দুর্গন্ধ
➸ অনেকের ধারণা, ঘাম থেকে শরীরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। কিন্তু তা ভুল। মূল হোতা ত্বকে বসবাসকারী ব্যাকটিরিয়া বা রোগজীবাণু।
➸ আমাদের শরীর থেকে দু‘ধরনের ঘাম বের হয়। গন্ধহীন স্বচ্ছ ‘একরিন‘ যা শরীরের সব অংশ থেকেই নির্গত হয়, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আর একটি হল ‘অ্যাপোক্রিন‘। তুলনামূলক গাঢ়, প্রধানত বাহুমূল ও থাইয়ের ভিতরের অংশ থেকে নিঃসারিত হয়। এটিরও কোনও গন্ধ নেই। কিন্তু রোগজীবাণুর সঙ্গে অ্যাপোক্রিনের প্রতিক্রিয়ার ফলেই দুর্গন্ধর সৃষ্টি হয়।
➸ অতিরিক্ত ঘামাকে বলে হাইপারহাইড্রোসিস। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন
➸এছাড়া কিডনি বা লিভারের সমস্যা, ফাংগাল ইনফেকশন, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া বা ডায়াবিটিস, অত্যধিক পরিমাণে মদ্যপান, ধূমপান বা তামাক খাওয়া, ওবেসিটি, দাঁতের সমস্যা, ভিটামিন মিনারেলের ত্রুটি, ধকল বা ঠিকঠাক হাইজিন বজায় না রাখলে শরীরে দুর্গন্ধর সমস্যা হয়।
দুর্গন্ধ প্রতিরোধ
➸ দিনে অন্তত দু‘বার স্নান করুন
➸ বাহুমূল ও শরীরের অন্যান্য গোপন অংশ নিয়মিত শেভ করুন যাতে ঘাম, নোংরা না জমতে পারে।
➸ আঁটসাঁট জামা বা জুতো পরবেন না।
➸ প্রতিদিন সাবান দিয়ে স্নান করুন। সাবান শরীরের ৯৯.৯ শতাংশ রোগজীবাণু মেরে ফেলে।
➸ শুধু বাহুমূলেই নয়, থাইয়ের ভিতরের অংশ, পায়ের পাতায়ও ঘামে। কাজেই এইসব অংশে বেবি পাউডার বা যে–কোনও ট্যালকম পাউডার মাখুন।
➸ সারাদিন প্রচুর জল খান। রোজ সকালে খালিপেটে এক গ্লাস জলে ৫০০ মিলিগ্রাম হুইটগ্রাস মিশিয়ে খান। ঘাসের ক্লোরিফিল দূর করে।
➸ পরিষ্কার জামাকাপড় পরুন।
➸ নিয়মিত অন্তর্বাস পাল্টান।
➸ সিন্থেটিক পোশাক নয়, সুতির জামা পরুন।
➸সিন্থেটিক জামায় ঘাম জমে ব্যাকটিরিয়ার জন্ম দেয় রাতে শুতে যাওয়ার সময় অ্যান্টিপার্সপিরান্ট মেখে শুতে যান।
➸তেল–ঝাল–মশলা, ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন
➸ স্নানের পর ভাল করে গা–হাত–পা মুছুন। শুকনো জায়গায় জীবাণু জন্মাতে পারে না
➸সারাদিন বাইরে রোদে, ধুলোয় কাজ করতে হলে, বাহুমূলে বেকিং সোডা আর কর্নস্টার্চের মিশ্রণ লাগান। অনেকক্ষণ পর্যন্ত দুর্গন্ধ রুখতে পারবেন।
➸ রোগজীবাণুর সঙ্গে লড়তে পারদর্শী অ্যাপেল সিডার ভিনিগার। পিএইচ–এর ভারসাম্য বজায় রেখে দুর্গন্ধ দূর করে। সকালে ও রাতে অ্যাপেল সিডার ভিনিগারে তুলো ডুবিয়ে বাহুমূলে লাগান। দু’তিন মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন
➸রোজমেরিতে রয়েছে ক্লোরোফিল আর মেনথল যা দুর্গন্ধ কমায়। ১/২ কাপ শুকনো রোজমেরিপাতা ৪ কাপ গরমজলে মিশিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। স্নানের জলে এই মিশ্রণ মিশিয়ে নিন।
➸ ১০ ফোঁটা রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল অল্প জলে মিশিয়ে বাহুমূলেও লাগাতে পারেন।
➸ বেকিং সোডা প্রাকৃতিক ডিয়োডোর্যান্টের কাজ করে। ১ চা চামচ বেকিং সোডা আর ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে বাহুমূল ও শরীরের সেই সমস্ত অংশে লাগান যেগুলো বেশি ঘামে। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই মিশ্রণটি লাগাবেন।
➸ লেবুর রসের আল্লিক বৈশিষ্ট্য ত্বকের পিএইচ–এর মাত্রা কমিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়া মেরে ফেলে। ১টা লেবু অর্ধেক করে কেটে রস বের করে বাহুমূলে লাগান। খানিকক্ষণ রেখে চান করে নিন। সংবেদনশীল ত্বক হলে লেবুর রস ১/২ কাপ জলে মিশিয়ে নিয়ে লাগান।
➸ বেসন আর দই ফেটিয়ে নিয়ে স্নানের আগে সারাশরীরে মেখে নিন। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক ময়েশ্চারাইজড হওয়ার পাশাপাশি দুর্গন্ধ কমবে।
➸ অল্প তুলো উইচ হেজেলে ডুবিয়ে বাহুমূলে লাগান। উইচ হেজেল ত্বকের পিএইচ মাত্রা কমায়। অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট হিসেবে কাজ করে। লোমকূপ সঙ্কুচিত করে, ঘামের পরিমাণ কমায়।
➸স্নানের জলে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মেশান
➸ স্নান করার জলে ৩–৪ কাপ টোম্যাটোর রস মিশিয়ে নিন। এর আম্লিক গুণ জীবাণু মেরে দুর্গন্ধ দূর করে।