গেলে চায়ের চাহিদা বাড়ে বলে চিনির চাহিদা ও বেড়ে যায়) এবং পরিপূরক দ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে সেই দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ কমে যায়।
প্রশ্ন ৩৬। অর্থবিদ্যায় ‘চাহিদা‘র সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। অর্থবিদ্যায় ‘চাহিদা‘ বলতে বোঝায় কোন দ্রব্যের জন্য ক্রেতার আকাঙ্ক্ষা থাকবে এবং সেটি ক্রয় করার জন্য ক্রয়শক্তিও থাকবে।
প্রশ্ন ৩৭। সম–উৎপাদন রেখার বক্রতা দেখাও।
উত্তর। সম–উৎপাদন রেখার বক্রতা হল – ΔKΔL সম–উৎপাদন রেখার উপর একটি স্পর্শক টানলে শ্রম ও মূলধনের মধ্যে প্রান্তিক বিনিময় হার নির্ধারণ করা যায়। এটাই হল সম– উৎপাদন রেখার ঢাল বা বক্রতা।
অর্থাৎ , –ΔKΔL = MRSLK
প্রশ্ন ৩৮। উৎপাদনে ‘ঊর্ধ্বতম প্রাচীর‘ ও ‘নিম্নতম প্রাচীর‘ কথাটির তাৎপর্য কী?
উত্তর। সপ্তম অধ্যায়ের ৭.৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দেখ ।
প্রশ্ন ৩৯। উৎপাদনের গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর। উৎপাদনের গড় ব্যয় বাড়লে প্রান্তিক ব্যয় বাড়ে; গড় ব্যয় স্থির থাকলে প্রান্তিক ব্যয় স্থির থাকে এবং গড় ব্যয় কমলে প্রান্তিক ব্যয় তার কম থাকে।
প্রশ্ন ৪০। উৎপাদন মাত্রা এবং উৎপাদনের নিয়মের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
উত্তর। যখন উৎপাদনে ব্যবহৃত সবগুলি উপাদান সমান অনুপাতে পরিবর্তিত হয় তখন উৎপাদনের যে পরিবর্তন হয় তাকে বলা হয় উৎপাদনের মাত্রাগত প্রতিদান (Returns to Scale) । ‘ অপরদিকে উৎপাদনের বিভিন্ন নিয়ম (Laws of Production) কার্যকর হয় যখন মূলধন (অথবা জমি) স্থির রেখে কোন পরিবর্তনশীল উপাদানের (যেমন শ্রম) পরিবর্তন করা হয়।
প্রশ্ন ৪১। শ্রমের জোগান কী কী উপাদানের উপর নির্ভরশীল?
উত্তর। শ্রমের জোগান নিম্নলিখিত উপাদানের উপর নির্ভরশীল : (১) দেশের কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যা, (২) ট্রেড ইউনিয়নের প্রভাব, (৩) বিকল্প কাজের জন্য শ্রমিকদের আকর্ষণ, (৪) প্রকৃত মজুরি, (৫) কার্য সময়, (৬) শ্রমের দক্ষতা, (৭) মজুরি বৃদ্ধির আয়–প্রভাব এবং পরিবর্ত প্রভাব।
প্রশ্ন ৪২। প্রান্তিক আয় কাকে বলে?
উত্তর। ফার্ম যখন মোট বিক্রির উপর একটি অতিরিক্ত ইউনিট বিক্রি করে তখন অতিরিক্ত ইউনিট বিক্রি থেকে যে অতিরিক্ত আয় হয় সেটাই হল প্রান্তিক আয় ।
অর্থাৎ MR = ΔRΔQ
এক্ষেত্রে MR হল প্রান্তিক আয়। ∆R হল অতিরিক্ত বিক্রয়লব্ধ আয় এবং ∆Q হল অতিরিক্ত পরিমাণ ।
প্রশ্ন ৪৩। স্বল্পকালীন গড় ব্যয় রেখা এবং দীর্ঘকালীন গড় ব্যয় রেখার আকৃতির মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
উত্তর। স্বল্পকালীন গড় খরচ রেখা ইংরাজি U আকৃতিসম্পন্ন হয়। সময় যত দীর্ঘ হতে থাকে, গড় ব্যয় রেখার খাড়া ভাবটা (steepness) কমতে থাকে এবং দীর্ঘকালে গড় ব্যয় রেখা কম মাত্রায় U আকৃতিসম্পন্ন হয়। দীর্ঘকালীন গড় ব্যয় রেখার মধ্যে কয়েকটি স্বল্পকালীন গড় ব্যয় রেখা অন্তর্ভুক্ত থাকে। ৬নং চিত্রে এটা দেখানো হয়েছে।
প্রশ্ন ৪৪। রেখাচিত্রের গড় উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে প্রান্তিক উৎপাদন ব্যয়ের সম্পর্ক
উত্তর। গড় উৎপাদন ব্যয় স্থির থাকলে প্রান্তিক উৎপাদন ব্যয় স্থির থাকে। গড় উৎপাদন ব্যয় বাড়লে প্রান্তিক উৎপাদন ব্যয় বাড়ে এবং গড় উৎপাদন ব্যয় কমলে প্রান্তিক উৎপাদন ব্যয় কমে। নিম্নের চিত্রগুলিতে গড় ব্যয় এবং প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। এই চিত্রগুলিতে AC হল গড় উৎপাদন ব্যয় এবং MC হল প্রান্তিক উৎপাদন ব্যয়। ৭নং চিত্রে গড় উৎপাদন ব্যয় স্থির, প্রান্তিক উৎপাদনও স্থির।
চিত্র নং ৮–এ গড় উৎপাদন ব্যয় কমছে, প্রান্তিক উৎপাদন ব্যয়ও কমছে। চিত্র নং ৯–এ গড় উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, প্রান্তিক উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে। চিত্র নং ১০–এ একটি U আকৃতির উৎপাদন ব্যয় রেখার সঙ্গে প্রান্তিক ব্যয় রেখার সম্পর্ক দেখানো হয়েছে।
প্রশ্ন ৪৫। স্বল্পকালীন গড় ব্যয় রেখার কোন্ অংশে গড় ব্যয় (SAC) এবং প্রান্তিক ব্যয় (SMC) পরস্পর সমান ?
উত্তর। স্বল্পকালীন গড় ব্যয় রেখার সর্বনিম্ন অংশে গড় ব্যয় (SAC) এবং প্রান্তিক ব্যয় (SMC) পরস্পর সমান। চিত্র নং ১০–এ M বিন্দুতে এটা দেখানো হয়েছে।
প্রশ্ন ৪৬। চাহিদা রেখার পরিবর্তনের কারণগুলি কী কী ?
উত্তর। চাহিদা রেখা ডানদিকে সরে যাবার কারণ হল চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং বাঁদিকে সরে যাবার কারণ হল চাহিদা কমে যাওয়া।
প্রশ্ন ৪৭। উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষক বলতে কী বোঝ?
উত্তর। উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষক (Cost Function) উৎপাদন অপেক্ষকের থেকে উদ্ভূত হয়। উৎপাদন ব্যয় অনেক উপাদানের উপর নির্ভরশীল। সংক্ষেপে দীর্ঘকালীন উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষককে এভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে : C = f(X, T, Pf)
স্বল্পকালীন উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষককে এভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে : C = f(X, T, Pf,K)
এখানে C = মোট ব্যয় বা মোট খরচ (Total Cost), X = উৎপাদন (Output),T = প্রযুক্তি(Technology), Pf=উপাদানসমূহের মূল্য (Factor Price) এবং K = নির্দিষ্ট বা স্থির উপাদান
প্রযুক্তি কীভাবে মোট ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রযুক্তি বিভিন্ন উপাদানের ব্যবহৃত পরিমাণ (Physical quantities of factor input), বিভিন্ন উপাদানের ব্যবহৃত পরিমাণের গুণাগুণ (Quality of the factor input), উদ্যোক্তাদের কারিগরি ও অর্থনৈতিক কর্মদক্ষতা প্রভৃতিকে প্রভাবিত করে।
কিন্তু উৎপাদন ব্যয় তত্ত্বে মোট উৎপাদন ব্যয় নিরূপণ করার ক্ষেত্রে আমরা শুধু স্থির ব্যয় (Fixed cost বা Overhead cost) এবং পরিবর্তনশীল ব্যয় (Variable cost) বিবেচনা করি ।
প্রশ্ন ৪৮। স্থির খরচ এবং পরিবর্তনশীল খরচের মধ্যে পার্থক্য কর?
প্রশ্ন ৪৯। ফার্মের স্থির ব্যয়ের মধ্যে কী কী ব্যয় অন্তর্ভুক্ত হয় ?
প্রশ্ন ৫০। প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে স্থির ব্যয় ধরা হয় না কেন ?
উত্তর। প্রান্তিক ব্যয় হল পরিবর্তনশীল। একটি অতিরিক্ত ইউনিট উৎপাদন করলে যে বাড়তি ব্যয় হয়, তা–ই হল প্রান্তিক ব্যয়। স্থির ব্যয় সর্বদাই স্থির থাকে। সেজন্য একটি অতিরিক্ত ইউনিট উৎপাদন করলে বাড়তি স্থির ব্যয়ের প্রশ্ন আসে না। এজন্য প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে স্থির ব্যয় ধরা হয় না।
প্রশ্ন ৫১। জোগান অপেক্ষক কাকে বলে ?
উত্তর। জোগান অপেক্ষক এভাবে লেখা যেতে পারে–
Sx = f(Px) অর্থাৎ, x – এর জোগান x – এর দামের উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে Sx, হল নির্ভরশীল বা সাপেক্ষ রাশি (dependent variable) এবং Px, হল স্বাধীন রাশি (independent variable)।
প্রশ্ন ৫২। ‘জোগান‘ কথাটির অর্থ কী ?
উত্তর। জোগান = উৎপাদনের পরিমাণ + বর্তমান মজুতের সঙ্গে সংযোজিত পণ্যসামগ্রী
(Supply = Production + Addition of Stock)
প্রশ্ন ৫৩। জোগান রেখা ডানদিকে সরে যাবার অর্থ কী ?
উত্তর। জোগান রেখা ডানদিকে সরে যাবার অর্থ হল জোগান বেড়ে যাওয়া।
প্রশ্ন ৫৪। জোগানের স্থিতিস্থাপকতার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। জোগানের স্থিতিস্থাপকতা = জোগানের শতকরা পরিবর্তনদামের শতকরা পরিবর্তন
eS= ΔQQ ÷ ΔPP অথবা eS = ΔQΔP × PQ
প্রশ্ন ৫৫। উল্লম্ব জোগান রেখার অর্থ কী?
উত্তর। উল্লম্ব জোগান রেখার অর্থ হল জোগান স্থির এবং সম্পূর্ণভাবে অস্থিতিস্থাপক।
প্রশ্ন ৫৬। নিম্নলিখিত উক্তিগুলি ঠিক না ভুল ?
(ক) গড় ব্যয় রেখা যদি প্রান্তিক ব্যয় রেখার উপরে থাকে, তবে প্রান্তিক ব্যয় রেখা নিম্নগামী হবে।
(খ) গড় ব্যয় রেখা ঊর্ধ্বগামী হলে প্রান্তিক ব্যয় রেখা তার উপরে থাকে।
উত্তর। উক্তিগুলি সঠিক।
প্রশ্ন ৫৭। একচেটিয়া কারবারে দাম প্রান্তিক আয় অপেক্ষা বেশি হয় কেন?
উত্তর। একচেটিয়া কারবারে দাম এমন একটি স্থানে নির্ধারিত হয় যেখানে চাহিদার মূল্য স্থিতিস্থাপকতা একক অপেক্ষা বেশি, একচেটিয়া কারবারে প্রান্তিক আয় রেখা গড় বিক্রয়লব্ধ আয় রেখার নীচে থাকে। সেজন্য যখন একচেটিয়া কারবারে দাম গড় বিক্রয়লব্ধ আয় রেখার এমন একটি স্থানে নির্ধারিত হয় যেখানে মূল্য স্থিতিস্থাপকতা এককের চেয়ে বেশি হয়, তখন দাম (বা গড় বিক্রয়লব্ধ আয়) প্রান্তিক আয় অপেক্ষা বেশি থাকে।
প্রশ্ন ৫৮। যদি কোন দ্রব্যের চাহিদা স্থির থাকে অথচ জোগান বেড়ে যায় তবে দামের উপর কী প্রতিক্রিয়া হবে?
উত্তর। কোন দ্রব্যের চাহিদা স্থির থাকলে যদি তার জোগান বেড়ে যায় তবে সেই দ্রব্যের দাম কমে যাবে।
প্রশ্ন ৫৯। জোগান রেখার ঢাল ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক কোটি হবে?
উত্তর। জোগান রেখার ঢাল ধনাত্মক বা ইতিবাচক হয় ।
প্রশ্ন ৬০। চাহিদার পারস্পরিক স্থিতিস্থাপকতা বা ক্রম স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে?
উত্তর। চাহিদার পারস্পরিক স্থিতিস্থাপকতা (Cross elasticity of demand) হল একটি দ্রব্যের দাম পরিবর্তনের হার এবং তার ফলে অপর একটি দ্রব্যের চাহিদার পরিবর্তনের হারের অনুপাত ।
চাহিদার পারস্পরিক স্থিতিস্থাপকতা = ΔQxΔPy
অর্থাৎ,X দ্রব্যের চাহিদার শতকরা পরিবর্তনY দ্রব্যের দামের শতকরা পরিবর্তন
প্রশ্ন ৬১। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একটি ফার্ম বা শিল্প–প্রতিষ্ঠানের জোগান রেখা কাকে বলে?
উত্তর। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রান্তিক ব্যয় রেখার যতটুকু অংশ সংশ্লিষ্ট শিল্প– প্রতিষ্ঠানের বা ফার্মের উৎপাদন বন্ধের বিন্দু অথবা shut down point-এর (অর্থাৎ যে বিন্দুতে দাম = গড় পরিবর্তনশীল ব্যয় বা Price = AVC) উপর থাকে, সেই অংশটুকু হল সেই ফার্ম বা শিল্প–প্রতিষ্ঠানের জোগান রেখা।
প্রশ্ন ৬২। একচেটিয়া বাজারে ফার্মের জোগান রেখা অঙ্কন করা যায় কি?
উত্তর। একচেটিয়া বাজারে ফার্মের জোগান রেখা অঙ্কন করা যায় না।
প্রশ্ন ৬৩। অর্থ ব্যবস্থার দুটি মৌলিক সমস্যা উল্লেখ কর।
উত্তর। অর্থ ব্যবস্থার দুটি মৌলিক সমস্যা হল, – (ক) কী কী দ্রব্য উৎপাদিত হচ্ছে এবং কত পরিমাণে হচ্ছে; এই প্রশ্নটি সম্পদের বণ্টন ও তার বিকল্প ব্যবহারের (allocation of scarce resources and their alternative uses) সঙ্গে জড়িত। এই মৌলিক সমস্যাটি মূল্যতত্ত্বের (Theory of price) সঙ্গে সম্পর্কিত। (খ) কী কী পদ্ধতিতে এই দ্রব্যগুলি উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদন পদ্ধতির নির্বাচন (choice of the technique of production) অর্থব্যবস্থার আরেকটি মৌলিক সমস্যা।
প্রশ্ন ৬৪। একচেটিয়া কারবারে চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা কিরূপ হয়,—অসীম, অথবা অথবা একক অথবা এককের চেয়ে বেশি অথবা এককের চেয়ে কম ?
উত্তর। একচেটিয়া কারবারে চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা এককের চেয়ে বেশি হয়।
প্রশ্ন ৬৫। যখন মোট বিক্রয়লব্ধ আয় সর্বাধিক হয়, তখন প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় কিরূপ হয় ?
উত্তর। যখন মোট বিক্রয়লব্ধ আয় সর্বাধিক হয়, তখন প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় শূন্য হয়।
প্রশ্ন ৬৬। যখন চাহিদার মূল্য স্থিতিস্থাপকতা একক হয় তখন প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় কৃত হয় ?
উত্তর। যখন চাহিদার মূল্য স্থিতিস্থাপকতা একক হয়, তখন প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় শূন্য হয়।
প্রশ্ন ৬৭। কোন জিনিসের চাহিদা স্থিতিস্থাপক, তার দাম কমলে বিক্রয়লব্ধ আয়ের কিরূপ পরিবর্তন হবে ?
উত্তর। কোনো জিনিসের চাহিদা স্থিতিস্থাপক, তার দাম কমলে বিক্রয়লব্ধ আয় বেশি হারে বেড়ে যাবে।
প্রশ্ন ৬৮। নিম্নলিখিত উক্তিগুলি কি ঠিক ?
(ক) প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে স্থির ব্যয় অন্তর্ভুক্ত হয় না।
(খ) দীর্ঘকালে সব ব্যয়ই পরিবর্তনশীল ব্যয়।
উত্তর। উক্তিগুলি সঠিক।
প্রশ্ন ৬৯। গড় বিক্রয়লব্ধ আয় এবং প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয়ের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর। গড় বিক্রয়লব্ধ আয় স্থির থাকলে প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় তার সমান থাকে। গড় বিক্রয়লব্ধ আয় বাড়লে প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় বাড়ে এবং গড় বিক্রয়লব্ধ আয় কমলে প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় তার চেয়ে কম থাকে।
প্রশ্ন ৭০। “পূর্ণ প্রতিযোগিতায় উৎপাদন সংস্থার গড় পরিবর্তনশীল ব্যয় রেখার উপরে প্রান্তিক ব্যয় রেখাটির আকৃতি উৎপাদন সংস্থার জোগান রেখার আকৃতির অনুরূপ”—একথা কি সত্য ?
উত্তর। একথা সত্য যদি উৎপাদন সংস্থার প্রান্তিক ব্যয় রেখাটি যে বিন্দুতে দাম ও গড় পরিবর্তনশীল ব্যয়ের সমান হয় তার উপরে থাকে।
প্রশ্ন ৭১। দ্রব্য ও অপদ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য কী ?
উত্তর। দ্রব্য (commodity) হল একটি পণ্য যেটা ব্যবসা–বাণিজ্যে উৎপাদক উৎপাদন করে অথবা বিক্রি করে এবং ক্রেতা ক্রয় করে। অর্থাৎ, একটি পণ্যকে কেন্দ্র করেই ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। দ্রব্য অথবা পণ্য অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে জড়িত। দ্রব্যটি অর্থনৈতিক দ্রব্য (economic good) হিসাবেই বিবেচিত হয়। এটা উৎপাদন করার জন্য অথবা ক্রয় করার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়।
অপরদিকে অপদ্রব্য অথবা দ্রব্য নয় (discommodity) এমন জিনিস হল যেটা অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ অথবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত,—যেমন, বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা (service) । পরিষেবা একটি স্থাবর দ্রব্য অথবা পণ্য নয়,—অথচ পরিষেবা ব্যবসা–বাণিজ্য, অর্থনৈতিক লেনদেন এবং আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত।
প্রশ্ন ৭২। ফার্মের ভারসাম্য বলতে কী বোঝায় ? অথবা, প্রতিযোগিতার বাজারে ফার্মের ভারসাম্যের শর্ত কি?
উত্তর। ফার্মের ভারসাম্য অর্জিত হয় তখনই যখন (১) প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় প্রান্তিক ব্যয়ের সমান হয় এবং (২) প্রান্তিক ব্যয় রেখা নীচের দিক থেকে এসে প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় রেখাকে ছেদ করে। ফার্মের ভারসাম্য অর্জিত হলে ফার্মের মুনাফা সর্বাধিক হয়।
প্রশ্ন ৭৩। শিল্পের ভারসাম্য বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর। শিল্পের ভারসাম্য দুটি শর্তের উপর নির্ভরশীল। প্রথমত, শিল্পের অন্তর্ভুক্ত সব ফার্ম ভারসাম্য অর্জন করবে অর্থাৎ সব ফার্মের ক্ষেত্রে প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় প্রান্তিক ব্যয়ের সমান হবে এবং প্রান্তিক ব্যয় রেখা নীচের দিক থেকে এসে প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় রেখাকে ছেদ করবে। দ্বিতীয়ত, সব ফার্ম স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করবে অর্থাৎ সব ফার্মের ক্ষেত্রে দাম গড় উৎপাদন ব্যয়ের সমান হবে।
প্রশ্ন ৭৪। “দীর্ঘকালে সব ব্যয়ই পরিবর্তনশীল ব্যয়” – কেন?
উত্তর। দীর্ঘকালে উৎপাদকের কাছে স্থির ব্যয় (fixed cost) এবং পরিবর্তনশীল ব্যয়ের (variable cost) পার্থক্য প্রাসঙ্গিক নয়। যে ব্যয় স্বল্পকালীন দাম নির্ণয় করার সময় ‘স্থির‘ বলে বিবেচিত হয়, সেই ব্যয়ই দীর্ঘকালীন দাম নির্ধারণে প্রাথমিক ব্যয় হিসাবে বিবেচিত হয়। দীর্ঘকালে উৎপাদনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সব ব্যয়–ই পরিবর্তনশীল ব্যয় হিসাবে বিবেচিত হয়। কারণ, উৎপাদককে দাম নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে মোট ব্যয় বিবেচনা করতে হয়।
প্রশ্ন ৭৫। যুক্ত চাহিদা কাকে বলে ?
উত্তর। যখন একটি দ্রব্য ব্যবহারের জন্য অপর একটি দ্রব্যের প্রয়োজন হয়, তখন এই দুটি দ্রব্যের জন্য চাহিদাকে বলা হয় যুক্ত চাহিদা।
প্রশ্ন ৭৬। যুক্ত জোগান কাকে বলে?
উত্তর। যখন একই ব্যয়ে একাধিক দ্রব্য উৎপাদিত হয় এবং একটির জোগান অপরটির জোগানের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত থাকে তখন সেগুলিকে যুক্ত জোগান বা যুক্ত ব্যয়ের দ্রব্য বলা হয়।
প্রশ্ন ৭৭। সংমিশ্রিত চাহিদা কাকে বলে?
উত্তর। যখন একই দ্রব্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় (যেমন, বিদ্যুৎ) এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারের জন্য যখন তার চাহিদা পরিলক্ষিত হয় তখন তাকে বলা হয় সংমিশ্রিত চাহিদা।
প্রশ্ন ৭৮। সংমিশ্রিত জোগান কাকে বলে ?
উত্তর। যখন একাধিক দ্রব্যের দ্বারা কোনো একটি অভাব পূরণ করা যায় (যেমন চিনি বা গুড়ের দ্বারা মিষ্টির অভাব) তখন একাধিক দ্রব্যের সংমিশ্রিত জোগান পরিলক্ষিত হয়।
প্রশ্ন ৭৯। পূর্ণ প্রতিযোগিতায় প্রান্তিক ব্যয় ও দামের মধ্যে কী সম্পর্ক ?
উত্তর। পূর্ণ প্রতিযোগিতায় প্রান্তিক ব্যয় দামের সমান।
প্রশ্ন ৮০। অলিগোপলি বাজার কাকে বলে ?
উত্তর। যদি বাজারে দু‘জনের বেশি অথচ খুব অল্পসংখ্যক বিক্রেতা থাকে এবং তারা পারস্পরিক রেষারেষিতে লিপ্ত থাকে [ অনেক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যোগসাজশে (collusion) হতে পারে ] তবে সেই বাজারকে অলিগোপলি বাজার বলা হয়।
প্রশ্ন ৮১। একচেটিয়া কারবারে প্রান্তিক ব্যয় ও দামের মধ্যে কী সম্পর্ক?
উত্তর। একচেটিয়া কারবারে দাম প্রান্তিক ব্যয় অপেক্ষা বেশি।
প্রশ্ন ৮২। একচেটিয়া কারবারির ভারসাম্য কখন অর্জিত হয়?
উত্তর। যখন একচেটিয়া কারবারির প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় ও প্রান্তিক ব্যয় সমান হয় এবং গাম্ভিক ব্যয় রেখা নীচের দিক থেকে এসে প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় রেখাকে ছেদ করে তখন একচেটিয়া কারবারির ভারসাম্য অজির্ত হয়।
প্রশ্ন ৮৩। নিম্নলিখিত উক্তিগুলি ঠিক না ভুল?
(ক) একচেটিয়া কারবারির ক্ষেত্রে প্রান্তিক ব্যয় দামের সমান নয়।
(খ) একচেটিয়া কারবারির সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের একটি মাত্র শর্ত:
প্রান্তিক আয় = প্রান্তিক ব্যয়।
উত্তর। প্রথম উক্তিটি ঠিক। (খ) যদিও একচেটিয়া কারবারে প্রান্তিক আয় = প্রান্তিক ব্যয়। সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের আরেকটি শর্ত হল, প্রান্তিক ব্যয় রেখা প্রান্তিক আয় রেখাকে নীচের দিক থেকে এসে ছেদ করবে। সুতরাং প্রান্তিক আয় = প্রান্তিক ব্যয় শুধু এটাই একটিমাত্র শর্ত নয়।
প্রশ্ন ৮৪। অর্থনৈতিক খাজনা ও বিকল্প আয়ের মধ্যে তফাৎ কী?
উত্তর। অর্থনৈতিক খাজনা হল একটি পার্থক্যমূলক উদ্বৃত্ত ; উপ–প্রান্তিক জমি প্রান্তিক জমি অপেক্ষা যে উদ্বৃত্ত লাভ করে সেটাই হল উপ–প্রান্তিক জমির খাজনা। কোন জমিতে নির্দিষ্ট ফসলের বিকল্প অপর একটি ফসল উৎপাদিত হলে যতটা আয় পাওয়া যায় তবে ততটাই হল বিকল্প আয় ।
প্রশ্ন ৮৫। একচেটিয়া বাজারে দামের তারতম্য কখন হওয়া সম্ভব?
উত্তর। যদি একচেটিয়া বাজারে অল্প দামের বাজার থেকে বেশি দামের বাজারে অথবা বেশি দামের বাজার থেকে অল্প দামের বাজারে পণ্য স্থানান্তরিত না হয়, অর্থাৎ যদি পণ্যের পুনঃবিক্রয় না হয়, তবে একচেটিয়া কারবারির পক্ষে দামের তারতম্য করা সম্ভব।
প্রশ্ন ৮৬। একচেটিয়া ক্ষমতার মাত্রা পরিমাপ করার লার্নার সূচি কী ?
উত্তর। একচেটিয়া ক্ষমতার মাত্রা পরিমাপ করার লার্নার সূচিটি হল,
একচেটিয়া ক্ষমতার মাত্রা =দাম–প্রান্তিক খরচদাম
প্রশ্ন ৮৭। একচেটিয়া বাজারে দামের তারতম্য কখন লাভজনক হয় ?
উত্তর। একচেটিয়া বিক্রেতার পক্ষে বিভিন্ন ক্রেতার মধ্যে দামের তারতম্য করা তখনই লাভজনক হয় যখন বাজারে ক্রেতাদের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা বিভিন্ন হয়।
প্রশ্ন ৮৮। বিভেদমূলক একচেটিয়া কারবার বা ‘দাম পৃথকীকরণ‘ কাকে বলে?
উত্তর। যখন একচেটিয়া কারবারি বিভিন্ন ক্রেতার কাছ থেকে বিভিন্ন দাম আদায় করে তখন তাকে বলা হয় বিভেদমূলক একচেটিয়া কারবার বা দামের পৃথকীকরণ।
প্রশ্ন ৮৯। পূর্ণ প্রতিযোগিতায় একটি ফার্মের মোট বিক্রয়লব্ধ অর্থ (Total Revenue) রেখার আকৃতি কী? এই আকৃতির কারণ বল ।
উত্তর। পূর্ণ প্রতিযোগিতায় একটি ফার্মের মোট বিক্রয়লব্ধ আয় রেখা তার মূলবিন্দু থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে একটি সরলরেখা হিসাবে অঙ্কিত হয়। এর কারণ হল, পূর্ণ প্রতিযোগিতায় গড় বিক্রয়লব্ধ আয় স্থির থাকে বলে মোট বিক্রয়লব্ধ আয়ের ক্ষেত্রে দাম ও বিক্রয়ের পরিমাণের একটি সমানুপাতিক সম্পর্ক থাকে।
প্রশ্ন ৯০। উৎপাদনের উপাদানের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতার অর্থ কী?
