খেলাধুলায় সমর্থকদের ভুমিকা
Kheladhulay samarthakader bhumika-Rochona bengali
[ভূমিকা— খেলাধূলোয় সমর্থকদের ভূমিকা— সমর্থকদের প্রকৃতি—উগ্র সমর্থকদের কার্য‘কলাপ—সমর্থকদের অন্য প্রতিক্রিয়া—উপসংহার ]
ভূমিকাঃ খেলাধুলা মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতঃপ্রোত ভাবে জড়িত। শিশু জন্মের পর যে হাত পা ছোঁড়ে তা তার খেলা। বড় হওয়ার সাথে সাথে তার খেলার ধরণ বদলায়। সংগী জোটে। সংগীদের সাথে খেলায় তার শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু পায়। খেলার স্থান এবং তার চার পাশের পরিবেশ খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রেরণা ভাল ও মন্দ দুই দিকই দিতে পারে। খেলার মধ্যে যারা যে দলের হয়ে খেলা দেখতে যায় তাদের ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দুদলের মধ্যে খেলায় দুদল সমর্থক থাকে । এক প্রকার সমর্থক দলের খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিয়ে খেলার উন্নতি ঘটায় । আর এক প্রকারের সমর্থক আছে যারা দল মনোমত ফল করতে না,পারলে বিপক্ষ সমর্থকদের; এমন কি নিজ পক্ষের খেলোয়াড়দেরও গালি– গালাজ করতে নিরস্ত হয় না। মাঠের ভিতর ও মাঠের বাহিরে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে খেলার মুল উদ্দেশ্য তারা নষ্ট করে দেয় ৷
খেলাধূলায় সমর্থকদের ভূমিকাঃ খেলা দেখতে সমর্থকরা যায় খেলার মাঠে। সমর্থক ছাড়া কোন দল খেলায় উৎসাহ পায় না। খেলোয়াড়বৃন্দ সমর্থকদের সমর্থন ও উৎসাহ পেয়ে খেলায় উন্নতি করে। হাজার হাজার সমর্থকদের সমর্থন পুষ্ট হয়ে সক্ষম হয় ৷ অন্যদিকে ভাল খোলোয়াড়ও সমর্থকদের অভাবে বা ভাল সমর্থক না পাওয়ায় খেলা খারাপ করে ; খেলার মধ্যে বিশৃংখল আচরণ করে। যে কোন দলের প্রকৃত সমর্থ সেইই হতে পারে যে আবেগের বশীভূত হয়ে ভালো মন্দ কোন আচরণই করে না। লক্ষ লক্ষ ক্রীড়ামোদীর প্রেরণা খেলোয়াড়দের মধ্যে আশীর্বাদ–স্বরূপে কাজ করে। তাই সমর্থকদের অতি সংযত আচরণের দ্বারা খেলা ও খেলোয়াড়দের মর্যাদা ও মান সম্মান বজায় রাখতে হবে।
সমর্থক কদের প্রকৃতিঃ খেলার মাঠে আমরা দু‘ধরনের সমর্থক দেখি। এক ধরণের সমর্থক খুবেই উগ্র প্রকৃতির। খেলা ভাল হলে তারা উচ্ছাসের উগ্রতা দেখায়। আর খেলা খারাপ হলে নোংরামিতেও তাদের উগ্রতা সীমা ছাড়িয়ে যায় । এই প্রকারের উগ্র সমর্থক যে কোন দলের পক্ষেই বিপজ্জনক হয়ে দেখা দেয় । আর এক প্রকৃতির সমর্থক আছে যারা একান্তই বিচারশীল। বিবেচনাবোধ এদের থাকে। তাই খেলার মাঠে এরা জয়–পরাজয় যে কোন ফলকেই শান্ত, সংযত চিত্তে গ্রহণ করে থাকে ৷ তাঁরা ভাল খেলাকে যেমন প্রশংসা করেন—তেমনি খারাপ– খেলাকে উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়ে দলের সামগ্রিক ভরাডুবি থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁরা গঠনশীল সমালোচনার দ্বারা দলের উন্নতি ঘটাতে চেষ্টা করেন এবং সফলও হন কোন কোন ক্ষেত্রে।‘
