ত্বকের যত্নে হোমিয়োপ্যাথি
হঠাৎ করে সচেতন হয়ে ওঠা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে কোনও উপকার হয় না। ত্বক শরীরের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেইজন্য জন্মের পর থেকে এর যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, তবেই সারাজীবন সুন্দর থাকা যায়। ছোটখাটো সমস্যাগুলো অবহেলা না করে সময়মতো চিকিৎসা করানোও জরুরি। সবার আগে অভ্যাস করতে হবে কিছু প্রাথমিক নিয়মকানুন–
১। রোজ স্নান করুন। শীত কালেও। গরম কালে একবার নয়, অন্তত দু‘বার
২। পর্যাপ্ত জল খাওয়া জরুরি
৩। তিনবেলার খাওয়া–দাওয়ায় থাকা চাই সবজি। বিশেষ করে, সবুজ শাকপাতা
৪। ডায়েট চার্টে ফল থাকা চাই–ই চাই
৫। ত্বক ভাল রাখতে ফ্ল্যাক্স সিডস জাদুর মতো কাজ করে। ১ চা চামচ ভেজানো বীজ স্যালাডের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন খান, উপকার পাবেন।
৬। তৈলাক্ত ত্বকে ওয়াটার বেসড টোনার ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। শুকনো ত্বকে ক্রিম বেসড।
৭। ফেশিয়াল বা ফেস ক্লিনিংয়ের সময় গরম ভাপ না নেওয়াই ভাল।
৮। মাল্টিব্লেডেড রেজার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। শেভিং করার জন্য সিঙ্গল ব্লেডই বেস্ট
৯। তৈলাক্ত ত্বক গরম কালে সমস্যা বাড়ায়। সেইজন্য শুকনো বা স্বাভাবিক ত্বক হলে তবেই গ্রীষ্মে ময়েশ্চারাইজার লাগান, তেলতেলে হলে নয়।
১০। অহেতুক প্রসাধন ব্যবহার না করাই ভাল। এমন প্রসাধন ব্যবহার করুন যাতে রাসায়নিকের পরিমাণ কম থাকে।
১১। ঘুম কম হলে ছাপ পড়ে চোখে–মুখে। শরীরের যে–কোনও অংশ সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম ভীষণ প্রয়োজন।
১২। স্পর্শকাতর ত্বকের সমস্যা বেশি। এমনিতেই সারাক্ষণ অ্যালার্জি হতেই থাকে। একটু ঘষাঘষি করলে লালচে হয়ে র্যাশ বেরিয়ে যায়। জ্বালাভাব থাকে। রোদ, প্রসাধন সব কিছুই এই ধরনের ত্বকের শত্রু। স্পর্শকাতর ত্বক খুব সহজেই আর্দ্রতা হারিয়ে শুকনো হয়ে যায়। ব্রণর সমস্যা থাকলে সারতে চায় না। ত্বকের প্রকৃতি এইরকম হলে তুলনামূলকভাবে বেশি যত্নের প্রয়োজন।
১৩। স্পর্শকাতর ত্বকের বড় শত্রু রোদ। একটানা অনেকক্ষণ চড়া রোদে থাকলে যে–
কোনওরকম অসুবিধা হতে পারে। সানবার্ন হয়। চামড়ার ওপরের স্তর পুড়ে কালচে হয়ে যায়। ত্বক স্পর্শকাতর হলে ফোসকা পড়ে। সানব্লক লাগালেও তেমন কাজ হয় না। এই ধরনের ত্বকে রোদ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
১৪। জোরালো হাওয়াও স্পর্শকাতর ত্বকের ক্ষতি করে। সেইজন্য বাস বা ট্রেনে হাওয়ার দিকে না বসাই ভাল।
১৫। দীর্ঘসময় এসির মধ্যে থাকলে সাবধান, রুক্ষতা বাড়বে। এটি সবধরনের ত্বকেই প্রযোজ্য। চামড়ায় টানভাব লাগলেই অল্প একটু ময়েশ্চারাইজার মেখে নিন।
১৬। ভারতীয় ত্বকে মেচেতা খুব একটা হয় না। তবে কারওর কারওর মুখে ছোট ছোট বাদামি ছোপ দেখা যায়। এগুলো অনেকসময় এজ স্পট, অনেকসময় মেচেতা। সেটা বোঝার জন্য ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে। মেচেতা হলে রোদ লাগানো একদম কমিয়ে দিন। ফরসা ত্বকে মেচেতা বেশি হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো গাঢ় হয় ও ছড়িয়ে পড়ে। রোদের ক্ষতি আটকাতে ত্বকে স্বাভাবিকভাবে জমাটবাঁধা মেলানিন–ই মেচেতা।
১৭। রোজকার সমস্যা ছাড়াও যে–সমস্ত চামড়ার অসুখ আমাদের বিব্রত করে— Seborrhoea capitals, অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডায়াপার র্যাশ, হাম বা মিজলস, চিকেন পক্স, মাসকিউলো কিউটোনিয়াশ, ব্রণ, র্যাশ, খুশকি ইত্যাদি। কিছু জিনিস নিজে থেকেই সেরে যায় আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। এছাড়া ব্রণ বা খুশকির মতো অসুখও অবহেলায় জটিল আকার ধারণ করে। সেইজন্য মাঝেমধ্যে ডাক্তারের সাহায্য নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ
১৮। গায়ে দুর্গন্ধ হলে দিনে নিয়মিত স্নান ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। বিশেষ করে গরমে
১৯। স্নানের সময় শরীরের বিভিন্ন সংযোগস্থল (যেমন, বাহুমূল, কুঁচকি, হাঁটুর পিছনের দিক) অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল সাবান দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করুন
২০। বাহুমূল সবসময় পরিষ্কার রাখুন
২১। সুতির পোশাক পরুন
ব্রণ থেকে বাঁচতে
স্ট্রেস, উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া, অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক, লোমকূপে নোংরা জমে থাকা, হরমোনাল ইমব্যালান্স ছাড়াও বিভিন্ন কারণে ব্রণ হয়। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ব্ৰণ সারাশরীরেও ছড়িয়ে পড়ে। বয়ঃসন্ধিকালে অল্পস্বল্প ব্রণ স্বাভাবিক। পরবর্তী সময়েও এটি বাড়তে থাকলে মুশকিল। এই অবস্থায় সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড অর্থাৎ, তৈলগ্রন্থি খুব বেশি সক্রিয় হয়ে যায়। তেলতেলে ত্বকে ময়লা আটকে সমস্যা বাড়ায়।
কীভাবে সারাবেন
১। ওষুধের সাহায্যে সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ডের সক্রিয়তা কমিয়ে।
২। কেরাটিনিসেশন প্রক্রিয়ায় (যে–পদ্ধতিতে কোষে কেরাটিন সঞ্চয় হয়) রদবদল এনে।
৩। ওষুধের সাহায্যে সংক্রমণ ছড়ানো আটকানো যায়
৪। ডাক্তারি পদ্ধতি ছাড়াও রোজ রুটিনে সামান্য অদলবদল করলে ব্রণর হাত থেকে বাঁচা সম্ভব। অন্তত দু‘বার ফেস ওয়াশ ক্রিম বা জেল দিয়ে ভাল করে মুখ পরিষ্কার করুন।
৫। গরমের সময় মাঝেমধ্যে মুখে এমনি জলের ঝাপটা দিন। এতে অতিরিক্ত তেল– ময়লা কেটে যাবে। জরুরি নয় যে, সবসময় ফেস ওয়াশ ব্যবহার করতেই হবে।
৬। কোমেডোজেনিক ড্রাগ, তেল ও অতিরিক্ত কসমেটিকের ব্যবহার বন্ধ করুন।
৭। দিনে দু‘বার মুখ ধোয়ার পর টোনার লাগানোর অভ্যাস করুন।
৮। ব্রণ থাকলে কখনও মুখে গরমজলের ভাপ নেবেন না।
৯। ব্রণর সঙ্গে ব্ল্যাক বা হোয়াইট হেডস থাকলে আর এক বিপত্তি। এগুলো তুলে না ফেললে ত্বকের সমস্যা বাড়ে। কারণ, এগুলো লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। ত্বকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হতে পারে না। সেইজন্য নিয়মিত ব্ল্যাক ও হোয়াইট হেডস রিমুভ করতে হবে। এছাড়া পোরস ক্লেনজিং স্ট্রিপ পাওয়া যায়, সেগুলো কাজে লাগানো যায়।
১০। মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন বেশি তৈরি হলে ব্রণর বাড়বাড়ন্ত হয়। এই অবস্থায় সবার আগে ওষুধের সাহায্যে হরমোন ক্ষরণ স্বাভাবিক করতে হবে। নাহলে ব্রণ সারানো যাবে না
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওডি) থাকলেও ব্রণ হবে। অসুখ সারলে তবেই কমবে বাকি সমস্যা। পিসিওডি ক্রনিক প্রবলেম। সময়মতো চিকিৎসা করলে এটি আয়ত্তে আনা সম্ভব। হোমিয়োপ্যাথিতে এমন কিছু ওষুধ ও পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে পিসিওডি সামলানো সম্ভব, কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই