
Itihaser Dharona
ইতিহাসের ধারণা
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সোমপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন ?
উত্তর দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ।
সরকারি নথিপত্র কোথায় সংরক্ষণ করে রাখা হয় ?
উত্তর মহাফেজখানায়।
বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনীর নাম কী ?
উত্তর সত্তর বৎসর।
কোন বছর সোমপ্রকাশ পত্রিকার প্রকাশনা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয় ?
উত্তর 1898 সালে।
কলকাতার ঔপনিবেশিক স্থাপত্যগুলির একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল।
ভারতে কোন বছর রেলপথ প্রবর্তিত হয় ?
উত্তর 1853 খ্রিস্টাব্দে।
বিশ শতকের কোন দশককে নতুন সামাজিক ইতিহাসের স্বর্ণযুগ বলা হয় ?
উত্তর 1970-এর দশককে।
কত খ্রিস্টাব্দে অ্যানালস স্কুল ও অ্যানালস পত্রিকা গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছিল?
উত্তর 1929 সালে।
কাকে ভারতের ‘প্রথম ওভারহেড বোলার‘ বলা হয়?
উত্তর নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীকে।
কাকে উড়ন্ত শিখ বলা হয় ?
উত্তর মিলখা সিংহকে।
কে কালাজ্বরের ওষুধ আবিষ্কার করেন?
উত্তর ডা: উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী।
ফোক ডান্স অব বেঙ্গল গ্রন্থটির লেখক কে?
উত্তর গুরুসদয় দত্ত।
কখন শহরের ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছিল ?
উত্তর 1970 সালে।
ব্রিটিশ সরকার গান্ধিজিকে মোট কতগুলি চিঠি পাঠিয়েছিল?
উত্তর 47টি।
‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়‘ গানটির রচয়িতা কে?
উত্তর রজনীকান্ত সেন।
‘দ্য অ্যানালস‘ পত্রিকাটি কবে প্রকাশিত হয় ?
উত্তর 1928 খ্রিস্টাব্দে।
খেলাধুলা বিষয়ে ‘বাপি বাড়ি যা‘ গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর গৌতম ভট্টাচার্যের লেখা।
‘একেই বলে শুটিং‘ কার লেখা?
উত্তর সত্যজিৎ রায়ের লেখা।
ভারতের প্রথম ফুটবল ক্লাবের নাম কী ?
উত্তর কলকাতা এফ.সি.।
ভারতীয় ফুটবলের জনক কাকে বলা হয় ?
উত্তর নগেন্দ্রনাথ সর্বাধিকারীকে।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তর 1835 খ্রিস্টাব্দে।
‘বন্দেমাতরম‘ সংগীতটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?
উত্তর বঙ্গদর্শন পত্রিকায়।
একাত্তরের ডায়েরী‘র রচয়িতা কে?
উত্তর সুফিয়া কামাল ।
বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্রের নাম কী ?
উত্তর ‘বাঙ্গাল গেজেট‘ (1818 খ্রিস্টাব্দ)।
‘পথের পাঁচালী‘ ছবির পরিচালক কে ছিলেন ?
উত্তর সত্যজিৎ রায় ।
ভারতে কবে থেকে প্রথম বন সংরক্ষণ আইন চালু হয় ?
উত্তর 1878 খ্রিস্টাব্দ থেকে।
প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রের নাম কী ?
উত্তর বিশ্বমঙ্গল।
প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্রের নাম কী ?
উত্তর জামাইষষ্ঠী (1931 খ্রিস্টাব্দে)।
নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন–এর নেত্রী কে ছিলেন ?
উত্তর মেধা পাটকর।
মান্না দে–র আত্মজীবনীর নাম কী ?
উত্তর ‘জীবনের জলসাঘরে’।
ন্যাশনাল জিমনেশিয়াম কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর নবগোপাল মিত্ৰ ৷
‘খো খো খেলার সূত্রপাত প্রথম কোন দেশে হয়েছিল ?
উত্তর পশ্চিম ভারতে।
নাট্যশাস্ত্রের ব্যাখ্যাকারের নাম কী?
উত্তর আচার্য অভিনব গুপ্ত ।
বাংলার লোকনৃত্য কী নামে পরিচিত?
উত্তর ছৌনাচ।
সত্যজিৎ রায় কতগুলি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন ?
উত্তর 29টি।
মুঘল যুগের চিত্রকলা কী নামে পরিচিত ?
উত্তর মিনিয়েচার (বৃহৎ জিনিসের ক্ষুদ্রাকৃতির সংস্করণ)।
আধুনিক ভারতে চিত্রকলার উদ্ভব কোন শতকে ঘটে ?
উত্তর উনিশ শতকে।
কোন দশককে নতুন সামাজিক ইতিহাসের স্বর্ণযুগ বলা যায় ?
উত্তর 1970-এর দশককে।
নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনক কাকে বলা হয় ?
উত্তর : অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রগুলি কী নামে পরিচিত?
উত্তর ‘রবীন্দ্রচিত্রাবলী‘।
অগ্নিযুগের কন্যা নামে কে পরিচিত?
উত্তর সরলাদেবী চৌধুরাণী।
কোন খেলাকে খেলার রাজা বলা হয় ?
উত্তর ক্রিকেট খেলাকে।
কারা প্রথম বায়োস্কোপের বাণিজ্যিক প্রদর্শন করেন ?
উত্তর লুমিয়াম ভ্রাতৃদ্বয় (প্যারিসের)।
‘সাইলেন্ট স্প্রিং‘ গ্রন্থটি কে রচনা করেন ?
উত্তর র্যাচেল কারসন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
নতুন সামাজিক ইতিহাস কী ?
উত্তরঃ অ্যানাল গোষ্ঠীর উদ্যোগে 1960-এর দশক থেকে যে ইতিহাস সমাজের সাধারণ মানুষের জীবন–জীবিকা, কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করছে তা–ই নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চা নামে পরিচিত।
ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী ?
উত্তরঃ সংবাদপত্র দ্বারা শক্তিশালী জনমত গঠন করা যায়; মানবসমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তির মতামতকে সংবাদপত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ ছাড়া আমাদের দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রেও সংবাদপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন?/স্থানীয় ইতিহাস বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ (ক) আধুনিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণ কোনো স্থানের নির্দিষ্ট কোনো (খ) জনজাতি বা সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা, শিল্প–সংস্কৃতি, ধর্মীয়–সামাজিক রীতিনীতির ওপর ভিত্তি করে যখন ইতিহাস রচনা করেন, তখন তাকে স্থানীয় ইতিহাস বলা হয়ে থাকে।
আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ যখন কোনো মানুষ নিজের জীবনের ঘটনাবলি বইয়ের আকারে লেখে তাকে বলা হয় আত্মজীবনী। জীবনের বিভিন্ন ঘটনা স্মৃতিতে থাকে কিন্তু সেইসকল স্মৃতির ওপর ভিত্তি করে কোনো গ্রন্থ সংকলন করা হলে তাকে বলা হয় স্মৃতিকথা। যেমন—বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’, মণিকুন্তলা সেনের লেখা স্মৃতিকথা ‘সেদিনের কথা‘।
সরকারি নথি থেকে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি? ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে সরকারি নথিপত্রের সীমাবদ্ধতা কী ?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সরকারি নথিপত্র ত্রুটিমুক্ত নয়। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গোয়েন্দা ও পুলিশ রিপোর্ট হয় বিকৃত বা ভুলে ভরা ও একপেশে। তাই গবেষক ও ঐতিহাসিকদের সতর্কতার সঙ্গে সরকারি নথিপত্র থেকে তথ্যসংগ্রহ করতে হবে এবং তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নিতে হবে। তাহলেই নির্ভুল বা নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা সম্ভব হবে।
সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের মধ্যে দু‘টি পার্থক্য লেখো।
উত্তরঃ (ক) যেকোনো সংবাদপত্র প্রতিদিন প্রকাশিত হয়, অন্যদিকে সাময়িকপত্র নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকাশিত হয়। (খ) সংবাদপত্রগুলির পৃষ্ঠা সাধারণত খোলা থাকে এবং তা আকারে বড়ো হয়। অন্যদিকে সাময়িকপত্রগুলির আয়তন তুলনামূলকভাবে ছোটো হয় এবং বহুক্ষেত্রে তা বইয়ের ন্যায় বাঁধানো থাকে।
ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে 1911 খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তরঃ 1911 খ্রিস্টাব্দে বাংলার মোহনবাগান ক্লাব ইংরেজদের ইয়র্কশায়ার ক্লাবকে ফুটবল খেলায় হারিয়েছিল। এই খেলাকে কেন্দ্র করে বাঙালি তথা ভারতীয়দের মধ্যে যে ঐক্য দেখা যায়, তার স্পর্ধিত প্রকাশ ঘটে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক 1911 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে।
‘সরকারি নথিপত্র‘ বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ সরকারি আধিকারিক, পুলিশ, গোয়েন্দা ও সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সমকালীন বি প্রত্যক্ষ ঘটনা সম্পর্কে যেসকল তথ্য লিখে গেছেন, তা–ই সরকারি নথিপত্র নামে পরিচিত।
নতুন সামাজিক ইতিহাসের বৈচিত্র্যগুলি কী?
উত্তরঃ নতুন সামাজিক ইতিহাস অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এতে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়গুলি ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। যেমন—বংশলতিকা, পারিবারিক অ্যালবয়াম,ব্যক্তিগত ডায়ারি ইত্যাদি।
স্বাধীনতার পর ভারতীয় নৃত্যের ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এমন কয়েক জনের নাম লেখো।
উত্তরঃ স্বাধীনতার পর ভারতীয় নৃত্যের ক্ষেত্রে উদয়শঙ্কর, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, মহারাজ, কেলুচরণ মহাপাত্র প্রমুখ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
সত্যজিৎ রায়ের যে চলচ্চিত্রগুলিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় সেগুলির নাম লেখো।
উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘অশনি সংকেত’, ‘পথের পাঁচালী‘, ‘ অরণ্যের দিনরাত্রি‘ প্রভৃতি চলচ্চিত্র থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়।
কোনো একটি শহরের ইতিহাস ইতিহাসের কোন কোন দিক উন্মোচন করে?
উত্তরঃ কোনো একটি শহরের ইতিহাস ইতিহাসের নানাদিক, যেমন—শহরের পত্তন, বিবিধ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থা, শিল্পসংস্কৃতি, রাজনীতি এবং নানা ধর্মীয় বিষয় তুলে ধরে।
সামরিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু কী?
উত্তরঃ সাধারণভাবে সামরিক ইতিহাসচর্চার বিষয় হলো সংগ্রাম বা যুদ্ধ। এর বিষয়বস্তু হল দুই প্রতিপক্ষের সামরিক সংগঠন, যুদ্ধাস্ত্র, যুদ্ধকৌশল, যুদ্ধক্ষেত্র প্রভৃতি।
‘বঙ্গদর্শন‘ পত্রিকা থেকে কী কী বিষয় জানা যায় ?
উত্তরঃ ‘বঙ্গদর্শন‘ পত্রিকা থেকে সেকালের বঙ্গসমাজের রাজনীতি, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সমাজতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে জানা যায় ৷
‘অ্যানাল স্কুল‘ কী ?
উত্তরঃ ‘অ্যানাল স্কুল’ হলো ফ্রান্সের একটি পত্রিকা গোষ্ঠী। মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেবর উদ্যোগে ‘অ্যানালস অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি‘ নামে পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এই গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চায় সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষ, মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি বিষয় স্থানলাভ করে।
‘ঢাকাই খাবার‘ কী ?
উত্তরঃ মুসলিম শাসনে ঢাকা যখন প্রাদেশিক রাজধানী ছিল সেইসময় এখানকার রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে পারসিক খাদ্যরীতির সংমিশ্রণ ঘটে। এর ফলে যে খাবার প্রস্তুত হয় তা ‘ঢাকাই খাবার’নামে পরিচিত। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল কাবুলি, খিচুড়ি, হালিম, চালের গুঁড়োর পিঠে প্রভৃতি।
হরিপদ ভৌমিক ইতিহাসে বিখ্যাত কেন ?
উত্তরঃ গবেষক হরিপদ ভৌমিক তাঁর ‘রসগোল্লা : বাংলার জগৎমাতানো আবিষ্কার‘ গ্রন্থে দাবি করেছেন, বাংলার নদিয়া জেলার ফুলিয়ার হারাধন ময়রা আদি রসগোল্লার সৃষ্টিকর্তা। এই কারণে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত ।
অ্যানালস গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ 1929 সালে ফ্রান্সে ‘দ্য অ্যানালস‘ পত্রিকায় মার্ক ব্লখ, লুসিয়েন ফেবর, ফার্নান্দ ব্রদেল প্রমুখের নেতৃত্বে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইতিহাস–এর ওপর গুরুত্ব আরোপ না করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বৌদ্ধিক বিষয় এবং পারিবারিক ইতিহাসচর্চার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল যা অ্যানালস গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চা নামে পরিচিত।
খেলাধুলার ইতিহাস সংক্রান্ত দু‘টি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তরঃ “বাপি বাড়ি যা’—গৌতম ভট্টাচার্য। ‘খেলা যখন ইতিহাস’– কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্থানীয় ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝো?
অথবা, স্থানীয় ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তরঃ স্থানীয় ইতিহাসচর্চার যেকোনো ছোটো ঘটনার বিবরণ জাতীয় ইতিহাসচর্চার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
খেলাধুলার ইতিহাসচর্চাকারী দু‘জন ঐতিহাসিকের নাম লেখো। অথবা, খেলার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন দু‘জন ভারতীয়ের নাম লেখো।
উত্তরঃ বোরিয়া মজুমদার, আশীষ নন্দী।
স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনীকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় ?
উত্তরঃ স্মৃতিকথা এবং আত্মজীবনীতে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা জড়িয়ে থাকে যা সত্যিকারের ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ দেয়। এ ছাড়া এগুলি সমকালীন আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনদর্শনের দলিল হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।
ইতিহাসের উপাদান হিসেবে চিঠিপত্রের গুরুত্ব লেখো।
উত্তরঃ বিভিন্ন দপ্তর, উচ্চপদস্থ কর্মচারী, সরকারি দপ্তরের অফিসারদের চিঠিপত্র এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠিপত্র আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার মূল্যবান উপাদান।
নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার লক্ষ্য কী ?
উত্তরঃ সমাজে বসবাসকারী বিভিন্ন জাতি, শ্রেণি, লিঙ্গ, ধর্ম প্রভৃতি নির্বিশেষে নিম্নবর্গের মানুষের জীবনযাত্রা তুলে ধরা এর লক্ষ্য। আশির দশকে নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত হয়েছিল।
মহাফেজখানা কী ? ইতিহাসচর্চায় এর গুরুত্ব কী ?
উত্তরঃ মহাফেজখানা হলো এমন এক ঐতিহাসিক সংগ্রহশালা যেখানে বহু প্রাচীন থেকে বর্তমানের বিভিন্ন চিঠিপত্র বা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংগ্রহ করে রাখা হয় ৷
আধুনিক ইতিহাসচর্চায় যেকোনো ঐতিহাসিক চিঠিপত্র বা লিখিত উপাদানের প্রয়োজন হলে মহাফেজখানা থেকে তা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
ভারতে নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা কবে, কার দ্বারা সূত্রপাত হয় ?
উত্তরঃ 1982 খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক রণজিৎ গুহ রচিত ‘সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ‘ নামক গ্রন্থে চর্চার সূত্রপাত হয় ।
চলচ্চিত্রের ইতিহাস বিষয়ক দু‘টি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তরঃ ঋত্বিককুমার ঘটকের – চলচ্চিত্র মানুষ এবং আরও কিছু ।
সত্যজিৎ রায়ের—‘একেই বলে শুটিং’।
‘জীবনস্মৃতি‘ গ্রন্থে স্বাদেশিকতার কোন ছবি ফুটে ওঠে?
উত্তরঃ‘জীবনস্মৃতি‘ রচিত হয়েছে বাঙালি সমাজে জাতীয় চেতনার উন্মেষ পর্বে। এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ স্বদেশি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং ঠাকুরবাড়ির অন্যদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।
কবে, কাদের হারিয়ে মোহনবাগান ক্লাব I.F.A. শিল্ড লাভ করে ?
উত্তরঃ 1911 সালে ব্রিটিশদের ইস্ট ইয়র্কশায়ার ক্লাবকে হারিয়ে।
দু‘টি পরিবেশগত আন্দোলনের নাম লেখো।
উত্তরঃ চিপকো আন্দোলন—সুন্দরলাল বহুগুণার নেতৃত্বে এবং নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন– পাটকর–এর নেতৃত্বে।
নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সূচনা কবে হয়েছিল? নিম্নবর্গের ইতিহাস বিষয়ক এক গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তরঃ 1982 খ্রিস্টাব্দে। অধ্যাপক রণজিৎ গুহ রচিত ‘সিলেক্টেড সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ‘ গ্রন্থ।
খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার দু‘টি বৈশিষ্ট্য লেখো। অথবা, খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসে গুরুত্ব লেখো।
উত্তরঃ খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি করে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানতে পারা যায়। এটা জাতীয়তাবোধকে যেমন উদ্বুদ্ধ করে, ঠিক তেমনি জাতীয় আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করে।
সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি প্রভৃতি নির্বিশেষে নিম্নবর্গের মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে যে ইতিহাসচর্চা তা–ই সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ।
স্বাধীনতার পরবর্তীকালে রচিত দু‘টি নাটকের নাম লেখো।
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের—‘নবান্ন’, উৎপল দত্তের – ‘টিনের তলোয়ার‘।
পোশাক–পরিচ্ছদের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তরঃ পোশাক–পরিচ্ছদ যে শুধুমাত্র মানুষের সাংস্কৃতিক রুচিশীলতা, আত্মসচেতনতার সাথে যুক্ত তা নয়—সামাজিক প্রথা, রক্ষণশীলতা, আর্থিক অবস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও পোশাক–পরিচ্ছদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।
স্থাপত্য–ভাস্কর্য বিষয়ক ইতিহাসচর্চার দু‘টি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তরঃ স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চায় শাসকগোষ্ঠীর ব্যক্তিগত মানসিকতার প্রতিফলন ঘটে। এ ছাড়া আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দিকও প্রতিফলিত হয়।
ফোটোগ্রাফিক ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য কী ?
উত্তরঃ ফোটোগ্রাফিতে বাস্তব দৃশ্য ধরা পড়ে, এতে ইতিহাসচর্চার কাল্পনিক দিক থাকে না । এ ছাড়া বাস্তব ঘটনা অপরিবর্তিতভাবেই আমাদের কাছে প্রকাশ পায়।
রবীন্দ্রনাথের আত্মজীবনীর নাম কী ? এটি কবে প্রকাশিত হয় ?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের আত্মজীবনীর নাম ‘জীবনস্মৃতি‘। এটি 1912 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
সাময়িকপত্র কী ?