উত্তর। অন্যান্য জিনিস অপরিবর্তিত আছে ধরে নিয়ে কোন উপাদানের একক পরিমাণ বাড়ালে উৎপাদনের যে পরিবর্তন হয় তাকে বলা হয় প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা। অর্থাৎ,
শ্রমের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা = Δ Total ProductΔ Labour = Δমোট উৎপাদনΔশ্রম
প্রশ্ন ৯১। রিকার্ডোর তত্ত্বে চাষের প্রান্তিক জমির কোন খাজনা অছে কি?
উত্তর। রিকার্ডোর তত্ত্বে চাষের প্রান্তিক জমির কোন খাজনা নেই।
প্রশ্ন ৯২। আধা–খাজনা কাকে বলে ? অথবা, প্রায়–খাজনা কাকে বলে ?
উত্তর। কোনো উপাদানের জোগান যদি স্বল্প সময়ে স্থির থাকে, তবে তা থেকে যে আয় হয় সেটি অনেকটা খাজনার অনুরূপ বলে তাকে আধা–খাজনা বলা হয়। স্বল্পকালে সেই উপাদান কর্তৃক সৃষ্ট সামগ্রীর জন্য চাহিদা বেড়ে গেলেও কিছুতেই সমান অনুপাতে উপাদানের জোগান বাড়ানো সম্ভব হয় না। সেজন্য উৎপাদক এক্ষেত্রে কিছু পরিমাণ উদ্বৃত্ত আয় অর্জন করে। এটা খাজনার অনুরূপ বলেই এটাকে প্রায়–খাজনা বলা হয়।
প্রশ্ন ৯৩। বাড়ির জমির খাজনা কি দামকে প্রভাবিত করে?
উত্তর। বাড়ির জমির খাজনা দামকে প্রভাবিত করে।
প্রশ্ন ৯৪। রিকার্ডোর তত্ত্বে খাজনা কি দামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর। রিকার্ডোর তত্ত্ব অনুযায়ী খাজনা দামের মধ্যে প্রবেশ করে না।
প্রশ্ন ৯৫। শ্রমিক সংঘের মজুরি বাড়ানোর ক্ষমতা নির্ধারণকারী যে–কোনো দুটি বিষয় উল্লেখ কর । উত্তর। (১) যদি শ্রমিকদের জন্য মালিকের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হয় তবে শ্রমিক সংঘ মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টি ক‘রে মজুরি বাড়ানোর ক্ষমতা থাকে। (২) শ্রমিকসংঘ কতটা প্রতিনিধিমূলক, অর্থাৎ যদি শিল্পে একাধিক শ্রমিক সংঘের পরিবর্তে একটিই প্রতিনিধিত্বমূলক শ্রমিক সংঘ থাকে, তবে আন্দোলনের হুমকি অথবা অন্যভাবে চাপ সৃষ্টি ক’রে শ্রমিক সংঘের মজুরি বাড়ানোর ক্ষমতা নির্ভর করে।
প্রশ্ন ৯৬। আর্থিক মজুরি ও প্রকৃত মজুরির মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর। শ্রমিককে তার কাজের দাম বাবদ দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক বেতনের যে টাকা দেওয়া হয় তা হল আর্থিক মজুরি। প্রকৃত মজুরি নির্ভর করে আর্থিক মজুরি ও দাম স্তরের অনুপাতের উপর।
প্রকৃত মজুরি (Real Wages) =আর্থিক মজুরি (W)দামস্তর (P)
প্রশ্ন ৯৭। স্থানান্তর আয় কাকে বলে ?
উত্তর। জমির বিকল্প আয় বা স্থানান্তর আয় : আধুনিক খাজনা তত্ত্বের প্রাক্–সিদ্ধান্ত রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্বের থেকে আলাদা। রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্বে ধরে নেওয়া হয়েছে যে নির্দিষ্ট ও সীমিত জমিতে শুধু একটি দ্রব্য উৎপাদিত হয়। কিন্তু আধুনিক খাজনা তত্ত্বে জমিতে শুধু একটি দ্রব্যই উৎপাদিত হয় না; জমির বিকল্প ব্যবহার হতে পারে। অর্থাৎ, জমির জোগানের স্থিতিস্থাপকতা থাকতে পারে। আধুনিক অর্থনীতিবিদদের মতে জমির বিকল্প আয়ের ভিত্তিতে খাজনা তত্ত্ব আলোচনা করা যেতে পারে। একটি উদাহরণের সাহায্যে এটি বোঝানো যেতে পারে। ধরা যাক, একটি জমিতে ধান এবং পাট উভয়ই উৎপাদন করা যায়। জমির মালিক যদি ধান উৎপাদন করে, তবে আয় হয় ৫০ টাকা, আর যদি সে পাট উৎপাদন করে, তবে আয় হয় ৪০ টাকা। এই ব্যবস্থায় যদি কোনো কৃষক পাট উৎপাদন করার জন্য এই জমিতে চাষ করতে চায়, তবে জমির মালিককে ১০ টাকা দিয়ে জমিটি চাষের জন্য আনতে হবে। কারণ পাট উৎপাদন না করে ধান উৎপাদন করলে জমির মালিক আরও ১০ টাকা বেশি পেত। এই ১০ টাকা হচ্ছে জমিতে পাট উৎপাদনহেতু জমির মালিকের অতিরিক্ত হস্তান্তর আয় অথবা স্থানান্তর আয় (transfer earning) এবং কৃষকের সুযোগ ব্যয় (transfer cost or opportunity cost)। কোনো জমিতে একটি ফসল উৎপাদন করার সময় বিকল্প আয় থেকে যতটা উদ্বৃত্ত (Excess over transfer earning) পাওয়া যায়, ততটাই হচ্ছে খাজনা। উপরের উদাহরণ অনুযায়ী ধান উৎপাদন করার সময় বিকল্প আয়ের উপর ১০ টাকা উদ্বৃত্ত পাওয়া যায়, এটিই হচ্ছে জমির মালিকের খাজনা। এই যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রান্তিক জমিকে খাজনা দিতে হতে পারে যদি এই জমি থেকে প্রাপ্ত আয় তার বিকল্প আয় অপেক্ষা বেশি হয়। প্রান্তিক জমির ক্ষেত্রে ফসলের যে দাম নির্ধারিত হবে, তার মধ্যে ফার্ম বিকল্প ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। কোনো বিশেষ শিল্পের দিক থেকে বিকল্প আয়ের উপর উদ্বৃত্ত কত হবে সেটি জমির বিকল্প ব্যয়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সমস্ত শিল্পের দিক থেকে যেটি খাজনা সেটি ফার্মগুলির উৎপাদন ব্যয়ের একটি অত্যাবশ্যক অংশ সুতরাং এক্ষেত্রে খাজনা দামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন ৯৮। প্রান্তিক দ্রব্য উৎপাদন ও প্রান্তিক আয় উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্য কী ?
উত্তর। চতুর্দশ অধ্যায়ে (১৪.৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে) প্রান্তিক উৎপাদন (Marginal Product) এবং প্রান্তিক আয় উৎপাদন (Marginal Revenue Product)-এর পার্থক্য দেখ।
প্রশ্ন ৯৯। উপাদানের চাহিদাকে উদ্ভুত চাহিদা বলা হয় কেন ?
উত্তর। উপাদানের চাহিদাকে উদ্ভূত চাহিদা (Derived demand) বলা হয় এজন্য যে কোন উপাদানের চাহিদা নির্ভর করে কোনো একটি দ্রব্যের জন্য চাহিদা থাকলে সেই দ্রব্যটি উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংশ্লিষ্ট উপাদানের পরিমাণের উপর।
প্রশ্ন ১০০। কী কী উদ্দেশ্যে মানুষ নগদ অর্থের চাহিদা করে ?
উত্তর। নগদ টাকার জন্য মানুষের চাহিদা তিনটি উদ্দেশ্যের উপর নির্ভরশীল। যথা— (১) ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য নগদ টাকার সংস্থান রাখা (Precautionary motive);
(২) ভবিষ্যতে অর্থের লেনদেন করার জন্য টাকার সংস্থান রাখা (Transaction motive) এবং
(৩) ফাটকা কারবার করার জন্য টাকার সংস্থান রাখা (Speculative motive) ।
প্রশ্ন ১০১। শ্রমিক সংঘের প্রধান উদ্দেশ্য কী ?
উত্তর। শ্রমিক সংঘের প্রধান উদ্দেশ্য হল শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। এজন্য মজুরি বৃদ্ধি আদায় করা ও শ্রমিকদের স্বার্থে শিল্প–মালিক এবং সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায় করা হল শ্রমিক সংঘের প্রধান উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন ১০২। বিশুদ্ধ মুনাফা কী?
উত্তর। মোট বিক্রয়লব্ধ আয় (Total Revenue) মোট উৎপাদন–ব্যয় (Total Cost ) অপেক্ষা যতটা বেশি ততটাই বিশুদ্ধ মুনাফা ।
প্রশ্ন ১০৩। উৎপাদনের উপাদানের জন্য চাহিদা কীসের উপর নির্ভরশীল?
উত্তর। উৎপাদনের উপাদানের জন্য চাহিদা সেই উপাদানের প্রান্তিক উৎপাদন শক্তির উপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন ১০৪। মোট উপযোগিতা সর্বাধিক হলে প্রান্তিক উপযোগিতার মান কত হবে?
উত্তর। মোট উপযোগিতা সর্বাধিক হলে প্রান্তিক উপযোগিতার মান হবে শূন্য।
প্রশ্ন ১০৫। চাহিদা অপেক্ষক কী?
উত্তর। চাহিদা অপেক্ষক হল Dx = f (Px)। এক্ষেত্রে Dx হল x-এর জন্য চাহিদা এবং Px, হল x-এর দাম। এক্ষেত্রে x-এর জন্য চাহিদা x-এর দামের উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে দাম হল অনপেক্ষ (independent) রাশি এবং চাহিদা হল নির্ভরশীল (dependent) রাশি।
প্রশ্ন ১০৬। মোট ব্যয় বলতে কী বোঝ?
উত্তর। উৎপাদন ব্যয় বা মোট ব্যয় বলতে বোঝায় উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের জন্য যে ব্যয় হয় (অথবা উপাদানগুলির জন্য যে দাম দিতে হয়) তার সমষ্টি। এজন্য যে আর্থিক ব্যয় হয় তার একটি অংশ হল স্থির ব্যয় (Fixed Cost) এবং অপর একটি অংশ হল পরিবর্তনশীল ব্যয় (Variable Cost)। এছাড়া উৎপাদন ব্যয়ের মধ্যে প্রকৃত ব্যয় (Real Cost) এবং সুযোগ ব্যয় (Opportunity Cost) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
প্রশ্ন ১০৭। আয়–ব্যয় সমতার বিন্দুতে ফার্মের অতিরিক্ত মুনাফার পরিমাণ শূন্য—এই উক্তিটি কি সত্য?
উত্তর। এই উক্তিটি সত্য।
প্রশ্ন ১০৮। স্বাভাবিক মুনাফা কাকে বলে?
উত্তর। যখন কোনও ফার্মের ক্ষেত্রে দাম গড় ব্যয়ের (ATC) সমান হয়, তখন ফার্মের স্বাভাবিক মুনাফা অর্জিত হয়; কেননা মোট গড় ব্যয়ের মধ্যে কিছুটা মুনাফা অন্তর্ভুক্ত থাকে যা না থাকলে ফার্ম উৎপাদন করবে না। পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে দীর্ঘকালে দাম গড় আয়ের সমান হয়।
প্রশ্ন ১০৯। একচেটিয়া কারবারির ভারসাম্য বিন্দুতে P < MC অথবা P = MC কোনটি হয় ?
উত্তর। একচেটিয়া কারবারির ভারসাম্য বিন্দুতে P > MC হয়।
প্রশ্ন ১১০। ব্যক্তির চাহিদা ও বাজার চাহিদার মধ্যে পার্থক্য কর।
উত্তর। কোনও ব্যক্তি যদি নিজের ক্রয়–ক্ষমতার ভিত্তিতে কোনও দ্রব্য কিনতে চায় তবে সেটা হল ব্যক্তির চাহিদা। বাজারের চাহিদা হল বাজারের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন চাহিদার সমষ্টি।
প্রশ্ন ১১১। চাহিদার সূত্র‘ কাকে বলে ?
উত্তর। চাহিদার সূত্র হল : কোনও দ্রব্যের দাম কমে গেলে সেই দ্রব্যের জন্য চাহিদা বাড়ে। বিপরীতভাবে দ্রব্যটির দাম বেড়ে গেলে তার জন্য চাহিদা কমে ।
প্রশ্ন ১১২। অর্থনীতিতে স্বল্পকাল এবং দীর্ঘকালের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।
উত্তর। অর্থনীতিতে স্বল্পকাল বলতে বোঝায় এমন একটি সময় যখন ফার্মের উৎপাদন মাত্রা (Scale of operations of a firm) স্থির থাকে। একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় যতক্ষণ উৎপাদনের কাজ চলতে থাকে ততক্ষণ হল স্বল্পকাল। অপরদিকে দীর্ঘকালে বিভিন্ন মাত্রায় উৎপাদন করা চলে এবং এজন্য একটি দীর্ঘকাল হল কতিপয় স্বল্পকালের সমষ্টি। অর্থাৎ একটি দীর্ঘকালের মধ্যে কতিপয় স্বল্পকাল অন্তর্ভুক্ত থাকে।
প্রশ্ন ১১৩। আয় প্রভাব কাকে বলে ?
উত্তর। আয় প্রভাব হল ক্রেতার আয় বেড়ে গেলে সে কোনও দ্রব্য বেশি করে ক্রয় করতে সক্ষম হয় বলে দ্রব্যটি বেশি করে ক্রয় করতে চায়—এটা হল আয় প্রভাব। আয় প্রভাবের ফলে ক্রেতার নিরপেক্ষতা রেখা ডানদিকে উপরে সরে যায়।
প্রশ্ন ১১৪। প্রান্তিক উৎপাদনের মান শূন্য হলে মোট উৎপাদনের মান কত?
উত্তর। প্রান্তিক উৎপাদনের মান শূন্য হলে মোট উৎপাদনের মান সর্বাধিক।
প্রশ্ন ১১৫। প্রান্তিক জমি কাকে বলে?
উত্তর। রিকার্ডোর মতে প্রান্তিক জমি হল নিকৃষ্টতম জমি যেখানে কৃষকের আর কোনও উদ্বৃত্ত থাকে না। এই জমি হল “Land on the margin of cultivation”; অথবা চাষের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে যে জমি যাতে চাষ করলে কৃষকের কোনও উদ্বৃত্ত থাকে না।
প্রশ্ন ১১৬। গড় পরিবর্তনশীল ব্যয় ও গড় স্থির ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
উত্তর। গড় পরিবর্তনশীল ব্যয় (AVC) এবং গড় স্থির ব্যয়ের (AFC) মধ্যে পার্থক্য হল—
AVC=TVCX এবং AFC = TFCX । মোট পরিবর্তনশীল ব্যয় (Total Variable Cost or TVC) এবং মোট উৎপাদনের অনুপাতকে গড় পরিবর্তনশীল ব্যয় বলা হয়। অপরদিকে মোট স্থির ব্যয় (Total Fixed Cost or TFC) এবং মোট উৎপাদনের অনুপাতকে গড় স্থির ব্যয় বলা হয়।
প্রশ্ন ১১৭। পূর্ণ প্রতিযোগিতায় গড় ও প্রান্তিক আয় রেখা কী রকম হয় ?
উত্তর। পূর্ণ প্রতিযোগিতায় গড় ও প্রান্তিক আয় রেখা অনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল হয়।
১২নং চিত্রে এটা দেখানো হয়েছে।
প্রশ্ন ১১৮। মাত্রাজনিত বা আয়তনজনিত প্রতিদান কাকে বলে?
উত্তর। যখন উৎপাদনে ব্যবহৃত সবগুলি উপাদান সমান অনুপাতে পরিবর্তিত হয় তখন উৎপাদনের যে পরিবর্তন হয় তাকে বলা হয় উৎপাদনের মাত্রাজনিত প্রতিদান (Returns to Scale)।
প্রশ্ন ১১৯। পরিবর্ত প্রভাব কী?
উত্তর। পরিবর্ত প্রভাব হল, একটি দ্রব্যের (ধরা যাক x) দাম কমে গেলে এবং বিকল্প দ্রব্যটির (ধরা যাক y) দাম অপরিবর্তিত থাকলে ক্রেতা সস্তা দ্রব্যটি (এ ক্ষেত্রে x) বেশি ক‘রে কিনবে। এক্ষেত্রে ক্রেতার আয়ের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না ধরে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, নিরপেক্ষ রেখার কোন পরিবর্তন হচ্ছে না ; কিন্তু ক্রেতার বাজেট রেখার পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রশ্ন ১২০। গড় উৎপাদনের মান শূন্য হতে পারে কি?
উত্তর। গড় উৎপাদনের মান শূন্য হতে পারে না যেহেতু উৎপাদন হলেই গড় উৎপাদনের হিসাব করা হয়।
প্রশ্ন ১২১। নিরপেক্ষ রেখার যে–কোন দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর। নিরপেক্ষ রেখার দুটি বৈশিষ্ট্য হল: (১) নিরপেক্ষ রেখা ডানদিকে নিম্নাভিমুখী (downward sloping to the right) এবং (২) দুটি নিরপেক্ষ রেখা পরস্পরকে ছেদ করতে পারে না।
প্রশ্ন ১২২। দাম পৃথকীকরণ নির্ভর করে এমন দুটি উপাদানের নাম কর।
উত্তর। দাম পৃথকীকরণ নির্ভর করে—(১) একটি বাজারে বিভিন্ন ক্রেতার জন্য আলাদা উপ–বাজার (sub-markets) থাকবে এবং একজন ক্রেতা সস্তায় একটি দ্রব্য কিনে একটু বেশি দামে আরেকজনের কাছে দ্রব্যটি পুনর্বিক্রয় (resale) করবে না। (২) দামের পৃথকীকরণ অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দ্রব্যের প্রকৃতি এবং ক্রেতার বৈশিষ্ট্যের (consumer’s peculiarities) উপরও নির্ভরশীল। এমন দ্রব্য থাকতে পারে যার জন্য কোনও ক্রেতা অপর একজন ক্রেতার থেকে বেশি দামে কিনতে হলেও আপত্তি করে না।
প্রশ্ন ১২৩। একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর। (১) একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে স্বল্পকালে সীমিত সংখ্যক ফার্ম থাকলেও দীর্ঘকালে বহুসংখ্যক ফার্ম বাজারে প্রবেশ করতে পারে, এবং দীর্ঘকালে দাম প্রান্তিক ব্যয় অপেক্ষা বেশি হলেও গড় উৎপাদন ব্যয়ের সমান হয়। (২) একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বিক্রেতারা নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের পৃথকীকরণ (Product differentiation) করে থাকে এবং পণ্য বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপনজনিত ব্যয় (selling cost) বহন করে।
প্রশ্ন ১২৪। একচেটিয়া বাজারের সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর। বাজারে কোনও পণ্যের একজনই বিক্রেতা থাকলে তাকে বিশুদ্ধ একচেটিয়া বাজার (pure monopoly) বলা হয়। তবে একজন বিক্রেতা না থাকলেও মুষ্টিমেয় কয়েকজন বিক্রেতা একত্রিত হয়ে বাজারকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে (যেমন, কর্টেল)। সেটাও একচেটিয়া বাজার হিসাবে বিবেচিত হয়। একচেটিয়া বাজারে, একচেটিয়া কারবারি ছাড়া অন্য কোনও ফার্ম থাকে না এবং সেই ফার্ম অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করে (P > AC) ; ভারসাম্যের ক্ষেত্রে প্রান্তিক ব্যয় (MC) প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয়ের সমান থাকে।
প্রশ্ন ১২৫। মোট ও নিট মুনাফার মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
উত্তর। উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করে মোট যে অর্থ পাওয়া যায় (Total Revenue) তা যদি উৎপাদকের মোট ব্যয় (Total Cost) অপেক্ষা বেশি হয় তবে মোট ব্যয় থেকে বিক্রয়লব্ধ আয়ের পরিমাণ যতটা বেশি ততটাই হল স্থূল মুনাফা (Gross Profit)। এই স্থূল মুনাফা থেকে উদ্যোক্তা সরকারকে কর প্রদান, ব্যবসায়ে রিজার্ভ ফাণ্ডের জন্য কিছু অর্থ সংরক্ষণ এবং শিল্পের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির অবচয় (depreciation) নিবারণের জন্য কিছু অর্থ সংরক্ষণের পর যে অর্থ তার হাতে থাকে, সেটা হল নিট মুনাফা (Net Profit)।
প্রশ্ন ১২৬। উদ্যোক্তা কেন পারিশ্রমিক পায় ?
উত্তর। উদ্যোক্তা উৎপাদনের কাছে বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করে ও সেগুলিকে সংগঠিত করে। এক্ষেত্রে তাকে অনেক ব্যবসায়িক ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার বোঝা বহন করতে হয়। উপাদান সংগ্রহ ও সংগঠন, ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তার বোঝা বহনের জন্য এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজের শ্রম এবং মূলধন জোগান দেওয়ার জন্য উদ্যোক্তা পারিশ্রমিক নিয়ে থাকে।
প্রশ্ন ১২৭। প্রকৃত মজুরি নির্ভর করে এমন দুটি উপাদানের নাম লেখ।
উত্তর। প্রথমত, প্রকৃত মজুরি নির্ভর করে আর্থিক মজুরি (Nominal Wage) এবং মূল্যস্তরের (Price Level) উপর। মূল্যস্তর বেড়ে গেলে প্রকৃত মজুরি কমে যায়। তবে মূল্যস্তর বেড়ে যাবার অনুপাতে যদি আর্থিক মজুরি বেশি বাড়ে তবে প্রকৃত মজুরি বাড়ে।
প্রকৃত মজুরি =আর্থিক মজুরিমূল্যস্তর
দ্বিতীয়ত, শ্রমিক যদি কাজের বিনিময়ে আর্থিক মজুরি ছাড়াও বিশেষ পরিষেবা (services), যেমন—বিনাভাড়ায় বাসস্থানের ব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে বিনা ব্যয়ে গাড়ির মাধ্যমে যাতায়াতের সুবিধা, সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা, প্রভৃতি ভোগ করে তবে তার প্রকৃত মজুরি বাড়ে।
প্রশ্ন ১২৮। সাধারণ দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদারেখার ঢাল ধনাত্মক না ঋণাত্মক ?
উত্তর। সাধারণ দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদারেখার ঢাল ঋণাত্মক।
প্রশ্ন ১২৯। চাহিদার পারস্পরিক দামগত স্থিতিস্থাপকতা কখন ধনাত্মক এবং কখন ঋণাত্মক?
উত্তর। চাহিদার পারস্পরিক স্থিতিস্থাপকতা বিকল্প সামগ্রীর ক্ষেত্রে ধনাত্মক এবং পরিপূরক সামগ্রীর ক্ষেত্রে ঋণাত্মক হয়।
প্রশ্ন ১৩০। গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। গড় মোট ব্যয় = মোট ব্যয়উৎপাদনের পরিমাণ
অথবা ATC =TCX
TC হল মোট ব্যয়, x হল উৎপাদনের পরিমাণ এবং ATC হল গড় মোট ব্যয়।
প্রান্তিক ব্যয় (Marginal Cost) =ΔTCΔX
উৎপাদনের পরিমাণ অল্প একটু বাড়লে ফার্মের মোট ব্যয় যতটুকু বাড়ে তাকে বলা হয় প্রান্তিক ব্যয় ।
প্রশ্ন ১৩১। গিফেন দ্রব্য ও নিকৃষ্ট দ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য কী?
অথবা, “গিফেন দ্রব্য নিকৃষ্ট দ্রব্য হতে পারে, কিন্তু সব নিকৃষ্ট দ্রব্যই গিফেন দ্রব্য নয়”।–ব্যাখ্যা কর ৷
উত্তর। যদি অন্যান্য বিষয়সমূহ অপরিবর্তিত থাকা কালে কোন দ্রব্যের দাম বেড়ে গেলেও সেই দ্রব্যের জন্য চাহিদা বেড়ে যায় অথবা দাম কমে গেলেও তার ক্রয়ের পরিমাণ কমে যায়, তবে সেই দ্রব্যকে (রবার্ট গিফেনের নাম অনুসারে) গিফেন দ্রব্য বলা হয়। অপরদিকে যখন কোনও দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম কমে গেলেও এবং ক্রেতার আয় বেড়ে গেলে চাহিদা বাড়ে না (যেমন বাজারে পচা মাছ) তখন সেই দ্রব্যকে নিকৃষ্ট দ্রব্য (inferior good) বলা হয়। গিফেন দ্রব্য নিকৃষ্ট দ্রব্য হতে পারে, কিন্তু সব নিকৃষ্ট দ্রব্যই গিফেন দ্রব্য নয়।
প্রশ্ন ১৩২। অর্থনীতিতে সম্পদের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর।
উত্তর। ‘সম্পদ’ হল এমন একটি অর্থনৈতিক দ্রব্য যার চারটি বৈশিষ্ট্য থাকবে যথা, (১) দ্রব্যটির সীমিত জোগান থাকবে। (২) দ্রব্যটির উপাদান (utility) থাকবে, (৩) দ্রব্যটির হস্তান্তর_যোগ্যতা (transferability) থাকবে এবং দ্রব্যটির বাহ্যিকতা (externality) থাকা চাই।
প্রশ্ন ১৩৩। ক্রমহ্রাসমান প্রতিদানের বিধি কাকে বলে ?
অথবা, উৎপাদনের ক্ষেত্রে ক্রমহ্রাসমান প্রতিদানের নিয়ম বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর। যদি উৎপাদনের উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে পরিবর্তিত হলে উৎপাদন বৃদ্ধি সেই হারে না হয়, অথবা যে হারে উৎপাদন ব্যয় বাড়ানো হয়, সেই হারে উৎপাদন না বাড়ে তবে তাকে বলা হয় উৎপাদনের ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত প্রতিদানের বিধি (diminishing returns to scale)।
প্রশ্ন ১৩৪। পূর্ণাঙ্গ প্রতিযোগিতার দুটি বৈশিষ্ট্য অথবা অনুমান লেখ।
উত্তর। পূর্ণাঙ্গ প্রতিযোগিতার দুটি বৈশিষ্ট্য হল—(১) বাজারে স্বল্পকালে সীমিত সংখ্যক ফার্ম থাকে এবং দীর্ঘসময়ে বহুসংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা বাজারে ক্রয়–বিক্রয় করে এবং দীর্ঘকালে ফার্মগুলি বাজারে অবাধ প্রবেশ (free entry) করে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। (২) সব ক্রেতা ও বিক্রেতার ক্রয়–বিক্রয়ের দ্রব্য সমজাতীয় (Homogeneous Commodity) থাকে।
প্রশ্ন ১৩৫। অতি স্বল্পকালে দাম নির্ধারণে জোগানের কি কোন ভূমিকা আছে?
উত্তর। অতি স্বল্পকালে দাম নির্ধারণে জোগানের বিশেষ ভূমিকা নেই,—কারণ তখন জোগান স্থির থাকে।
প্রশ্ন ১৩৬। পূর্ণাঙ্গ প্রতিযোগিতামূলক গড় আয় (দাম) ও প্রান্তিক আয় সমান হয় কেন ?
উত্তর। পূর্ণাঙ্গ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য দাম স্থির থাকে এবং চাহিদার পূর্ণ স্থিতিস্থাপকতা (Perfect elasticity) থাকে। এজন্য দাম বা গড় বিক্রয়লব্ধ আয় (Average Revenue) স্থির থাকে। গড় আয় স্থির থাকার দরুন প্রান্তিক আয়ও গড় আয় বা দামের সমান হয়। চাহিদার পূর্ণ স্থিতিস্থাপকতায় গড় আয় (AR) এবং প্রান্তিক আয় (MR) সমান থাকে।
প্রশ্ন ১৩৭। অস্বাভাবিক মুনাফা কাকে বলে ?
উত্তর। যখন দাম (P) মোট গড় ব্যয় (ATC) অপেক্ষা বেশি থাকে (অর্থাৎ, P > ATC) তখন দাম গড় মোট ব্যয় অপেক্ষা যতটা বেশি ততটাই হল অস্বাভাবিক মুনাফা (Abnormal Profit)।
প্রশ্ন ১৩৮। একচেটিয়া বাজারে গড় আয় ও প্রান্তিক আয় রেখার আকৃতি কেমন হয়?
উত্তর। একচেটিয়া বাজারে গড় আয় রেখা উপর দিকে বাঁদিকে নিম্নমুখী হয় এবং প্রান্তিক আয় রেখা তার নীচে থাকে। এটা নীচে ৮নং চিত্রে দেখানো হল :
এই চিত্রে গড় আয় রেখা নিম্নমুখী। এজন্য প্রান্তিক আয়ও নিম্নমুখী, এটা একচেটিয়া বাজারের একটি বৈশিষ্ট্য।
প্রশ্ন ১৩৯। অলিগোপলি বাজার কাকে বলে?
অথবা, অলিগোপলি বাজারের একটি ধারণা দাও।
উত্তর। যদি বাজারে দুজনের বেশি অথচ খুব অল্পসংখ্যক বিক্রেতা থাকে এবং তারা বাজার দখলের জন্য পারস্পরিক প্রতিযোগিতা বা রেষারেষিতে লিপ্ত থাকে তখন সেই বাজারকে বলা হয় অলিগোপাল। অলিগোপলি বাজারে দামের অনমনীয়তা (price rigidity) থাকে এবং অনেক সময় অলিগোপলি বাজারে একটি নেতৃস্থানীয় ফার্ম (price leader) কর্তৃক নির্ধারিত দামে বিক্রেতারা দ্রব্য বিক্রি করে থাকে।
প্রশ্ন ১৪০। লেনদেনের জন্য অর্থের মাহিদ কিসের উপর নির্ভর করে?
উত্তর। লেনদেনের জন্য অর্থের চাহিদা আয়ের উপর নির্ভর করে।
১৪১। ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদশীলতা বিধি বলতে কী বোঝ?
উত্তর। প্রান্তিক উৎপাদনশীলতার বিধি অনুযায়ী উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে একটি নির্দিষ্ট উপাদানের পরিমাণ (ধরা যাক, শ্রম) যতই বাড়ানো হবে সেই নির্দিষ্ট উপাদানের প্রান্তিক উৎপাদশীলতা (marginal productivity) ক্রমেই কম আসবে।
প্রশ্ন ১৪২। বাহ্যিক ব্যয় সংকোচ (External economy) কাকে বলে?
উত্তর। একটি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুবাদে যখন কোনও ফার্ম শিল্পটির ব্যয়সংকোচের সুবিধা ভোগ করে তখন ফার্মের কাছে সেটা হল বাহ্যিক ব্যয় সংকোচ।
প্রশ্ন ১৪৩। বৃহদায়তন উৎপাদনের দুটি সুবিধা উল্লেখ কর।
উত্তর। বৃহদায়তন উৎপাদনের দুটি সুবিধা হল:
(১) বৃহদায়তন উৎপাদনে অবিভাজ্য উপকরণগুলির (indivisible factors) যথোপযুক্ত ব্যবহার হলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচের সুবিধা পাওয়া যায়।
(২) বৃহদায়তন উৎপাদনে উৎপাদিত দ্রব্যের বাজার বিস্তৃত থাকায় বেশি মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা থাকে এবং উন্নত বিপণন ব্যবস্থার সুবিধা পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ১৪৪। অর্থনৈতিক খাজনা কাকে বলে?
উত্তর। অর্থনৈতিক বাজনা হচ্ছে জমির মৌলিক এবং অবিনশ্বর ক্ষমতার ফলে (original and indestructible powers of the soil) যে উৎপাদন হয় তবে মূল্য। জমির সীমিত জোগান এবং নিকৃষ্টতর জমির তুলনায় উৎকৃষ্টতর জমি যে পার্থক্যমূলক উদ্বৃত্ত (differential surplus) সেটিই হল অর্থনৈতিক খাজনা।
প্রশ্ন ১৪৫। আয়গত স্থিতিস্থাপকতার মান ঋণাত্মক হওয়ার অর্থ কী?
উত্তর। আরগত স্থিতিস্থাপকতার মান ঋণাত্মক হওয়ার অর্থ হল আয় বাড়লেও কোন বিশেষ দ্রব্যের জন্য চাহিদা বাড়ে না।
প্রশ্ন ১৪৬। পরিবর্তনশীল ব্যয় কাকে বলে?
উত্তর। উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে ব্যয় বেড়ে যায় বা উৎপাদন কমে যাবার সঙ্গে সঙ্গে যে ব্যয় কমে যায়, তাকে বলা হয় পরিবর্তনশীল ব্যয় (variable cost)। উদাহরণস্বরূপ বলা বার, উৎপাদন বেড়ে গেলে অধিক শ্রমিক নিয়োগ করতে হয়, এবং মজুরি বাবদ উৎপাদকের বরও বেড়ে যায়।
প্রশ্ন ১৪৭। “জল ও হীরার ধাঁধা” বলতে কী বোঝ?
উত্তর। জল হল একটি স্বাধীন দ্রব্য (free good) এবং হীরা হল একটি অর্থনৈতিক দ্রব্য (economic good) । মানুষের জীবনধারণের জন্য জলের ব্যবহার মূল্য (value-in-use) এবং গুরুত্ব অপরিসীম অথচ জলের জন্য (যেমন, নদীর জল অথবা পুকুরের জল) কোনও দাম দিতে হয় না। অপরদিকে জলের জন্য যেমন সর্বজনীন চাহিদা আছে, হীরার জন্য তেমন সর্বজনীন চাহিদা নেই। হীরার বিনিময় মূল্য (value-in-exchange) বা দাম খুবই বশি। “জল ও হীরার ধাঁধা” প্রকৃতপক্ষে ব্যবহার মূল্য ও বিনিময় মূল্যের মধ্যে পার্থক্য সূচিত করে।
প্রশ্ন ১৪৮। চাহিদার পূর্ণ–অস্থিতিস্থাপকতা বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর। চাহিদার পূর্ণ–অস্থিতিস্থাপকতা বলতে বোঝায়, যে কোনও দ্রব্যের দামের যতই পরিবর্তন হোক, দ্রব্যটির জন্য চাহিদার কোনও পরিবর্তন হবে না।
প্রশ্ন ১৪৯। ভোগোদ্বৃত্ত অথবা উপভোক্তার উদ্বৃত্ত কী? অথবা, ভোগ–উদ্বৃত্ত বলতে কী বোঝ?
উত্তর। ভোগোদ্বৃত্ত ক্রেতার ব্যক্তিগত চাহিদা মূল্য (মোট উপযোগ) যদি বাজার মূল্য অপেক্ষা বেশি থাকে, তবে ভোগোদ্বৃত্ত সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ
ভোগোদ্বৃত্ত = মোট উপযোগ – (প্রান্তিক উপযোগ × ক্রীতদ্রব্যের মোট ইউনিট)
Consumer’s Surplus = Total Utility Utility-[Marginal Number of Units Purchased x Number of units Purchased]
প্রশ্ন ১৫০। একটি নিরপেক্ষ রেখার ঢাল কী পরিমাপ করে ?
উত্তর। একটি নিরপেক্ষ রেখার ঢাল দুটি দ্রব্যের প্রান্তিক বিনিময় হার (Marginal rate of substitution) পরিমাপ করে।
প্রশ্ন ১৫১। দুটি দ্রব্য সম্পূর্ণ পরিপূরক হলে, নিরপেক্ষ রেখার আকৃতি কেমন হবে?
অথবা, কখন উৎপাদন রেখা L-আকৃতির হয় ?
উত্তর। দুটি দ্রব্য সম্পূর্ণ পরিপূরক হলে, নিরপেক্ষ রেখা L-আকৃতির (L-shaped) হবে।
প্রশ্ন ১৫২। আপেক্ষিক দামের সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর। যখন দ্রব্যের দাম অন্য কোনও দ্রব্যের দামের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা হয় এবং তার ভিত্তিতে দাম প্রদান করা হয় তখন সেটা হল আপেক্ষিক দাম (relative price)
প্রশ্ন ১৫৩। সুদের হার কি কখনও শূন্য বা ঋণাত্মক হতে পারে ?
উত্তর। সুদের হার শূন্য অথবা ঋণাত্মক হতে পারে না।
প্রশ্ন ১৫৪। মোট রেভিনিউ হ্রাস পেলে সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক রেভিনিউ এর গতি কী হবে?
উত্তর। মোট রেভিনিউ হ্রাস পেলে সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক রেভিনিউ–র গতি নেতিবাচক (negative) হবে।
প্রশ্ন ১৫৫। প্রান্তিক ব্যয়ের সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর। কোনও দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনও উপাদানের পরিমাণ একটি অতিরিক্ত ইউনিট অথবা অল্প একটু পরিমাণ (প্রান্তিক ইউনিট) বাড়ালে উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মোট ব্যয় যতটুকু বাড়ে তাকে প্রান্তিক ব্যয় বলা হয়। অর্থাৎ
MC =ΔTCΔX
প্রশ্ন ১৫৬। গড় স্থির ব্যয় রেখার আকৃতি কেমন হয়?
উত্তর। গড় স্থির ব্যয় রেখা অনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল একটি সরলরেখা হয়।
১৪নং চিত্রে এটা দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে OC হল গড় স্থির ব্যয়।
প্রশ্ন ১৫৭। একটি ফার্মের জোগান রেখার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। একটি ফার্মের জোগান রেখা হল প্রান্তিক ব্যয় রেখার (MC curve) যে অংশটুকু উৎপাদন বন্ধের বিন্দুর (Shut down point) উপরে থাকে, সেই অংশটুকু।
প্রশ্ন ১৫৮। অন্তর্নিহিত ব্যয়ের সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর। উৎপাদক যদি নিজেই নিজের শ্রম এবং জমি সরবরাহ করে সেজন্য তার আর্থিক ব্যয় না হলেও সেই উপকরণগুলির বাজার দামের ভিত্তিতে একটি ব্যয় ধরা হয়। এটা হল উৎপাদকের অন্তর্নিহিত ব্যয় (implicit cost)।
প্রশ্ন ১৫৯। কেন গড় ব্যয়রেখার নিম্নতম বিন্দুটি গড় পরিবর্তনশীল ব্যয় রেখার নিম্নতম বিন্দুর ডানদিকে অবস্থান করে?
উত্তর। গড় মোট ব্যয়ের (SATC) মধ্যে গড় পরিবর্তনশীল ব্যয় (AVC) এবং গড় স্থির ব্যয় (AFC) উভয়ই অন্তর্ভুক্ত আছে। এই দুটি ব্যয়ের সমষ্টি নিয়েই গড় ব্যয় রেখাটি অঙ্কিত হওয়ায় তার সর্বনিম্ন বিন্দু গড় পরিবর্তনশীল রেখার সর্বনিম্ন বিন্দুর ডানদিকে থাকে।
প্রশ্ন ১৬০। উৎপাদন অপেক্ষকের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। উৎপাদন অপেক্ষক (Production Function) হল P = f (K, L) ; P হল উৎপাদন, K হল মূলধনের প্রযুক্ত পরিমাণ, এবং L হল শ্রমের প্রযুক্ত পরিমাণ। এক্ষেত্রে উৎপাদনের পরিমাণ হল নির্ভরশীল রাশি (dependent variable) এবং মূলধন ও শ্রম হল অনপেক্ষ বা স্বাধীন রাশি (independent variable)। মূলধন ও শ্রম ছাড়াও উৎপাদনের পরিমাণ উপাদানের মাত্রাগত প্রতিদান (Returns to Scale ) – প্রযুক্তি (Technology) এবং পরিচালনাগত দক্ষতার উপরেও নির্ভর করে।
প্রশ্ন ১৬১। নিরপেক্ষ রেখা কী? অথবা, নিরপেক্ষতা রেখা কাকে বলে?
উত্তর। নিরপেক্ষ রেখা হল এমন একটি রেখা যার উপর যে কোনও বিন্দুতে ক্রেতা দুটি ক্রয়যোগ্য দ্রব্যের সম্মিলন থেকে সমান উপযোগ বা তৃপ্তি পায়। এজন্য নিরপেক্ষ রেখাকে সম–তৃপ্তি রেখা (Equal Satisfaction
curve) হিসাবেও অভিহিত করা হয়। যখনই কোনও নিরপেক্ষ রেখা আঁকা হয় তখন ধরে নেওয়া হয় যে একটি নির্দিষ্ট আয়ে ক্রেতা x এবং y এই দুটি দ্রব্য কিনতে পারে এবং শুধু তা–ই নয়, একটি সীমার ভিতর x এবং y পরস্পরের বিকল্প দ্রব্য হিসাবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ, ক্রেতা যদি x বেশি ক্রয় করে তবে সে y কম করে ক্রয় করবে অথবা যদি সে বেশি করে y করে, তবে x কম করে ক্রয় করবে ; অথচ উভয়ক্ষেত্রেই ক্রেতা সমান উপযোগ লাভ করবে। একটি নিরপেক্ষ রেখা ক্রেতার পছন্দের মাত্রা (scale fo preference) সূচিত করে। নীচে একটি নিরপেক্ষ রেখা আঁকা হল—
এই রেখায় y1x1, y2x2 এবং y3x3 এই বিভিন্ন সম্মিলন থেকে ক্রেতা সমান উপযোগ পাচ্ছে। তবে কোন্ সম্মিলনটি (combination) সে ক্রয় করবে সেটা নির্ভর করে তার বাজেট রেখা নিরপেক্ষ রেখার সঙ্গে কোন্ বিন্দুতে স্পর্শক হল তার উপর।
প্রশ্ন ১৬২। সম্পূর্ণ পরিবর্ত দ্রব্যের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ রেখার আকৃতি কেমন হবে?
উত্তর। সম্পূর্ণ পরিবর্ত দ্রব্যের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ রেখার আকৃতি হবে OY থেকে OX অক্ষ পর্যন্ত উপর থেকে নীচু একটি সরলরেখা। এক্ষেত্রে II’ সরলরেখা হল দুটি সম্পূর্ণ পরিবর্ত দ্রব্যের ক্ষেত্রে (Y এবং X) নিরপেক্ষ রেখার আকৃতি ।
প্রশ্ন ১৬৩। অলিগোপলি বাজারের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর। (১) অলিগোপলি বাজারে দু‘জনের বেশি অথচ খুব অল্পসংখ্যক বিক্রেতা বাজার দখলের জন্য রেষারেষি বা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে এবং শেষ পর্যন্ত বাজারে একটি অনমনীয় দাম অলিগোপলি বাজারে প্রতিষ্ঠা করে। (২) অনেক সময় অলিগোপলি বাজারে একটি নেতৃস্থানীয় ফার্ম (Price leader) কর্তৃক নির্ধারিত দামে অন্য বিক্রেতারা দ্রব্য বিক্রি করে থাকে।
প্রশ্ন ১৬৪। বাজেট রেখা কী? অথবা, বাজেট রেখা বলতে কী বোঝ?
উত্তর। বাজেট রেখা দুটি দ্রব্যের দামের ভিত্তিতে অঙ্কিত হয়। বাজেট রেখা দেখায় ক্রেতা তার নির্দিষ্ট আর কতটা x-এর জন্য এবং কতটা y-এর জন ব্যয় করবে। অর্থাৎ, −y = px. qx+pyqy এক্ষেত্রে px এবং py. হল, যথাক্রমে x এবং y-এর দাম এবং qx ও qy, হল যথাক্রমে x এবং y-এর পরিমাণ। (১৭ নং চিত্রে) একটি বাজেট রেখা দেখানো হল।
প্রশ্ন ১৬৫। ডুয়োপলি বাজার সম্পর্কে একটি ধারণা দাও।
উত্তর। যদি বাজারে দুইজন বিক্রেতা থাকে এবং তারা বাজার দখলের জন্য পারস্পরিক প্রতিযোগিতা বা রেষারেষিতে লিপ্ত থাকে তবে সেই বাজারকে বলা হয় ডুয়োপলি বাজার।
প্রশ্ন ১৬৬। প্রান্তিক বাস্তব উৎপাদনশীলতার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকলে কোনও দ্রব্য উৎপাদনে যদি কোনও একটি উপাদানের অতিরিক্ত একটি ইউনিট নিয়োগ করা হয় তবে মোট উৎপাদনের যে পরিবর্তন হয় তা–ই হল সেই উপাদানের প্রান্তিক বাস্তব উৎপাদনশীলতা (Marginal Physical Productivity)।
প্রশ্ন ১৬৭। মুনাফার ঝুঁকিবহুনের তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
উত্তর।মুনাফার ঝুঁকি বহন তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন ফ্রাঙ্ক নাইট (Frank Knight)।
প্রশ্ন ১৬৮। প্রকৃত মজুরি কী?
উত্তর।
প্রকৃতি মজুরি (Real Wage) = আর্থিক মজুরিদামস্তর = WP
এক্ষেত্রে W হল আর্থিক মজুরি এবং P হল দামস্তর।
প্রশ্ন ১৬৯। সুদের হার কী?
উত্তর। সুদের হার হল মূলধন বা টাকা ধার করার জন্য প্রদত্ত মূল্য (Interest is a price paid for loans ) ।
প্রশ্ন ১৭০। সুদের হারের তত্ত্বে ঋণযোগ্য তহবিলের চাহিদার একটি উপাদান বিবৃত কর।
উত্তর। সুদের হারের তত্ত্বে ঋণযোগ্য তহবিলের জন্য চাহিদার একটি উপাদান হল বিনিয়োগের জন্য পুঁজির চাহিদা।
প্রশ্ন ১৭১। শ্রমিক সংঘ কী? শ্রমিক সংঘের প্রধান কাজ কী ?
উত্তর। শ্রমিক সংঘ হল কোনাও শিল্পে অথবা কারখানার শ্রমিকদের নিজেদের স্বার্থ বাজার রাখা অথবা মালিক বা সরকারের কাছ থেকে দাবি–দাওয়া আদায় করা নিয়ে আন্দোলন করার জন্য গঠিত সংগঠন।
শ্রমিক সংঘের প্রধান কাজ হল শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ, নিয়োগ সম্পর্কিত ব্যবস্থা, শিল্প বিরোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে মালিকদের সঙ্গে সমষ্টিগত দরকষাকষি বা দ্বিপাক্ষিক অথবা ত্রি–পাক্ষিক আলোচনার শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করা।
প্রশ্ন ১৭২। চাহিদার নিয়মে অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকার (cotenis panibus) মানে ?
উত্তর। চাহিদার নিয়মে অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত (ceteris panibus) থাকার মানে হল কোনও দ্রব্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতার রুচি, পছন্দ, অর্থের প্রান্তিক উপযোগ বা আয় এবং সংশ্লিষ্ট দ্রব্যটির বিকল্প দ্রব্যগুলির দাম অপরিবর্তিত থাকে বা স্থির থাকে।
প্রশ্ন ১৭৩৷ মূল্য ও দামের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর। মূল্য ও দামের মধ্যে পার্থক্য হল— কোনও দ্রব্যের ব্যবহার–মূল্য (value-in-use) এমন হতে পারে যা ব্যবহার করার জন্য কোনও দাম দিতে হয় না, যেমন নদী বা পুকুরের জল, কিন্তু এমন দ্রব্য থাকতে পারে যার বিনিময় মূল্য (value-in-exchange) থাকার জন্য দ্রব্যটি কিনতে হয় এবং এজন্য অর্থ প্রদান করতে হয়। অর্থাৎ ব্যবহার মূল্য এবং বিনিময় মূল্য
কিন্তু বিনিময় মূল্যের ক্ষেত্রে কোনও পণ্যের প্রতি একবার সমমূল্যের যে অর্থ নির্ধারিত হয় তাকে বলা হয় প্যাটির দাম (Price of a commodity is the money equivalent of the unit of that commodity) |
প্রশ্ন ১৭৪। কোনও সরলরৈখিক চাহিদা রেখার উল্লাহ অক্ষ এবং আনুভূমিক অক্ষের হোকিন্দুতে চাহিদার বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা কী কী হবে?
উত্তর। কোন সরলরৈখিক চাহিদা রেখার উল্লম্ব অক্ষের ছেদবিন্দুতে চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা হবে অসীম (infinite) এবং অনুভূমিক অক্ষের ছেদবিন্দুতে চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা হবে শূশন্য (zero)।
প্রশ্ন ১৭৫। ফার্ম এবং শিল্পের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।
উত্তর। ফার্ম বলতে বোঝার একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা শিল্প প্রতিষ্ঠান যে একটি অথবা একাধিক দ্রব্য উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করে। যখন বাজারে বিভিন্ন ফার্ম একই দ্রব্য উৎপাদন করে এবং একই দ্রব্য বিক্রি করে তখন সেই ফার্মগুলিরসমষ্টিকে বলা হয় শিল্প। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে বিভিন্ন চটকলের প্রত্যেকটি আলাদাভাবে ফার্ম হিসাবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু সবগুলি চটকল একত্রিতভাবে চটশিল্প হিসাবে
চিহ্নিত হয়।
প্রশ্ন ১৭৬। চাহিদার দামগত স্থিতিস্থাপকতার মান 1 (এক) হ‘লে প্রান্তিক রেভিনিউ এর মান কত হবে তা বিচার কর । অথবা, প্রান্তিক আয়ের সঙ্গে দাম–স্থিতিস্থাপকতার সম্পর্ক আলোচনা কর।
উত্তর। চাহিদার দামগত স্থিতিস্থাপকতার মান 1 (এক) হলে প্রান্তিক রেভিনিউ এর মান
হবে শূন্য ।ধরা যাক, বাজারে দাম অথবা গড় … বিক্রয়লব্ধ আয় (AR) হচ্ছে ৫ টাকা এবং প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় হচ্ছে ৫ টাকা এবং চাহিদার দামগত স্থিতিস্থাপকতা হচ্ছে 1 (এক)। তাহলে স্থিতিস্থাপকতার সূত্র
অনুযায়ী, e =PP−MR
অথবা, MR = P – Pe = ৫ – ৫১=০
১৮নং চিত্রের সাহায্যেও এটা দেখানো যায়।
উপরের চিত্রে e ́ বিন্দুতে চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতার মান হল 1 (এক) ।
অনুভূমিক রেখার Q বিন্দুতে প্রান্তিক রেভিনিউ হল শূন্য। গড় বিক্রয়লব্ধ আয় রেখা থেকে মূল্য অক্ষের উপর একটি লম্ব (perpendicular) অঙ্কন করলে প্রান্তিক রেভিনিউ রেখা সেই লম্বটিকে সমানভাবে দ্বিখণ্ডিত করে।
প্রশ্ন ১৭৭। চাহিদার নিয়মের ব্যতিক্রমের যে কোনও দুটি ক্ষেত্র উল্লেখ কর।
উত্তর। চাহিদার নিয়মের ব্যতিক্রমের দুটি ক্ষেত্র হল,— (১) যে সকল দ্রব্যের কোনও বিকল্প দ্রব্য নেই, (যেমন লবণ) সেই দ্রব্যগুলির দাম বাড়লেও চাহিদা কমে না। যেমন, লবণের দাম বাড়লেও তার চাহিদা কমে না। (২) নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম কমে গেলেও চাহিদা বাড়ে না। যেমন বাজারে যদি পচা মাছ থাকে এবং এজন্য যদি মাছের দাম কম থাকে, তবে দাম কম থাকা সত্ত্বেও চাহিদা বাড়বে না।
প্রশ্ন ১৭৮। কোন যুক্তিতে কাঁচামালকে মূলধন বলা হয়?
উত্তর। কাঁচামাল যদি পুনরায় উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয় তবে সেটা মূলধন এব্য হিসাবে বিবেচিত হয়। কাঁচা পাট একটি উৎপাদিত কাঁচামাল, কিন্তু চট উৎপাদনের জন্য কাঁচা পাটকে উৎপাদনের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কৃষিক্ষেত্রে যে ধান উৎপাদিত হয় তার কিছু অংশ যদি বীজ ধান” হিসাবে রেখে দেওয়া হয় এবং পুনরায় উৎপাদনে ব্যবহার করা তবে “বীজ ধান” মূলধন হিসাবে বিবেচিত হয়।
এভাবে যদি কাঁচামাল পুনবার উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয় তবে তাকে মূলকা বলা হয়।
প্রশ্ন ১৭৯। একচেটিয়া কারবার ও একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতার মধ্যে যে কোনও দুটি পার্থক্য উল্লেখ কর।
উত্তর। একচেটিয়া কারবার এবং একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতার মধ্যে দুটি পার্থক্য হল
(১) একচেটিয়া কারবারে অন্যান্য প্রতিযোগী ফার্মের প্রবেশ নেই,—কিন্তু একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতায় দীর্ঘকালে অন্যান্য প্রতিযোগী কার্মের অবাধ প্রবেশ (free entry) থাকে। বাজারে প্রতিযোগী কার্ম না থাকায় একচেটিয়া কারবারি স্বল্পকাল ও দীর্ঘকাল উভয়ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত মুনাফা (excess profit) অর্জন করে। কিন্তু একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতায় স্বল্পকালে বিক্রেতার কিছুটা অতিরিক্ত মুনাফা থাকলেও দীর্ঘকালে কোনও অতিরিক্ত মুনাফা থাকে না।
(২) একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতায় প্রব্যের পৃথকীকরণ (Product differentiation) এবং বিজ্ঞাপনজনিত ব্যাস (selling cost) নির্বাহ করতে হয়,—একচেটিয়া কারবারে প্রব্যের পৃথকীকরণ হয় না এবং বিজ্ঞাপনজনিত বার নির্বাহ করতে হয় না।
প্রশ্ন ১৮০। সংখ্যাগত উপযোগ ধারণা কী?
উত্তর। সংখ্যাবাচক উপযোগ (Cardinal utility) বলতে বোঝার কোন দ্রব্যের বিভিন্ন ইউনিট ক্রয় থেকে যে উপযোগ পাওয়া যায় তার যোগফল।
প্রশ্ন ১৮১। প্রান্তিক উপযোগ তত্ত্বে ভোগকারীর ভারসাম্যের শর্ত কী?
উত্তর। প্রান্তিক উপযোগ তত্ত্বে ভারসাম্যের শর্ত হল—
যখন কোন ব্যাক্তি তার নির্দিষ্ট পরিমাণ আরের সাহায্যে বিভিন্ন দ্রব্য (যেমন a, b, c কিনতে চায় তখন সে তার নির্দিষ্ট আয়কে এমনভাবে বিভিন্ন দ্রব্যের মধ্যে বণ্টন করবে যে প্রত্যেক দ্রব্য থেকেই প্রান্তিক উপযোগ ও মূল্যের অনুপাত সমান হবে।
অর্থাৎ MUaPa=MUbPb=MUcPc=…………………….MUnPn
প্রশ্ন ১৮২। মোট উপযোগ সর্বাধিক হলে প্রান্তিক উপযোগের পরিমাণ কী হয়?
উত্তর। মোট উপযোগ সর্বাধিক হলে প্রান্তিক উপযোগের পরিমাণ শূন্য হয়।
প্রশ্ন ১৮৩। চাহিদা তালিকা কী?
উত্তর। দাম কমে গেলে কোনও দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ বাড়ে এবং দাম বেড়ে গেলে কোনও দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ কমে, এই সূত্রটি যখন একটি তালিকায় দামের পরিবর্তন এবং সেই সঙ্গে চাহিদার পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়—সেই তালিকাকে বলা হয় চাহিদা তালিকা ।
প্রশ্ন ১৮৪। একটি স্বাভাবিক দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম ও চাহিদা কীভাবে সম্পর্কিত ?
উত্তর। একটি স্বাভাবিক দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম কমে গেলে দ্রব্যটির জন্য চাহিদা বাড়ে এবং দাম বেড়ে গেলে দ্রব্যটির জন্য চাহিদা কমে।
প্রশ্ন ১৮৫। মাত্রাজনিত ক্রমবর্ধমান উৎপাদন কাকে বলে?
উত্তর। যদি দেখা যায় উৎপাদনের উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে পরিবর্তিত করা হলে উৎপাদনের বৃদ্ধি অধিক হারে হতে থাকে তবে একে বলা হয় মাত্রাজনিত ক্রমবর্ধমান উৎপাদন (Increasing Returns to Scale)।
প্রশ্ন ১৮৬। একটি নিরপেক্ষ রেখার “মূল বিন্দুর দিকে উত্তল” হওয়ার পশ্চাতে কী অনুধারণা আছে? উত্তর। একটি নিরপেক্ষ রেখার ‘মূল বিন্দুর দিকে উত্তল” হওয়ার পশ্চাতে অনুধারণা হল, নিরপেক্ষ রেখার ঢাল শুধু নিম্নগামী হয়। এর দুই প্রান্ত কখনই উল্লম্ব অক্ষ (vertical axis) এবং অনুভূমিক অক্ষকে (horizontal axis) স্পর্শ করবে না।
প্রশ্ন ১৮৭। একটি L-আকৃতি বিশিষ্ট নিরপেক্ষ রেখা কী নির্দেশ করে ?
উত্তর। একটি L-আকৃতি বিশিষ্ট নিরপেক্ষ রেখা নির্দেশ করে যে দুটি দ্রব্য (y এবং x) পরস্পরের পরিপূরক এবং একটি স্থির পরিমাপে (fixed proportion) এই দুটি দ্রব্য কেনা হবে।
প্রশ্ন ১৮৮। কোন্ দ্রব্যের ক্ষেত্রে আয় প্রভাব ঋণাত্মক হয় ?
উত্তর। নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রে আয় প্রভাব ঋণাত্মক হয়।
প্রশ্ন ১৮৯। বাজেট রেখার (budget line) ঢালের রূপটি কী?
উত্তর। বাজেট রেখার ঢালের রূপ হল নিম্নগামী। এটি বাঁদিক থেকে ডানদিকে নিম্নগামী একটি সরলরেখা, এবং এই বাজেট ঢাল (slope) হল −yPy /−yPx = PxPy
এক্ষেত্রে −y হল ব্যয়যোগ্য আয়, Px এবং Py হল যথাক্রমে x এবং y-এর মূল্য।
প্রশ্ন ১৯০। চাহিদারেখার সরণের জন্য দায়ী যে কোনও দুটি উপাদানের উল্লেখ কর।
উত্তর। চাহিদা রেখা সরণের জন্য দায়ী দুটি উপাদান হল (১) আয় এবং (২) বিকল্প দ্রব্যের দামের পরিবর্তন। যদি দাম একই থাকে তবে আয় বেড়ে গেলে চাহিদা রেখার সরণ হতেপারে। আবার x-এর বিকল্প দ্রব্য হিসাবে যদি y-এর দাম বেড়ে যায় তবে x-এর জন্য চাহিদা বাড়তে পারে এবং চাহিদা রেখার সরণ হতে পারে।
প্রশ্ন ১৯১। প্রান্তিক ব্যয় রেখা, গড় ব্যয় রেখার কোন্ বিন্দুতে ছেদ করে ?
উত্তর। প্রান্তিক ব্যয় রেখা গড় ব্যয় রেখার সর্বনিম্ন বিন্দুতে ছেদ করবে।
প্রশ্ন ১৯২। পরিবর্ত প্রভাবের ক্ষেত্রে ভোগকারীর উপযোগ স্তরের গতি কী হয়?
উত্তর। পরিবর্ত প্রভাবের ক্ষেত্রে দেখা যায় একটি দ্রব্যের (ধরা যাক x) দাম কমে গেলে এবং বিকল্প দ্রব্যটির (ধরা যাক y) অপরিবর্তিত থাকলে, ক্রেতার কাছে সস্তা দ্রব্যটির উপযোগস্তর বেড়ে যাবে।
প্রশ্ন ১৯৩। পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনও ফার্মের দীর্ঘকালীন ভারসাম্যের প্রথম স্তরের শর্তটি উল্লেখ কর।
উত্তর। পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনও ফার্মের দীর্ঘকালীন ভারসাম্যের প্রথম স্তরের শর্তটি হল, ফার্মের প্রান্তিক ব্যয় (MC) = প্রান্তিক আয় (MR) এবং প্রান্তিক ব্যয় রেখা (MC curve) প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় রেখাকে (MR Curve) নীচের দিক থেকে এসে ছেদ করবে।
প্রশ্ন ১৯৪। গড় রেভিনিউ স্থির থাকলে, গড় রেভিনিউ ও প্রান্তিক রেভিনিউ–এর মধ্যে সম্পর্ক কী হয়?
উত্তর। গড় রেভিনিউ (AR) স্থির থাকলে গড় রেভিনিউ এবং প্রান্তিক রেভিনিউ (MR) সমান থাকে।
প্রশ্ন ১৯৫। কোনও ফার্মে মাত্রা পরিবর্তনের হ্রাসমান প্রতিদান কার্যকরী থাকলে দীর্ঘকালীন গড় ব্যয়রেখার গতি কী হবে?
উত্তর। কোনও ফার্মে মাত্রা পরিবর্তনের হ্রাসমান প্রতিদান কার্যকরী থাকলে দীর্ঘকালীন গড় ব্যয়রেখা ঊর্ধ্বমুখী হবে।
প্রশ্ন ১৯৬। কোন্ ধরনের বাজারে ভারসাম্যের বিন্দুতে দাম এবং প্রান্তিক ব্যয় সমান হয়?
উত্তর। পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ভারসাম্যের বিন্দুতে দাম এবং প্রান্তিক ব্যয় সমান হয় ৷
প্রশ্ন ১৯৭। কোন্ ধরনের বাজারে জোগান রেখা নেই?
উত্তর। একচেটিয়ামূলক বাজারে জোগান রেখা নেই।
প্রশ্ন ১৯৮। প্রান্তিক আয় উৎপাদন কী?
উত্তর। প্রান্তিক উৎপাদন (MP) বাজারে বিক্রি করলে যে বিক্রয়লব্ধ অর্থ (MR) পাওয়া যায় (MP X MR) তাকে বলা হয় প্রান্তিক আয় উৎপাদন (Marginal revenue product)।
প্রশ্ন ১৯৯। মূলধনের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। মূলধন হচ্ছে উৎপাদনের এমন একটি উপাদান যা আগেই উৎপাদিত হয়েছে (Capital is a produced means of production) । মূলধন বস্তুগত সম্পদ (physical asset) এবং আর্থিক সম্পদ (financial asset) উভয়ই হতে পারে।
প্রশ্ন ২০০। সমোৎপাদন রেখার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। একটি সমোৎপাদন রেখা হল এমন একটি রেখা যার উপর যে কোন বিন্দুতে দুটি উপাদানের সমন্বয়ে একই পরিমাণে উৎপাদন সূচিত হয়।
প্রশ্ন ২০১। রিকার্ডোর ধারণায় খাজনা কী?
উত্তর। রিকার্ডোর ধারনায় খাজনা হল একটি পার্থক্যমূলক উদ্বৃত্ত (a differential surplus)। একই খরচে বিভিন্ন প্রকার জমিতে চাষ করলে অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট জমি নিকৃষ্ট জমি অপেক্ষা কিছু উদ্বৃত্ত লাভ করে—এই উদ্বৃত্ত হল খাজনা।
প্রশ্ন ২০২। সুদের নগদ পছন্দ অথবা তারল্যের পছন্দ তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
উত্তর। সুদের তারল্যের পছন্দ তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন কেইনস। তাঁর পুরো নাম হল জন মেনার্ড কেইনস ।
প্রশ্ন ২০৩। মোট সুদ ও নিট সুদের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উত্তর। টাকা ধার দেওয়ার সময়ে মহাজন যে সুদ ধার্য করে সেই সুদ তার প্রাপ্য সর্বনিম্ন সুদ নয়। ধার গ্রহণকারীর ধার শোধ করার ক্ষমতা কীরূপ, সময়মতো সে সুদের টাকা দিতে পারবে কিনা এবং ঋণ শোধ করতে পারবে কিনা, সুদ আদায় করার জন্য সে নিজে কতটা ঝামেলা পোহাতে পারবে প্রভৃতি বিষয় চিন্তা করে মহাজন যতটা নিম্ন পরিমাণ সুদ ধার্য করার কথা তা অপেক্ষা বেশি পরিমাণ সুদ ধার্য করে। তখন সেই সুদ হল মোট সুদ। ধার গ্রহণকারীর এই মোট সুদ থেকে সর্বনিম্ন সুদের অতিরিক্ত যেটা ধার্য করা হয়েছে সেটা যদি বাদ দেওয়া হয়, তবে অবশিষ্ট সুদ হল নিট সুদ। মোট সুদ সর্বদা নিট সুদের চেয়ে বেশি থাকে।
প্রশ্ন ২০৪। যৌথ দরকষাকষি কাকে বলে?
উত্তর। কোনও শিল্প প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে মজুরি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষের মধ্যে যে দরকষাকষি হয় তাতে শ্রমিকপক্ষ বিভিন্ন শ্রমিক সংঘের প্রতিনিধিত্ব করে। অপরদিকে মালিকপক্ষ এককভাবে অথবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সম্মিলিত প্রতিষ্ঠান বা সংঘ এই দরকষাকষির মাধ্যমে মজুরি নির্ধারণ অথবা শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিদাওয়া নিয়ে দরকষাকষি করে। এটাকে বলা হয় যৌথ দরকষাকষি (Collective bargaining)। আলাদাভাবে শ্রমিকের সঙ্গে মালিকের কোন চুক্তি হয় না। যা চুক্তি হয় সেটা যৌথভাবে মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষের মধ্যে দরকষাকষির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। যদি কোনও শিল্পে একটিই শ্রমিকসংঘ থাকে তবে সেই শ্রমিকসংঘ এই দরকষাকষিতে অংশগ্রহণ করে। যদি কোনও শিল্পে একাধিক শ্রমিকসংঘ থাকে তবে একাধিক শ্রমিকসংঘও যৌথ দরকষাকষিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
প্রশ্ন ২০৫। লেখচিত্র সহ নিরপেক্ষ মানচিত্রের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। যখন আমরা একাধিক নিরপেক্ষ রেখা এমনভাবে আঁকি যে প্রতিটিই গোড়া নিরপেক্ষ রেখা থেকে ডানদিকে উপরের দিকে সরে যাচ্ছে তখন এগুলিকে বলা হয় নিরপেক্ষ মানচিত্র (Indifference Map)।
১৯নং চিত্রে একটি নিরপেক্ষ মানচিত্র দেখানো হল
এই চিত্রে I2I‘2 নিরপেক্ষ রেখার পছন্দের স্তর (level of saisfaction) I1I‘1 নিরপেক্ষ রেখার পছন্দের স্তরের তুলনায় বেশি। অনুরূপভাবে I3I‘3 নিরপেক্ষ রেখার পছন্দের স্তর I2I‘2 নিরপেক্ষ রেখার পছন্দের স্তরের তুলনায় বেশি। নিরপেক্ষ মানচিত্রে প্রতিটি নিরপেক্ষ রেখা পরস্পরের সমান্তরাল।
প্রশ্ন ২০৬। প্রান্তিক রেভিনিউ এর মান ০ (শূন্য) হলে, চাহিদার দামস্থিতিস্থাপকতার মান নিরূপণ কর।
উত্তর। প্রান্তিক রেভিনিউ–এর মান ০ (শূন্য) Y হলে চাহিদার দামস্থিতিস্থাপকতার মান একক (unity) হয়। ২০নং চিত্রে এটা দেখানো হল । এই চিত্রে Q বিন্দুতে প্রান্তিক রেভিনিউ–এর মান হল শূন্য। Q-বিন্দু থেকে মূল্য–অক্ষের সমান্তরাল একটি লম্ব টানলে সেই লম্বটি গড় আয় রেখাকে (AR curve) সমানভাবে দ্বিখণ্ডিত করে এবং সেক্ষেত্রে চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা হয় একক।
প্রশ্ন ২০৭। একক স্থিতিস্থাপক চাহিদারেখার আকৃতি কেমন হয়?
উত্তর। একক স্থিতিস্থাপক চাহিদারেখার ক্ষেত্রে উপর থেকে নিম্নাভিমুখী চাহিদার সরলরেখা মধ্যবিন্দু চিহ্নিত করতে হয়। ২১ নং চিত্রে DD’ হল চাহিদা রেখা। এই রেখাটির মধ্যবর্তী বিন্দুতে e = 1
প্রশ্ন ২০৮। মজুরি ও বেতনের মধ্যে পার্থক্য কী ?
উত্তর। মজুরি এবং বেতনের মধ্যে পার্থক্য হল—মজুরি আর্থিক মজুরি (Money wage) এবং প্রকৃত মজুরি (Real wage) উভয় প্রকার হতে পারে। কিন্তু বেতন হল শুধু আর্থিক মজুরি। এই মজুরি দৈনিক বা মাসিক হতে পারে। অনেক সময় কাজের বিনিময়ে মজুরি টাকায় না দিয়ে জিনিসপত্র বা কতিপয় প্রকৃত সুবিধা দেওয়া (real benefits) ইত্যাদির মাধ্যমে প্রদান করা হয়। সেটা হল প্রকৃত মজুরি।
প্রশ্ন ২০৯। কোনও ফার্মের মুনাফা সর্বাধিকীকরণের শর্তগুলি কী কী?
উত্তর। কোনও ফার্মের মুনাফা সর্বাধিকীকরণের শর্তগুলি হল :
(১) প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় (MR) সর্বদা প্রান্তিক ব্যয়ের (MC) সমান, এবং (২) প্রান্তিক বায় রেখা নীচের দিক থেকে এসে প্রান্তিক ব্যয় রেখাকে ছেদ করে (MR = MC, and MC curve cuts the MR curve from below) |
প্রশ্ন ২১০। সুযোগ ব্যয়ের ধারণা দাও।
উত্তর। কোনও সম্পদের পরবর্তী সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের মূল্য (the value of a resource in its next best use) হল সম্পদটির সুযোগ ব্যয়। অর্থাৎ কোনও সম্পদের বিকল্প ব্যবহার করতে গেলে যে ব্যয় হয় সেটা হল তার সুযোগ ব্যয়।
প্রশ্ন ২১১। উদ্ভাবন কী?
উত্তর। উদ্ভাবন হল নতুন উৎপাদন অপেক্ষক অথবা নতুন উৎপাদন পদ্ধতির প্রবর্তন। স্যুমপিটারের (Schumpeter) মতে নতুন উদ্ভাবন হল মুনাফার একটি উপাদান।
প্রশ্ন ২১২। উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা কাকে বলে ?
উত্তর। উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা (Production Possibility Curve) হল প্রকৃতপক্ষে একটি সীমারেখা (frontier) যার সাহায্যে আমরা দেখতে পাই একটি নির্দিষ্ট সম্পদকে কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে দুটি দ্রব্য উৎপাদনের
ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ২২ নং চিত্রে এটা দেখানো হয়েছে। ধরা যাক, কোন দেশ তার সীমিত সম্পদের সাহায্যে বন্দুক উৎপাদন করতে পারে, আবার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য রুটিও উৎপাদন করতে পারে। ২২নং চিত্রটি দেখাচ্ছে OP পরিমাণ অস্ত্র হিসাবে বন্দুক অথবা OP1 পরিমাণ খাদ্য হিসাবে রুটি উৎপাদন করা যেতে পারে। আবার, দুটি দ্রব্যই প্রয়োজনীয় এই হিসাবে A, B, C প্রভৃতি বিন্দুতে বন্দুক বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হলে রুটি কম পরিমাণে উৎপাদিত হবে। আবার রুটি বেশি উৎপাদিত হলে বন্দুক কম উৎপাদিত হবে। A বিন্দুতে বন্দুক বেশি উৎপাদিত হচ্ছে এবং C বিন্দুতে রুটি বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। D বিন্দুতে দক্ষতার সঙ্গে কোনটিই উৎপাদিত হবে না। এক্ষেত্রে PP1, রেখাটি হল ‘উৎপাদন সম্ভাবনা‘ রেখা।
প্রশ্ন ২১৩। দুটি সম্পূর্ণ পরিবর্ত দ্রব্য ও দুটি সম্পূর্ণ পরিপূরক দ্রব্যের নিরপেক্ষ রেখার আকৃতি অঙ্কন করে দেখাও।
উত্তর। দুটি সম্পূর্ণ পরিবর্ত দ্রব্যের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ রেখা উল্লম্ব অক্ষ এবং ভূমি অক্ষ সংযোগকারী একটি সরলরেখা হবে। নীচে ২৩নং চিত্রে এটা দেখানো হল :—
এক্ষেত্রে x এবং y সম্পূর্ণভাবে পরিবর্ত দ্রব্য (substitutes), II ́ হল নিরপেক্ষ রেখা। দুটি পরিপূরক দ্রব্যের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ রেখা L-আকৃতির হবে। ২৪নং চিত্রে এটা দেখানো হল : এক্ষেত্রে x এবং y দুটি পরিপূরক দ্রব্য হলে এই দুটি দ্রব্য একটি স্থির পরিমাপে (fixed proportion) কেনা হবে। তখন নিরপেক্ষ রেখা হবে II ́ এই রেখাটি L-আকৃতির।
প্রশ্ন ২১৪। মনে কর দ্রব্যের দাম ৬ টাকা হলে একজন ক্রেতা ৬০০ একক দ্রব্য ক্রয় করে। যদি দ্রব্যটির দাম বেড়ে ১০ টাকা হয় এবং দ্রব্যটির চাহিদার দামগত স্থিতিস্থাপকতার মান এক হয় সেক্ষেত্রে ক্রেতা কত একক দ্রব্য চাহিদা করবে?
উত্তর। যদি দ্রব্যটির দাম ৬ টাকা থেকে বেড়ে ১০ টাকা হয়, সেক্ষেত্রে ক্রেতা ৩৬০ একক দ্রব্য চাহিদা করবে।
প্রশ্ন ২১৫। (ক) চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতার মান 2 এবং প্রান্তিক রেভেনিউ–এর মান 3 হলে, গড় রেভেনিউ–এর মান নির্ণয় কর।
(খ) গড় রেভেনিউ ও চাহিদার দাম–স্থিতিস্থাপকতার মান যথাক্রমে 100 এবং 4 হলে প্রান্তিক রেভিনিউ–এর মান নির্ণয় কর।
উত্তর। (ক) গড় রেভেনিউ–এর (AR) মান হল :
AR = MR ×ee−1 = 322−1 = 321 = 6
(খ) MR = P- Pe । সুতরাং এক্ষেত্রে MR = 100 – 1004= 100-25 = 75
প্রশ্ন ২১৬। প্রান্তিক পরিবর্ততার হার কী?
উত্তর। নিরপেক্ষ রেখাভিত্তিক চাহিদা তত্ত্বে দুটি দ্রব্যের মধ্যে (y এবং x) পরস্পরের বিকল্প হলেও সম্পূর্ণভাবে বিকল্প (perfect substitutes) নয়। নিরপেক্ষ রেখার ঢাল হল দুটি দ্রব্যের ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক বিনিময় হার বা পরিবর্ততার হার (Marginal Rate of Substitution)। এটাকে এইভাবে দেখানো হয়, MRSxy=δyδx
প্রান্তিক বিনিময় বা পরিবর্ততার হার (MRS) হল x-এর প্রান্তিক উপযোগের তুলনায় y-এর প্রান্তিক উপযোগের হার। [চিত্র নং ৩.৮(ক)] এক্ষেত্রে দ্রষ্টব্য।
প্রশ্ন ২১৭। মাত্রা পরিবর্তনজনিত সমহার প্রতিদানের নিয়ম বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর। যদি সম–উৎপাদন মানচিত্রে উৎপাদকের প্রথম সম–উৎপাদন রেখা থেকে দ্বিতীয় সম–উৎপাদন রেখার দূরত্ব এবং দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় অথবা তৃতীয় থেকে চতুর্থ এভাবে সম– উৎপাদন রেখার দূরত্ব সমান থাকে, এবং সেই সঙ্গে উৎপাদকের বিভিন্ন পরিমাণে উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাজেট রেখাগুলি ও ভারসাম্য বিন্দুগুলির (বাজেট রেখা ও সম–উৎপাদন রেখার স্পর্শক ‘বিন্দু) দূরত্ব সমান থাকে তবে তাকে বলা হয় মাত্রা পরিবর্তনজনিত সমহার প্রতিদানের নিয়ম (Constant Returns to Scale) |
প্রশ্ন ২১৮। একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতার একটি ধারণা দাও।
অথবা, একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাকে বলে?
উত্তর। একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতা হল পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও একচেটিয়া কারবারের সংমিশ্রণ। একচেটিয়ামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল : (১) স্বল্পকালে ফার্মের সংখ্যা সীমিত, কিন্তু দীর্ঘকালে বাজারে ফার্মের অবাধ প্রবেশ (free entry) এবং স্বল্পকালে ফার্মগুলির অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন ও দীর্ঘকালে ফার্মগুলির স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন। (২) দ্রব্যের ক্ষেত্রে গুণগত পার্থক্য (Product differentiation)। (৩) বিক্রেতারা নিজেদের উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা বাড়ানোর জন্য ও নতুন চাহিদা সৃষ্টি করার জন্য বিজ্ঞাপনজনিত অর্থব্যয় (selling cost) করে থাকে। (৪) একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতায় দুই ধরনের চাহিদা দেখা যায়,— একটি হল আনুপাতিক চাহিদা (proportional demand) যা পাওয়া যায় ফার্মের সমবেত চাহিদার (Group demand) অনুভূমিক বিভাজনের দ্বারা এবং আরেকটি হল উপলব্ধ বা প্রত্যাশিত চাহিদা (Perceived demand)। এবং (৫) একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতার বাজারে হলে দীর্ঘকালে যে ভারসাম্য অর্জিত হয় সেটাকে সমবেত ভারসাম্য (Group Equilibrium)
প্রশ্ন ২১৯। নীচের দাম–চাহিদা সম্পর্ক থেকে ক্রেতার চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতার মূল্য নির্ধারণ কর।
উত্তর। দাম (টাকা) চাহিদা (কিলো)
১৫ ১৩০
১০ ২০০
এক্ষেত্রে চাহিদার দাম–স্থিতিস্থাপকতা ১ অপেক্ষা বেশি। কারণ, ১৫ টাকা দামে ক্রেতার মোট ব্যয় হয় ১৯৫০ টাকা এবং ১০ টাকা দামে ক্রেতার মোট ব্যয় ২০০০ টাকা। সুতরাং ব্যয় পদ্ধতি (outlay method) অনুযায়ী চাহিদার দাম–স্থিতিস্থাপকতা ১ অপেক্ষা বেশি।
প্রশ্ন ২২০। বাজারের কাজ কী কী?
উত্তর। অর্থনীতিতে বাজার বলতে বোঝায় একটি দ্রব্যের অথবা একটি উপাদানের বাজার। বাজারের কাজগুলি হল মূলত কোনও দ্রব্যের জোগান ও চাহিদার প্রক্রিয়া নির্ধারিত করা এবং সংশ্লিষ্ট দ্রব্য অথবা উপাদানের ক্রয়–বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা। কীভাবে জোগান ও চাহিদার ঘাত– প্রতিঘাত হবে এবং সেক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার কী আচরণ হবে সেটা বাজারের কাঠামোর উপর নির্ভর করে।
বাজারের কাঠামো পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক, অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক, একচেটিয়া বিক্রেতা অথবা একচেটিয়া ক্রেতার মুষ্টিমেয় বিক্রেতা, অথবা প্রতিযোগিতা এবং একচেটিয়া কারবারের সংমিশ্রণ,—প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। নির্দিষ্ট বাজারের কাঠামোর মধ্যে বিক্রেতার আচরণ ও ক্রেতার আচরণকে প্রকাশ করাই সংশ্লিষ্ট বাজারের কাজ। চাহিদা ও জোগানের ঘাত–প্রতিঘাতকে বাজারের কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
প্রশ্ন ২২১। একটি উৎপাদনের উপাদানের ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল অনুপাতের নিয়ম বলতে কী বোঝ?
উত্তর। পরিবর্তনশীল অনুপাতের নিয়ম কার্যকর হয় যখন মূলধন (অথবা জমি) স্থির রেখে, অর্থাৎ একটি অথবা একাধিক উৎপাদনের উপাদান স্থির রেখে কোনও পরিবর্তনশীল উপাদানের (যেমন শ্রম) পরিবর্তন ক‘রে উৎপাদন বাড়ানো হয়। সাধারণত স্বল্পকালে এভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়। এক্ষেত্রে উৎপাদনের নিয়ম ক্রমবর্ধমান, স্থির এবং ক্রমহ্রাসমান—এই তিন প্রকার হতে পারে।
প্রশ্ন ২২২। ঋণযোগ্য পুঁজি (বা তহবিলে) জোগানের উৎসগুলি উল্লেখ কর।
অথবা, ঋণযোগ্য তহবিলের জোগানের দুটি উৎস উল্লেখ কর।
উত্তর। ঋণযোগ্য পুঁজির জোগান (Supply of Loanable Fund) গঠিত হয় নিম্নলিখিত উপাদান কর্তৃক—(১) মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ; (২) ব্যাংকগুলি অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি কর্তৃক প্রদত্ত অতিরিক্ত ঋণ ; (৩) আগেকার জমানো টাকা যা বর্তমানে ধার দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে (dishoarding) ; এবং (৪) আগেই বিনিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট ছিল এই রকম অর্থ যা বর্তমানে বিনিয়োগ না করে ধার দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে (Disentangling)। ব্যক্তিগত সঞ্চয়, সরকারের দিক থেকে সঞ্চয় এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অথবা শিল্পগুলির সঞ্চয় প্রভৃতি, ,—যা ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য ধার দেওয়া যায় বা তাতে বিনিয়োগ করা যায়, ঋণযোগ্য পুঁজির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন ২২৩। আর্থিক সুদ ও প্রকৃত সুদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও ৷
উত্তর। টাকার ধার দিলে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে আসল অর্থের উপর যে বাড়তি অর্থ ফেরত পায়, অর্থাৎ, ঋণের দাম বাবদ যে অর্থ পায়, সেটা হল আর্থিক সুদ (Money Interest)। অথবা ঋণ গ্রহীতা ঋণ গ্রহণ করার জন্য ঋণদাতাকে আসল ঋণের উপর যে বাড়তি অর্থ প্রদান করে সেটা হল আর্থিক সুদ।
কিন্তু ঋণ প্রদান করা এবং ঋণের অর্থ ফেরৎ দেওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান থাকে এবং সময়ের এই ব্যবধানের মধ্যে মূল্যস্তরের পরিবর্তন হতে পারে। ধরা যাক, যখন ঋণদাতা ঋণ দিয়েছিল তখন টাকার মূল্য ছিল বেশি। অর্থাৎ জিনিসপত্রের দাম ছিল কম এবং তার ভিত্তিতে সুদের হার ধার্য করা হয়েছিল ৫ শতাংশ। কিন্তু যখন ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া যাচ্ছে তখন টাকার মূল্য অনেক কমে গেছে এবং জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। তখনও যদি ঋণদাতা পূর্বে প্রদত্ত ঋণের উপর ৫ শতাংশ সুদ পায়, তবে তার প্রকৃত সুদ প্রাপ্তির (real interest) পরিমাণ কম হয়। মূল্যস্তরের পরিবর্তনের ফলে প্রকৃত সুদেরও (real interest) পরিবর্তন হয়।
প্রশ্ন ২২৪। প্রান্তিক বাস্তব উৎপাদন এবং প্রান্তিক উৎপাদনের মূল্যের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, প্রান্তিক উৎপাদন মূল্য কাকে বলে ?
উত্তর। অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকলে কোনও দ্রব্যের উৎপাদনে যদি কোনও একটি উপাদানের অতিরিক্ত একটি ইউনিট নিয়োগ করা হয় তবে মোট উৎপাদনের যে পরিবর্তন হয় তা–ই সেই উপাদানের প্রান্তিক বাস্তব উৎপাদন (Marginal Physical Product)। প্রান্তিক বাস্তব উপাদান বাজারে বিক্রি করে যা পাওয়া যায় তাকে প্রান্তিক উৎপাদনের মূল্য (Value of the Marginal Product) বলা হয়।