উগ্র সমর্থকদের কার্যকলাপঃ উগ্র সমর্থকদের উগ্র কার্যকলাপে খেলা অনেক সময় ভণ্ডুল হয়ে যায় ৷ তারা দলের ভাল করতে এসে দলের সামগ্রিক সর্বনাশ টেনে অনে। মাঠে নিজ দল জয় না পেলে এরা উন্মত্তের মত আচরণ করেন । প্রথম রোষ এদের পড়ে রেফারির উপর, তারপর অপরদল ও নিজ দলের খেলোয়াড়দের উপর তাদের ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা ভয়ংকর আকারে দেখা দেয়। এই উগ্র সমর্থকদের কার্যকলাপের ফলেই দুই দলের পাশাপাশি দুই গ্রামের লোকের মধ্যে বিরোধ ভয়ংকর আকার ধারণ করে । সমাজ জীবনে অশান্তি নেমে আসে। বর্ণ ও ধর্ম বিদ্বেষও তাদের উগ্রতার ফলে আত্মপ্রকাশ করে ।
সমর্থকদের অন্য প্রতিক্রিয়াঃ খেলার মাঠে আরও এক ধরনের বিবেচনাহীন সমর্থক দেখা যায়—যারা প্রিয়দল কাঙ্খিত ফল না করতে পারলে আত্মনিগ্রহের পথ বেছে নেয় ৷ অর্থাৎ পরিধেয় বস্ত্রে আগুন লাগায়, গাছ থেকে পড়ে পা হাত ভাঙে, বিষ খায় ৷ আবার কেউ সমাজ বিরোধীদের মত ভাঙচুর, ট্রাম–বাস অবরোধ প্রভৃতি কাজের দ্বারা সমাজ জীবনের অনর্থক অশান্তি টেনে আনে ৷ এই সব সমর্থকদের তাণ্ডব নৃত্যে ভয়ে তাই অনেক শান্তিপ্রিয় লোক আজকাল মাঠে খেলা দেখতে যায় না ইচ্ছা থাকলেও ৷
উপসংহারঃ খেলার মাঠে দুদল খেলোয়াড়ের মধ্যে একদল জেতে, অন্যদল হারে। এই হারজিতের খেলায় দলের খেলোয়াড় ও সমর্থক উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। খেলাটা যেখানে আনন্দের বিষয় সেখানে উভয়েরই লক্ষ্য রাখতে হবে—তা যেন কোন অবস্থাতেই নোংরামি বা অশোভন আচরণে পরিণত না হয়ে পড়ে । শান্ত–সংযত আচরণের দ্বারা হাসি মুখে জয় ও পরাজয় উভয়কেই বরণ করে নিতে হবে । আজ যে দল হারল আগামী দিনে সে দল জিতেছে— এ ঘটনাও তো বিরল নয়। কাজেই এবারে হেরেছে বলে প্রিয়দলের খেলোয়াড়দের বিদ্রূপ করা, বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় এবং রেফারিকে হেনস্তা করা কখনই উচিত নয়। প্রকৃত Sports man Spirit অর্থাৎ খেলোয়াড়ী মনোভাব নিয়ে খেলাকে দেখতে হবে । তবেই আদর্শ‘ সমর্থকের ভূমিকা পালন করা হবে। বর্তমান দিনের অস্থিরতার আবর্তে সবাই যেখানে ঘুরপাক খাচ্ছে সেখানে খেলার মাঠের সংযত আবহাওয়া সমাজ জীবনে অনেক শান্তি অনেক আশ্বাস বয়ে আনতে পারে। খেলার মাঠের সমর্থকদের মনে এই ধারণা যদি বদ্ধমূল করতে পারা যায় তাহলে সামাজিক জীবনে অনেক অকারণ অশান্তি দূর করতে যে আমরা পারব এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই !