
Palmistry
হাতের এই রেখাগুলিই বলে দেবে আপনার ভবিষ্যত কেমন, জানুন কোন রেখার কী অর্থ
Palmistry : Lines of palm tells your future
হাতের গঠন
১. খুব ছোটো হাত: আত্মকেন্দ্রিক, চিন্তাভাবনার সীমাবদ্ধতা, বাস্তববাদী, সিদ্ধান্তহীনতা, পুরুষ হলে কিছুটা হৃদয়হীন, মহিলাদের ক্ষেত্রে অদ্ভুত ধরনের ইন্সটিংক্ট দেখা যেতে পারে।
২. ছোটো হাত: বিশ্লেষণী ক্ষমতা, পারফেকশনিস্ট, চিন্তাভাবনার ব্যাপ্তি, খুঁতখুঁতে মানসিকতা।
৩. গড়পড়তা হাত: বাস্তববাদী চিন্তাভাবনা, কমনসেন্স অত্যন্ত প্রখর।
৪. বড়ো হাত: বিশ্লেষণী ক্ষমতা, বেশি জানার আগ্রহ, দয়ালু।
৫. খুব বড়ো হাত: অনাবশ্যক আগ্রহ, খরচ প্রবণ, কখনও সন্তুষ্ট হতে চায় না।
হাতের নমনীয়তা
১. খুব নরম হাত: কুঁড়ে, জীবনটাকে সহজভাবে নিতে চায়, আয়েশি, বিলাস প্রবণ।
২. স্বাভাবিক হাত: উদ্যমী, কর্মতৎপর, কিছুটা রাগি ও ঈর্ষাপরায়ণ, স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি।
৩. শক্ত হাত: কঠিন পরিশ্রমী, জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই, সংগ্রামী, কঠোরভাবে বাস্তববাদী।
হাতের রং
হাতের রং দেখে শরীরের রক্ত সঞ্চালন পরিস্থিতি বোঝা যায়। জাতক-জাতিকার স্বভাব চরিত্র, শরীর স্বাস্থ্য সম্পর্কেও জানা যায়।
১. কালচে রং: এরা জেদি, রাগি, সন্দেহপ্রবণ হয়। পেটের সমস্যা, চামড়ার রোগ, অস্থিরমতি হয়, আইনবিরুদ্ধ কাজ করার প্রবণতা দেখা যায়।
২. গোলাপি রং: সবচেয়ে ভালো বৈশিষ্ট্য এই ধরনের হাতেই দেখা যায়। উদ্যমী, যুক্তিবাদী, রোমান্টিক, গানবাজনা, শিল্পে আগ্রহী, জীবন সম্পর্কে আশাবাদী, হাসিখুশি, আকর্ষণী ক্ষমতা, উচ্চহৃদয়বৃত্তি সম্পন্ন মানুষদের বৈশিষ্ট্য এই রং-এর হাতে দেখা যায়।
৩. লালচে রং: মানসিকতা উচ্চ, রাগলে সাংঘাতিক; উত্তম স্বাস্থ্য, উচ্চরক্তচাপ থাকতে পারে, খাদ্য রসিক, রাহু-মঙ্গলের প্রভাব থাকবে।
৪. হলদেটে রং: হতাশাবাদী, কোষ্ঠকাঠিন্য, লিভারের সমস্যা থাকতে পারে। খিটখিটে, ঝিমুনিভাব, রক্তসঞ্চালনে ত্রুটি, অপরাধপ্রবণ হতে পারে।
৫. নীলচে রং: নিরাশাবাদী, নার্ভের সমস্যা, অবসাদগ্রস্ততা, অসুখবিসুখ জর্জরিত।
৬. সাদা/ফ্যাকাসে রং: রক্তাল্পতা, লো-প্রেসার, খিটখিটে, জীবনীশক্তি কম, অলস, উদ্যমহীন, অসামাজিক প্রকৃতির।
আঙুলের গঠন
১. শক্ত আঙুল: আঙুল যদি শক্ত অর্থাৎ স্টিফ হয় তবে তারা, নিজ মতে অবিচল থাকে, অপরাধ প্রবণতা, রূঢ় মানসিকতা সম্পন্ন হয়।
২. সরু আঙুল: দয়ালু, সহানুভূতিপ্রবণ, সন্দেহবাতিক হয়।
৩. পুষ্ট আঙুল: এই ধরনের আঙুল যদি বড়ো হয় তবে জাতক-জাতিকা বুদ্ধিমান হয়। অন্যথায় বুদ্ধিহীনতা প্রকাশ পায়।
৪. গাঁটালো আঙুল: বিশ্লেষণী মানসিকতা সম্পন্ন, জানার আগ্রহ, অনুসন্ধিৎসু হয়।
৫. হুঁচোলো আঙুল: কল্পনাপ্রবণ, গঠনমূলক চিন্তাভাবনা সম্পন্ন, অনুভূতিপ্রবণ হয়।
৬. চৌকো আঙুল: শৃঙ্খলাপরায়ণ, বাস্তববাদী, নম্রভদ্র, রক্ষণশীল, নিয়মবাগীশ ধরনের হয়।
হাতের পাঁচটি আঙুল অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুল, তর্জনী, মধ্যমা অনামিকা ও কনিষ্ঠা।উল্লিখিত প্রতিটি আঙুলের গঠন দেখে তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা গেলেও সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আঙুল হিসেবে বৃদ্ধাঙ্গুল অর্থাৎ বুড়ো আঙুলের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য এবার আমরা আলোচনা করব-
বৃদ্ধাঙ্গুল (বুড়ো আঙুল)
১. নমনীয় বা কিঞ্চিত হেলান বুড়ো আঙুল: যাদের এই ধরনের আঙুল দেখা যায় তারা উদার, সদাহাস্যময়, অমায়িক, ভোজনরসিক, বিশ্বাসী, প্রতিভাবান, সদালাপী, অভিমানী, প্রেমিক, গায়ক, ভালো শিল্পী, খেলোয়াড়, সাহিত্যিক, অনুভূতিপ্রবণ হয়।
২. অনমনীয় অতি দৃঢ় বুড়ো আঙুল: এই ধরনের আঙুলবিশিষ্ট ব্যক্তিরা আত্মকেন্দ্রিক, বাস্তববাদী, একগুঁয়ে, স্বার্থপর, অত্যন্ত পরিশ্রমী, চিন্তাশীল, খুঁতখুঁতে, অনমনীয়, গুরু ও প্রিয়জনের নির্দেশ পালনকারী হয়।
৩. গদার মতো মাথা বিশিষ্ট বৃদ্ধাঙ্গুলি: এই ধরনের জাতক-জাতিকারা অত্যন্ত নৃশংস, বর্বর, অপরাধপ্রবণ মানসিকতা সম্পন্ন, চণ্ডাল প্রকৃতির হয়।
৪. সরু কোমর বিশিষ্ট বৃদ্ধাঙ্গুলি: এই ধরনের আঙুল যাদের থাকে তারা বিদ্বান, কূটনীতিজ্ঞ, ভাবপ্রবণ, নম্র, বিনয়ী, জ্ঞানী, আদর্শবাদী হয়। রাজনীতিক, অধ্যাপক, সাংবাদিক সফল ব্যবসায়ী, ব্যক্তিত্বশালী, রোমান্টিক, কৌশলী হয়।
নখ
কেরাটিন নামক পদার্থ দিয়ে নখ তৈরি হয়। নখের দ্বারা জাতক-জাতিকার স্বভাবচরিত্র, শরীর স্বাস্থ্য সম্পর্ক জানা যায়। যেমন-
১. লম্বা নখ: শারীরিকভাবে দুর্বল প্রকৃতির, রক্তচাপ, বাত, ফুসফুস, হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা যেতে পারে।
২. চওড়া নখ: যাদের হাতের নখ চওড়া হয় তারা ভালো শ্রমিক, কর্মঠ হয়। ব্রংকাইটিস, গলা, ফুসফুসের সমস্যা দেখা যায়।
৩. সরু নখ: দুর্বল প্রকৃতির, ভগ্ন শরীর, বিষাদগ্রস্ত, ভীতু, তর্কবাগীশ উদবেগপ্রবণ প্রকৃতির হয়।
৪. ছোটো নখ: আবেগপ্রবণ, খুঁতখুঁতে, রুক্ষ, সামাজিকতা সম্পন্ন প্রকৃতির হয়।
৫. গোলাপি বা লাল নখ: সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, বুদ্ধিমান, সফল, সৌভাগ্যবান, নম্রভদ্র, সামাজিক, বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন, ধর্মপরায়ণ হয়।
৬. নীল/হলুদ/সাদা/বিবর্ণ নখ: শারীরিক দৌর্বল্য, দীর্ঘ অসুস্থতা, বিষাদগ্রস্ত, হতাশ, অপরাধপ্রবণ।
হস্তকরতলে গ্রহের শুভ–অশুভ ভাব
রবি
শুভ ফল
যশ, প্রতিপত্তি, মান, সম্মান, উৎসাহ, পিতা, আকর্ষণী ক্ষমতা, সরকারি কাজকর্ম, প্রেরণা, সুখ ও সার্থকতা, সৌন্দর্যবোধ, শিল্পীভাব, উদ্যম প্রভৃতি বিষয় নির্দেশ করে এই রবি গ্রহ।
১. হস্তকরতলে রবির ক্ষেত্র উঁচু হলে জাতক-জাতিকার উপরিউক্ত গুণাবলি শুভভাবে প্রকাশ পাবে।
২. এই ধরনের জাতক-জাতিকারা খ্যাতি, প্রতিপত্তি, প্রতিভা, সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
৩. যশস্বী লেখক, অভিনেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, উচ্চ প্রতিষ্ঠিত সরকারি কর্মচারী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। অশুভ ফল
১. নীচস্থ রবির ক্ষেত্রে এই ফল বিপরীত হয়। ২. সারাজীবন স্ট্রাগল, বাধাবিপত্তি, শিরঃপীড়া, নেত্রপীড়া, রক্তচাপ বৃদ্ধি প্রভৃতি রোগের শিকার হতে পারে।
চন্দ্ৰ
শুভ ফল
১. ভ্রমণ, সুখ, মনোবৃত্তি, হৃদয়, চিন্তা, সর্বপ্রাপ্তি, প্রেম, বিবাহ, সৌন্দর্য, কল্পনাশক্তি, বিলাসিতা, স্বার্থপরতা, অদ্ভুতরকমের ঠান্ডাভাব প্রভৃতি বিষয়কে সূচিত করে চন্দ্র।
২. চন্দ্রের ক্ষেত্র উচ্চ হলে উপরিউক্ত গুণাবলি শুভভাবে প্রকাশ পায়।
৩. উচ্চস্থ চন্দ্রের জাতক-জাতিকারা কল্পনা প্রবণ, আদর্শবাদী, ভাবপ্রবণ, রোমান্টিক, কল্পনাপ্রিয় প্রেমিক ও ভ্রমণকারী হয়।
৪. বিখ্যাত শিল্পী, প্রবন্ধকার, কলাবিদ্যা, গবেষণা প্রভৃতি বিষয়ে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়।
অশুভ ফল
১. কিন্তু নীচস্থ চন্দ্রের ফল হয় সম্পূর্ণ বিপরীত।
২. উন্মাদ, খেয়ালি, চঞ্চল, বৃদ্ধির অভাব, চরিত্রহীনতা, যক্ষ্মারোগ, সর্দিকাশির প্রবণতা নীচস্থ চন্দ্রের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
বুধ
শুভ ফল
১. বিদ্যা, বুদ্ধি, মন, ব্যাবসাবাণিজ্য, বিচক্ষণতা, চিন্তাশক্তি, কর্মোদ্যম, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি বিচারকে সূচিত করে বুধ।
২. বুধ শুভ হলে জাতকের মধ্যে উপরিউক্ত সকল গুণাবলি শুভভাবে পরিলক্ষিত হয়।
৩. চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি, সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, আইন ব্যাবসা, যেকোনো রকম ব্যাবসাবাণিজ্যে সফলতা অর্জন করতে গেলে বুধের অবস্থান শুভ হওয়া প্রয়োজন।
অশুভ ফল
১. অন্যদিকে বুধ নীচস্থ হলে উপরিউক্ত সকল শুভ ফল বাধাপ্রাপ্ত হয়।
২. নীচস্থ বুধের কারণে তোতলামো, শ্বেতি, বুদ্ধিহীনতা, ক্ষুধামন্দ্যা, হিস্টিরিয়া, নার্ভাসনেস, অজ্ঞান হওয়া ইত্যাদি হয়ে থাকে।
বৃহস্পতি
শুভ ফল
১. চেহারা, স্বাস্থ্য, জ্ঞান, অর্থ, সম্পদ, উচ্চাশা, নেতৃত্ব, ধর্মভাব, সম্মান ইত্যাদি বিষয়ের নির্দশনকারী গ্রহ হল বৃহস্পতি।
২. হাতে বৃহস্পতির ক্ষেত্র উচ্চস্থ হলে উপরিউক্ত বিষয়গুলির শুভভাব বজায় থাকে।
৩) জ্ঞান, আর্টস, ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি বিষয়ে সাফল্য আসে।
অশুভ ফল
১. নীচস্থ বৃহস্পতি আবার উপরিউক্ত বিষয়গুলিকে প্রতিহত করে অর্থাৎ অশুভ ফল দেয় কিংবা শুভ ফল হ্রাস করে।
২. অজীর্ণ, উদরাময়, শ্বাসকষ্ট, সন্ন্যাস, টিউমার, ফুসফুসে সমস্যা, মৃগীরোগ, তালু, কণ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।
শুক্র
শুভ ফল
১. রূপ, যৌবন, প্রেমী, রোমান্স, যৌনতা, স্বাস্থ্য, বিবাহ, বিলাসিতা, শৌখিনতা, সৃষ্টিমূলক কাজকর্ম, কাম প্রবণতা, ভালোবাসা প্রভৃতির কারক গ্রহ শুক্র।
২. উচ্চস্থ শুক্র উপরিউক্ত বিষয়ে শুভ ফল প্রদান করে। ৩. অভিনয়, ফাইন আর্টস, ফ্যাশন ডিজাইনিং সহ যেকোনোরকম সৃষ্টিমূলক কাজে সাফল্য পাওয়া যেতে পারে।
অশুভ ফল
১. অন্যদিকে নীচস্থ শুক্রের জন্য যৌনব্যাধি, ধ্বজভঙ্গতা, বহুমূত্র, লাবণ্যহীনতা, স্ত্রী রোগ, বাত প্রভৃতি রোগ দেখা যায়।
মঙ্গল
শুভ ফল
১. জমিজমা, সম্পত্তি, বিবাহ, দাম্পত্য, নেতৃত্ব, শক্তি, পরাক্রমতা, পুলিশ, শত্রু প্রতিরোধ ক্ষমতা, সাহস প্রভৃতির কারক গ্রহ এই মঙ্গল।
২. মঙ্গলের স্থান হাতের মধ্যে উচ্চ হলে উপরিউক্ত- গুণাবলি শুভ ভাবে প্রকাশ পায়।
৩. মঙ্গলের শুভ প্রভাবে জাতকজাতিকা পুলিশ, প্রোমোটার আমলা, সেনা, শল্য চিকিৎসক, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে।
অশুভ ফল
১. নীচস্থ মঙ্গলে উপরিউক্ত সকল গুণাবলির অশুভভাব প্রকাশ পায়।
২. অর্শ, আলসার, অগ্নি প্রদাহ, রক্তপাত, আঘাত, হাম, পক্স, ফোঁড়া, রক্ত আমাশয় প্রভৃতি রোগ হতে পারে।
শনি
শুভ ফল
১. ত্যাগ, সংযম, ধর্ম, ধ্যান, দারিদ্র্য, হতাশা, একাকিত্ব, বিষাদ, দুঃখ, সাম্যবোধ, দীর্ঘসূত্রিতা প্রভৃতি বিষয়ের কারক গ্রহ হল শনি।
২. শনির অবস্থান উচ্চস্থ হলে যেকোনো ব্যক্তি রাজতুল্য সম্মানের অধিকারী হয়।
অশুভ ফল
১. অন্যথায় উপরিউক্ত সকল বিষয়ের অশুভ ফল ভোগ করে।
২. নীচস্থ শনি ক্যানসার, স্নায়বিক রোগ, শুচিবাই, বাত, অজীর্ণ, পাকস্থলীর রোগ, আকস্মিক রোগ, দারিদ্র্য প্রভৃতি সূচিত করে।
রাহু
শুভ ফল
১. রাহুকে অনেকেই গ্রহ বলে মানতে চান না, পাশ্চাত্য জ্যোতিষীদের মতে রাহু হল ‘সূর্যের ছায়া, কামনা, বাসনা, শঠতা, ছলচাতুরী, হিংসা, স্বার্থপরতা, দুর্ঘটনা, সম্মানহানি প্রভৃতি সূচিত করে রাহু।
২. রাহুর শুভ প্রভাবে উপরিউক্ত বিষয়গুলির প্রকোপ কমে।
অশুভ ফল
১. অশুভ প্রভাবে উপরিউক্ত সমস্যাগুলি ভীষণভাবে প্রকট হয়।
২. যুদ্ধবিদ্যা, এয়ারলাইন্স, ইলেকট্রিক্যাল কোর্সে সাফল্য আসে রাহুর শুভ প্রভাবে। অশুভ রাহু এইসকল ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
৩. অশুভ রাহু সারাজীবন বাধাবিপত্তি, চোট-আঘাত প্রাপ্তি, অনিষ্ট বহন করে চলে।
কেতু
শুভ ফল
১. পাশ্চাত্য মতে কেতুকে বলা হয় চন্দ্রের ছায়া। গুপ্ত প্রণয়, ষড়যন্ত্র, কুচক্র, রহস্যময় জ্ঞান, অসামাজিক কার্যকলাপ কেতুর প্রবৃত্তি। কেতুর শুভ প্রভাবে উপরিউক্ত বিষয়ের প্রকোপ হ্রাস পায়।
২. শুভ ফলপ্রদানকারী কেতু সুপ্তবিদ্যা, গোয়েন্দাবৃত্তি, গুহ্যবিদ্যা, স্ট্যাটিসটিক্স প্রভৃতি বিষয়ে সাফল্য প্রদান করে।
অশুভ ফল
১. অশুভ কেতু উপরিউক্ত সমস্যাগুলি ভীষণভাবে বৃদ্ধি করে।
২. অশুভ কেতুর কারণে গুপ্তশত্রুতা, বাধাবিপত্তি, সন্তানহীনতা, অসুখী দাম্পত্য, দুরারোগ্য ব্যাধির প্রকোপ ঘটে।
হাতের প্রধান প্রধান রেখা
হাতের মধ্যে প্রধান রেখা সহ আরও অনেক রেখা, চিহ্ন ইত্যাদি দেখা যায় (চিত্র ২) । তাই হস্তরেখার মাধ্যমে ভাগ্যবিচারের ক্ষেত্রে খুব সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। প্রচলিত মত অনুযায়ী অনেকেরই একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে ভাগ্য বিচারের ক্ষেত্রে পুরুষদের ডান হাত ও মহিলাদের বাম হাত দেখা উচিত। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই মতে একেবারেই বিশ্বাসী নই। সুদীর্ঘ জ্যোতিষ চর্চার অভিজ্ঞতা ও গবেষণায় এই সত্য উপলব্ধি করেছি। —’লেফট হ্যান্ড ইজ দ্য হ্যান্ড ইউ আর
বর্ন উইথ…. রাইট হ্যান্ড ইজ দ্যা হ্যান্ড ইউ মেক’ অর্থাৎ বাম হাত হল যে হাত নিয়ে আপনি জন্মগ্রহণ করেছেন আর ডান হাত হল কর্ম (অর্থাৎ যে হাত দিয়ে আপনি ভাগ্য তৈরি করছেন। সুতরাং ভাগ্য বিচারের ক্ষেত্রে ডান হাতের ভূমিকা বেশি হলেও আমার ব্যক্তিগত মত অনুযায়ী দুটি হাত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে তবেই সিদ্ধান্তে যাওয়া প্রয়োজন। যাইহোক এবার আমরা প্রধান প্রধান রেখাগুলির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করব–
আয়ুরেখা
১. মানুষের জীবনীশক্তি, তার অনুভূতি, মানসিক স্থিতি, ফাঁড়া, দুর্ঘটনা, শরীর-স্বাস্থ্য, অসুখবিসুখ সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি এই আয়ুরেখা থেকে পাওয়া যায়।
২. আয়ুরেখা যদি কোনো স্থানে কর্তিত বা ভাঙাভাঙা হয়, তাহলে সেই বয়সে স্বাস্থ্য ও মানসিক বিপর্যয় ঘটবে। (চিত্র 3)
৩. শৃঙ্খলাকার আয়ুরেখা থাকলে অতর্কিতভাবে জীবন সংশয়ের সম্ভাবনা থাকে। (চিত্র ৪)
৪. শনির স্থান থেকে কোনো রেখা আয়ুরেখাকে যদি স্পর্শ করে বা কেটে বেরিয়ে যায়, তাহলে হাত, পা বা মাথায় চোট লেগে প্রাণহানির সংশয় দেখা যায়। (চিত্র ৫)
৫.আবার আয়ুরেখা থেকে ঊর্ধ্বগামী কোনো রেখা যদি বৃহস্পতির দিকে উঠে যায়, তবে জাতক- জাতিকা সেই বয়সে নিজ চেষ্টায় প্রভূত উন্নতি করতে সক্ষম হয়। (চিত্র-
৬. যদি কোনো রেখা আয়ুরেখা থেকে উঠে চন্দ্রস্থানকে আড়াআড়িভাবে অতিক্রম করে তবে সেই বয়সে বিদেশ/দূর ভ্রমণ বোঝায়।
৭. আয়ুরেখা থেকে উঠে কোনো রেখা যদি রবির দিকে চলে যায় তবে সেই বয়সে যশ-সম্মান-প্রতিপত্তি বোঝায়
৮. আয়ুরেখা থেকে উত্থিত হয়ে বুধের দিকে কোনো রেখা গেলে তা ব্যাবসাবাণিজ্য ও কেরিয়ারে উন্নতি বোঝায়।
৯. রাহুর স্থান থেকে কোনো রেখা আয়ুরেখা স্পর্শ বা ছেদ করলে–ফাঁড়া, দুর্ঘটনা ইত্যাদি বোঝায়।
১০.আয়ুরেখার পাশে কোনো অনুগরেখা (মার্শাল লাইন) বা আয়ুরেখার উপর চতুষ্কোণ চিহ্ন থাকলে তা দুর্ঘটনা, বিপর্যয়কে প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
শিরোরেখা (হেড লাইন)
১. করতলের রেখাগুলির মধ্যে শিরোরেখা বা হেড লাইন থেকে জাতক- জাতিকার সুখ, দুঃখ, সমৃদ্ধি, অবনতি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানা যায়।
২. শিরোরেখা যদি আয়ুরেখার সঙ্গে যুক্ত থাকে তবে তা দৃঢ়চেতা মনোভাব, অত্যন্ত সংবেদনশীলতা, তীব্র কামনাবাসনা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা বোঝায়। (চিত্র ৭)
৩. শিরোরেখা যদি ক্ষুদ্রাকৃতি হয় তবে তা বুদ্ধিহীনতা, স্বল্পায়ুতা বোঝায়।
৪. ঢেউখেলানো শিরোরেখা সর্বদা পরিবর্তনশীল মানসিকতা বোঝায়। (চিত্র ৮)
৫. কোনো কোনো শিরোরেখা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে-একটি শাখা বুধের দিকে, দ্বিতীয় শাখা মঙ্গলের দিকে ও তৃতীয় শাখাটি যদি চন্দ্রের দিকে ধাবিত হয় তবে তা অত্যন্ত শুভ। অন্যকোনো দোষত্রুটি না থাকলে এই ধরনের ব্যক্তিরা জীবনে অনন্যসাধারণ কৃতিত্ব লাভ করে। (চিত্র ৯)
শিরোরেখাটি যদি চন্দ্রের দিকে ধাবিত হয় তাহলে সেই সকল ব্যক্তি কল্পনাবিলাসী, অস্থিরমতি হয়। (চিত্র10)
৭. শিরোরেখা থেকে ঊর্ধ্বগামী ক্ষুদ্রাকৃতির উপাশাখা (স্প্লিট লাইন) উন্নতি ও সমৃদ্ধিকারক। (চিত্র ১১)
৮. শিরোরেখায় যদি তারকাচিহ্ন, ক্রসচিহ্ন বা বিন্দু চিহ্ন থাকে তবে তা মানসিক বিপর্যয় বোঝায়।
৯. দুটি শিরোরেখা বিশিষ্ট মানুষজন একাধিক ক্ষেত্রে সাফল্য ও বুদ্ধির পরিচয় দেয়।
১০. শিরোরেখা যদি গভীর ও স্পষ্ট হয় তবে সেই সকল ব্যক্তি আত্মসংযমী, স্থিরবুদ্ধি সম্পন্ন, মানসিক স্থিতধী হয়।
হৃদয়রেখা (হার্ট লাইন)
১. হৃদয় রেখা (হার্ট লাইন) থেকে মানুষের প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, আবেগ. হৃদয়বৃত্তি, মানবতাবোধ প্রভৃতি বোঝা যায়।
২. এই রেখা যদি সরলভাবে বৃহস্পতির দিকে ধাবিত হয়, তবে সেই ব্যক্তি উদার মনোভাবাপন্ন, প্রেম-প্রীতি মানবিক গুণ সম্পন্ন হবে। (চিত্র ১২)
৩. হৃদয়রেখাটি যদি শিরোরেখার সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে তবে সেই সকল ব্যক্তি হৃদয়বত্তার থেকে মস্তিষ্কের কর্মকুশলতা বা সিদ্ধান্তের উপর অধিক জোর দেন।
8.আঁকাবাঁকা,যবহ্নিযুক্ত বা শৃঙ্খলাকার হৃদয়রেখা প্রেম পরিণয়ে নিষ্ঠার অভাব সূচিত করে। (চিত্র ১৩)
৫. হৃদয়রেখার (প্রারম্ভে) বৃত্তাকার চিহ্ন থাকলে তা অগাধ সন্তান স্নেহ সূচিত করে। (চিত্র ১৪)
৬. অত্যন্ত স্বল্প দৈর্ঘ্যের হৃদয়রেখা সংকীর্ণ মনোবৃত্তি বোঝায়। (চিত্র ১৫)
৭. হৃদয়রেখা যদি সম্পূর্ণ হাত জুড়ে থাকে তবে সেই সকল ব্যক্তি ভাবাবেগে ও হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হন। (চিত্র ১৬)
৮. যাদের হৃদয় রেখাটি যদি নুয়ে পড়ে চন্দ্রের দিকে ধাবিত হয় তবে তারা কল্পনাবিলাসী হয়। জীবনে দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হন। (চিত্র ১৭)
৯. যদি কোনো ব্যক্তির হৃদয়রেখা ভাঙা ভাঙা হয়, তবে প্রণয়ঘটিত ব্যাপারে নৈরাশ্য, ট্র্যাজেডি নির্দেশ করে। (চিত্র ১৮)
১০. যাদের হাতে হৃদয়রেখা থাকে না, তারা সাধারণত অত্যন্ত কঠোর ও হৃদয়হীন হতে পারেন।
ভাগ্যরেখা (ফেট লাইন)
১. ভাগ্যরেখার দ্বারা মানুষের ভাগ্য, জীবনপ্রবাহ সম্পর্কে জানা যায়।
২. যাদের হাতে ভাগ্যরেখা একেবারেই নেই – তারা সাধারণত ভাগ্যের সাহায্য পান না। নিজের চেষ্টায় অর্থাৎ কর্মের দ্বারা জীবন গড়ে নিতে হয়।
৩. ভাগ্যরেখা যদি ছেদহীন, সুস্পষ্ট অবস্থায় শনির দিকে গমন করে তাহলে সেইসকল জাতক সারাজীবন সুখশান্তি লাভ করে। (চিত্র ১৯)
৪. করতলের নিম্নভাগে আঁকাবাঁকা ভাগ্যরেখা জাতকের শারীরিক দুর্বলতা ও বুদ্ধির স্বল্পতা নির্দেশ করে। (চিত্র-২০)
৫. যার হাতে ভাগ্যরেখা তিনটি রয়েছে-একটি তর্জনী, একটি অনামিকা ও অপরটি মধ্যমার দিকে গেছে সেই ব্যক্তি রাজতুল্য সম্মানের অধিকারী হন।
৬. ভাগ্যরেখা যদি মণিবন্ধ রেখাকে কেটে দিয়ে নীচের দিকে চলে যায় তবে তা অশুভ লক্ষণ। (চিত্র ২১)
৭. ভাগ্যরেখার কোনো শাখাপ্রশাখা না থাকলে জীবনে স্থিরতা, সৌভাগ্য বিরাজ করে।
৮. দুটো হাত দেখে তবেই ভাগ্যরেখা বিচার করা উচিত।
৯. ভাগ্যরেখার অন্তিমভাগে একত্রিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রেখা থাকলে তা জাতকের সশ্রম কারাদণ্ড বা ভাগ্যবিপর্যয় বোঝার। (চিত্র ২২)
১০. চন্দ্রের স্থান থেকে ভাগ্যরেখা সুস্পষ্টভাবে উদয় হয়ে শনির স্থানে অগ্রসর হলে, সেই ব্যক্তি খ্যাতনামা হয়।
স্বাস্থ্য রেখা (হেলথ লাইন)
১. স্বাস্থ্যরেখা থেকে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
২. অনেকের আবার স্বাস্থ্য রেখা থাকে না এক্ষেত্রে বলব ভগ্ন, হালকা স্বাস্থ্যরেখার থেকে তা না থাকলেই বরং ভালো।
৩. স্বাস্থ্যরেখা না থাকলেই বরং শারীরিক সুস্থতার কথা বোঝা যায়।
৪. ভাগ্যরেখা, স্বাস্থ্যরেখা ও শিরোরেখা মিলে যদি একটি ত্রিকোণ তৈরি হয় তবে জাতক-জাতিকা গুপ্তবিদ্যা, জ্যোতিষ শাস্ত্র, রাজনীতিতে সাফল্য পেতে পারে। (চিত্র-২৩)
৫. কিন্তু এই ত্রিকোণের মধ্যে কোনো নক্ষত্র বা ক্রস চিহ্ন থাকলে চক্ষুহানি ঘটতে পারে।
৬. স্বাস্থ্যরেখা যদি ভঙ্গুর ধরনের হয় তবে রোগভোগ লেগেই থাকে।
৭. স্বাস্থ্যরেখা শাখাযুক্ত হলে বৃদ্ধাবস্থায় স্বাস্থ্যহানি হয়।
৮. স্বাস্থ্যরেখার উপর যবচিহ্ন থাকলে নিদ্রাকালে স্বপ্ন, ভীতি সঞ্চার হয়। (চিত্র ২৪)
৯. যদি কারও স্বাস্থ্য রেখা আয়ু রেখার কাছে গভীর থাকলেও পরে সরু অবস্থায় হৃদয় রেখায় শেষ হয় তবে তার হার্ট দুর্বল হয় ৷
১০. স্পষ্ট সুন্দর, যব চিহ্ন, জাল চিহ্ন বিহীন স্বাস্থ্য রেখা সুখী ও সুস্থ শরীর নির্দেশ করে।
বিবাহ রেখা (ম্যারেজ লাইন)
১. জাতক-জাতিকার প্রেম, পরিণয়, ভালোবাসা, রোমান্স, অবৈধ প্রণয় ও বিবাহ প্রকাশ পায় এই বিবাহ রেখা দ্বারা।
২. অনেকের হাতে একাধিক বিবাহ রেখা থাকে। এর মানে যে সব ক্ষেত্রে একাধিক বিবাহই হবে তার কোনো মানে নেই৷
৩. এই ধরনের একাধিক রেখা থাকলে তার মধ্যে সবচেয়ে যেটা সুস্পষ্ট ও গভীর সেটিই বিবাহ বা
দাম্পত্য জীবন নির্দেশ করে। (চিত্র ২৫)
৪. অন্য রেখা থাকলে সেটি প্রেম,সম্বন্ধ ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি বোঝায়।
৫. হৃদয়রেখার যত কাছাকাছি বিবাহ রেখা থাকে বিবাহ ততই তাড়াতাড়ি হয়।
৬. কারও বিবাহ রেখা যদি রবি রেখাকে স্পর্শ করে তবে তার বিবাহ অপেক্ষাকৃত ধনী ঘরে হয়। (চিত্র ২৬)
৭. বিবাহ রেখা ছিন্ন-বিছিন্ন, ভগ্ন হলে দাম্পত্য কলহ বোঝায়। (চিত্র ২৭)
৮. বিবাহ রেখার উপর চতুষ্কোণ বা ত্রিকোণ চিহ্ন থাকলে তা বিবাহসূত্রে প্রচুর সম্পত্তি, স্ত্রী ভাগ্যে ধন ইত্যাদি বোঝায়। (চিত্র ২৮)
সন্তান রেখা (চাইল্ড লাইন)
১. সন্তান রেখা থেকে সন্তান সম্পর্কিত বিচার করা হয়।
২. বিবাহ রেখার উপর দণ্ডায়মান রেখা থেকেই সন্তানের সংখ্যা ও তার সম্বন্ধে জানা যায়- -যদিও তা অত্যন্ত জটিল এবং গণৎকারের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে। (চিত্র ২৯)
৩. সুস্পষ্ট ও গভীর সন্তান রেখা—সন্তানের শারীরিক সুস্থতার পরিচায়ক।
৪. সন্তান রেখার মাধ্যমে সন্তানের সংখ্যা বিচার করার সময় অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।
রবি রেখা (সান লাইন)
১. রবি রেখা থেকে জাতক- জাতিকার মান সম্মান, যশ প্রতিপত্তি সাফল্য ইত্যাদি প্রকাশ পায়।
২. রবি রেখা যদি সোজা নীচের দিকে নেমে যায় তবে তা অত্যন্ত শুভ কারক। (চিত্র ৩০)
৩. ভাগ্য রেখা মলিন হলেও রবি রেখা যদি স্পষ্ট ও গভীর হয় তাহলেও জাতক সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।
৪. রবি রেখা যদি কারও হাতে না থাকে তবে সারাজীবন কঠিন সংগ্রাম, দুঃখ, হতাশা, স্বীকৃতিহীনতা লেগেই থাকে।
৫. রবিরেখা যদি ভাগ্য রেখায় গিয়ে মিলিত হয়, তাহলে জাতক যশস্বী হয়। (চিত্র ৩১)
৬. রবি রেখার উপর স্টার চিহ্ন থাকলে তা স্বকার্যে উন্নতি বোঝায়। (চিত্র ৩২)
৭. রবি রেখা শৃঙ্খলাকার হলে জাতক যশহীন হয়। (চিত্র ৩৩)
৮. রবি রেখার উপর যব চিহ্ন থাকলে ওই বয়সে যশহানি ঘটে।
৯. তরঙ্গায়িত রবিরেখা চঞ্চলমতি, বুদ্ধিহীনতা, যশ প্রাপ্তিতে বাধা বোঝায়। (চিত্র ৩৫)
১০. একাধিক শাখা বিশিষ্ট রবি রেখা উন্নতি, যশ, ধনপ্রাপ্তি ঘটায়।
সহকারী রেখা
হস্তকরতলে উপরিউক্ত প্রধান প্রধান রেখাগুলি ছাড়াও আরও অনেক সহকারী রেখা দেখতে পাওয়া যায়। এই সকল সহকারী রেখাগুলির মধ্যে আমরা বুধরেখা, শুক্র রেখা, রাহু রেখা, ভ্রমণ রেখা, প্রভাব সৃষ্টিকারী রেখা, প্রত্যক্ষ দর্শন রেখা, পরস্ব প্রাপ্তি রেখা, গুহ্য ক্রস সম্পর্কে আলোচনা করব–
বুধ রেখা
১. শুক্রস্থান থেকে উদ্ভূত এবং আয়ু রেখা ভেদ করে বুধের দিকে বিস্তৃত রেখাগুলিকে বুধ রেখা বলে।
২. এই রেখা থেকে জাতকের বিদ্যা, ব্যাবসা, পাণ্ডিত্য সম্পর্কে জানা যায় । (চিত্র-৩৬)
শুক্র রেখা
১. শুক্র স্থান থেকে সৃষ্ট হয়ে এক বা একাধিক রেখা আয়ু রেখা পর্যন্ত গেলে অথবা সেটি অতিক্রম করলে তাদের শুক্র রেখা বলে।
২. এই ধরনের রেখা থেকে জাতক- জাতিকার কামনা-বাসনা, সম্ভোগস্পৃহা, প্রেম, পরিণয়, রোমান্স, যৌনতা, রাগ, অনুরাগ, প্রতিভা, সৃষ্টিমূলক কাজ ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। (চিত্র- ৩৭)
রাহু রেখা
১. রাহুর স্থান থেকে উদ্ভূত হয়ে যেসকল রেখা আয়ু রেখা অতিক্রম করে শিরোরেখা পর্যন্ত অগ্রসর হয় বা সেটি অতিক্রম করে তাকেই রাহু রেখা বলে।
২. রাহু রেখা হাতে থাকলে তা প্রতি কাজে বাধাবিঘ্ন, দুর্ঘটনা, সিদ্ধিলাভে বাধা, ভীতি, আতঙ্ক প্রভৃতি বোঝায়। (চিত্র-৩৮)
ভ্রমণ রেখা
১. আয়ু রেখা থেকে নির্গত হয়ে চন্দ্রের স্থানে ধাবমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রেখাকে বলা হয় ভ্রমণ রেখা। (চিত্র-৩৯)
২. স্পষ্ট ও সুন্দর ভ্রমণ রেখা হাতে থাকলে জাতকের বিদেশভ্রমণ ও দূর ভ্রমণ হয়।
প্রভাব সৃষ্টিকারী রেখা
১. শুক্র ক্ষেত্র থেকে উত্থিত হয়ে কোনো রেখা সমগ্র করতলের মধ্যে চন্দ্র, বুধ, শনি, রবি, বৃহস্পতি ইত্যাদি যে কোন গ্রহ স্থানে গমন করলে তাকে প্রভাব সৃষ্টিকারী রেখা বল হয়। (চিত্র-৪০)
২. স্পষ্ট, গভীরপ্রভাব সৃষ্টিকারী রেখা সাধারণত যে গ্রহের ক্ষেত্র অভিমুখে ব্যপ্ত হয় তার কারকতা বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শুভ ফল প্রদান করে। ভাগ্যোন্নতি, ঐশ্বর্য, যশ ইত্যাদি লাভ হয়।
প্রত্যক্ষ দর্শন রেখা বা দৈব রেখা
১. বুধের ক্ষেত্র থেকে উঠে যদি কোনো রেখা ধনুকের মতো বেঁকে মঙ্গলের ক্ষেত্র ছাড়িয়ে চন্দ্রের ক্ষেত্র পর্যন্ত প্রসারিত হয়, তবে তাকে প্রত্যক্ষ দর্শন রেখা বা দৈব রেখা বলে। (চিত্র-৪১)
২. এই রেখা খুব কম জনের হাতেই দেখা যায়। যাদের থাকে তারা সাধারণত সিদ্ধপুরুষ, অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি, আধ্যাত্মিক চেতনাসম্পন্ন বা বাকসিদ্ধ হয়ে থাকেন।
পরস্ব প্রাপ্তি রেখা
১. আয়ু রেখার অনুগামী সমান্তরাল যে রেখা রাহুর স্থান থেকে উত্থিত হয়ে শুক্রস্থান পর্যন্ত অগ্রসর হয়, তাকেই পরস্বপ্রাপ্তি রেখা বলা হয়। এটিকে আয়ু রেখার অনুগ রেখাও বলে। (চিত্র-৪২)
২. লটারি প্রাপ্তি, পরধন প্রাপ্তি, আয়ু রেখার বিপদ থেকে রক্ষা পেতে এই রেখা সহায়তা করে।
গুহ্যক্রস বা আধিভৌতিক ক্রস
১. শিরো রেখা ও হৃদয় রেখার মধ্য স্থলের চতুর্ভুজ ক্ষেত্রে যদি কোনো ক্রস চিহ্ন থাকে, তবে তাকে গুহ্য ক্রস বলে। (চিত্র-৪৩)
২. এই ধরনের ক্রস চিহ্ন থাকলে জাতক ধর্মবিদ্যা, গুহ্য বিদ্যা, যোগ জ্যোতিষ, আধ্যাত্মিক বিষয়ে অত্যন্ত যশ প্রতিপত্তি লাভ করে।
বিশেষ বিশেষ রেখা
উপরিউক্ত প্রধান রেখা ও সহকারী রেখা ছাড়াও আরও বিশেষ কিছু রেখা হস্ত করতলে দেখা যায়। এগুলির মধ্যে শুক্র বন্ধনী, শনি বন্ধনী ও সলোমনী বন্ধনী সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
শুক্র বন্ধনী
১. হস্ত করতলে তর্জনীর মূল বা বৃহস্পতির স্থান থেকে কনিষ্ঠার মূল বা বুধের অংশ পর্যন্ত অর্ধচন্দ্রাকার রেখাকেই বলা হয় শুক্র বন্ধনী। (চিত্র-৪৪)
২. সুম্পষ্ট ও সুলক্ষণযুক্ত শুক্র বন্ধনী থাকলে জাতক সৃষ্টিমূলক কাজে খ্যাতি লাভ করে।
৩. ভগ্ন, কর্তিত, দোষযুক্ত শুক্র বন্ধনীতে চরিত্রহীনতা, লাম্পট্য, ব্যভিচার ইত্যাদি প্রকাশ পায়।
শনি বন্ধনী
১. যে রেখা শনি স্থানের উপরিস্থিত মধ্যমূলকে ঘিরে রাখে তাকে শনির বন্ধনী বলে। (চিত্র-৪৫)
২. শনির বন্ধনী যাদের হাতে থাকে তারা জীবনে প্রচুর দুঃখ, কষ্ট, দুর্দশা, অশান্তি ভোগ করেন।
সলোমনী বন্ধনী
১. বৃহস্পতির উপরিভাগে তর্জনীর মূলকে যে রেখা ঘিরে রাখে তাকে সলোমনী বন্ধনী বলে। (চিত্র-৪৬)
২. এই রেখা যাদের হাতে থাবে তারা রাজা সলোমনের মতো বিদ্বান, জ্ঞানী, যশস্বী পণ্ডিতপ্রবর হয়ে থাকেন।
হস্তকরতলে নানা প্রকার চিহ্নের তাৎপর্য
বিভিন্ন প্রকারের রেখা ছাড়াও করতলে নানাবিধ চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। এইসব চিহ্ন তার অবস্থানের সাপেক্ষে কখনও শুভ ফল দেয় আবার কখনও বা অশুভ ফল প্রদান করে। তাই আমরা এই সকল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব-
ত্রিভুজ চিহ্ন
১. ত্রিকোণ বা ত্রিভুজ চিহ্ন নানা ধরনের হয়ে থাকে। (চিত্র-৪৭)
২. বৃহস্পতির ক্ষেত্রে ত্রিভুজ চিহ্ন থাকলে জাতকের বৈদেশিক কার্যে সাফল্য বোঝায়।
৩. শনির ক্ষেত্রে থাকলে গুপ্তবিদ্যায় পারদর্শী হয়।
৪. বুধের স্থানে থাকলে তা কর্মক্ষেত্রে সাফল্য বোঝায়।
৫. রবির ক্ষেত্রে থাকলে যশ, মানসম্মান, বিজ্ঞান, শিল্পে উন্নতি লাভ করে।
৬. এই চিহ্ন চন্দ্রের ক্ষেত্রে থাকলে জাতক কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী হয়।
৭. মঙ্গলের স্থানে থাকলে তা পুলিশ, আমলা,সেনাবাহিনীতে সাফল্য বোঝায়।
৮. শুক্র স্থানে থাকলে প্রেমিকভাব বৃদ্ধি পায় ৷
ক্রস (ক্রুশ) চিহ্ন
১. ক্রস চিহ্ন ক্রুশ বা বজ্ৰ চিহ্ন নামেও পরিচিত। (চিত্র-৪৮)
২. বৃহস্পতির ক্ষেত্রে এই চিহ্ন থাকলে বিবাহিত জীবন সুখের হয়।
৩. রবির ক্ষেত্রে থাকলে জাতকের সম্মানহানি ঘটতে পারে।
৪. শনির স্থানে থাকলে তা দুর্ঘটনার যোগ বোঝায়।
৫. বুধের স্থানে থাকলে জাতক স্বার্থপর, কলহপ্রবণ, বিদ্যাহীন হয়।
৬. চন্দ্রের ক্ষেত্রে ক্রস চিহ্ন অশুভ। মিথ্যাচারিতা, প্রবঞ্চনা ইত্যাদি বোঝায়।
৭. শুক্রের স্থানে ক্রস চিহ্ন অসুখী দাম্পত্য, প্রেমে নৈরাশ্য বোঝায়।
৮. রাহুর স্থানে এই চিহ্ন হঠকারিতা, বাধাবিপত্তি, ঝামেলা বোঝায়।
জাল চিহ্ন
১. জাল চিহ্নও নানা স্থানে থাকতে পারে। (চিত্র-৪৯)
২. বৃহস্পতির ক্ষেত্রে জাল চিহ্ন থাকলে তা মিথ্যা অহংকার বোঝায় ।
৩. শনির ক্ষেত্রে থাকলে জাতক ভাগ্যহীন হয়।
৪. রবির স্থানে এই চিহ্ন মূর্খতা, অপযশ, শক্তিহীনতা বোঝায়।
৫. বুধের স্থানে থাকলে তা শঠতা, বিশ্বাসহীনতা, প্রতারণা বোঝায়।
৬. মঙ্গলের স্থানে জাল চিহ্ন হঠাৎ বিপদ, বিষণ্ণভাব প্রকাশ করে। শুক্রস্থানে জাল চিহ্ন যৌন দুর্বলতা,বিপথগামিতা, মদ্যপায়ী ইত্যাদি বোঝায়।
৭. চন্দ্রস্থানে থাকলে তা কল্পনাবিলাসিতা,মতিভ্রম,কুঁড়েমি বোঝায়।
যব চিহ্ন
১. বিভিন্ন ধরনের যব চিহ্ন হস্ত করতলে দেখা যায়। (চিত্র ৫০)
২. ভাগ্যরেখার উপর যব চিহ্ন থাকলে ভাগ্যনাশ, অর্থক্ষতি, স্ত্রীলোক দ্বারা প্রবঞ্চনা বোঝায়।
৩. হৃদয়রেখায় থাকলে হার্টের সমস্যা বোঝায়।
৪. মঙ্গলের স্থানে এই চিহ্ন মস্তিষ্ক বিকৃতি, আত্মহত্যা প্রবণতা বোঝায় ৷
৫. বৃদ্ধাঙ্গুলির গোড়ায় যব চিহ্ন থাকলে জাতক ধনী-জ্ঞানী
হয়।
চতুষ্কোণ চিহ্ন
১. চতুষ্কোণ চিহ্ন একটি শুভ চিহ্ন। এটি যেখানে থাকে সেখানকার অর্থাৎ সেই রেখা বা গ্রহের শুভত্ব অর্জনে সহায়তা প্রদান করে। (চিত্র ৫১)
২. বৃহস্পতির ক্ষেত্রে এই চিহ্ন থাকলে জাতকের সব আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়তা করে।
৩. মঙ্গলের ক্ষেত্রে থাকলে তা ভূসম্পত্তির যোগ বোঝায়।
৪. বুধের ক্ষেত্রে এই চিহ্ন ব্যাবসা-বাণিজ্য, বিদ্যা, বুদ্ধির যেসকল বাধা বিঘ্ন-তা হ্রাস করতে সাহায্য করে।
৫. রবির ক্ষেত্রে তা যশ ও ধনপ্রাপ্তিতে সহায়তা করে।
৬. শনির ক্ষেত্রে থাকলে তা সর্ববিপদ থেকে রক্ষা করে।
৭. শুক্রের স্থানে থাকলে জাতক বিদ্যালাভ বা ধর্মপ্রচারে গৃহ ত্যাগ করে।
৮. চন্দ্রের ক্ষেত্রে থাকলে তা চন্দ্রের স্থানে অশুভ চিহ্ন যুক্ত অশুভ ফলের প্রকোপ হ্রাস করে।
কালোদাগ ও তিল চিহ্ন
১. করতলে যেখানে যেখানে কালো দাগ ও তিল চিহ্ন থাকে তা সেখানকার শুভত্ব নষ্ট করে অশুভ ফল বৃদ্ধি করে।
২. আয়ু রেখায় থাকলে তা কঠিন রোগ, শোক প্রকাশ করে।
৩. শিরোরেখায় থাকলে অশান্তি, ঝামেলা বোঝায়।
৪. হৃদয়রেখায় থাকলে হৃদরোগের সম্ভাবনা সূচিত করে।
৫. রবি রেখায় থাকলে যশ, সুনামহানি বোঝায়।
৬. বিবাহ রেখায় থাকলে তা দাম্পত্য কলহ, বিবাহে বাধা বোঝায়।
৭. বৃহস্পতির ক্ষেত্রে থাকলে উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। ৮. বুধের ক্ষেত্রে থাকলে প্রতারণা, বিদ্যাবুদ্ধিহানি, ব্যাবসায় মন্দা ঘটে।
৯. মঙ্গলের ক্ষেত্রে থাকলে মামলা-মোকদ্দমা, পুলিশি ঝামেলা বোঝায়।
১০. শুক্রের ক্ষেত্রে থাকলে যৌন দুর্বলতা, যৌনব্যাধি, লাম্পট্য বোঝায়।
১১. চন্দ্রের ক্ষেত্রে তিল বা কালোদাগ থাকলে মস্তিষ্ক বিকৃতি, মানসিক অশান্তি, ভ্রমণকালে বিপদ সূচনা করে।
বৃত্ত চিহ্ন
১. রবির স্থান ছাড়া অন্যান্য সব স্থানে এই চিহ্ন অশুভ ফল প্রদান করে। এই চিহ্ন বিভিন্ন স্থানে থাকতে পারে। (চিত্র ৫২) ২. হৃদয়রেখায় বৃত্ত চিহ্ন হৃদয় দৌর্বল্য প্রকাশ করে শিরোরেখায় থাকলে তা দৃষ্টিশক্তির বাধা বোঝায়।
৩. আয়ু রেখায় থাকলে সেই বয়সে রোগ, ব্যাধি হয়।
৪. এছাড়া যে গ্রহ পজিশনে এই চিহ্ন থাকে, সেখানে তার শুভ ফল নষ্ট করে।
৫. শুধুমাত্র রবির স্থানে বৃত্ত চিহ্ন জাতকের খ্যাতি, সুনাম ইত্যাদি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
তারা চিহ্ন
১. এই চিহ্ন শনির ক্ষেত্র ছাড়া অন্য সব স্থানেই শুভ ফল দেয়। তারা চিহ্ন বিভিন্ন স্থানে থাকতে পারে। (চিত্র ৫৩)
২. বৃহস্পতির ক্ষেত্রে তারা চিহ্ন সৌভাগ্য, ক্ষমতা, খ্যাতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৩. শনির ক্ষেত্রে তারা চিহ্ন জীবনে ট্র্যাজেডি, আকস্মিক দুর্দশা বোঝায়।
৪. রবির ক্ষেত্রে তারা চিহ্ন জননেতা, সুনাম, ধন, যশ বৃদ্ধি বোঝায়।
৫. বুধের ক্ষেত্রে তা বিদ্যা, বুদ্ধি, ব্যাবসা, স্মরণশক্তি, বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৬. মঙ্গলের ক্ষেত্রে তারা চিহ্ন জাতকের দৃঢ় সংকল্প, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উন্নতি সূচিত করে।
৭. রাহুর ক্ষেত্রে তা বীরত্ব, সাফল্য বোঝায়।
৮. শুক্রের ক্ষেত্রে তা বিপরীত লিঙ্গের সান্নিধ্য লাভ, যৌন আকর্ষণ বোঝায়।
৯. চন্দ্রের ক্ষেত্রে তা দূরযাত্রা, বিদেশ ভ্রমণ বোঝায়।