খেলাধুলায় সততা ও শৃংখলার স্থান
Kheladhulay satata o srinkhalar sthan
[ ভূমিকা – প্রতিভা বিকাশের পথ—আদর্শ —সততা ও নিয়মানুবর্তিতা—বর্তমানের খেলা ও বিশৃংখলা–মূল্যবোধহীনতা—উপসংহার ]
ভূমিকাঃ প্রাচীন ভারতবর্ষের শিক্ষা খেলাধূলো জীবনযাপন প্রণালী সব কাজের মধ্যেই আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে । আর্য ঋষিরা শিষ্যদের ব্রহ্মবিদ্যা শিক্ষা দেবার পর শেষ শিক্ষা দিয়ে বলতেন সত্য রক্ষা করে চলাই জীবনের প্রকৃত ধর্ম । জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তির পূর্ণ প্রকাশ ঘটে এবং তার মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রতিযোগিতায় জয় পরাজয়টাই বড় কথা নয়—বড় কথা হল সত্যনিষ্ঠা—সৎ আচরণ ও নিয়ম শৃংখলার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ ৷ তাই গুরু গৃহ থেকে চলে আসার কালে আর্য ঋষিরা শিষ্যদের উপদেশ দিতেন—“সত্য বলবে, ধর্মে‘র পথ অনুসরণ করবে— অনবদ্যকর্ম করবে— অন্য কিছ নয়।” জীবনের চলার পথে শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতা বিশেষ প্রয়োজন—একথা সকলেই বলেন ৷
প্রতিভা বিকাশের পথঃ আর্য ঋষিদের মূল্যবান উপদেশ আমাদের জীবনের সকল দিকেই সমানভাবে প্রযোজ্য। পৃথিবীর সব দেশের মানষ খেলাধূলোয় আজকাল বিশেষ মনোযোগী হয়েছে । খেলা শিক্ষা ও জীবনের সঙ্গে একান্তভাবে জড়িত। খেলাধুলা এখন আর তাই অলস সময় কাটানোর বিলাস ব্যাপার নয়। খেলাধূলা যুবকদের মন ও চরিত্র গঠনের একটি প্রধান উপায়। ইংরেজীতে তাই একটি প্রবাদ বাক্যে বলা হয়েছে—“All works and no play makes jack a dull boy.’ অনবরত চিন্তার মধ্যে মানুষ জড় প্রকৃতির হয়ে উঠে। দেহের ও মনের জড়তামু- ক্তি ও স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খেলাধূলার বিশেষ প্রয়োজন । খেলাধূলার মাধ্যমে মানুষের কলা নৈপণ্যে—বুদ্ধিমত্তা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটে। খেলাধূলায় অতিরিক্ত পাওনা সমষ্টি ও ব্যক্তির মিলন আনন্দ প্রাপ্তি । খেলাধুলোর আনন্দের মধ্যেই মানষ বৃহত্তর জীবনে কাজের ক্ষেত্রে প্রবেশের অনুপ্রেরণা পায় ।
আদর্শঃ (জয় পরাজয় বড় কথা নয়) খেলাধুলায় আদর্শ বজায় রাখা বড় কথা— জয় পরাজয় বড় কথা নয় । যে কোনও উপায়ে জয়লাভ করা খেলাধূলোর আদর্শ নয়। খেলাধূলো জীবনছন্দের অঙ্গ। আনন্দলাভ ও আনন্দ দেওয়াই বড় কথা ৷ সমষ্টিগত জীবন প্রেরণা ছন্দোবদ্ধ ক্রিয়া–কুশলতা প্রয়োগের দ্বারা নির্দিষ্ট লক্ষমুখী হওয়াই খেলার প্রকৃত আদর্শ । দশক ও খেলোয়াড় সকলেরই লক্ষ্য এক—তা হোল ফল লাভ করা—জয়লাভ করা। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত নৈপণ্যে যতই থাক না কেন নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করার জন্য উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে খেলে যাওয়াই খেলোয়াড়ের একমাত্র কর্তব্য। খেলোয়াড় নিজস্ব সৎ আচণের মধ্যে দিয়েই খেলার মাঠে সুন্দর পরিবেশ তৈরী করতে পারে। খেলার মাঠে প্রকাশিত সততা জীবনের চলার পথে খুব বেশী কাজে লাগে ।
সততা ও নিয়মানুবর্তিতাঃ খেলার মাঠের শৃংখলা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষা করা খেলোয়াড়ের একান্ত পবিত্র কর্তব্য। খেলোয়াড় যদি শৃংখলাহীন হয়, খেলোয়াড় যদি নিয়ম মেনে না চলে তাহলে সেই বিশৃংখলার হাওয়া মাঠে চতুঃসীমার বাইরে দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।মাঠের বাইরের পরিবেশ দূষিত হয় । তাতে খেলার সব আনন্দ নস্যাৎ হয়ে যায় । সততা ও নিয়ম শৃংখলার মধ্যে একটা দল বা সমগ্র জাতি খেলার মাঠ বা জাতীয় জীবনে শ্রেষ্ঠ ফল লাভ করতে পারে । হারজিতের ও নিষ্ঠাপালনের সুতীর প্রেরণা নিয়েই খোলেয়াড়দের মাঠে নামা উচিত ।
বর্তমানের খেলা ও বিশৃংখলাঃ গভীর দঃখের বিষয় বর্তমান কালের খেলার মাঠে আদর্শ ও নিষ্ঠা পালনের চিত্র আমরা দেখতে পাই না—দেখি বিশৃংখলা আদর্শহীনতা, যেন তেন প্রকারে জয়লাভের অত্যুগ্র আগ্রহ। রেফারীর সিদ্ধান্ত কোন দলের বিপক্ষে গেলে খেলোয়াড়রা বিশৃংখল আচরণ করে এবং তার উত্তাপ দ্বিগুণে হয়ে মাঠের বাইরে দর্শকদের–সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। রেফারীকে অসম্মান, গালিগালাজ, প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের মধ্যে মারামারি খেলার সব আনন্দ বিনষ্ট করে দেয় । খেলোয়াড়রা ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির প্রলোভনে পড়ে খেলার মূলে আদর্শ থেকে বঞ্চিত হয়ে খেলার মাঠকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে ।
মূল্যবোধহীনতাঃ এই যে বিশ্রী ঘটনা খেলার মাঠে ঘটে, তাতে সামগ্রিকভাবে আমাদের জীবনের মূল্যবোধ নষ্ট হয়ে যায় ৷ আমরা ভুলে যাই জীবনের সকল ক্ষেত্রে চরিত্র বিকাশের মালে আদর্শ হচ্ছে সততা ও শৃংখলাবোধ। শৃংখলাবিহীন জীবনে আসে ভ্রষ্টাচার ও উচ্ছৃংখলা। নিয়ম শৃংখলাবিহীন জীবনে আসে ব্যর্থ তা ও অধঃপতন ৷ খেলার মাঠে শৃংখলা ও সততার আচরণ দর্শকদের চিত্তে ও গভীর রেখাপাত করে । খেলার মাঠই জীবনের সততা ও শৃংখলা শিক্ষার জীবত পাঠশালা । কাজেই সেই খেলার মাঠকে যদি যদ্ধেক্ষেত্রে পরিণত করা হয় তাতে জীবনের সব শিক্ষাই বিনষ্ট হয়ে যায় । নিয়ম শৃংখলাহীন জীবন ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে অভিশাপ স্বরূপ।
উপসংহারঃ খেলার মাঠে খেলোয়াড়রা নিয়মকানুন মেনে সত্যনিষ্ঠভাবে খেলা করলে দর্শকদের মধ্যে সেই আদর্শ ছড়িয়ে পড়ে। একটা নিয়ম শৃংখল দল শুধু খেলার মাঠেই নয় সমাজ জীবনেও সার্থকতা লাভ করে। মানষের আন্তর জীবনের পটুতা, বুদ্ধিমত্তা, সংঘবদ্ধতা, সব কিছুই খেলার মাঠে প্রকাশ করার সুযোগ আছে। খেলার মাঠ যেন সংগ্রাম ক্ষেত্র না হয়ে শিক্ষা দেওয়া ও শিক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্র হয়ে ওঠে—এটাই সবার আগে দেখা আমাদের প্রয়োজন।