তোমার জীবনের লক্ষ্য
Tomar jibaner laksya-Rochona Bengali
[ ভূমিকা – লক্ষ্য স্থির করার পটভূমিকা—জীবনের লক্ষ্য কি ও কেন ?—লক্ষ্য রূপায়ণে কর্মপন্থা গ্রহণ—উপসংহার ]
ভূমিকাঃ প্রত্যেক মানুষের জীবনের এক একটা লক্ষ্য থাকে। লক্ষ্য স্থির হলেই তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা মনে জাগে। আর চেষ্টা থেকেই পূর্ণতা আসে। আমাদের ছাত্র জীবনের স্বল্প বয়সে লক্ষ্য স্থির কি ভাবে করতে পারি? বাবা, মা, আত্মীয় স্বজন সবাই মনে মনে স্থির করেন আমাদের ছেলে–মেয়ে, প্রিয়জন কেউ হোক ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক, কেউ বড় চাকুরে ; আবার কেউ বা নিজ নিজ বংশের বৃত্তি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চান—বড়ো আশা তাঁরা করেন না। তাঁদের আশা থেকেই আমাদের মনে জীবনের লক্ষ্য স্থির করার ইচ্ছা দানা বাঁধতে থাকে ।
করতেন।
লক্ষ্য স্থির করার পটভুমিকাঃ আমার জীবনের লক্ষ্য স্থির করার পটভূমিকা তৈরী হয় আমার বাবার ইচ্ছা থেকেই । বাবার ইচ্ছা আবার দানা বাঁধে তাঁর এক বিজ্ঞানের শিক্ষকের ইচ্ছা থেকেই । আমার বাবার তিনপুরুষ আগে থেকে আমাদের বাড়ী ডাক্তার বাড়ী বলে খ্যাত । বংশের বৃত্তির ধারা অনুযায়ী বাবা ছাড়া সবাই মাধ্যমিক স্তরের পরবর্তী পর্যায়ে আমাকে ডাক্তারী পড়াবার চিন্তাই অনেকে বাবাকে তাঁদের সেই ইচ্ছার কথা প্রকাশ্যে বলতে শরু করেছিলেন । বাবা কিন্তু হাঁ বা না কোন কিছুই বলতেন না। শুধু বলতেন দেখা যাক কি হয় । নবম শ্রেণীতে উঠার পর বাবা মনে মনে স্থির করেন আমাকে কি পড়াবেন । আমাকে কিছুই তিনি বলেননি। দশম শ্রেণীতে উঠার পর কথা প্রসঙ্গে আমাকে বলেন—সব বৃত্তির জন্যই অন্যের উমেদারী করতে হয়। বাবা নিজে শিক্ষক। শিক্ষকতা জীবনের ট্রাজেডি চরম অনিশ্চয়তা—সামাজিক প্রতিষ্ঠার অভাব যে তাঁর মনকে পীড়া দিতো তা তিনি সংসার চালাবার টানাটানিতে কখন সখন বলেও ফেলতেন—ছেলেদের আর এ বৃত্তিতে আসতে দেব না। অন্যের উমেদারী আর ছেলেদের করতে দেব না । বরং নিজের পায়ে যাতে ছেলেরা দাঁড়াতে পারে এবং আর পাঁচজনের রুজি রোজগারের সহায় হতে পারে তার চিন্তাই তিনি করছেন । তাঁর চিন্তার ভিত্তি ভূমি তিনি পেয়েছিলেন তাঁর মাস্টার মশাইয়ের কাছ থেকে । কথা প্রসঙ্গে একথা বলেও ফেলেছেন মায়ের কাছে এবং অন্য দু একজন আত্মীয়ের কাছে। তিল তিল করে তাঁর ইচ্ছা তিনি তৈরী করেছেন। অনেক চিন্তার অবসান করলেন। তিনি বললেন তাঁর বড় ছেলেকে তিনি চ্যাটার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট করতে চান।
জীবনের লক্ষ্য কি ও কেন ? আমার জীবনের লক্ষ্য চ্যাটার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়া। আমার ইচ্ছা বাবার কাছ থেকেই দানা বেঁধেছে। রিসার্চ স্কলার, ইঞ্জিনিয়ার বেকার হয়ে আছে এ সংবাদ শোনা গেলেও কোন সি.এ. বা চ্যাটার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট বেকার আছে এ কথা কোথাও শোনা যায় না। সি.এ. পাশ করলে চাকরী পাওয়ার চিন্তাও থাকে না। ৭/১০ হাজার টাকা মাইনের চাকুরী পাওয়ার জন্য উমেদারীও করতে হয় না। আর চাকরী না করে যদি ফার্ম‘ খোলা যায় তাহলে কিছু চাকরীর সৃষ্টি করা যায়। ছোট খাট ফার্মে ও কম করে ১০/১২ জন ছেলের কর্ম সংস্থান করা যায়। আর বড় ফার্ম করতে পারলে তো কথাই নেই । এই কারণে বাবার ইচ্ছা ও মত অনুসারে আমার মনের মধ্যে একজন সার্থক সি.এ. হবার ইচ্ছা উকি ঝুকি এখন থেকেই দিচ্ছে। জানি সিএ পড়া খুব কঠিন । পাশ করেও খুব কম ছাত্র–ছাত্রী। তবুও নিজেকে এখন থেকেই তৈরী করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি আমি নিয়েছি—যত কঠিন পড়াই হোক না কেন নিজের উন্নতি, প্রতিষ্ঠা এবং সমাজের উন্নতির জন্য আমাকে সিএ পাশ করে একজন চ্যাটার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট অবশ্যই হতে হবে ।
লক্ষ্য রূপায়ণে কর্মপন্থা গ্রহণঃ আমার লক্ষ্য রূপায়ণে আমি নিজেকে এখন থেকে তৈরি করতে শরু করেছি। জানি সি.এ. পাশ করতে হলে অংকে ভাল হতে হবে। আমি নবম শ্রেণী থেকে কম্পালসারি অংক ছাড়াও অ্যাডিসন্যাল অংক নিয়েছি। অংকও খুব ভালভাবে মন দিয়ে করতে শুরু করেছি। আর মাধ্যমিক পাশের পর কমার্স বা বাণিজ্য বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার চিন্তাও আমার আছে । শধ্যে তাই নয় বাণিজ্য বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে অংককেও প্রধান বিষয়রূপে আমাকে রাখতে হবে। আমাদের অঞ্চলে কোন সি.এ. নেই । বাবার ইচ্ছা ও সেই সঙ্গে আমার লক্ষ্য পূরণ করার জন্য আমাকে আপ্রাণ চেষ্টা অবশ্যই চালাতে হবে। দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারীর জ্বালায় গ্রামের ডিগ্রী পাশ করা ছেলেরাও কত অসহায় ৷ সামান্য চার-পাঁচ হাজার টাকা মাইনের চাকরী করার জন্য তাদের কি ক্লান্তিকর প্রচেষ্টা। সবইতো চোখের সামনে দেখছি। আর “বিজ্ঞান” বিভাগে পড়ার অন্ধ আগ্রহকে শিক্ষিত মানুষের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য “বাণিজ্য” বিভাগ আমাকে বেছে নিতে হবে ।
উপসংহারঃ একজন সার্থক সি.এ. আমায় হতে হবে। মাধ্যমিক পাশের পর উচ্চ–মাধ্যমিকে কমার্স নিয়ে আমাকে পাশ করতে হবে। তারপর এ্যাকাউস্ট্যান্সিতে অনার্স নিয়ে পাশ, এরপর এম.কম. এবং শেষে সি.এ. পাশ ; ফার্ম‘ খোলা ৷ ছোট থেকে বড় হওয়ার চেষ্টা। ফার্মে দেশের বেকার শিক্ষিত ছেলেদের চাকরীর ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরিকল্পনা সবই আমার আছে। জীবনের এই লক্ষ্য পারণ করার জন্য জানি বহু দুস্তর বাধা অতিক্রম আমাকে করে যেতে হবেই। বাধা আসবেই । তবু স্থির লক্ষ্য আমার । অক্লান্ত অধ্যবসায় ও পরিশ্রমে আমি আমার বাবার ইচ্ছা ও নিজের ঐকান্তিক বাসনাকে সার্থক করে তুলব। এ আমার পবিত্র প্রতিজ্ঞা।