উত্তরঃ যেসব পত্রিকা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বাৎসরিক সংখ্যারূপে প্রকাশিত হয় তাকে সাময়িকপত্রিকা বলে। যেমন—মাসিক পত্রিকা হিসেবে ‘দিগ্দর্শন’।
স্মৃতিকথা কীভাবে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় ?
উত্তরঃ 1947 সালে দেশভাগের ইতিহাস, জাতিদাঙ্গা, উদ্বাস্তু জীবন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখায়, স্মৃতিকথায় সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, যা উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ।
ফোটোগ্রাফিচর্চায় দু‘জন উল্লেখযোগ্য বাঙালির নাম লেখো।
উত্তরঃ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং সুকুমার রায় ।
ভারতীয় স্থাপত্যের ইতিহাস সংক্রান্ত গবেষকের নাম লেখো।
উত্তরঃ জেমস ফারগুসন, পারসি বোরো, তারাপদ সাঁতরা।
স্থানীয় ইতিহাসচর্চা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তরঃ প্রাচীন ইতিহাসচর্চায় দেশবিদেশ, মহাদেশ প্রভৃতি বিশাল অঞ্চল আলোচিত হয়েছে যা কোনো ছোটো স্থানের পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করতে পারে না। তাই জাতীয় ইতিহাস রচনা করতে গেলে স্থানীয় ইতিহাসের ওপর নির্ভর করতে হয়।
নাট্যচর্চার ইতিহাস বিষয়ক দু‘টি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তরঃ আশুতোষ ভট্টাচার্যের—বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাস‘, সত্যজীবন মুখার্জির–‘দৃশ্যকাব্য পরিচয়’।
জীবনের ঝরাপাতা কার রচনা? এই গ্রন্থ থেকে আমরা কী জানতে পারি?
উত্তরঃ এটি সরলাদেবী চৌধুরাণী রচিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। এর থেকে তৎকালীন ভারতী কৃষক, শ্রমিক শ্রেণির প্রতি ব্রিটিশ শাসকদের অন্যায়, অত্যাচার ও এর বিরুদ্ধে ছাত্র–যুবক শ্রেণি বিপ্লবী কর্মধারা সম্পর্কে জানা যায়।
রবীন্দ্রনাথের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘জীবনস্মৃতি‘ থেকে কী জানা যায় ?
উত্তরঃ সমকালীন ভারতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের অংশগ্রহণ, স্বদশি যুগের শিক্ষাব্যবস্থা, হিন্দুমেলা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ জানা যায়।
জীবনস্মৃতির বিষয়বস্তু কী?
উত্তরঃ জীবনস্মৃতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী। এই গ্রন্থ থেকে সেকালের নানা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের কথা, বাঙালির জাতীয় চেতনার উন্মেষপর্বের কথা, স্বদেশ ও সমাজের কথা প্রভৃতি জানা যায় ।
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নোত্তর
আধুনিক ইতিহাসচর্চায় নাটকের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?
অথবা, আধুনিক ভারতের নাট্যচর্চার কয়েকটি দিক তুলে ধরো।
অথবা, শিল্পচর্চার ইতিহাসে নাটক ও চলচ্চিত্রের বিবর্তনের কোন পরিচয় পাওয়া যায়?
উত্তরঃ
সূচনাঃ সাংস্কৃতিক দিক থেকে একটি জাতি কীভাবে পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে তা তাদের শিল্পচর্চার ইতিহাস থেকে জানা যায়। আর এই শিল্পচর্চার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নাট্যচর্চা এবং চলচ্চিত্রের চর্চা। প্রাচীনকাল থেকে বিখ্যাত নাট্যকারেরা তাঁদের লেখনীর মাধ্যে নাটকের বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে দর্শকের মনে যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন তা বর্তমান ইতিহাসে অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
নাটকের ইতিহাসচর্চাঃ অষ্টাদশ–ঊনবিংশ শতকে ইউরোপের পাশাপাশি ভারত তথা বাংলায় নাট্যচর্চার প্রসার ঘটেছিল। ঐতিহাসিক ও গবেষকরা নাট্যচর্চার ইতিহাসের সাথে যুক্ত করেছেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস‘, সাইমন জাকারিয়ার ‘বাংলাদেশের লোকনাটক‘, আশুতোষ ভট্টাচার্যের ‘বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাস‘ প্রভৃতি।
বাংলার নাট্যচর্চাঃ আধুনিক বাংলা নাট্যচর্চায় মধুসূদন দত্ত, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিশির ভাদুড়ি, শম্ভু মিত্র প্রমুখ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
চলচ্চিত্রচর্চাঃ চলচ্চিত্রের আবিষ্কার বিশ্বজুড়ে এক নবযুগের সূচনা যেমন করেছে ঠিক তেমনি যুগে যুগে মানুষের এগিয়ে যাওয়াতে প্রাণসঞ্চার ঘটিয়েছে। নিসেফোর নিফাসের হাত ধরে ফোটোগ্রাফিক ইমেজ থেকে শুরু হয় ক্যামেরা আবিষ্কারের প্রয়াস। আর এর পরেই ভারতবর্ষে হীরালাল সেন প্রথম সিনেমার প্রদর্শন শুরু করেন। 1931 খ্রিস্টাব্দে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘জামাইষষ্ঠী’ দিয়ে বাংলা ছবির প্রদর্শন শুরু হয়।
চলচ্চিত্র মানুষের মনোরঞ্জনের সাথে সাথে সমাজের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়গুলি স্পষ্ট করে তোলে যা আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এক নবসংযোজন।
মূল্যায়নঃ আধুনিককালের বিভিন্ন গবেষক গুরুত্বের সঙ্গে নাটকের ইতিহাসচর্চা করেছেন। বর্তমানে ইতিহাস–শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে অন্যতম অংশ নাট্যচর্চার ইতিহাস যা ইতিহাসকে বহুগুণে সমৃদ্ধ করেছে। কারণ শিল্পচর্চা জাতির আত্মপরিচয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ।
আধুনিক ইতিহাসচর্চায় নারী ইতিহাসের গুরুত্ব কী ?
অথবা, নারী ইতিহাসের বিভিন্ন ধারা আলোচনা করো।
অথবা, আধুনিক ভারতের নারীজাতির ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, টীকা লেখো—নারী ইতিহাস।
উত্তরঃ
সূচনাঃ প্রাচীন ইতিহাস থেকে আধুনিককালের ইতিহাসচর্চায় নারীর অবদান যথেষ্ট তাৎপর্যমণ্ডিত। যদিও প্রাচীনকালে নারীজাতি পুরুষদের দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হওয়ার ফলে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ভূমিকা উপেক্ষিত হয়েছে। অথচ সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা আন্দোলন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীদের অবদান মোটেও কম নয়।
ইতিহাসে নারীর বঞ্চনাঃ ইতিহাসচর্চায় লক্ষণীয়, সমাজে পুরুষের তুলনায় নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোনো–না–কোনোভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে।
অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠাঃ আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চায় গুরুত্ব পেয়েছে নারীর অধিকার ও নারী–পুরুষ সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম সচেষ্ট হয়েছিলেন মেরিওন স্টোন ক্রাপ্ট। সাধারণত বলা যায়, 1970-এর দশক থেকে এই নারী ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত হয়েছে।
ভারতে নারী ইতিহাসচর্চাঃ ভারতবর্ষে আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চা প্রসারলাভ করেছে। এক্ষেত্রে বি. আর. নন্দ, কমলা ভাসিন, নীরা দেশাই এবং বাংলার ক্ষেত্রে রাজশ্রী বসু, চিত্রা দেব, মালেকা বেগম, দীনেশচন্দ্র শীল প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
বহির্ভারতে নারী ইতিহাসচর্চাঃ ভারতের বাইরে নারী ইতিহাসচর্চায় যারা গুরুত্বের দাবিদার তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন—বেটি ফ্রিডান, কেটলিন মোরান, জুডিথ বাটলার, জেসিকা ভ্যালেন্টি, জোয়ান কেলি প্রমুখ।
মূল্যায়নঃ উপরিউক্ত আলোচনায় স্পষ্ট, ইতিহাসচর্চায় নারী ইতিহাসচর্চা বাদ দিলে সম্পূর্ণ ইতিহাসচর্চাই অসম্পূর্ণ। তাই আধুনিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে নারী ইতিহাসচর্চা। তবে নারী ইতিহাসচর্চা হলো একরকম সংশোধনী ইতিহাসচর্চা।
উনিশ শতকে বাংলার নারীর ইতিহাসে কলকাতার ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের অবদান লেখে অথবা, ভারতের আধুনিকা নারীর ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ
সূচনাঃ আধুনিককালে ইতিহাসের বিভিন্ন শাখাপ্রশাখার আলোচনা ও চর্চা লক্ষ করা যায়, যার মধ্যে অন্যতম হলো নারীশ্রেণির ইতিহাসচর্চা। আর এই নারী ইতিহাসচর্চার একটি পর্ব হলো বাংলার ঠাকুরবাড়ির নারীশ্রেণির ইতিহাসচর্চা যাকে বাংলা তথা ভারতের নারীর ইতিহাসের অন্যতম দিক বলা যেতে পারে।
ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলঃ বাংলার নারী ইতিহাসকে অনেকাংশে সমৃদ্ধ করেছে ঠাকুরবাড়ির সদস্যা সরলাদেবী চৌধুরাণীর ‘জীবনের ঝরাপাতা‘ গ্রন্থ। এই গ্রন্থ থেকে ঠাকুর পরিবারের অন্দরমহলের বহুতথ্য জানা যায়। এখান থেকে ঠাকুরবাড়ির শিশুদের ছেলেবেলা নারীদের জীবনযাপন, নারীদের ঠাকুর পরিবারে তথা সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসব–অনুষ্ঠান, অতিথি অভ্যর্থনা প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায় যা নারীর ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
সামাজিক অবস্থাঃ ঠাকুর পরিবারের নারীদের ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে সমকালীন বাংলার সমাজে নারীদের অবস্থা বিশেষ করে নারীদের সামাজিক অবস্থান সম্বন্ধে ধারণালাভ করা যায়।
ব্রাহ্মিকা রীতিঃ ঠাকুর পরিবারের নারীর ইতিহাসচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ব্রাহ্মিকা শাড়ি পরার রীতি। এটি বাঙালি নারীদের শাড়ি ব্যবহারের রীতিতে এক নতুন সংযোজন এই রীতি বাংলা তথা ভারতের নারীর ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ নজির।
মূল্যায়নঃ এই আলোচনায় স্পষ্ট, ঠাকুর পরিবারের নারী ইতিহাসচর্চা উনিশ–কুড়ি শতকের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা সামাজিক তথা নারীর ইতিহাস, এমনকী বাংলার সংস্কৃতিতে নারীদের অবস্থান স্পষ্ট করতে সহায়ক হয়েছিল।
বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’ কেন ইতিহাসের উপাদানরূপে গুরুত্বপূর্ণ
অথবা, বিপিনচন্দ্র পাল তাঁর ‘সত্তর বৎসর‘ আত্মজীবনীতে কী ব্যাখ্যা করেছেন?
অথবা, বিপিনচন্দ্র পালের আত্মচরিত ‘সত্তর বৎসর’কীভাবে ভারতের আধুনিক ইতিহাসের উপাদান হয়ে উঠেছে তা বিশ্লেষণ করো।
অথবা, ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে ‘সত্তর বৎসর‘-এর গুরুত্ব কী ?
সূচনাঃ আধুনিক ইতিহাস রচনার উপাদানের অন্যতম হলো স্মৃতিকথা। ভারতবর্ষের প্রখ্যাত চরমপন্থী বিপ্লবী, সমাজসংস্কারক বিপিনচন্দ্র পালের লেখা আত্মজীবনী হলো ‘সত্তর বৎসর‘। এই লেখাটি প্রথমে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী‘ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
বংশপরিচইয়ঃ 1858 সালে শ্রীহট্রের পৈল গ্রামে তাঁর জন্ম হয়েছিল। এই রচনার তার জন্মস্থান শ্রীহট্রের কথা, তাঁর পরিবার এবং সেই সমাজের কথা, কলকাতায় আসা, প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রজীবন ইত্যাদি বিষয়েও নানা তথ্য পাওয়া যায়।
শিক্ষাব্যবস্থাঃ ‘সত্তর বৎসর’ থেকে সমকালীন শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। প্রথমাবস্থায় বিপিনচন্দ্র পাল শ্রীহট্টের একটি ইংরেজি বিদ্যালয়ে এবং এরপরে উচ্চশিক্ষার জন্যে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন।
সংস্কৃতিঃ ‘সত্তর বৎসর‘ থেকে গ্রামীণ সংস্কৃতি অর্থাৎ দোল–দুর্গোৎসব, যাত্রাগান ও পুরাণপাঠ, বিবাহপ্রথার পাশাপাশি কলকাতার তৎকালীন সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ও বিধিনিষেধ, মদ্যপান ও মদ্যপান নিবারণী সমিতির কথা জানা যায়।
রাজনৈতিক আদর্শঃ তিনি দেখিয়েছেন ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালিরা নতুন সামাজিক আদর্শের সন্ধান পেয়েছিল। তৎকালীন ব্রাত্মসমাজও এই শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতার আদর্শের সঞার করেছিল।
মন্তব্যঃ বিপিনচন্দ্র পাল ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন শ্রেষ্ঠ বাগ্মী ও রাজনীতিবিদ। এই আত্মজীবনীটি তিনি রচনা করেছেন 1926 খ্রিস্টাব্দে। বাংলার সমাজ, কলকাতার অবস্থা, জাতীয়তাবাদ, বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সবই এতে স্থান পেয়েছে। ইতিহাসের উপাদান হিসাবে এর বিশেষ গুরুত্ব আছে।
ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা কী ?
উত্তর
সূচনাঃ আধুনিক ইতিহাসচর্চায় ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অন্যতম মাধ্যম। এর ব্যবহার বর্তমানে বিপ্লব এনেছে, তাই বর্তমান যুগকে তথ্যবিস্ফোরণের যুগ‘ বলা হয়।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাঃ তথ্যের সহজলভ্যতাঃ ইন্টারনেটের সাহায্যে ঘরে বসে দেশদুনিয়ার তথ্য খুবস্বল্প সময়ে আমরা জানতে পারি।
সহজে মূলতথ্য ও ছবিঃ খুব সহজেই ইতিহাসের বিভিন্ন মূলতথ্য ও প্রায় সকল প্রকারের ঐতিহাসিক ছবি ইন্টারনেট থেকে পাওয়া যায়।
ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধাঃ নির্ভরযোগ্যতার অভাবঃ বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য ইন্টারনেট থেকে পাওয়া গেলেও তার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে।
পরস্পরবিরোধী তথ্যঃ অনেকসময় একই বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য ইন্টারনেট থেকে পাওয়া যায় যা ইতিহাস রচনায় পরস্পরবিরোধিতা বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
মূল্যায়নঃ ইতিহাস রচনায় ইন্টারনেট ব্যবহার যথেষ্ট সহজলভ্য হলেও তা যে সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিমুক্ত একথা বলা যায় না ।
আধুনিক ভারতে খেলাধুলার চর্চা সম্পর্কে লেখো।
অথবা, ইতিহাসচর্চার সঙ্গে খেলাকে যুক্ত করা হয়েছে কেন ? আলোচনা করো।
উত্তরঃ
সূচনাঃ দেহ ও মনের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য প্রয়োজন খেলাধুলা। নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা। শরীরচর্চার পাশাপাশি খেলাধুলা জাতীয়তাবোধকে জাগরিত করতে ও জাতপাতের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিবাদী করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
খেলাধুলার ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব
খেলার উৎপত্তিঃ আধুনিক ইতিহাসচর্চায় খেলাধুলার ইতিহাস আলোচনার মধ্য দিয়ে জানা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় খেলার উৎপত্তিস্থল কোথায় এবং বিভিন্ন ধারাবাহিক বিকাশ ও বিবর্তনের কাহিনি।
খেলার ইতিহাসচর্চার বিষয়ঃ খেলার ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে জানা যায় জাতীয়তাবাদী ভাবনা সম্পর্কে। আবার বিভিন্ন খেলায় নারীশ্রেণির অংশগ্রহণ স্পষ্ট করে নারীস্বাধীনতার বিষয়টি। প্রসঙ্গত, 1911 খ্রিস্টাব্দে মোহনবাগান ক্লাব ব্রিটিশদের হারিয়ে I.F.A. শিল্ডজয়ের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদকে জাগিয়ে তুলেছিল।
সাংস্কৃতিক তথ্যঃ খেলাধুলার ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়। বিভিন্ন দেশের জাতীয় খেলা তাদের প্রাচীন সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ফুটিয়ে তোলে। খেলা আসলে মানবসংস্কৃতির একটি দিক।
খেলার প্রভাবঃ খেলাধুলার প্রভাব লক্ষ করা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন—সাম্প্রদায়িকতা সমাজের বিবর্তন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রভৃতি ক্ষেত্রে।
মূল্যায়নঃ খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা মানবজাতির বিনোদনের সাথে সাথে দেশ ও জাতির সংস্কৃতিচেতনার সাক্ষ্যবহন করে।
‘জীবনের ঝরাপাতা’ থেকে তৎকালীন সময়ের কী ঘটনা জানতে পারি?
অথবা, সরলাদেবী চৌধুরাণীর আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা‘ গ্রন্থের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কতটা তা বিশ্লেষণ করো।
অথবা, ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘জীবনের ঝরাপাতা‘ গ্রন্থের গুরুত্ব কী ?
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রত্যক্ষ সৈনিক সরলাদেবী চৌধুরাণীর আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’গ্রন্থে ব্রিটিশদের আর্থিক শোষণ ও সমকালীন ভারতের সশস্ত্র বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ রয়েছে যা আধুনিক ইতিহাস রচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে ‘জীবনের ঝরাপাতা‘র গুরুত্ব
ভারতীয় রাজনীতিঃ এই গ্রন্থ থেকে সমকালীন বাংলার বিভিন্ন সমিতি ও বিপ্লবী কার্যকলাপ সম্পর্কে জানা যায়। বিপ্লবীরা কীভাবে শারীরশিক্ষার আড়ালে অস্ত্রশিক্ষা করতেন। তার কথা বলা হয়েছে এই গ্রন্থে।
স্বাদেশিকতাঃ এই গ্রন্থে বলা হয়েছে সরলাদেবী চৌধুরাণী স্বদেশি দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহারের প্রচারে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার‘ নামক এক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন নারীদের মধ্যে। স্বদেশি ভাবনার প্রচারে 1911 খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল‘ প্রতিষ্ঠা করেন।
ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলঃ এই গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে ঠাকুর পরিবারের বিভিন্ন সামাজিক বিধি, নারী–পুরুষের অবস্থান, অতিথি অভ্যর্থনা, সাংস্কৃতিক চর্চা, ভৃত্যদের কাজকর্ম প্রভৃতি সম্পর্কে।
মন্তব্যঃ এই আলোচনায় স্পষ্ট যে ‘জীবনের ঝরাপাতা‘ গ্রন্থটি 1920-এর দশকে দাঁড়িয়ে বাংলার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একটি প্রামাণ্য দলিল।
আধুনিক ইতিহাসচর্চায় পরিবেশের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য দিকগুলি কী ?
অথবা, পরিবেশের ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তরঃ
সূচনাঃ প্রাকৃতিক পরিবেশ কীভাবে মানুষের জীবনধারণ প্রণালী, রীতিনীতি ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করে, তার আলোচনা হলো পরিবেশের ইতিহাসচর্চার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পরিবেশ স্থির ও পরিবর্তনশীল দুই রূপেই ইতিহাসচর্চায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পরিবেশ সংক্রান্ত ইতিহাসচর্চা প্রথম উত্তর আমেরিকায় ও তারপর ইউরোপে শুরু হয়। 1960 –এর দশকে মূলত পরিবেশের ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত হয়েছিল।
পরিবেশ ইতিহাসচর্চার মূলবিষইয়ঃ পরিবেশ ইতিহাসচর্চার অন্যতম বিষয় হলো সভ্যতার ধ্বংসের ও বিকাশের পেছনে পরিবেশের বিশেষ ভূমিকা তুলে ধরা। একটি জাতির জীবনযাত্রার ধরন, সংস্কৃতি, ধর্মাচার ও সমাজের গতিপ্রকৃতি পরিবেশ দ্বারা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তা জানার জন্য পরিবেশের ইতিহাসচর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশের ইতিহাস সংক্রান্ত গ্রন্থঃ পরিবেশ সচেতনতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে পরিবেশের ইতিহাস সংক্রান্ত গ্রন্থ। যেমন—মার্কিন পরিবেশবিদ র্যাচেল কারসন–এর ‘দ্য সি অ্যারাউন্ড আস’, ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’, ক্ল্যাবেন্স গ্ল্যাকেন রচিত—‘ট্রেসেস অন দ্য রেডিয়ান শোর’। এ ছাড়াও ভারত সরকারের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এডুকেশন‘ পরিবেশের ইতিহাসচর্চায় এক নতুন গতি এনে দিয়েছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনঃ ভারতবর্ষে বহুকাল আগে থেকেই পরিবেশ সচেতনতা শিবির, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন হয়ে আসছে, যা পরিবেশ ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত। আধুনিক ভারতের কর্ণাটকে ‘আপ্পিকো আন্দোলন’, উত্তরাখণ্ডে ‘চিপকো আন্দোলন’, দাক্ষিণাত্যে ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন‘-এর ইতিহাস থেকে সমগ্র দেশে পরিবেশ সচেতনতায় এক নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে যা বর্তমানে পরিবেশ ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত।
মূল্যায়নঃ পরিবেশের ইতিহাসচর্চা করে, পরিবেশ রক্ষার তাগিদে গড়ে উঠেছে নানা দেশে বিভিন্ন আন্দোলন। সেই আন্দোলনের ইতিহাস যেমন একদিকে পরিবেশের ইতিহাসের সাথে যুক্ত হচ্ছে সে সম্পর্কে ধারণা মেলে, অন্যদিকে মানুষের অধিকার রক্ষার প্রশ্নও উঠে আসছে যা সামাজিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেয়।
নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য লেখো।
অথবা, নতুন সামাজিক ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কেন ?
অথবা, নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা কোন অর্থে মানুষের ইতিহাসে মানুষের পুনরাগমন ?
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ আধুনিক যুগে ইতিহাস গবেষকদের দৃষ্টি আরও প্রসারিত হয়েছে। এর অন্যতম দিক হলো নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা। এই ইতিহাসচর্চায় যুক্ত হয়েছে নিম্নবর্গীয় মানুষের আলোচনা। 1960-এর দশক থেকে আধুনিক ইতিহাসচর্চায় সংযোজিত হয় নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা।
আলোচনার প্রসারতাঃ নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা সময়ের সাথে সাথে প্রসারিত অ হয়েছে। এই ব্যাপক ও বহুমুখী ইতিহাসচর্চায় যুক্ত হয়েছে জাতীয়তাবাদ, পরিবেশ, সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলা, মানুষের খাদ্যাভ্যাস, মানুষের ব্যবহৃত পোশাক প্রভৃতি।
সাধারণের কথাঃ এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় স্থান পেয়েছে সাধারণ মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা, সুখ–দুঃখ, হাসিকান্না, অভাব–অভিযোগের কাহিনি ।
নিম্নস্তর থেকে আলোচনা : নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা সমাজের সংখ্যালঘু ও উচ্চবর্ণের মানুষের আলোচনা দিয়ে শুরু হয় না। বরং এখানে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ বা নিম্নশ্রেণির মানুষদের নিয়ে আলোচনা করা হয় ।
টোটাল হিস্ট্রিঃ নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় রাজনীতির পাশাপাশি আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, বৌদ্ধিক এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সমস্ত বিষয়ে চর্চা করা হয়। সেইজন্য একে টোটাল হিস্ট্রি বলা হয় ৷
মন্তব্যঃ নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা আধুনিক ইতিহাসে নতুন সংযোজন হলেও এর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। সমাজের নিম্নবর্গীয়দের আলোচনা নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চাকে এক বিশেষ মাত্রা এনে দিয়েছে।
আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় সরকারি নথিপত্র, আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় কী ফুটে উঠেছে?
অথবা, টীকা লেখো—স্মৃতিকথা।
অথবা, আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি সম্বন্ধে লেখো।
অথবা, টীকা লেখো—সরকারি নথিপত্র। অথবা, টীকা লেখো—আত্মজীবনী।
উত্তর
সূচনাঃ ইতিহাস হলো একটি উপাদানভিত্তিক বিষয়। তাই বলা যায়, ইতিহাস রচনায় প্রয়োজন হয় একাধিক নির্ভরযোগ্য উপাদান। আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এই নির্ভরযোগ্য উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম হলো সরকারি নথিপত্র, আত্মজীবনী এবং স্মৃতিকথা।
সরকারি নথিপত্রঃ বিভিন্ন ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ পাওয়া যায় সরকারি নথিপত্রে যা ইতিহাসচর্চার দলিলরূপে কাজে দেয়। যেমন—সরকারি রিপোর্ট, সরকারি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বিবরণ, সরকারি প্রতিবেদন ও বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্ট।
চিঠিপত্রঃ ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে বিভিন্ন দপ্তর, উচ্চপদস্থ কর্মচারী প্রমুখের চিঠিপত্রে সমকালীন ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, যা ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রঃ সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র ইতিহাস রচনার ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—‘বেঙ্গল গেজেট’, ‘দিগ্দর্শন’, ‘সমাচার দর্পণ‘ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে।
আত্মজীবনীঃ কালের বিবর্তনে যেকোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তি যখন সহজভাবে অকপটে নিজেই তাঁর জীবনের বিভিন্ন ছোটো–বড়ো ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন তখন তাকে বলা হয় আত্মজীবনী।
স্মৃতিকথাঃ যেকোনো ব্যক্তি তাঁর পূর্ণজীবনের সকল প্রকারের ঘটনা যখন লিখিত আকারে সাহিত্যরূপে ফুটিয়ে তোলেন তখন তাকে বলা হয় স্মৃতিকথা ।
আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার মূল্যঃ বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর‘, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’, সরলাদেবী চৌধুরাণীর আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা‘ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন সময়ে লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
উপসংহারঃ আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় সমকালীন প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতার কথা উঠে আসে। এগুলি লেখকের নিজস্ব বিচারধারা ও মূল্যবোধের আলোচনায় পরিবেশিত হলেও তাতে সত্যের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এগুলির গুরুত্ব অনেক বেশি।
ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘বঙ্গদর্শন‘ ও ‘সোমপ্রকাশ‘ পত্রিকা দু‘টির মূল্যায়ন করো।
অথবা, উনিশ শতকে বাংলার শিক্ষা–সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ‘বঙ্গদর্শন‘ ও ‘সোমপ্রকাশ‘ পত্রিকার তাৎপর্য কী ছিল ?
অথবা, আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান হিসেবে ‘সোমপ্রকাশ‘ পত্রিকার গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তরঃ
সূচনাঃ উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ এবং বাংলা ও বাঙালি সমাজের অগ্রগতিতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দু‘টি পত্রিকা ছিল ‘সোমপ্রকাশ’ এবং ‘বঙ্গদর্শন‘। 1858 খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে ‘সোমপ্রকাশ‘ এবং 1872 খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গদর্শন‘ পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়েছিল। এই পত্রিকায় সমকালীন বাংলার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জীবনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল।
বঙ্গদর্শনের গুরুত্বঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বঙ্গদর্শন পত্রিকাটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন–
শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মুখপত্রঃ সাহিত্যধর্মী ‘বঙ্গদর্শন‘ পত্রিকায় গল্প ও উপন্যাস কবিতা ইত্যাদি প্রকাশিত হতো, যেখানে বাংলা ভাষার বিবর্তন, রূপান্তর ও পূর্ণতা লক্ষণীয়। এখানে নিয়মিত লিখতেন রবীন্দ্রনাথ, দীনবন্ধু মিত্র, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখ।
নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রকাশঃ এই পত্রিকায় সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতি দর্শন, বিজ্ঞান, বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ এমনকী কৃষকদের দুরবস্থা, জাতীয়তাবাদের জাগরণ ও সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা সম্পর্কে নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হতো।
সোমপ্রকাশের গুরুত্বঃ দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ–এর সম্পাদনায় প্রকাশিত সোমপ্রকা পত্রিকাটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—
কৃষকদের কাহিনিঃ এই পত্রিকায় নীলকরদের অত্যাচার সহ সমকালীন বাংলার কৃষকদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরা হয়। এখানে সরকার, জমিদার, মহাজনদের শোষণ, বঞ্চনা অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিকঃ ‘সোমপ্রকাশ‘ পত্রিকাই প্রথম বাংলায় রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করে। বিধবাবিবাহের প্রচলন ও স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের মনোভাব ও উদ্যোগের কথা প্রকাশিত হতো এই পত্রিকায়।
মূল্যায়নঃ আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় ‘বঙ্গদর্শন‘ ও ‘সোমপ্রকাশ‘ ছিল নির্ভীক জনদরদি পত্রিকা। তবে 1878 খ্রিস্টাব্দে ‘সোমপ্রকাশ‘ পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলে 1880 খ্রিস্টাব্দে তা পুনরায় চালু হয়। তবে এটি পূর্বের মতো জনপ্রিয় আর হয়ে ওঠেনি। তা এই পত্রিকা দু‘টি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মূল্যবান উপাদান ।
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি গুরুত্ব কী ?
অথবা, ‘জীবনস্মৃতি‘তে সমকালীন বাংলার কী কী চিত্র পাওয়া যায়?
অথবা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি‘কে কেন ইতিহাসে উপাদানরূপে গণ্য করা হয় ?
উত্তরঃ
সূচনাঃ আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানগুলির মধ্যে ‘জীবনস্মৃতি’অন্যতম গ্রন্থ। ‘জীবনস্মৃতি‘ সম্পর্কে কবি লিখেছেন—“এই স্মৃতিভাণ্ডারে অত্যন্ত যথাযথভাবে ইতিহস সংগ্রহের চেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে।” 1880 –এর দশকে রচিত ‘জীবনস্মৃতি‘ গ্রন্থটি আধুনিক বাংল ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
ইতিহাসের উপাদান হিসেবে জীবনস্মৃতি
ধর্মীয় সংস্কৃতিঃ এই গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রাহ্ম আদর্শ, রবীন্দ্রনাথের ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষাগ্রহণ, সমকালীন ব্রাহ্মসংগীত ও ব্রাহ্মধর্মের আত্মসমালোচনার বিভিন্ন দিক।
পরিভ্রমণের কথাঃ এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপান ও ইংল্যান্ডভ্রমণের পুঙ্খানুপুঙ্খ পদের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন এবং উক্ত দু‘টি দেশের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসও এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।
স্মৃতিকথাঃ এই গ্রন্থ থেকে বিশ্বকবির বাল্যবয়সের শিক্ষাগ্রহণের কথা, ওরিয়েন্টাল সেমিনারির শিক্ষাব্যবস্থা এবং নর্মাল স্কুল ও সেখানকার স্কুলের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।
ঠাকুর পরিবারের অন্দরমহলঃ এই গ্রন্থ থেকে ঐতিহ্যবাহী ঠাকুর পরিবারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বিশেষত তাদের নিয়মনীতি, সাহিত্যচর্চা, নাট্যচর্চা ও শিল্পকলার চর্চা সম্পর্কে জানা যায় ।
মূল্যায়নঃ উপরিউক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও নবগোপাল মিত্রের ‘হিন্দুমেলা‘ সম্পর্কে বিশদ বিবরণ জানা যায় এই গ্রন্থ থেকে। তবে ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ও ঠাকুর পরিবারের ইতিহাসের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ।