
Economics Short Questions and Answers-2
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের বিশেষ অনুশীলনী
সমষ্টিগত অর্থবিজ্ঞান
Economics Short Questions and Answers Part 2
প্রশ্ন ১। টাকার জন্য চাহিদার পিছনে কী কী অভিপ্রায় কাজ করে ? অথবা অর্থের চাহিদার কারণ কী?
উত্তর। টাকার জন্য চাহিদার পিছনে তিনটি অভিপ্রায় হল – (১) ভবিষ্যতের নিরাপত্তার টাকার সংস্থান রাখা, (২) ভবিষ্যতে লেনদেনের প্রয়োজন মেটাবার জন্য টাকার সংস্থান রাখা এবং (৩) ফাটকা কারবারের জন্য টাকার সংস্থান রাখা।
প্রশ্ন ২। জাতীয় আয় পরিমাপের দুটি পদ্ধতির নাম উল্লেখ কর।
উত্তর। জাতীয় আয় পরিমাপের দুটি পদ্ধতি হল—(১) সংযোজিত মূল্য পদ্ধতি ও (২) আয়গণনা পদ্ধতি।
প্রশ্ন ৩। টাকার জন্য চাহিদা কি শূন্য হতে পারে ?
উত্তর। টাকার জন্য চাহিদা শূন্য হতে পারে না।
প্রশ্ন ৪। সুদের হার কি কখনও শূন্য হতে পারে ?
উত্তর। সুদের হার কখনও শূন্য হতে পারে না ।
প্রশ্ন ৫। স্থূল বা মোট জাতীয় উৎপাদন কাকে বলে ?
উত্তর। কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন দেশে একটি নির্দিষ্ট মূল্যস্তরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যে–সব দ্রব্য উৎপাদিত হয় ও যে–সব সেবাস্রোত বা পরিষেবার সৃষ্টি হয়, তার সামগ্রিক মূল্যকে বলা হয় স্থূল জাতীয় উৎপাদন।
প্রশ্ন ৬। নিট জাতীয় উৎপাদন কাকে বলে?
উত্তর। স্থূল জাতীয় উৎপাদন থেকে অবচয়পূরণকারী অর্থ বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তা হল নিট জাতীয় আয়।
প্রশ্ন ৭। নিট জাতীয় উৎপাদন থেকে জাতীয় আয়ের হিসাব কীভাবে করা হয়?
উত্তর। নিট জাতীয় উৎপাদন থেকে পরোক্ষ কর বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তা হল জাতীয় আয় ।
প্রশ্ন ৮। সংযোজিত মূল্য কাকে বলে?
উত্তর। কোন কোম্পানি বা উৎপাদকের সম্পদ বা সম্পত্তি বজায় রাখার জন্য (maintenance) যে ব্যয় হয়, সেই ব্যয় অপেক্ষা যদি সংশ্লিষ্ট সম্পদ বা সম্পত্তি থেকে প্রাপ্তি বেশি হয়, তবে ব্যয় থেকে প্রাপ্তি যতটা বেশি হল ততটা হল সংযোজিত মূল্য।
প্রশ্ন ৯। আয়ের চক্রাকার প্রবাহ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। আয়ের একটি বৃত্তাকার প্রবাহ পরিলক্ষিত হয়। আয়ের বৃত্তপ্রবাহে আমরা দেখতে পাই পরিবার থেকে প্রতিষ্ঠানের দিকে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে পরিবারের দিকে আয়ের স্রোত প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহে আয়ের অনুপ্রবেশ (inflow) এবং নিষ্কাশন (outflow) হতে পারে। আয়ের অনুপ্রবেশ হয় বিনিয়োগ, রপ্তানি আয় এবং সরকারি ব্যয়ের মাধ্যমে। আবার নিষ্কাশন হতে পারে অকেজো সঞ্চয় (idle savings), বিনিয়োগে ব্যবহার না করা সঞ্চয় (hoarding), সরকারকে কর প্রদান, আমদানি ব্যয় প্রভৃতির মাধ্যমে। জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে এই বৃত্ত প্রবাহের মূল কথা হল,
উৎপাদন = আয় + ব্যয়
(Output = Income + Spending )
বিভিন্ন শিল্প–প্রতিষ্ঠান পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করে থাকে। এই উৎপাদনের মূল্য এবং সেই সঙ্গে সব রকমের সেবাস্রোতের সেবামূলক কাজের মূল্য একত্রিত করে আমরা পাই স্থূল জাতীয় উৎপাদন (Gross National Product)। বিভিন্ন শিল্প–প্রতিষ্ঠান যখন বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে তখন উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদান, যেমন—জমি, শ্রম, মূলধন প্রভৃতি নিয়োগ করতে হয়। আবার এই উপাদানগুলি নিয়োগ করা হলে তাদের ব্যবহারের জন্য শিল্প–প্রতিষ্ঠানকে মূল্য প্রদান করতে হয়—যেমন জমি ব্যবহারের জন্য খাজনা, শ্রম ব্যবহারের জন্য মজুরি, মূলধন ব্যবহারের জন্য সুদ প্রভৃতি প্রদান করতে হয়। এভাবে দেশে আয়–প্রবাহের (flow of income) সৃষ্টি হয়। আবার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি যা উৎপাদন করে থাকে সেটা বিক্রি করা হয় বিভিন্ন গৃহস্থের (households) কাছে এবং অন্যান্য ফার্মের কাছে। এভাবে সব পণ্যের উপর মোট ব্যয়ের পরিমাণ মোট উৎপাদনের মূল্যের সমান। গৃহস্থরা যখন অর্থ ব্যয় ক‘রে শিল্প–প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করে তখন শিল্প–প্রতিষ্ঠানের আয় হয়। এভাবে উৎপাদন, আয় ও ব্যয়ের মধ্যে আমরা একটি বৃত্তাকার প্রবাহ (Circular flow) দেখতে পাই।
প্রশ্ন ১০। মাথাপিছু জাতীয় আয় কাকে বলে?
উত্তর। জাতীয় আয়কে দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় নির্ধারিত হয়। যদি কোনো বছরে জাতীয় আয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়, অথচ সেই অনুপাতে জনসংখ্যা বাড়ে তবে মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়ে যায়।
প্রশ্ন ১১। প্রকৃত জাতীয় আয় কাকে বলে?
উত্তর। “প্রকৃত জাতীয় আয়” বা “জাতীয় অর্থনীতি” বিষয়ে আলোচনা করা হলে সাধারণভাবে এটি একটি দেশের মোট আয় বা প্রাকৃতিক উৎপাদনের একটি মাত্রাত্মক মান বোঝানো হয়। এটি একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং মানব উন্নতির মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
জাতীয় আয় প্রকাশ্যে দুটি উপায়ে মাপা হয়:
গ্রহণযোগ্য আয়: এটি হলো
একটি দেশের প্রাকৃতিক উৎপাদন এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের মাধ্যমে উপার্জিত মোট আয়।
প্রতি ব্যক্তি প্রতি ক্ষেত্রে আয়: এটি হলো প্রতিটি ব্যক্তির গড় আয় বা বেতন একটি দেশে।
প্রকৃত জাতীয় আয় হিসেবে অন্যান্য ফেরতদাতাগুলির মধ্যে মূল্যায়ন করা হয় যেমন মানব উন্নতি, সামাজিক সুরক্ষা, জীবাণুবিজ্ঞান এবং পরিবেশের সুরক্ষা।
প্রশ্ন ১২। স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হ্রাসক কাকে বলে ?
উত্তর। স্থুল অভ্যন্তরীণ হ্রাসক (GDP deflator) হল আর্থিক মূল্যের ভিত্তিতে স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (Nominal GDP) এবং প্রকৃত দামভিত্তিক স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (Real GDP) অনুপাত। অর্থাৎ,
স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হ্রাসক=আর্থিক স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনপ্রকৃত স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন
প্রশ্ন ১৩। “জাতীয় মোট আয় ও জাতীয় মোট উৎপাদন অভিন্ন”—এটা কি সত্য?
উত্তর। এটা সত্য নয়।
প্রশ্ন ১৪। ব্যক্তিগত আয় কাকে বলে ?
উত্তর। ব্যক্তিগত আয়ের হিসাব নিম্নোক্ত উপায়ে করা হয়।
ব্যক্তিগত আয় = জাতীয় আয় – শিল্প প্রতিষ্ঠানের মুনাফা – সামাজিক বিমা সম্পর্কিত অর্থপ্রদান + সরকার এবং ব্যবসা ক্ষেত্র থেকে ব্যক্তির কাছে হস্তান্তরিত আয় + সুদজনিত আয় + মুনাফার অংশ [Personal income = National Income – Corporate Profits – Social insurance contribution – Net interest payment + Dividends + Government Transfer to Dividends + Personal interest income]। ব্যাক্তগত আয়ের মধ্যে থাকে শ্রম থেকে প্রাপ্ত আয় (Labour Income ), ব্যবসায়ে মালিকের আয় (Proprietor’s Income), ভাড়া বাবদ ব্যক্তির পাওনা (Person’s rental), ব্যবসায়ে মুনাফার অংশ, সুদ থেকে আয়, সরকার বা অন্য লোকের কাছ থেকে হস্তান্তরিত আয়, এবং এর সমষ্টি থেকে বাদ যায় সামাজিক বিমার জন্য অর্থপ্রদান এবং নিট সুদ প্রদান।
প্রশ্ন ১৫। ব্যয়যোগ্য বা ব্যবহারযোগ্য আয় কাকে বলে ?
উত্তর। ব্যক্তিগত আয় থেকে ব্যক্তিগত আয়কর অথবা অন্য প্রত্যক্ষ কর এবং কর নয় (যেমন, ফি) এমন অর্থপ্রদানের (non-tax payment) দায়বদ্ধতা বাদ দিলে যা থাকে সেটা হয় ব্যয়যোগ্য আয় (Disposable Income)।
প্রশ্ন ১৬। কেইনসীয় তত্ত্বে জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা কী?
উত্তর। কেইনসীয় তত্ত্বে জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা হল Y = C + I অর্থাৎ,
জাতীয় আয় =সামগ্রিক ভোগজনিত ব্যয় + সামগ্রিক বিনিয়োগ।
প্রশ্ন ১৭। যদি প্রান্তিক ভোগপ্রবণতার মান ০ ও ১ হয় তবে গুণকের‘ মান কত হবে?
উত্তর। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মান ০ হলে গুণক হবে একক বা ১ অর্থাৎ, গুণক প্ৰক্ৰিয়া কার্যকর হবে না। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা ১ হলে গুণক হবে অনির্ণীত (indeterminate)। অর্থাৎ, K = ∝।
প্রশ্ন ১৮। খোলা অর্থনীতিতে জাতীয় আয়ের সমীকরণ কী ?
উত্তর। খোলা অর্থনীতিতে জাতীয় আয়ের সমীকরণ হল Y = C + I + G + X – M এখানে Y হল জাতীয় আয়, C হল সামগ্রিক ভোগজনিত ব্যয়, I হল সামগ্রিক বেসরকারি বিনিয়োগ, G হল সামগ্রিক সরকারি ব্যয়, X হল রপ্তানিজনিত আয় এবং M হল আমদানিজনিত ব্যয়।
প্রশ্ন ১৯। গড় ও প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা কীভাবে পরিমাপ করবে?
উত্তর। গড় সঞ্চয় প্রবণতা হল মোট সঞ্চয় ও মোট আয়ের অনুপাত। অর্থাৎ SY এক্ষেত্রে S হল সঞ্চয় এবং Y হল আয়। প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা হল অতিরিক্ত আয় হেতু অতিরিক্ত সঞ্চয়ের অনুপাত, অর্থাৎ ΔSΔY
প্রশ্ন ২০। ভোগ অপেক্ষক ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর। ভোগ অপেক্ষক বলতে বোঝায় আয় এবং ভোগের মধ্যে সম্পর্ক [C = f(Y)]। আয় বাড়লে ভোগের প্রবণতা বাড়ে ; তবে একটি নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে আয় যে হারে বাড়ে,ভোগের প্রবণতা সে হারে বাড়ে না। আয় এবং ভোগের মধ্যে এই সম্পর্ক হল ভোগ অপেক্ষক (Consumption Function)।
প্রশ্ন ২১। স্থূল জাতীয় উৎপাদনের অভিন্নতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। স্থূল জাতীয় উৎপাদনের অভিন্নতা হল C + I + G + (X – M) = GNP = C + S + T + Rf এক্ষেত্রে ‘C’, ‘I’ এবং ‘G’ হল যথাক্রমে ভোগজনিত ব্যয়, বিনিয়োগ ব্যয় এবং সরকারি ব্যয়, X – M হল নিট রপ্তানি আয়। S হল সঞ্চয়, T হল নিট কর প্রদান এবং Rf হল বিদেশে অর্থ স্থানান্তর।
প্রশ্ন ২২। নগদ অর্থ প্রসারণের ফাঁদ বা তারল্যের ফাঁদ কাকে বলে?
উত্তর। নগদ অর্থ প্রসারণের ফাঁদ (Liquidity Trap) হল সুদের হার সর্বনিম্ন হলে অর্থের জন্য চাহিদা রেখা অনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল হয়। এক্ষেত্রে অর্থের জোগান বাড়লেও সুদের হার কমে না। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তখন বাড়তি অর্থ হাতে রাখতে চায় এবং সুদের হার সর্বনিম্ন থাকে (Or0)। সুদের হার কখনও শূন্য হয় না। নিম্নের চিত্রে এটা দেখানো হল।
প্রশ্ন ২৩। অর্থের প্রধান কাজ কী কী ?
উত্তর। অর্থের প্রধান কাজ হল—(১) বিনিময়ের বাহন হিসাবে কাজ করা, (২) দেনা– পাওনা মেটাবার মাধ্যম হিসাবে কাজ করা, (৩) মূল্যের পরিমাপ হিসাবে কাজ করা এবং (৪) সঞ্চয়ের ভাণ্ডার হিসাবে কাজ করা।
প্রশ্ন ২৪। অর্থের সংজ্ঞা কী?
উত্তর। যে বস্তু বিনিময় কাজ ও দেনা–পাওনা মেটাবার মাধ্যম হিসাবে সর্বজনগ্রাহ্য এবং সেই সঙ্গে মূল্যের পরিমাপ ও সঞ্চয়ের ভাণ্ডার হিসাবে কাজ করে, সেই বস্তুকে অর্থ বলা যেতে পারে।
প্রশ্ন ২৫। অর্থের পরিমাণ তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা কে?
উত্তর। অর্থের পরিমাণ তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা হলেন ফিসার।
প্রশ্ন ২৬। কাগজি মুদ্রার দুটি সুবিধা উল্লেখ কর।
উত্তর। কাগজি মুদ্রার দুটি সুবিধা হল, (১) বড় বড় লেনদেন করার জন্য কাগজি মুদ্রা সুবিধাজনক। ধাতব মুদ্রা গণনা করার ঝামেলা এক্ষেত্রে থাকে না। (২) কাগজি মুদ্রা তৈরি করার সরকারি ব্যয় অনেক কম, ধাতব মুদ্রা তৈরি করার ব্যয় অনেক বেশি।
প্রশ্ন ২৭। বিশুদ্ধ মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে?
উত্তর। বিশুদ্ধ মুদ্রাস্ফীতির (Pure inflation) সৃষ্টি তখনই হয় যখন পূর্ণনিয়োগের (Full employment) পর্যায় অতিক্রান্ত হবার পর মুদ্রার পরিমাণ বৃদ্ধিহেতু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। যতক্ষণ পূর্ণনিয়োগ অর্জিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অর্থের পরিমাণ বাড়লে যদি সমহারে অথবা বেশি হারে উৎপাদন বাড়ে, তবে দাম বাড়ে না। কিন্তু পূর্ণনিয়োগ অর্জিত হয়ে গেলে অর্থের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। আধুনিক অর্থনীতিবিদদের মতে মুদ্রাস্ফীতি তখনই হয় যখন সামগ্রিক চাহিদা (aggregate supply) সমাজের সামগ্রিক জোগান অপেক্ষা বেশি। বর্তমান অর্থনীতিবিদদের মতে চাহিদাজনিত (demand-pull) এবং ব্যয় বৃদ্ধিজনিত (cost-push) প্রভাবের ফলে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ২৮। কর কাকে বলে?
উত্তর। কোনো প্রতিদানের আশা না রেখে যখন বাধ্যতামূলকভাবে সরকারকে নিয়মিতভাবে টাকা প্রদান করতে হয় তখন তাকে কর বলা হয়।
প্রশ্ন ২৯। চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে ?
উত্তর। যদি সাধারণভাবে জনসাধারণের চাহিদা বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও জিনিসপত্রের জোগান না বাড়ে, তবে চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ৩০। নিম্নলিখিতগুলি কি টাকা হিসাবে গণ্য হয় ?
(ক) চেক, (খ) ব্যাংকের আমানত ।
উত্তর। চেক এবং ব্যাংকের আমানত টাকা হিসাবে গণ্য হয় না।
প্রশ্ন ৩১। নগদ পছন্দ (অথবা তারল্য পছন্দ) বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। নগদ পছন্দ বলতে বোঝার লোকের নগদ টাকা হাতে রাখার আকাঙ্ক্ষা বা পছন্দ। একে বলা হয় Liquidity preference। নগদ টাকা হাতে রাখার পছন্দের পেছনে তিনটি অভিপ্রায় কাজ করে, যথা—(১) লেনদেন করার জন্য নগদ টাকা হাতে রাখার অভিপ্রায়, (২) ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বা সংস্থানের জন্য নগদ টাকার পছন্দ, (৩) ফাটকা কারবার করার জন্য নগদ টাকা হাতে রাখার অভিপ্রায়।
প্রশ্ন ৩২। ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। যদি উৎপাদন–ব্যয় বেড়ে যাবার দরুন পণ্যদ্রব্যাদির দাম বেড়ে যায় তবে দেশে যে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি।
প্রশ্ন ৩৩। মুদ্রা সংকোচনের ফাঁক কাকে বলে ?
উত্তর। উৎপাদনের অনুপাতে অথবা পণ্যদ্রব্যাদির জোগানের অনুপাতে যদি জনসাধারণের ক্রয়শক্তি এবং আয়ের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়, তবে জোগান অনুপাতে চাহিদার যতটা ঘাটতি থাকে ততটাই হচ্ছে মুদ্রা সংকোচনের ফাঁক।
প্রশ্ন ৩৪। ব্যাংক রেট কাকে বলে ?
উত্তর। ব্যাংক রেট বলতে বোঝায় সেই সুদের হার যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন বিল পুনর্বাট্টা করার জন্য (rediscounting) বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে গ্রহণ করে।
[Bank rate is that rate at which the first class bills presented by commercial banks are rediscounted by the central bank.]
প্রশ্ন ৩৫। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। একটি দেশের সঙ্গে অন্য একটি দেশের অথবা ততোধিক দেশের বাণিজ্যকে (আমদানি–রপ্তানিজনিত বাণিজ্য) বলা হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।
প্রশ্ন ৩৬। চেক কথাটির অর্থ কী ?
উত্তর। চেক হল একটি ঋণপত্র। ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে ব্যাংক আমানতকারীকে একটি চেকবই দেয়। আমানতকারী যদি নিজের আমানত থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিজে অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে প্রদান করার জন্য ব্যাংককে একটি লিখিত নির্দেশ দেয় তখন সেই নির্দেশপত্রকে চেক বলা হয়। এই লিখিত নির্দেশপত্র দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট চেকবই থাকে। চেক হচ্ছে এক ধরনের ঋণপত্র ;সুতরাং চেকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হলে যে ব্যক্তি চেক প্রদান করবে এবং যে ব্যক্তি চেক গ্রহণ করবে, তাদের উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্ক থাকা চাই । চেক বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। চেক বাহক–দেয় (Payable to bearer) অথবা আদিষ্ট দেয় (Payable on order) হতে পারে। প্রথম ক্ষেত্রে চেকের বাহক অথবা ধারককে টাকা প্রদান করতে হয়। বাহককেও চেকের উল্টো পিঠে সই করতে হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে প্রাপক অর্থাৎ যার নামে চেক লেখা আছে তাকে অথবা তার নির্দেশ (order) অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে টাকা রে, তবে (endorcement) থাকা দরকার। প্রাপককে চেকের উল্টো পিঠে সই করতে হয়। চেকের উপর প্রদান করতে হয়। এক্ষেত্রে চেকের ওপর প্রাপকের নামের স্বাক্ষরযুক্ত সমর্থন আড়াআড়িভাবে দুটি সমান্তরাল রেখা টানলে ঐ চেককে রেখাঙ্কিত চেক (crossed cheque বলা হয়। যদি চেকের উপর রেখাঙ্কন করে সমান্তরাল রেখা দুটির মাঝখানে “& Co” অথবা নামা। এই “And Company” লেখা হয় অথবা শুধুমাত্র আড়ভাবে সমান্তরাল রেখা দুটি অঙ্কিত করা হয় তখন এটাকে সাধারণ রেখাঙ্কন (general crossing) বলা হয়। এক্ষেত্রে চেক আদায় অর্থ প্রদান করতে এমন ব্যক্তির প্রয়োজন থাকে যার ব্যাংক আমানত বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই ধরনের চেক negotiable অর্থাৎ হস্তান্তরযোগ্য হতে পারে। এই ধরনের চেককে যে কোনো ব্যাংকে নিজের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে ভাঙানো যায়। এ–ধরনের চেক ভাঙাবার জন্য যে কোনো ব্যাংকে নিজের অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক। আবার বিশেষ রেখাঙ্কনের (special crossing) চেক থাকতে পারে। যদি চেকে ‘A/c Payee’ কথাটি লেখা থাকে তবে egotiable বুঝতে হবে যে প্রাপকের নিজের অ্যাকাউন্টেই চেকটি জমা দিতে হবে, অন্যের অ্যাকাউন্টে জনিসপত্রের চেকটি জমা দেওয়া যাবে না। এইরূপ চেক হস্তান্তর করা যায় না। হস্তান্তরের অযোগ্য (Not থাকে যে Negotiable) কথাটির তাৎপর্য হল এইরূপ চেক গ্রহণ করার সময় হস্তান্তর গ্রহীতাকে সতর্ক করে দেওয়া হয় এবং লেখকের বৈধস্বত্ব আছে কিনা তা যাচাই করা হয়। চেক হারালে বা হয়, তবে চুরি গেলে চেকের স্বত্বাধিকারীর স্বার্থরক্ষা করাই এটার উদ্দেশ্য।
কোনো চেক যদি রেখাঙ্কিত (crossed) না হয় তবে সেই চেক–কে খোলা চেক (open পাঠাবার পর Cheque) বলা হয়। ব্যাংক যদি নিজের ওপর চেক কেটে তার গ্রাহককে দেয় তবে সেই চেককে বলা হয় Banker’s Cheque |
প্রশ্ন ৩৭। বাহক দেয় চেক এবং আদিষ্ট চেক কাকে বলে ?
উত্তর। বাহক দেয় চেকের ক্ষেত্রে চেকের বাহক অথবা ধারককে টাকা প্রদান করতে হয়। গ্রাহককেও চেকের উল্টো পিঠে সই করতে হয়। আদিষ্ট চেকের ক্ষেত্রে প্রাপক অর্থাৎ যার নামে চেক লেখা আছে তাকে অথবা তার নির্দেশ অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে টাকা প্রদান করতে হয়।
প্রশ্ন ৩৮। ক্লিয়ারিং হাউস কাকে বলে?
উত্তর। ক্লিয়ারিং হাউস হল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির একটি মিলিত প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মারফৎ বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে তাদের পরস্পরের চেক, ড্রাফট ইত্যাদির জন্য দেনা–পাওনা সহজেই মেটাতে পারে।
প্রশ্ন ৩৯। চেক আর টাকাকড়ি কি সমার্থক?
উত্তর। চেক টাকা নয় ; তবে চেক প্রায় টাকার মতো একটি সম্পদ (near money asset)।
প্রশ্ন ৪০। বাণিজ্য ব্যালান্স কাকে বলে?
উত্তর। আমদানি ও রপ্তানির হিসাবকে বাণিজ্য ব্যালান্স বলা হয়।
প্রশ্ন ৪১। তুলনামূলক ব্যয়ের তত্ত্বটি কি দুই দেশের বেশি দেশে এবং বহু সামগ্রীর ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হতে পারে ?
উত্তর। তুলনামূলক ব্যয়ের তত্ত্বটি দুইয়ের বেশি দেশে এবং বহু সামগ্রীর ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত
হতে পারে ।
প্রশ্ন ৪২। মুদ্রার অবমূল্যায়ন কাকে বলে?
উত্তর। অন্যান্য দেশের মুদ্রার বিনিময়–মূল্যের অনুপাতে দেশীয় মুদ্রার মূল্যহ্রাসকে বলা হয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন। ধরা যাক, আগে একটি মার্কিন ডলার ছিল ভারতীয় ১৮ টাকার সমান ($ 1 =Rs. 18)। এখন একটি মার্কিন ডলার প্রায় ভারতের ৮২ টাকার সমান। ($ 1 = Rs. 82) ; এখানে ভারতীয় টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে।
প্রশ্ন ৪৩। জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা কী ?
উত্তর। একটি নির্দিষ্ট বছরে একটি মূল্যস্তরের ভিত্তিতে দেশের ভিতর মোট চূড়ান্ত দ্রব্যের (final goods) মূল্য হল স্থূল বা মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP)। মোট জাতীয় উৎপাদন থেকে বিভিন্ন দ্রব্যের অবচয় পূরণকারী অর্থ বাদ দিলে পাওয়া যায় নিট জাতীয় উৎপাদন (NNP) এবং নিট জাতীয় উৎপাদন থেকে পরোক্ষ ব্যবসায়িক কর বাবদ প্রাপ্ত রাজস্ব বাদ দিলে পাওয়া যায় জাতীয় আয়। বিদেশ থেকে রপ্তানি বাবদ নিট প্রাপ্তি অর্থাৎ মোট আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে যা পাওয়া যায় সেটা জাতীয় আয়েরসঙ্গে যুক্ত হয়। অর্থাৎ, জাতীয় আয় (National Income) = নিট জাতীয় উৎপাদন (NNP) – পরোক্ষ কর (Indirect Business Taxation) + বিদেশ থেকে রপ্তানি বাবদ নিট প্রাপ্তি ।
প্রশ্ন ৪৪। বাজেট কাকে বলে?
উত্তর। বাজেট হল সরকারের কোনো বছরের জন্য সম্ভাব্য রাজস্ব ও সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব।
প্রশ্ন ৪৫। মূল্যস্তর যদি দ্বিগুণ হয় ও আর্থিক আয় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তাহলে প্রকৃত আয়ের কীরূপ পরিবর্তন হবে ?
উত্তর। এক্ষেত্রে প্রকৃত আয় কমে যাবে।
প্রশ্ন ৪৬। হুণ্ডি কাকে বলে?
উত্তর। হুণ্ডি (Hundee) হচ্ছে একপ্রকার ঋণপত্র যেটা আপসে ঠিক করা হয় (negotiable instrument)। বড় বড় খরিদ্দাররা যখন জিনিসপত্র ক্রয় করে, তখন তারা প্রায়ই জিনিসপত্রের দাম নগদ টাকায় না দিয়ে তাদের উপর একটি ঋণপত্র দেয়। এই ঋণপত্রে লেখা থাকে যে বিক্রয় বাবদ টাকা পত্রবাহককে কিংবা অন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দেওয়া হোক, এই প্রকার ঋণপত্রকে বিল বা হুণ্ডি বলে। যদি ক্রেতা এবং বিক্রেতা একই দেশের অধিবাসী হয়, তবে এই ঋণপত্রকে দেশীয় বিল বা হুণ্ডি বলে ; আর যদি ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই দেশের অধিবাসী হয় তবে সেই ঋণপত্রকে বৈদেশিক হুণ্ডি বলা হয়। বিক্রেতা ক্রেতার কাছে হুণ্ডি পাঠাবার ক্রেতা যখন এই ঋণপত্র গ্রহণ করে, তখন সেই নির্দিষ্ট টাকার জন্য ক্রেতা দায়ী থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে যদি বিক্রেতার অর্থের প্রয়োজন হয় তবে বিল বন্ধক রেখে বা বাট্টা করে (discounting) বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ অর্থ পেতে পারে।
প্রশ্ন ৪৭। ঋণপত্র হিসাবে বিনিময় পত্র কাকে বলে?
উত্তর। বিনিময়পত্র (Bills of Exchange) হল ক্রেতার প্রতি বিক্রেতার নির্দেশনামা। এই নির্দেশনামায় বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্য ক্রয়ের বিপক্ষে ক্রেতাকে এই নির্দেশ দেওয়া হয় যেন সে অন্য একজন ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে। এই সময়ের মধ্যে ক্রেতা সেই পণ্য পুনঃপুন বিক্রয় করে অর্থ লাভ করতে পারে। যখন ক্রেতা এই বিনিময় পত্রের শর্ত অনুযায়ী অন্য একজন ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান করে তখন তার মধ্যে সুদ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই বিনিময়পত্র দেশের ভিতর এবং দেশের বাইরে বাণিজ্যিক লেনদেন সম্প্রসারণ করতে ও দ্রব্য চলাচল বাড়াতে পারে।
প্রশ্ন ৪৮। “লেনদেন ব্যালান্সে সর্বদাই ভারসাম্য থাকে।”—একথা কি সত্য ?
উত্তর। একথা সত্য।
প্রশ্ন ৪৯। বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্স কাকে বলে ?
উত্তর। বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্স বা লেনদেন উদ্বৃত্ত বলতে আমরা বুঝি কোনো দেশে বসবাসকারী জনগণের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সমস্ত রকম লেনদেনের হিসাব। এই হিসাবপত্রের মাধ্যমে সরকার আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হয়।
কোনো দেশের বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্স বুক–কিপিংএর নিয়ম অনুযায়ী একটি হিসাব,— এই হিসাবের দুটি দিক থাকে, একটি পাওনার অ্যাকাউন্ট এবং অপরটি দেনার অ্যাকাউন্ট। এটা খাতায় প্রতিটি দু’স্থানে লিপিবদ্ধ করার নিয়ম বা Double Entry Book Keeping-এর অনুরূপ। এই হিসাবের আবার দুটি অংশ আছে। একটি হল চলতি হিসাব (Current Account) এবং অপরটি হল মূলধনি হিসাব (Capital Account)।
প্রশ্ন ৫০। বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্সের চলতি হিসাব এবং মূলধনি হিসাব কাকে বলে ?
উত্তর। কোনো দেশের বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্স বুক–কিপিংএর নিয়ম অনুযায়ী একটি হিসাব,— এই হিসাবের দুটি দিক থাকে, একটি পাওনার অ্যাকাউন্ট এবং অপরটি দেনার অ্যাকাউন্ট। এটা খাতায় প্রতিটি দু’স্থানে লিপিবদ্ধ করার নিয়ম বা Double Entry Book Keeping-এর অনুরূপ। এই হিসাবের আবার দুটি অংশ আছে। একটি হল চলতি হিসাব (Current Account) এবং অপরটি হল মূলধনি হিসাব (Capital Account)।
লেনদেন হিসাবের চলতি হিসাবের মধ্যে নিম্নলিখিত জিনিসগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে (১) জিনিসের রপ্তানি বাবদ আয়, (২) বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা (Services) রপ্তানি বাবদ আয়, এবং (৩) বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অনুদান (Grant) বা প্রতিদানহীন দান, উপহার, ক্ষতিপূরণ প্রভৃতি, (৪) জিনিস আমদানি বাবদ ব্যয়, বিদেশে অনুদান দেওয়া, উপহার প্রদান বা ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রভৃতি।
লেনদেন ব্যালান্সের মূলধনি হিসাবের মধ্যে নিম্নলিখিত জিনিসগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে – (১) মূলধন প্রাপ্তি (মূলধন সাহায্য, ধার, বিদেশিদের ঋণ পরিশোধ বাবদ প্রাপ্তি, বিদেশিদের কাছে সম্পদ বিক্রি বাবদ প্রাপ্তি) এবং (২) মূলধন প্রত্যর্পণ (ধার পরিশোধ অথবা ধারের সুদ প্রদান, সাহায্য প্রদান, বিদেশের সম্পদ ক্রয়)। লেনদেনের ব্যালান্স এই দুটি হিসাব পরস্পরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে।
লেনদেন–ব্যালান্সের ক্ষেত্রে চলতি হিসাব (Current Account) সব সময়েই যে সমান থাকবে তা নয়—এই হিসাবের উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি হতে পারে। চলতি হিসাবের ঘাটতি দূর করা হয় মূলধন হিসাবের (Capital Account) লেনদেনের মাধ্যমে।
প্রশ্ন ৫১। বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্স স্বয়ংক্রিয় এবং সমন্বয়কারী মূলধন প্রবাহ কাকে বলে ?
উত্তর। লেনদেনের চলতি হিসাবে যদি ঘাটতির সৃষ্টি হয়, তবে সেই ঘাটতি প্রতিরোধকারী লেনদেনের ব্যবস্থা থাকে। তা না হলে লেনদেন ব্যালান্সে ভারসাম্য বজায় থাকতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে বিদেশ থেকে এমন ধরনের মূলধনের আগমন হতে পারে যার সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ব্যালান্সের সম্পর্ক থাকে না। যেমন, কোনো বিদেশি রপ্তানিকারী আমাদের দেশে ১০০ কোটি টাকা দিয়ে একটি প্রচার সংস্থা কিনে নিল যাতে সে প্রচারের মাধ্যমে আমাদের দেশে তার তৈরি পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশে ১০০ কোটি টাকার মূলধনের আগমন হয়েছে বলা যেতে পারে। বিদেশের ক্ষেত্রে এই ১০০ কোটি টাকা মূলধনের নির্গমন হয়েছে।
বিদেশ থেকে যে মূলধন আমাদের দেশে আসে তার দুটি বিশেষ রূপ আছে,—একটি হল স্বয়ংসম্ভূত বা স্বয়ম্ভূত মূলধন–প্রবাহ (Autonomous capital flows)। এই মূলধন আগমনের সঙ্গে লেনদেন হিসাবের অন্যান্য তালিকায় কোনো সম্পর্ক নেই। ধরা যাক, বিদেশের কোনো কোম্পানি আমাদের দেশের কোনো কোম্পানিকে আগের একটি ধার শোধ করায় দেশে মূলধনের আগমন হল,—এটা স্বয়ংক্রিয় মূলধন আগমন। তার ফলে আমাদের লেনদেন হিসাবে প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার অঙ্ক বাড়ল ; কিন্তু এই আগমন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হয়েছে, জোর করে চাপানো হয়নি। বিদেশ থেকে উপহার বাবদ কিছু মূলধন পাওয়া গেল, এটাও স্বয়ংক্রিয় আগমন। কিন্তু এভাবে মূলধন আগমনের পরেও যদি লেনদেন হিসাবে ঘাটতি থেকে যায় এবং যদি সেই ঘাটতি দূর করার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে মূলধন সংগ্রহ করা হয় তবে তাকে বলা হয় লেনদেন ব্যালান্সে ভারসাম্য আনয়নকারী বা সমন্বয়কারী মূলধন প্রবাহ (Accommodating capital flows) |
লেনদেন ব্যালান্সে সমন্বয় বা ভারসাম্য আনয়নকারী মূলধনের আগমন নানা রকমের হতে পারে। কোনো বিদেশি সরকার হয়ত আমাদের দেশকে লেনদেন ব্যালান্সের ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ঋণ দিতে পারে। অনেক সময় অনগ্রসর দেশগুলির লেনদেন ব্যালান্সে সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য কোনো উন্নত দেশ অথবা, আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (IMF) ঘাটতির সমপরিমাণ সাহায্য দিতে পারে। এই ধরনের সমতা আনয়নকারী মূলধনের আগমন অদৃষ্টপূর্ব, কেননা লেনদেন ব্যালান্সে ভারসাম্য অর্জন করার জন্যই এই মূলধন বিদেশ থেকে আনার প্রয়োজন হয়।
নিচের সারণিতে স্বয়ংভূত মূলধনের আগমন এবং সমন্বয়কারী মূলধনের আগমন কীভাবে কোনো দেশের লেনদেন ব্যালান্সে প্রতিফলিত হয় তা দেখানো হল।
স্বয়ংসম্ভূত এবং সমন্বয়কারী লেনদেন
(Autonomous and Accomodating Transactions)
পাওনা (Credits)(কোটি টাকায়) দেনা (Debits) (কোটি টাকায়)
(১) স্বয়ংসম্ভূত প্রাপ্তি ১৭৪০ ৩। স্বয়ংসম্ভূত প্রদান ২০০০
(Autonomous receipts) (Autonomous payments)
(ক) স্বয়ংসম্ভূত রপ্তানি ১৪০০ (ক) স্বয়ংসম্ভূত আমদানি ১৭০০
(দৃশ্য ও অদৃশ্য) (দৃশ্য ও অদৃশ্য)
(খ) বিদেশিদের কাছ থেকে (খ) বিদেশিদের স্বয়ংসম্ভূত ১৬০
স্বয়ংসম্ভূত প্রতিদানহীন প্রাপ্তি প্রতিদানহীন অর্থপ্রদান
(Unrequited receipts) ২00 (unrequited payments)
(গ) বিদেশিদের কাছ থেকে (গ) বিদেশিদের স্বয়ংসম্ভূত মূলধন ১৪০
স্বয়ংসম্ভূত মূলধন প্রাপ্তি প্রদান (autonomous capital payments)
(Autonomous capital receipts) ১৪০
২। ভারসাম্য আনয়নকারী ৪। ভারসাম্য আনয়নের জন্য
মূলধন প্রাপ্তি বিদেশিদের মূলধন প্রদান
(Accommodating (accommodating
Capital receipts) ২৬০ capital payments) ০
৪০০০ ৪০০০
এই তালিকা অনুশীলন করলে দেখা যায় যে স্বয়ংসম্ভূত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট দেশের ঘাটতি হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। আবার বিদেশিদের কাছ থেকে প্রতিদানহীন স্বয়ংসম্ভূত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের উদ্বৃত্ত হয়েছে ৪০ কোটি টাকা এবং মূলধন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্ভূত কোন উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি নেই। তার দেশের লেনদেন হিসাবে ঘাটতি থেকে গেল ২৬০ কোটি টাকা। এখন বিদেশ থেকে ২৬০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেলে এই ঘাটতি মেটানো সম্ভব। সেজন্য উক্ত সারণিতে দেখানো হয়েছে যে ভারসাম্য আনয়নকারী বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তির পরিমাণ হল ২৬০ কোটি টাকা। এভাবে লেনদেন হিসাবে ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। এজন্য বলা হয়, বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্সে সব সময় সমতা বজায় রাখে (Balance of Payments balances itself)।
প্রশ্ন ৫২। বাণিজ্যিক বিনিময়–হার বা বাণিজ্য শর্ত কাকে বলে ?
উত্তর। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মূল্য ভিত্তি হল তুলনামূলক ব্যয়ের পার্থক্য। কোনো দেশে কোনো পণ্যের উৎপাদন ব্যয় যদি কম হয়, তাহলে সেই দেশ সেই পণ্য বেশি করে উৎপাদন এবং রপ্তানি করে; যে পণ্য তৈরি করতে উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়বে, সংশ্লিষ্ট দেশ সেটি নিজে উৎপাদন না করে ঐ পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করবে। এই দেশটি রপ্তানির বিনিময়েই আমদানি করবে এবং যে হারে দেশটি এই আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে সেই হারের অনুপাতকে অর্থাৎ, আমদানি- ও রপ্তানি-মূল্যের অনুপাতকে বলা হয় বাণিজ্যিক বিনিময় হার বা বাণিজ্য শর্ত। বাণিজ্যিক বিনিময় হারে তুলনামূলক ব্যয়ের পার্থক্য যে কোনো বিন্দুতে নির্ধারিত হতে পারে। দেশে উৎপাদিত দ্রব্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কী বিনিময় মূল্য পেতে পারে সেটা এই বাণিজ্যিক বিনিময় হার সূচিত করে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের পারস্পরিক চাহিদা বাণিজ্যিক বিনিময় হার নির্ধারণ করে। অন্য দেশের পণ্যের জন্য নিজ দেশের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা এবং নিজ দেশের পণ্যের জন্য অন্য দেশের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা এই দু-প্রকারের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার উপর বাণিজ্য হার নির্ভর করে।
বাণিজ্য শর্তকে নিম্নলিখিতভাবে প্রকাশ করা যায়:
বাণিজ্য শর্ত = আমদানির মোট মূল্যরপ্তানির মোট মূল্য = প্রতি ইউনিট আমদানির মূল্য (Pm) × আমদানির পরিমাণ (M) মোট মূল্যপ্রতি ইউনিট রপ্তানির মূল্য (Px)×রপ্তানির পরিমাণ (X)
বাণিজ্য শর্ত আমদানির ও রপ্তানির পারস্পরিক চাহিদা ও জোগানের দ্বারা নির্ধারিত হয়। যদি বিদেশে রপ্তানির চাহিদা বাড়ে তবে বাণিজ্যিক বিনিময় হার রপ্তানিকারী দেশের পক্ষে অনুকূল হবে এবং আমদানিকারী দেশের বিপক্ষে যাবে। অনুরূপভাবে রপ্তানির চাহিদা কমে গেলে বাণিজ্য শর্ত রপ্তানিকারী দেশের বিপক্ষে যাবে এবং আমদানিকারী দেশের পক্ষে অনুকূল হবে। রপ্তানি পণ্যের দাম কমে গেলেও যদি বিদেশে তার চাহিদা না বাড়ে তবে বাণিজ্যিক বিনিময় হার রপ্তানিকারী দেশের পক্ষে প্রতিকূল হবে। যদি কোনো দেশ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করে আমদানি পণ্যের দাম কমিয়ে দেয় এবং রপ্তানি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় তবে সেই দেশ বাণিজ্যিক বিনিময় হারকে নিজের অনুকূলে আনতে পারে।
প্রশ্ন ৫৩। প্রত্যক্ষ কর কাকে বলে ?
উত্তর। যখন কোন করভারের বোঝা প্রত্যক্ষভাবে করদাতাকে বহন করতে হয় তখন সেই করকে বলা হয় প্রত্যক্ষ কর।
প্রশ্ন ৫৪। পরোক্ষ কর কাকে বলে ?
উত্তর। যখন কোন করভারের বোঝা করদাতা অন্য লোকের উপর চালান করতে পারে তখন সেই করকে বলা হয় পরোক্ষ কর।
প্রশ্ন ৫৫। বিক্রয় কর ও অন্তঃশুল্ক কী ধরনের কর ?
উত্তর। বিক্রয় কর ও অন্তঃশুল্ক পরোক্ষ কর।
প্রশ্ন ৫৬। আয়কর কী ধরনের কর ?
উত্তর। আয়কর একটি প্রত্যক্ষ কর।
প্রশ্ন ৫৭। প্রগতিশীল করের অর্থ কী ?
উত্তর। যখন আয় বেশি হলে করের হার বেশি হয় এবং আয় কম হলে করের হার কম হয় তখন সেই করকে প্রগতিশীল কর বলা হয়।
প্রশ্ন ৫৮। সমানুপাতিক কর কাকে বলে?
উত্তর। যখন আয় বেড়ে গেলেও করের হার বাড়ে না এবং সমান অনুপাতে সব করদাতাকে কর প্রদান করতে হয়, তখন তাকে বলা হয় সমানুপাতিক কর
প্রশ্ন ৫৯। প্রতিক্রিয়াশীল বা অধোগতিশীল কর কাকে বলে ?
উত্তর। যখন আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করের হার আপেক্ষিকভাবে কমে যায়, তখন তাকে বলা হয় প্রতিক্রিয়াশীল কর।
প্রশ্ন ৬০। ঘাটতি বাজেট কাকে বলে ?
উত্তর। যখন সরকারের বাজেটে রাজস্ব অপেক্ষা ব্যয়ের পরিমাণ বেশি থাকে তখন তাকে বলা হয় ঘাটতি বাজেট।
প্রশ্ন ৬১। একটি উন্নত দেশের সঙ্গে একটি অনুন্নত দেশের বাণিজ্য কি সম্ভব?
উত্তর। একটি উন্নত দেশের সঙ্গে একটি অনুন্নত দেশের বাণিজ্য সম্ভব।
প্রশ্ন ৬২। আয় বণ্টনে বৈষম্য কমলে কি সঞ্চয় হ্রাস পাবে ?
উত্তর। ধনী লোকদের উপর করের বোঝা বাড়িয়ে আয়ের বৈষম্য কমানো হলে সঞ্চয় হ্রাস পাবে। কিন্তু স্বল্প আয় উপার্জনকারীদের আয় বাড়িয়ে আয় বণ্টনে বৈষম্য কমানো হলে সঞ্চয় বাড়বে।
প্রশ্ন ৬৩। ঘাটতি অর্থসংস্থানের বিভিন্ন উপায় কী কী?
উত্তর। ঘাটতি অর্থসংস্থানের প্রধান উপায়গুলি হল—(১) পূর্বে সঞ্চিত অর্থের সাহায্যে বর্তমান ঘাটতির অর্থসংস্থান করা। (২) জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে অথবা ব্যাংক নয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে ঋণ গ্রহণ করে ঘাটতির অর্থসংস্থান করা। (৩) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে ঘাটতি অর্থসংস্থান করা এবং (৪) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করা ঘাটতি অর্থসংস্থান করা। বর্তমানকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে এবং বাজার থেকে ঋণ গ্রহণ করা ঘাটতি অর্থসংস্থানের প্রধান উপায়।
প্রশ্ন ৬৪। প্রতিকূল বৈদেশিক বাণিজ্য বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর। প্রতিকূল বৈদেশিক বাণিজ্য বলতে বোঝায় রপ্তানি অপেক্ষা আমদানির পরিমাণ বেশি।
প্রশ্ন ৬৫। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শিল্প সংরক্ষণ নীতি কাকে বলে?
উত্তর। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিদেশি দ্রব্য আমদানির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে দেশীয় শিল্পগুলি রক্ষা করার নীতিকে বলা হয় শিল্প সংরক্ষণ নীতি।
প্রশ্ন ৬৬। বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্স প্রাপ্তির উৎস কী কী?
উত্তর। বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্সে প্রাপ্তির উৎসগুলি হল—(১) পণ্য রপ্তানি, (২) বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা রপ্তানি, (৩) বিদেশিদের কাছ থেকে অনুদান বা প্রতিদানহীন দান, উপহার, ক্ষতিপূরণ প্রভৃতি। (৪) মূলধন প্রাপ্তি (মূলধন সাহায্য, ধার, বিদেশিদের ঋণ পরিশোধ বাবদ প্রাপ্তি, বিদেশিদের কাছে সম্পদ বিক্রি বাবদ প্রাপ্তি)।
প্রশ্ন ৬৭। বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্সে দেনা কী কী খাতে হয় ?
উত্তর। বৈদেশিক লেনদেন ব্যালান্সে দেনার বিভিন্ন খাত হল—(১) পণ্য আমদানি, (২) পরিষেবা আমদানি, (৩) বিদেশে অনুদান বা উপহার প্রদান, প্রতিদানহীন দান ও ক্ষতিপূরণ প্রদান, (৪) মূলধন প্রত্যার্পণ (ধার পরিশোধ অথবা ধারের উপর সুদ প্রদান, সাহায্য প্রদান, বিদেশের সম্পদ ক্রয়)।
প্রশ্ন ৬৮। কোনও দেশের লেনদেন ব্যালান্সে কী কী উপাদান থাকে?
উত্তর। কোনও দেশের লেনদেন ব্যালান্সের উপাদানগুলি হল, (১) দ্রব্যের রপ্তানি হিসাবে প্রাপ্তি, (২) বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা বা সেবাকার্যের রপ্তানি থেকে প্রাপ্তি, (৩) বিদেশিদের কাছ WBS থেকে অনুদান বা প্রতিদানহীন প্রাপ্তি, (৪) মূলধন প্রাপ্তি এবং প্রদান হিসাবে (ক) দ্রব্যের থাকে কারো আমদানি, (খ) পরিষেবা আমদানি, (গ) বিদেশে অনুদান বা প্রতিদানহীন অর্থপ্রদান এবং (ঘ) মূলধন প্রত্যর্পণ।
প্রশ্ন ৬৯। সরকারি ব্যয়ের প্রধান প্রধান বিষয় কী কী?
উত্তর। সরকারি ব্যয়ের প্রধান প্রধান বিষয়গুলি হল—প্রতিরক্ষামূলক ব্যয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যয়, জনকল্যাণের জন্য ব্যয়, বেসামরিক প্রশাসনের জন্য ব্যয়।
প্রশ্ন ৭০। সরকারি রাজস্বের উৎস কী কী ?
উত্তর। সরকারি রাজস্বের উৎসগুলি হল—(১) কর, (২) লেভি বা ফি, (৩) বাণিজ্যিক রাজস্ব, (৪) প্রশাসনিক রাজস্ব এবং (৫) অনুদান।
প্রশ্ন ৭১। ‘দৃশ্য’ বাণিজ্য ও ‘অদৃশ্য‘ বাণিজ্য বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। ‘দৃশ্য’ বাণিজ্য বলতে বোঝায় পণ্য দ্রব্যের আমদানি ও রপ্তানি। ‘অদৃশ্য‘ বাণিজ্য বলতে বোঝায় আমদানি–রপ্তানি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে দেনা–পাওনা—যেমন, বিদেশে পর্যটন বা শিক্ষালাভের জন্য ব্যয়, ঋণের উপর সুদ প্রদান, বিদেশি বিমা কোম্পানিতে প্রিমিয়াম প্রদান, বিদেশি বিমান ভাড়া প্রভৃতি বাবদ অর্থ প্রদান। আবার বিদেশ থেকে যারা আসে তাদের সঙ্গে যে অর্থ দেশের ভিতর আসে অথবা বিদেশিরা যে সব খাতে অর্থ প্রদান করে সেগুলি অদৃশ্য বাণিজ্যের অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন ৭২। অর্থের মূল্য কখন বাড়ে এবং কখন কমে?
উত্তর। যখন মূল্যস্তর কমে যায় তখন অর্থের মূল্য বাড়ে এবং যখন মূল্যস্তর বেড়ে যায় তখন অর্থের মূল্য কমে।
প্রশ্ন ৭৩। মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি পদ্ধতি কী কী?
উত্তর। মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি পদ্ধতি হল—(ক) কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতি, (খ) সরকার কর্তৃক অনুসৃত মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধমূলক আয়–ব্যয় নীতি বা ফিসক্যাল নীতি, (গ) সরকার কর্তৃক মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও রেশনিং প্রথার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ।
প্রশ্ন ৭৪। মুদ্রাস্ফীতির ফলে কারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কারা লাভবান হয়?
উত্তর। মুদ্রাস্ফীতির ফলে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয় নির্দিষ্ট আয় উপার্জনকারীরা, বা স্বল্প আয়সম্পন্ন ব্যক্তিরা এবং শ্রমিকরা। মুদ্রাস্ফীতির ফলে লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা।
প্রশ্ন ৭৫। সরকারের বাজেট ঘাটতি ও আর্থিক ঘাটতির মধ্যে পার্থক্য কী ?
উত্তর। সরকারের বাজেট ঘাটতি হল বাজেটে রাজস্ব অপেক্ষা ব্যয়ের পরিমাণ বেশি। আর্থিক ঘাটতি বলতে বোঝায় ঘাটতি ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন খাতে প্রাপ্তি অপেক্ষাও সরকারের ব্যয় এবং মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধের দায়বদ্ধতার আধিক্য।
প্রশ্ন ৭৬। অ্যাডাম স্মিথ বর্ণিত করের চারটি সূত্র কী কী?
উত্তর। অ্যাডাম স্মিথ বর্ণিত করের চারটি সূত্র হল—(ক) সামর্থ্যের সূত্র, (খ) নিশ্চয়তার সূত্র, (গ) ন্যায়ের সূত্র এবং (ঘ) ব্যয়–সংকোচনের সূত্র।
প্রশ্ন ৭৭। কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। একটি দেশের মুদ্রার বিপক্ষে অপর একটি দেশের মুদ্রা যতটা পাওয়া যায় ততটাই হল সেই দেশের মুদ্রার বিনিময় হার। যদি একটি ভারতীয় টাকায় দুটি বাংলাদেশের টাকা পাওয়া যায় তবে সেই দুই দেশের মধ্যে মুদ্রা বিনিময় হার হল ১টি ভারতীয় টাকা = ২টি বাংলাদেশের টাকা।
প্রশ্ন ৭৮। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী?
উত্তর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোট ছাপতে পারে কিন্তু জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে না। বাণিজ্যিক ব্যাংক নোট ছাপতে পারে না, পরিবর্তে জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হল বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যাংকার এবং সরকারের ব্যাংকার। বাণিজ্যিক ব্যাংক সরকারের ব্যাংকার নয় ।
প্রশ্ন ৭৯। দ্বৈত গণনার ভুলটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর। একই আয় দু‘বার গণনা করা হলে দ্বৈত গণনা (double counting) দেখা যায়। জাতীয় আয়ে কর থেকে যে রাজস্ব পাওয়া যায় তা ধরা হয় না—কারণ, করদাতার আয় একবার গণনা করা হয়েছে, এখন কর থেকে প্রাপ্ত আয় গণনা করা হলে দ্বৈত গণনা হবে।
প্রশ্ন ৮০। হস্তান্তর আয় বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। একজন থেকে আরেক জনের কাছে যদি সাহায্য, অনুদান বাবদ অর্থ হস্তান্তরিত হয় এবং এই হস্তান্তর যদি উৎপাদন না বাড়ায় অথচ গ্রহিতার আয় হয় তবে তাকে হস্তান্তর আয় বলা হয় ।
ভিক্ষুকের আয়, দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সাহায্য, আত্মীয়–স্বজনের কাছ থেকে দুঃস্থ ব্যক্তির সাহায্যপ্রাপ্তি—প্রভৃতি হল হস্তান্তর আয়ের উদাহরণ।
প্রশ্ন ৮১। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উদ্যোগের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উদ্যোগের স্বাধীনতা হল বিনিয়োগের উপর কোন সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকে না, উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারী স্বাধীনভাবে বিনিয়োগ করতে পারে ও ব্যবসা চালাতে পারে।
প্রশ্ন ৮২। কোন্ অবস্থায় অর্থের জোগান বৃদ্ধি পেলেও দামস্তর বৃদ্ধি পাবে না ?
উত্তর। যদি দেশে অব্যবহৃত সম্পদ ও উপাদান থাকে এবং অর্থের জোগান বাড়িয়ে সেগুলির উপযুক্ত ব্যবহার করা বা উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয় তবে অর্থের জোগান বাড়লে উৎপাদন বাড়বে এবং দামস্তর বৃদ্ধি পাবে না।
প্রশ্ন ৮৩। মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা বা প্রান্তিক প্রত্যাশিত প্রতিদান কাকে বলে?
উত্তর। মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতার কেইনস–প্রদত্ত সংজ্ঞা হল (Keynesian definition of Marginal Efficiency of Capital): “Marginal efficiency of capital is equal to that rate of discount which would make the present value of the services of annuities given by the returns expected from the capital asset during its life just equal to its supply price.” যদি আমরা ধরে নিই যে Cr হল মূলধনের পুনঃস্থাপন বা স্থানচ্যুতি খরচ (replacement cost). r হচ্ছে এমন একটি বাট্টা হার যার সাহায্যে মূলধনের বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যৎ প্রাপ্তিকে বর্তমান মূল্যে পরিমাপ করা হচ্ছে এবং R1 + R2 + R3 + ………+ Rn হচ্ছে বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যতে বছরের পর বছর প্রাপ্তি বা প্রতিদানের হার (prospective annual return or prospective yields of investment)। তবে মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতাকে এভাবে ব্যক্ত করা যেতে পারে—
Cr= R1(1+r) + R2(1+r)2 + R3(1+r)3 + ……..+ Rn(1+r)n
এক্ষেত্রে r হল মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা যা মূলধন সামগ্রীর জন্য ব্যয় বা মূলধনের জোগান দাম ও মূলধন বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যৎ প্রাপ্তির বর্তমান মূল্যকে সমান করে। মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা বেশি হলে বিনিয়োগ বেশি হয়, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত মূলধন বিনিয়োগ ভবিষ্যত প্রাপ্তির বর্তমান মূল্য মূলধনের জোগান দামের সমান না হচ্ছে ততক্ষণ বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে। মূলধনের দক্ষতা বলতে কোন সম্পদের (capital asset) আয় অর্জন করার ক্ষমতা বোঝায়। মূলধন সম্পদেরও একটি নিজস্ব ব্যয় আছে,– সেই ব্যয় মিটিয়ে যে নিট আয় থাকে, সেটা হল সেই মূলধন সম্পদের আয় অর্জন করার ক্ষমতা। যতক্ষণ এই আয় অর্জন করার ক্ষমতা চ্ছ নি মূলধনের নিজস্ব ব্যয় অথবা জোগান দাম অপেক্ষা বেশি থাকবে ততক্ষণ মূলধন বিনিয়োগ লাভজনক হবে। মূলধন সম্পদের থেকে প্রাপ্ত আয় যখন মূলধনের জোগান দামের সমান হবে তখন কাম্য মূলধনের পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
প্রশ্ন ৮৪। লিওনটিয়েফ কূটাভাষ বলতে কী বোঝ?
উত্তর। লিওনটিয়েফ (Leontief) দেখিয়েছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি মূলত – শ্রম–নিবিড় (Labour-intensive) এবং আমদানি মূলত মূলধন–নিবিড় (Capital- intensive); অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমের অনুপাতে মূলধনের জোগান অনেক গুণ হার বেশি। এটাকে Leontief Paradox বা লিওনটিয়েফ কূটাভাষ বলা হয়।
লিওনটিয়েফ নিজেই এই কূটাভাষের (Paradox) ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রথমত, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূলধনের পরিমাণের অনুপাতে শ্রমিক সংখ্যার অনুপাত খুবই কম, তবুও সে দেশে শ্রমের গুণগত উৎকর্ষ ও দক্ষতার ভিত্তিতে আপেক্ষিকভাবে শ্রমের কার্যকর জোগান (effec- tive supply of labour) বেশি। তাঁর মতে, একজন মার্কিন শ্রমিকের উৎপাদনশক্তি অপর একজন বিদেশি শ্রমিকের উৎপাদন শক্তির থেকে তিনগুণ বেশি। এই মতের ভিত্তিতে লিওনটিয়েফ হেকশ্চার–ওলিন (Heckscher-Ohlin) তত্ত্বটিকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন।দ্বিতীয়ত, লিওনটিয়েফ তাঁর মতবাদটি আলোচনা করার সময় শ্রম এবং মূলধনের বাইরে দশের একটি উৎপাদনক্ষম তৃতীয় উপাদানও যে সংশ্লিষ্ট দ্রব্যের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হল পারে সেটা বিবেচনা করেননি। এ বিষয়ে সোদারষ্টেনের (Sodersten) যুক্তি হল, তৃতীয় উপাদানটি বিবেচনা করলে লিওনটিয়েফ কূটাভাষের ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে। এমন হতে পারে যে রপ্তানির তুলনায় আমদানি–পণ্যে শ্রমের অনুপাতে মূলধনের অনুপাত বেশি প্রয়োজন। সঙ্গে আবার এমনও হতে পারে যে আমদানি–পণ্য তৃতীয় উপাদানের ক্ষেত্রে নিবিড় (intensive), যথা—পণ্যটি উৎপাদনের জন্য তৃতীয় উপাদান, যেমন জমি, বেশি প্রয়োজনীয়। যদি মূলধন এবং তৃতীয় উপাদান (জমি) পরিবর্ত উপাদান বা পরস্পরের বিকল্প হয় এবং যদি এই উভয় উপাদানই শ্রমের পরিপূরক হয় তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির বিকল্প দ্রব্যগুলি (import- competing goods) দেশের ভিতর মূলধন–নিবিড় এবং দেশের বাইরে জমি–নিবিড় হতে পারে। এভাবে লিওনটিয়েফ কূটাভাষের ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন ৮৫। লাসপিয়েরির দামসূচক এবং পাসের দাম সূচকের মধ্যে পার্থক্য কোথায় ?
উত্তর। লাসপেয়েরের সূত্র (Laspeyere’s Formula) হল,
চলতি বছরের দাম অনুযায়ী ভিত্তি বছরের পরিমাণ বাবদ অর্থব্যয়ের সমষ্টিভিত্তি বছরের দাম অনুযায়ী ভিত্তি বছরের পরিমাণ বাবদ অর্থব্যয়ের সমষ্টি x ১০০
পাশের সূত্র (Paasche’s Formula) হল,
চলতি বছরের দাম ও পরিমাণ বাবদ অর্থব্যয়ের সমষ্টিচলতি বছরের পরিমাণও ভিত্তি বছরের দাম বাবদ অর্থ ব্যয়ের সমষ্টি x ১০০
প্রশ্ন ৮৬। অর্থের পরিমাণ তত্ত্বে ফিসারের সমীকরণটি উল্লেখ কর।
উত্তর। অর্থের পরিমাণ তত্ত্বে ফিসারের সমীকরণটি হল PT = MV ; এক্ষেত্রে M হল চালু মুদ্রা, P হল মূল্যস্তর, T হল লেনদেনের জন্য টাকার চাহিদা, V হল মুদ্রার প্রচলন গতি। চালু মুদ্রা ছাড়া ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত অর্থ বিবেচনা করলে সেটা হল M ́ এবং তার প্রচলন গতি হল V ́ । সেক্ষেত্রে সমীকরণটি হল PT = MV + M ́V ́ অথবা, P = MV + M ˊV ˊ T
প্রশ্ন ৮৭। জে. বি. স্যে–র (J.B. Say) বিধিটি কী ?
উত্তর। জে. বি. স্যে–র সূত্র হল “জোগান নিজের থেকেই তার চাহিদা সৃষ্টি করে”
(Supply creates its own demand)।
প্রশ্ন ৮৮। গণদ্রব্যের ক্ষেত্রে বর্জন নীতি প্রযুক্ত হয় না কেন?
উত্তর। গণদ্রব্য (Public Goods) হল সরকার কর্তৃক সৃষ্ট সেই সব দ্রব্য যেগুলির জন্য লোকের পছন্দ পরিষ্কারভাবে প্রতিভাত হয় না এবং যেগুলি ব্যবহারের জন্য জনসাধারণকে বাইরে রাখারও প্রশ্ন ওঠে না। এজন্য এগুলির ক্ষেত্রে বর্জন নীতি প্রযুক্ত হয় না।
প্রশ্ন ৮৯। অর্থের পরিমাণ তত্ত্বের আলোচনায় অর্থের প্রচলন বেগ বলতে কী বোঝ?
উত্তর। একটি কাগজি নোট বা মুদ্রা যতবার হস্তান্তরিত হয়, অর্থাৎ যতবার তার হাতবদল হয়, ততটা হল এর প্রচলন বেগ।
প্রশ্ন ৯০। মজুরির অনমনীয়তা বলতে কী বোঝ?
উত্তর। কেইনসের মতে শ্রমের জোগান রেখা আর্থিক মজুরির (W) উপর নির্ভরশীল। নিম্নের চিত্রে মজুরির হার W = W0 হলে শ্রমের জোগান রেখা পূর্ণ নিয়োগ স্তর পর্যন্ত পূর্ণ স্থিতিস্থাপক, অর্থাৎ অনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল হবে। এর পর যদি মজুরি সামান্য বাড়ে তবে শ্রমের জোগান সামান্য বাড়বে এবং শ্রমের জোগান রেখা সামান্য ডানদিকে হেলানো অবস্থায় থাকবে। কেইনসের বিশ্লেষণে শ্রমের জোগান অপেক্ষক দমিত রাখা হয়েছে (Supply of Labour function is suppressed) এবং অনমনীয় মজুরি হার (rigid wage rate) ধরে নেওয়া হয়েছে। যদি শ্রমের চাহিদা থেকে শ্রমের জোগান বেশি হয় তবুও মজুরি হার কমবে না। মজুরির এই অনমনীয়তার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন, (১) শক্তিশালী শ্রমিকসংঘ মজুরির হার কমানো প্রতিরোধ করতে পারে। (২) অনুগত এবং অভিজ্ঞ শ্রমিকদের কাজে লাগানোর জন্য মালিকরা মজুরি হার না–ও কমাতে পারে। (৩) দেশে যদি মজুরি নিয়ন্ত্রণের জন্য বা সর্বনিম্ন একটি মজুরি দেওয়ার জন্য আইন থাকে, তবে মালিকরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মজুরি হার কমাতে পারে না। (৪) কর্মহীন শ্রমিকরা আর্থিক মজুরি হ্রাস গ্রহণ করতে রাজি না–ও হতে পারে, যদিও তারা আরও কম প্রকৃত মজুরি হারে (real wage rate) কাজ করতে রাজি থাকে।
৫.৫ চিত্রে উল্লম্ব অক্ষে মজুরি হার এবং অনুভূমিক অক্ষে শ্রমের জোগান ধরা হয়েছে। মজুরি হার W0 হলে শ্রমের জোগান হল (পূর্ণ নিয়োগ স্তরে) ON ; শ্রমের জোগান রেখাটি F বিন্দু পর্যন্ত অনুভূমিক রেখার সমান্তরাল এবং এ ক্ষেত্রে শ্রমের জোগান পূর্ণ স্থিতিস্থাপক। F বিন্দু পর্যন্ত শ্রমের জোগান পূর্ণ স্থিতিস্থাপক। F বিন্দুর পর শ্রমের জোগান রেখা (FSL অংশটি) ডানদিকে ঊর্ধ্বমুখে সামান্য হেলানো অবস্থায় আছে। অর্থাৎ শ্রমের জোগান সামান্য বাড়ছে। কেইনসের তত্ত্ব অনুযায়ী মজুরি হার অনমনীয় (rigid) থাকলে পূর্ণ নিয়োগের অভাবেও অথবা পূর্ণ নিয়োগের নীচে কোনও স্তরে অর্থনীতির ভারসাম্য (Underemployment Equilibrium) হতে পারে। এটাকে বলা হয় অবনিয়োগ ভারসাম্য।
। এখানে N হল শ্রমের
ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের মতে মজুরি হার অনমনীয় নয় এবং শ্রমের জোগান নির্ভর কি করে প্রকৃত মজুরির (real wage) উপর। ক্লাসিক্যাল তত্ত্বে N = f(WP) জাগান, W হল আর্থিক মজুরি এবং P হল মূল্যস্তর ; (WP)হল প্রকৃত মজুরি। ক্লাসিক্যাল তত্ত্বে মজুরি হার নির্ভর করে শ্রমের প্রান্তিক উৎপাদনের উপর। কিন্তু কেইনস ধরে নিয়েছেন য মজুরি হার অনমনীয় এবং W0 হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত (autonomously Determined) মজুরি হার। এই মজুরি হারই অনমনীয় আর্থিক মজুরি (rigid nominal vage) হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
প্রশ্ন ৯১। ক্লাসিক্যাল তত্ত্বে মজুরি হার কি অপরিবর্তনীয়?
উত্তর। ক্লাসিক্যাল তত্ত্বে মজুরি হার অপরিবর্তনীয় নয়।
প্রশ্ন ৯২। ফিলিপস রেখা কাকে বলে? চিত্রের সাহায্যে উত্তর দাও।
উত্তর। ফিলিপস রেখায় মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক দেখানো হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ৯৩। ভিখারির আয় কি জাতীয় আয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়?
উত্তর। ভিখারির আয় জাতীর আয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় না।
প্রশ্ন ৯৪। বাণিজ্য চক্রের চারটি স্তর কী কী ?
উত্তর। বাণিজ্য চক্রের চারটি স্তর হল—(১) ঊর্ধ্বমুখী গতি, (২) সমৃদ্ধি, (৩) অধোগতি এবং (৪) মন্দা।
প্রশ্ন ৯৫। গণ দ্রব্য কাকে বলে ?
উত্তর। গণ দ্রব্য হোল সরকার কর্তৃক সৃষ্ট সেইসব দ্রব্য যেগুলির জন্য পছন্দ পরিষ্কারভাবে প্রতিভাত হয় না এবং যে গুলির ক্ষেত্রে বর্জন করার বা বাইরে রাখার নীতির প্রয়োগ হয় না।
প্রশ্ন ৯৬। গড় ভোগ প্রবণতার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। গড় ভোগ প্রবণতা হল মোট ভোগ–ব্যয় ও মোট আয়ের অনুপাত অর্থাৎ
গড় ভোগ প্রবণতা =মোট ব্যয়মোট আয়
প্রশ্ন ৯৭। কর প্রদানের সুবিধা নীতিটি বিবৃত কর।
উত্তর। কর প্রদানের সুবিধা নীতি অনুযায়ী কর প্রদানে কর দাতার সুবিধা হয় সে রকম সময়ে কর ধার্য করা বা তা সংগ্রহ করা উচিত, এবং সরকারের দিক থেকে কর আদায়ে যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
প্রশ্ন ৯৮। মুদ্রা সংকোচন বলতে কী বোঝ ?
উত্তর। যখন জনসাধারণের কার্যকর চাহিদা (effective demand) কমে যায় তখন মুদ্রা সংকোচন হয়; তখন মুদ্রার জোগান কম থাকে, পণ্যসামগ্রীর দাম কমে যায়, উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা কমে যায় এবং কর্মসংস্থানের অভাব দেখা যায়। এই অবস্থাকে মুদ্রা সংকোচন (deflation) বলা হয়।
প্রশ্ন ৯৯। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মান 0.7 হলে প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার মান কত হবে?
উত্তর। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মান 0.7 হলে প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার মান হবে 0.3।
প্রশ্ন ১০০। অর্থের মূল্য বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। অর্থের মূল্য বলতে বোঝায় অর্থের বিনিময়ে কতটা দ্রব্য পাওয়া যায়। যখন দ্রব্যের মূল্যস্তর কমে যায় তখন অর্থের মূল্য বেশি এবং যখন দ্রব্যের মূল্যস্তর বেড়ে যায় তখন অর্থের মূল্য কম।
প্রশ্ন ১০১। টাকাকড়ি কী?
উত্তর। যে বস্তু বিনিময় কাজ ও দেনা–পাওনা মেটাবার মাধ্যম হিসাবে সর্বজনগ্রাহ্য এবং সেই সঙ্গে মূল্যের পরিমাণ ও সঞ্চয়ের ভাণ্ডার হিসাবে কাজ করে সেই বস্তুকে টাকাকড়ি বলা হয়।
প্রশ্ন ১০২। দ্রব্যের দাম এবং অর্থের মূল্যের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক রয়েছে?
উত্তর। দ্রব্যের দাম এবং অর্থের মূল্যের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক। দ্রব্যের দাম বাড়লে অর্থের মূল্য কম হয় এবং দ্রব্যের দাম কমলে অর্থের মূল্য বেশি হয়।
প্রশ্ন ১০৩। দামসূচক কী?
উত্তর। অর্থের মূল্যের পরিবর্তন অথবা মুদ্রাস্ফীতির হারের পরিমাপ করার উপায় হল দামসূচক।
প্রশ্ন ১০৪। অর্থের পরিমাণতত্ত্ব প্রধানত কোন্ দুটি সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ?
উত্তর। অর্থের পরিমাণতত্ত্বে একটি হল ফিসার প্রদত্ত সমীকরণ এবং অপরটি হল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থবিজ্ঞানীদের প্রদত্ত সমীকরণ।
প্রশ্ন ১০৫। দামসূচক সংখ্যা কি ঋণাত্মক হতে পারে ?
উত্তর। দামসূচক সংখ্যা ঋণাত্মক হতে পারে না।
প্রশ্ন ১০৬। কেমব্রিজ অর্থনীতিবিদদের মতে অর্থের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার মান কত হবে ?
উত্তর। কেমব্রিজ অর্থনীতিবিদদের মতে অর্থের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার মান হল ১ বা একক (unity)।
প্রশ্ন ১০৭। ফিসারের সমীকরণের T এবং কেমব্রিজ সমীকরণের K-এর মধ্যে কী সম্পর্ক আছে?
উত্তর। ফিসারের সমীকরণে T হল মোট লেনদেনের পরিমাণ যার জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। কেমব্রিজ সমীকরণে K হল মোট আয়ের যে পরিমাণ একটি অনুপাত হিসাবে লোকে হাতে রাখতে চায়।
প্রশ্ন ১০৮। দুটি ভিন্ন ধরনের ব্যাংক–এর উদাহরণ দাও ।
উত্তর। (ক) বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং (খ) কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রশ্ন ১০৯। ঋণ সৃষ্টির গুণক কিসের উপর নির্ভর করে ?
উত্তর। ঋণ সৃষ্টির গুণক নির্ভর করে আমানত সম্প্রসারণের উপর।
প্রশ্ন ১১০। পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনগুলি?
উত্তর। ব্যাংক রেট পরিবর্তন, খোলা বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিকিউরিটি ক্রয়–বিক্রয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিবর্তনীয় রিজার্ভের অনুপাত প্রভৃতি হল পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।
প্রশ্ন ১১১। গড় ভোগ প্রবণতা ও গড় সঞ্চয় প্রবণতার মধ্যে সম্পর্ক কী ?
উত্তর। গড় ভোগ প্রবণতা (APC) বাড়লে গড় সঞ্চয় প্রবণতা (APS) কমে; আবার গড় ভোগ প্রবণতা কমলে গড় সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ে। যদি গড় সঞ্চয় প্রবণতা শূন্য হয় তবে গড় ভোগ প্রবণতা হবে ১–এর সমান। অর্থাৎ, APS + APC = 1।
প্রশ্ন ১১২। আয়ের ভারসাম্যের প্রয়োজনীয় শর্ত কী?
উত্তর। আয়ের ভারসাম্যের শর্ত হল, আয় (Y) ভোগ (C) ও বিনিয়োগের (I) সমষ্টির
সমান ; অর্থাৎ Y = C + I ।
প্রশ্ন ১১৩। গুণকের সঙ্গে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার সম্পর্ক কী ?
উত্তর। গুণকের সঙ্গে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার সম্পর্ক এভাবে দেখানো যায়
K = 11−mpc ; এখানে K হল গুণক এবং mpc হল প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা।
প্রশ্ন ১১৪। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মান ১ এবং ২ হলে গুণক কত হবে?
উত্তর। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মান ১ হলে গুণক হবে শূন্য ; আবার প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা ২ হলে গুণক হবে নেতিবাচক।
প্রশ্ন ১১৫। ‘মুক্ত অর্থনীতিতে প্রান্তিক আমদানি প্রবণতা যত বেশি হবে গুণকের মান তত কম হবে‘—এটা কি ঠিক?
উত্তর। এটা ঠিক।
প্রশ্ন ১১৬। নিট বিনিয়োগ ও স্থূল বিনিয়োগের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর। নিট বিনিয়োগ = স্থূল বিনিয়োগ – অবচয় (depreciation)।
প্রশ্ন ১১৭। নিট বিনিয়োগ কি ঋণাত্মক হতে পারে?
উত্তর। নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হতে পারে। নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হলে মোট মূলধন ভাণ্ডার হ্রাস পায় ।
প্রশ্ন ১১৮। কোন মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা যদি সুদের হার অপেক্ষা বেশি হয় তাহলে মূলধনি দ্রব্যটি কেনা লাভজনক হবে কি?
উত্তর। হবে।
প্রশ্ন ১১৯। সুদের হারের সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক কী?
উত্তর। সুদের হার কমলে বিনিয়োগ বাড়ে এবং সুদের হার বেড়ে গেলে বিনিয়োগ ব্যয় বেড়ে যায়।
প্রশ্ন ১২০। প্রকৃত মজুরি কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
উত্তর। প্রকৃত মজুরি (Real wage) = আর্থিক মজুরি (W)দাম স্তর (P)
প্রশ্ন ১২১। আয়ের বৃত্তস্রোতে অনুপ্রবেশ ও নিষ্কাশন কখন সমান হয় ?
উত্তর। আয় স্থির থাকলে আয়ের বৃত্তস্রোতে অনুপ্রবেশ ও নিষ্কাশন সমান হয়।
প্রশ্ন ১২২। নিষ্কাশনের পরিমাণ অনুপ্রবেশের পরিমাণ অপেক্ষা বেশি হলে আয় স্তরে কী জাতীয় পরিবর্তন হয়?
উত্তর। নিষ্কাশনের পরিমাণ অনুপ্রবেশের পরিমাণ অপেক্ষা বেশি হলে আয় কমবে।
প্রশ্ন ১২৩। ভোগরেখা যে বিন্দুতে ৪৫ ডিগ্রি রেখাকে ছেদ করে সেই ছেদবিন্দুতে গড় ভোগ প্রবণতার মান কত হয় ?
উত্তর। ভোগরেখা যে বিন্দুতে ৪৫ ডিগ্রি রেখাকে ছেদ করে সেই ছেদবিন্দুতে গড় ভোগ | প্রবণতার মান হল ১ (unity)।
প্রশ্ন ১২৪। ঐ ছেদবিন্দুর বাঁদিকে ও ডানদিকে এ পি সি–র মান কত হবে?
উত্তর। ঐ ছেদবিন্দুর বাঁদিকে গড় ভোগ প্রবণতার মান ১–এর চেয়ে বেশি এবং ডানদিকে এর মান ১–এর চেয়ে কম।
প্রশ্ন ১২৫। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মান কোন্ দুটি সীমার মধ্যে বিচরণ করে ?
উত্তর। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মান শূন্যের বেশি ; কিন্তু ১–এর কম হবে। অর্থাৎ, 0< MPC < ১
প্রশ্ন ১২৬। ভোগরেখা যদি সরলরেখা হয় তবে ঐ রেখার ঢাল থেকে আমরা কী জানতে পারি?
উত্তর। ভোগরেখা যদি উৎপত্তি স্থল থেকে সরলরেখা হয় তবে ঢাল থেকে আমরা জানতে পারি যে এই ধরনের ভোগরেখার ক্ষেত্রে গড় ভোগ প্রবণতা = প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা।
প্রশ্ন ১২৭। ব্যক্তির ভোগব্যয় প্রধানত কীসের উপর নির্ভর করে?
উত্তর। ব্যক্তির ভোগব্যয় প্রধানত আয়ের উপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন ১২৮। কেইনসের মতে ভোগ প্রবণতা নির্ধারণকারী বিষয়গুলি দু‘রকমের– সেগুলি কী কী?
উত্তর। কেইনসের মতে ভোগ প্রবণতা নির্ধারণকারী বিষয়গুলি হল (১) বাস্তব উপাদান (Objective Factors) এবং (২) মনস্তাত্ত্বিক উপাদান (Phychological or Subjective Factors)।
প্রশ্ন ১২৯। দু‘জন ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদের নাম লেখ।
উত্তর। (১) অ্যাডাম স্মিথ এবং (২) ডেভিড রিকার্ডো।
প্রশ্ন ১৩০। নিশ্চলতা স্ফীতি কথাটার অর্থ কী?
উত্তর। একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং অপরদিকে শিল্পোৎপাদনে মন্দা (Stagnation)—এই দুইয়ের সংমিশ্রণ হল নিশ্চলতা স্ফীতি (Stagflation)।
প্রশ্ন ১৩১। MV = PT এই সমীকরণে টাকার প্রচলন গতি স্থির ধরা হয় কেন ?
উত্তর। MV = PT সমীকরণে টাকার প্রচলন গতি (V) স্থির ধরা না হলে টাকা এব মূল্যস্তরের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও সমানুপাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা যায় না ।
প্রশ্ন ১৩২। তারল্য পছন্দ এবং সুদের হারের মধ্যে সম্পর্ক কী ?
উত্তর। ফাটকা কারবারের জন্য টাকার চাহিদা সুদের হারের উপর নির্ভরশীল, সুদের হার কমলে তারল্য পছন্দ এক্ষেত্রে বাড়ে এবং সুদের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে গেলেও তারল্য পছন্দ ধনাত্মক থাকে ।
প্রশ্ন ১৩৩। মোট বিনিয়োগ ও নিট বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য কী ?
উত্তর। কোন উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মোট মূলধন ভাণ্ডারের বৃদ্ধিকে (increase in the stock of capital) বলা হয় মোট বিনিয়োগ। মোট বিনিয়োগ থেকে অবচয়ের পরিমাণ (depreciation) বাদ দিলে পাওয়া যায় নিট বিনিয়োগ। নিট বিনিয়োগ মূলধন সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ১৩৪। ব্যক্তিগত আয়ের সমষ্টিই কি জাতীয় আয় ? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর। শুধু ব্যক্তিগত আয়ের সমষ্টি জাতীয় আয় হতে পারে না। জাতীয় আয় পরিমাপ করার জন্য ব্যক্তিগত আয়ের সঙ্গে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগত আয় ও সরকারের আয় যোগ করতে হবে।
প্রশ্ন ১৩৫। কাঠামোগত বেকারত্ব ও ছদ্ম বেকারত্ব কী?
উত্তর। (ক) অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন হেতু যদি মূলধন–নিবিড় প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন কাজ চালানো হয় তবে নতুন যন্ত্রপাতির প্রবর্তনের ফলে কিছু শ্রমিক ছাঁটাই হয় এটাকে বলা হয় কাঠামোজনিত বেকারত্ব। (খ) গ্রামাঞ্চলে উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি থাকার একটি খামারে যতজন লোকের প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি লোক যদি নিযুক্ত হয় এবং একজন শ্রমিকার সেখান থেকে প্রত্যাহৃত করলেও (অন্যান্য উপাদান অপরিবর্তিত রেখে) যদি উৎপাদন না কমে তবে বুঝতে হবে প্রচ্ছন্নভাবে বেকারত্ব বা ছদ্ম বেকারত্ব আছে এবং সেই প্রত্যাহৃত শ্রমিক আসলে বেকার।
প্রশ্ন ১৩৬। অর্থের জোগান বলতে কী বোঝানো হয়?
উত্তর। অর্থের জোগান হল সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত মোট অর্থের পরিমাণ এবং তার প্রচলন বেগ (Velocity of circulation)। অর্থের জোগানকে এভাবে লেখা যায় MV + M’V’ ; এখানে M হল চালু মুদ্রা, V হল চালু মুদ্রার প্রচলন বেগ, M’ হল ঋণপ ও ব্যাংক অর্থ (Bank Money) এবং V’ হল ঋণপত্র ও ব্যাংক অর্থের প্রচলন বেগ।
প্রশ্ন ১৩৭। দেখাও যে গড় ভোগ প্রবণতার মান ১ এর চেয়ে বেশি হতে পারে।
উত্তর। ভোগ রেখার (CC’ curve) উপর E বিন্দুর বাঁদিকে গড় ভোগ প্রবণতা ১–এর চেয়ে বেশি।
প্রশ্ন ১৩৮। যে দেশের সঞ্চয় প্রবণতা যত বেশি গুণক তত বেশি—এটা কি সত্যি ?
উত্তর। এটা সত্যি নয়।
প্রশ্ন ১৩৯। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মান 0-এর চেয়ে বেশি কিন্তু ১ এর চেয়ে কম কেন ?
উত্তর। আয় বাড়লে ভোগ প্রবণতা সমান অনুপাতে বাড়ে না; আবার আয় বাড়লে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা শূন্যও থাকে না। এজন্য প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা শূন্যের চেয়ে বেশি ও ১–এর চেয়ে কম। অর্থাৎ, 0 < MPC < ১।
প্রশ্ন ১৪০। পরিকল্পিত সঞ্চয় পরিকল্পিত বিনিয়োগ চেয়ে বেশি হলে কী হয়?
উত্তর। পরিকল্পিত সঞ্চয় যদি পরিকল্পিত বিনিয়োগ থেকে বেশি হয়, তবে আয় কমতে থাকে এবং আয়ের সংকোচনমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
প্রশ্ন ১৪১। ভোগ প্রবণতা ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর। ভোগ প্রবণতা হল ভোগের ইচ্ছা। আয় বাড়লে আয় অর্জনকারীদের ভোগের আকাঙ্ক্ষাও বাড়ে। মোট ভোগ–ব্যয়কে আয় দিয়ে ভাগ করলে আমরা পাই গড় ভোগ প্রবণতা। আবার অতিরিক্ত আয় বাড়লে অতিরিক্ত ভোগের পরিমাণের অনুপাতকে বলা হয় প্রান্তিক ভোগ–প্রবণতা ।
প্রশ্ন ১৪২। যদি আইনগত সংরক্ষিত নগদ অর্থের অনুপাত ১০ শতাংশ হয় তাহলে অতিরিক্ত ১০০ টাকা নগদ অর্থ জমা পেলে সমস্ত ব্যাংক মিলে অতিরিক্ত কত টাকা ঋণ দিতে পারে—হিসাব করে দেখাও।
উত্তর। ১০০ টাকা নগদ অর্থ পেলে তার থেকে ১০ শতাংশ সংরক্ষিত নগদ অনুপাত রেখে
কোন ব্যাংক প্রথমে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ঋণ দিতে পারে এবং ঋণ–সৃজন গুণক (credit creation multiplier) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোট ১০০০ টাকার ঋণ–সৃজন হতে পারে।
এর হিসাব হল ১০০ ১১−৯১০ = ১০০০
প্রশ্ন ১৪৩। কোন দেশের উপাদান ব্যয়ভিত্তিক মোট জাতীয় উৎপাদন এবং বাজার মূল্যভিত্তিক মোট জাতীয় উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
উত্তর। উপাদান ব্যয়ের ভিত্তিতে জাতীয় উৎপাদনের মূল্যকে উপাদান ব্যয়ের হিসাবে মোট জাতীয় উৎপাদন (National Product at Factor Cost) বলা হয়। আবার বাজার মূল্যের ভিত্তিতে উৎপাদিত বিভিন্ন চূড়ান্ত পণ্যের (final products) মূল্যের সমষ্টিও জাতীয় উৎপাদন হিসাবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের সংযোজিত মূল্য বিবেচিত হয়।
প্রশ্ন ১৪৪। প্রতিস্থাপন বিনিয়োগ কাকে বলে ?
উত্তর। স্থায়ী মূলধন সম্পদ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে অথবা তার অবচয় হলে সেই মূলধন সম্পদের ক্ষয় ও অবচয় দূর করবার জন্য যে বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, তাকে বলা হয় প্রতিস্থাপন বিনিয়োগ (Replacement investment)।
প্রশ্ন ১৪৫। স্বয়ংসম্ভূত ও উদ্ভূত বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য কী ?
উত্তর। যখন বিনিয়োগ শুধুমাত্র বিনিয়োগকারীর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে এবং অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়, তখন সেই বিনিয়োগকে স্বয়ংসম্ভূত বিনিয়োগ (Autonomous investment) বলা যায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির নতুন উদ্ভাবন ও কলাকৌশলের পরিবর্তন প্রভৃতির প্রভাবে যে বিনিয়োগ হয় তাকে বলা হয় স্বয়ংভূত বিনিয়োগ। যখন বিনিয়োগকারী আয়ের স্তরের পরিবর্তন বা সুদের হারের পরিবর্তন বা লাভের প্রত্যাশার পরিবর্তন প্রভৃতির দ্বারা প্রণোদিত হয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ায় তখন তাকে বলা হয় উদ্ভূত বিনিয়োগ (induced investment)।
প্রশ্ন ১৪৬। ভোগ্য ব্যয় কোন্ কোন্ বস্তুগত বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
উত্তর। ভোগ্য ব্যয় নিম্নোক্ত বস্তুগত বিষয়ের উপর নির্ভরশীল—(১) সুদের হার, (২) বিক্রয় প্রচেষ্টা, (৩) ভোগ্য ঋণের শর্ত, (৪) সম্পদের পরিমাণ, (৫) কর ব্যবস্থার পরিবর্তন, (৬) স্থগিত রাখা চাহিদার পুনঃপ্রকাশ।
প্রশ্ন ১৪৭। সুষম বাজেট কাকে বলে?
উত্তর। যখন বাজেটে সম্ভাব্য আয় ও সম্ভাব্য ব্যয়ের মধ্যে সমতা বজায় থাকে তখন তাকে বলা হয় সুষম বাজেট (Balanced Budget)।
প্রশ্ন ১৪৮। দেখাও যে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা এবং প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার যোগফল এককের সমান।
উত্তর। ভারসাম্যের পর্যায়ে জাতীয় আয় হল, Y = C + I , এখানে Y হল জাতীয় আয়, C হল ভোগ এবং । হল বিনিয়োগ। যেহেতু I এবং S (সঞ্চয়) সমান, সেজন্য আমরা লিখতে পারি।
Y = C + I = C + S
অর্থাৎ, Y = C + S
এখন আমরা প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা (ΔCΔY) এবং প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার (ΔSΔY) সম্পর্ক বের করতে পারি।
যেহেতু C + S = Y
সুতরাং ΔC + ΔS = ΔY
উভয়পক্ষকে ΔY দিয়ে ভাগ করলে আমরা পাই,
ΔCΔY +ΔSΔY = ΔYΔY = ১ (একক)
এখানে (ΔCΔY) বা প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা এবং (ΔSΔY) বা প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার যোগফল এককের সমান।
প্রশ্ন ১৪৯। আয়ের বৃত্তস্রোত থেকে নিষ্কাশন ঘটায় এমন উপাদান বা বিষয়গুলির নাম লেখ।
উত্তর। বিনিয়োগে ব্যবহার না–করা সঞ্চয় (hoarding), সরকারকে কর প্রদানের জন্য আয়ের নিষ্কাশন, আমদানির জন্য আয় দেশের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া—এই উপাদানগুলি আয়ের বৃত্তস্রোত থেকে নিষ্কাশন ঘটায়।
প্রশ্ন ১৫০। যদি নিষ্কাশন অনুপ্রবেশের চেয়ে বেশি হয় তাহলে আয় স্তরে কী পরিবর্তন ঘটবে?
উত্তর। যদি নিষ্কাশন অনুপ্রবেশের চেয়ে বেশি হয়, তা হলে আয়ের সংকোচন হবে বা সামগ্রিকভাবে আয় কমবে।
প্রশ্ন ১৫১। স্বয়ংভূত বিনিয়োগ বলতে কী বোঝ?
উত্তর। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন উদ্ভাবন (innovation), কলাকৌশলের পরিবর্তন (change in technology) প্রভৃতির প্রভাবে যে বিনিয়োগ হয় তাকে বলা হয় স্বয়ংভূত বিনিয়োগ।
প্রশ্ন ১৫২। স্বয়ংভূত বিনিয়োগ ব্যয়কে চিত্রায়িত কর।
উত্তর। স্বয়ংভূত বিনিয়োগ ব্যয় রেখা হল অনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল একটি সরলরেখা। এটা নীচে চিত্রায়িত হল।
২ নং চিত্রে II’ রেখা হল স্বয়ংভূত বিনিয়োগ ব্যয় রেখা।
প্রশ্ন ১৫৩। গড় ভোগ প্রবণতা বলতে কী বোঝ?
উত্তর। গড় ভোগ প্রবণতা হল মোট ভোগ ও মোট আয়ের অনুপাত। অর্থাৎ, CY এক্ষেত্রে C হল ভোগ এবং Y হল আয় ।
প্রশ্ন ১৫৪। ভোগব্যয় কোন্ কোন্ উপাদানের উপর নির্ভর করে ?
উত্তর। ভোগব্যয় কী কী উপাদানের উপর নির্ভরশীল সেটা দু‘ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। একটি হল মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সামাজিক রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলির উপর ভোগব্যয় নির্ভর করতে পারে (Subjective factors)। এই উপাদানগুলির মধ্যে কেইনস আটটি অভিপ্রায়ের (motives) উল্লেখ করেছেন। আবার কয়েকটি সরকারি নীতি যেমন— ব্যাংকের সুদের হার, ব্যবসায়ের ক্ষয়–ক্ষতির হিসাব করার পদ্ধতি, লাভের পরিবর্তন প্রভৃতি বস্তুগত উপাদানের উপরও (Objective factors) ভোগব্যয় নির্ভর করে।
প্রশ্ন ১৫৫। মুক্ত অর্থ ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
উত্তর।যখন অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে রপ্তানিজনিত আয় এবং আমদানিজনিত ব্যয় জাতীয় আয় নির্ধারণে বিবেচিত হয় এবং যখন বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর কোন সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তখন সেই অর্থনীতি হল মুক্ত (open) অর্থনীতি।
প্রশ্ন ১৫৬। বাণিজ্যচক্রজনিত বেকারত্বের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। বাণিজ্যে মন্দা (Depression) অবস্থার সৃষ্টি হলে ক্রেতাদের কার্যকরী চাহিদার (effective demand) হ্রাস হেতু শিল্পোৎপাদন কমতে থাকে। শিল্পোৎপাদন হ্রাস পেলে শিল্পক্ষেত্রে শ্রমের চাহিদা কমে যায় এবং বহু শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ে। এভাবে যে বেকারত্বের সৃষ্টি হয় তাকে বাণিজ্যচক্রজনিত বেকারত্ব বলা হয়।
প্রশ্ন ১৫৭। বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রাথমিক আমানত বলতে কী বোঝ?
উত্তর। কোন টাকা অথবা চেক যদি ব্যাংকে জমা পড়ে তবে ব্যাংকের সেই পরিমাণ টাকার প্রাথমিক আমানত (Primary deposit) সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ১৫৮। মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞা দাও।
উত্তর।মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার ফলে যদি জনসাধারণের ক্রয়শক্তি ও চাহিদা বাড়ে, অথচ সেই অনুপাতে যদি প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জোগান না বেড়ে শুধু সেগুলির দাম বেড়ে যায় তবে তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা যেতে পারে। আবার উৎপাদন খরচ বেশি হয়ে গেলে কোনো পণ্যের জোগান কমে যেতে পারে এবং দাম বেড়ে যেতে পারে—সেটাও মুদ্রাস্ফীতির একটি রূপ।
প্রশ্ন ১৫৯। নির্বাচনমূলক ঋণ নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর। নির্বাচনমূলক ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতি হল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন নির্বাচিত ক্ষেত্রে ঋণের উপর (যেমন, ফাটকা কারবারের জন্য ঋণ) বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে। অথবা কতিপয় বিশেষ দ্রব্য বন্ধক রেখে ঋণ প্রদান না করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে নির্দেশ প্রদান করতে পারে।
প্রশ্ন ১৬০। কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলতে কী বোঝ?
উত্তর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলতে বোঝায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক, যে ব্যাংক (১) নোটি ছাপার একক কর্তৃত্ব ভোগ করে, (২) সরকারের ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির ব্যাংকার হিসাবে কাজ করে। (৩) ব্যাংকিং ব্যবস্থায় শেষ পর্যায়ের ঋণদাতা হিসাবে কাজ করে, (৪) দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের হারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং (৫) দেশের ভিতর ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতি কার্যকর করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আর্থিক নীতি পরিচালনা করে।
প্রশ্ন ১৬১। পূর্ণ নিয়োগ কাকে বলে?
উত্তর। পূর্ণ নিয়োগ বলতে বোঝায় এমন অবস্থা যেখানে দ্রব্য ও উপাদানের ক্ষেত্রে দেশের সামগ্রিক চাহিদা সামাজিক জোগানের সমান হয় এবং যে কোন সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার (over production) করা হয়। এই অবস্থায় সাময়িক অতি–উৎপাদন বা বেকারত্ব থাকলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে কোনও সাধারণ বেকারত্ব (general unemployment) থাকে না।
প্রশ্ন ১৬২। বদ্ধ অর্থব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
উত্তর। বদ্ধ অর্থব্যবস্থা হল এমন একটি অর্থব্যবস্থা যেখানে বৈদেশিক বাণিজ্য অথবা আমদানি–রপ্তানির সঙ্গে জাতীয় আয়ের পরিবর্তন বিবেচিত হয়।
প্রশ্ন ১৬৩। মনে কর প্রান্তিক ভোগপ্রবণতার মান ০.৬, গুণকের মান কত হবে?
উত্তর। প্রান্তিক ভোগপ্রবণতার মান ০.৬ হলে প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার মান হবে, ০.৪ অথবা, ২৫ ; এক্ষেত্রে গুণকের মান হবে ১২৫ = ৫২ = ২১২
প্রশ্ন ১৬৪। ‘M1’ ও ‘M2‘ বলতে কী বোঝ?
উত্তর। M1 বলতে বোঝায় জনসাধারণের হাতে কতটা অর্থ আছে এবং ব্যাংকে জনসাধারণের মোট কতটা দাবি আমানত (demand deposits) আছে তার সমষ্টি। M2 বলতে বোঝায় M1 + পোস্ট অফিস সেভিংস ব্যাংকে জনসাধারণের জমানো টাকা।
প্রশ্ন ১৬৫। ফিশারের অর্থের পরিমাণ তত্ত্বের সমীকরণটি চিহ্নিত কর।
(i) Md = KPY, (ii) P =MPY (iii) MV = PT, (iv) MV = KR.
উত্তর। ফিশারের অর্থের পরিমাণ তত্ত্বের সমীকরণ হল MV = PT.
প্রশ্ন ১৬৬। স্বেচ্ছাকৃত বেকারি কাকে বলে?
উত্তর। যখন কোনও ব্যক্তির কাজ করার আকাঙ্ক্ষা অথবা প্রয়োজন থাকে না এবং সে কর্মপ্রার্থীও হয় না, তখন সেই বেকারত্বকে স্বেচ্ছাকৃত বেকারি বলা হয়।
প্রশ্ন ১৬৭। বিনিয়োগ গুণক কী?
উত্তর। নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ বাড়লে (∆I) সেই অনুপাতে জাতীয় আয় যতটা বাড়ে তার অনুপাতকে বলা হয় বিনিয়োগ গুণক। বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে গুণক দিয়ে গুণ করলে জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি পরিমাপ করা যায়। গুণককে এভাবে বোঝানো যায়—
K =11−mpc =1s , এখানে K হল গুণক, mpc হল ভোগের প্রান্তিক প্রবণতা, s হল সঞ্চয়ের প্রান্তিক প্রবণতা। বিনিয়োগ বাড়লে বর্ধিত বিনিয়োগকে তার গুণক দিয়ে গুণ করলে জাতীয় আয় বেড়ে যায়। অর্থাৎ ∆Y=IS∆I এখানে Y হল জাতীয় আয় এবং I হল বিনিয়োগ ।
প্রশ্ন ১৬৮। মুদ্রাস্ফীতিজনিত ব্যবধান বা ফাঁক বলতে কী বোঝ?
উত্তর। মুদ্রাস্ফীতিজনিত ব্যবধান বলতে বোঝায় মূল মূল্যস্তরের ভিত্তিতে (পূর্ববর্তী কোনও বছরের মূল্যস্তরের ভিত্তিতে পরবর্তী বছরে বাজারের একই পরিমাণ দ্রব্য ক্রয় করতে ক্রেতাদের বাড়তি প্রত্যাশিত ব্যয় (… ‘an excess of anticipated expenditure over available output at base prices)। সামগ্রিকভাবে অর্থের চাহিদা (aggregate money demand) . যদি সামগ্রিক আর্থিক ব্যয় (aggregate money cost) অপেক্ষা বেশি হয় এবং এজন্য পণ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে বাড়তি অর্থব্যয়কেও মুদ্রাস্ফীতির ব্যবধান বলা চলে।
প্রশ্ন ১৬৯। সমানুপাতিক কর বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। আয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও যদি করের হার না বাড়ে, অথবা না কমে, অর্থাৎ আয়ের সমানুপাতে যদি কর ধার্য করা হয়, তবে তাকে বলা হয় সমানুপাতিক কর।
প্রশ্ন ১৭০। সরকারি ঋণ কাকে বলে ?
উত্তর। সরকার ঘাটতি বাজেটে বাড়তি ব্যয় নির্বাহের জন্য দেশের ভিতর জনসাধারণের কাছ থেকে অথবা ব্যাংকের কাছ থেকে সিকিউরিটির বিপক্ষে ঋণ গ্রহণ করতে পারে,—সেটা হল অভ্যন্তরীণ সরকারি ঋণ: আবার সরকার লেনদেন ব্যালান্সের ঘাটতি মেটাবার জন্য অথবা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অর্থসংস্থানের জন্য বিদেশ থেকেও ঋণ গ্রহণ করতে পারে,—সেটা হল বৈদেশিক ঋণ।
প্রশ্ন ১৭১। মুক্ত বাণিজ্য কাকে বলে?
উত্তর। বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি ও বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে যদি কোনো প্রকার বাধানিষেধ না থাকে, তবে তাকে মুক্ত বাণিজ্য বা অবাধ বাণিজ্য (Free Trade) বলে।
প্রশ্ন ১৭২। জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। একটি নির্দিষ্ট বছরে একটি মূল্যস্তরের ভিত্তিতে দেশের ভিতর মোট চূড়ান্ত ধারার (final goods) মূল্য হল স্থূল জাতীয় উৎপাদন (Gross National Product)। মোট জাতীয় উৎপাদন থেকে বিভিন্ন দ্রব্যের অবচয় পূরণকারী অর্থ বাদ দিলে পাওয়া যায় নিট জাতীয় উৎপাদন এবং নিট জাতীয় উৎপাদন থেকে পরোক্ষ ব্যবসায়িক কর বাবদ প্রাপ্ত রাজস্ব বাদ দিলে পাওয়া যায় জাতীয় আয়। অর্থাৎ, জাতীয় আয় (National Income) = নিট জাতীয় উৎপাদন(NNP) – পরোক্ষ কর (Indirect Business Taxation) |
প্রশ্ন ১৭৩। নিট জাতীয় আয় বলতে কী বোঝ?
উত্তর। নিট জাতীয় উৎপাদন থেকে সরকারের পরোক্ষ কর বাবদ প্রাপ্ত রাজস্ব বাদ দিলে পাওয়া যায় নিট জাতীয় আয়। নিট জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা এভাবে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। নিট জাতীয় আয় = মজুরি + খাজনা + সুদ + মুনাফা – অবচয় + বিদেশ থেকে প্রাপ্ত নিট আয়।
প্রশ্ন ১৭৪। উদ্ভূত বিনিয়োগ বলতে কী বোঝ?
উত্তর। আয় বেড়ে যাওয়া অথবা কর হার এবং সুদের হার কমে যাওয়ার দরুন বিনিয়োগে প্রত্যাশিত লাভ বেড়ে যেতে পারে। বিনিয়োগকারী যদি এজন্য তার বিনিয়োগ বাড়তে উৎসাহিত হয়, তবে সেই বিনিয়োগকে উদ্ভূত বিনিয়োগ বলা হয়।
প্রশ্ন ১৭৫। সঞ্চয় অপেক্ষকের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। ধ্রুপদি তত্ত্বে (Classical Theory) সঞ্চয় অপেক্ষক হল S = f (r) ; কেইনসী তত্ত্বে সঞ্চয় অপেক্ষক হল S = f(Y) । r হল সুদের হার এবং Y হল আয়। তার বাস্তবে সঞ্চয় অপেক্ষক হল, S = f(Y,r)। কেননা সামগ্রিকভাবে সক্ষয় আয় এবং সুদের হার উভয়ের উপরই নির্ভর করে।
প্রশ্ন ১৭৬। কার্যকরী চাহিদা বলতে কী বোঝ ?
উত্তর। দ্রব্যসামগ্রী এবং পরিষেবার জন্য মোট যে চাহিদা তা যদি ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার দ্বারা সমর্থিত হয় তাহলে সেই চাহিদাই কার্যকরী চাহিদা। কেইনসীয় তত্ত্বে কার্যকরী চাহিদ প্রতিফলিত হয় মোট ব্যয়ের মাধ্যমে। “C + I”, অর্থাৎ ভোগ বায় এবং বিনিয়োগ ব্যয়ের সমষ্টি কার্যকরী চাহিদাকে প্রতিফলিত করে।
প্রশ্ন ১৭৭। ফিসক্যাল নীতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর। ফিসক্যাল নীতি হল সরকারের আয়–ব্যয় সম্পর্কিত নীতি। এর মধ্যে কর ধার্যের নীতি, সরকারি ব্যয়ের নীতি ও সরকারি ঋণ সংক্রান্ত নীতি সবই অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন ১৭৮। নগদ জমার অনুপাত বলতে কী বোঝ ?
উত্তর। প্রত্যেক বাণিজ্যিক ব্যাংককেই তার মোট আমানতের একটি শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নগদ জমা রাখতে হয়—এটাকেই বলা হয় নগদ জমার অনুপাত।
প্রশ্ন ১৭৯। পরোক্ষ করের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। পরোক্ষ কর হল এমন একটি কর যেক্ষেত্রে করদাতা কর প্রদানের বোঝা নিজে না করে আরেকজনের উপর চালান করতে পারে। যেমন, বিক্রয়করের ক্ষেত্রে বিক্রেতা করের বোঝা ক্রেতার উপর চালান করে।
প্রশ্ন ১৮০। প্রত্যক্ষ করের পক্ষে দুটি যুক্তি উল্লেখ কর।
উত্তর। প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে দুটি যুক্তি হল—(১) প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে আয় ও ধনের বৈষম্য কমানো যেতে পারে। (২) প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী করের হার বাড়াতে অথবা কমাতে পারে।
প্রশ্ন ১৮১। সরকারি ঋণের পক্ষে দুটি যুক্তি উল্লেখ কর।
উত্তর। সরকারি ঋণের পক্ষে দুটি যুক্তি হল—
(১) অর্থনৈতিক উন্নয়নের অর্থসংস্থান করার জন্য সরকার ঋণগ্রহণ করতে পারে। (২) যুদ্ধজনিত জরুরি অবস্থা অথবা যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য সরকার ঋণ গ্রহণ করতে পারে।
প্রশ্ন ১৮২। অর্থের মূল্য বলতে কী বোঝ ?
উত্তর। অর্থের মূল্য বলতে বোঝায়, অর্থের নির্দিষ্ট ইউনিটের বিনিময়ে কতটা দ্রব্য ক্রয় করা সম্ভব,—অর্থাৎ অর্থের ক্রয়শক্তি কত। যদি বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বেশি হয় তবে অর্থের ক্রয়শক্তি কম হয় এবং মূল্য কম হয়। আবার যদি বিভিন্ন দ্রব্যের দাম কম হয় তবে অর্থের ক্রয়শক্তি বেশি হয় এবং অর্থের মূল্য বেশি হয়।
প্রশ্ন ১৮৩। সংরক্ষণের সক্ষে দুটি যুক্তি উল্লেখ কর।
উত্তর। সংরক্ষণের পক্ষে দুটি যুক্তি হল–
(১) বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য শিশু শিল্পগুলিকে (infant industries) সংরক্ষণ প্রদান করা উচিত। এবং (২) সংরক্ষণ নীতি চালু হলে আমদানির পরিমাণ কমে এবং এর ফলে দেশের টাকা দেশেই রেখে দেবার নীতি অনুসৃত হয় এবং বাণিজ্য ব্যালান্সে ঘাটতি কম হয়।
প্রশ্ন ১৮৪। অর্থের পরিমাণ তত্ত্বের কেমব্রিজ ভাষ্যটি উল্লেখ কর।
উত্তর। কেমব্রিজ ভাষ্যের সমীকরণটি হল M = KPT। এই সমীকরণে M হল মোট নগদ অর্থের তহবিল ; এর মধ্যে ব্যাংকের চাহিদা আমানত অন্তর্ভুক্ত। K হল কোন দেশের জনসাধারণ তাদের বাৎসরিক আয়ের কতটা অংশ অর্থের আকারে রাখতে চায় ; T হল প্রকৃত জাতীয় আয় এবং P হল T-এর গড় দামের ইউনিট।
প্রশ্ন ১৮৫। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। অতিরিক্ত একক আয়ের ফলে ভোক্তা যে পরিমাণ অতিরিক্ত ভোগ–ব্যয় করে (consumption induced by a given increment in income) তার অনুপাতকে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা (Marginal propensity to consume) বলা হয়।
প্রশ্ন ১৮৬। ‘প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার মান যত বেশি হবে, গুণকের মানও তত বেশি হবে‘—এটা কি ঠিক? বিচার কর।
উত্তর। কথাটি ঠিক নয়। প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার মান যত বেশি হবে গুণকের মান তত কম হবে।
কারণ,
গুণকের সূত্র হল = ১১−ভোগের প্রান্তিক প্রবণতা = ১সঞ্চয়ের প্রান্তিক প্রবণতা
সুতরাং সঞ্চয়ের প্রবণতা যত বাড়বে গুণকের মান তত কমবে।
প্রশ্ন ১৮৭। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সংরক্ষণ নীতি হল : দেশীয় শিল্পগুলিকে রক্ষা করার জন্য, বিশেষ করে বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করার জন্য ও তাদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেবার জন্য যদি বিদেশ থেকে কোনো দ্রব্যের আমদানির উপর শুল্ক ধার্য করা হয় অথবা কোটার (Quota) ভিত্তিতে আমদানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয় তবে তাকে শিল্প সংরক্ষণ (Protection of industries) নীতি বলা হয়।
প্রশ্ন ১৮৮। দ্রব্য বিনিময় প্রথার দুটি অসুবিধার উল্লেখ কর।
উত্তর। দ্রব্য বিনিময় প্রথার দুটি অসুবিধা হল : (i) সঠিকভাবে পণ্য বিনিময় করতে হলে বিনিময়কারী উভয়পক্ষেরই অভাবের মধ্যে মিল থাকা প্রয়োজন,—কিন্তু সেটা সব সময় থাকে না। (ii) পণ্য বিনিময়ের আরেকটি অসুবিধা হল এই যে উভয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার জন্য কোন সাধারণ মাপকাঠি নেই।
প্রশ্ন ১৮৯। প্রদর্শন প্রভাব কাকে বলে ?
উত্তর। প্রদর্শন প্রভাব দেখা যায় যখন কোনো ব্যক্তির ভোগব্যয় শুধুমাত্র তার নিজস্ব আয়ের উপর নির্ভরশীল না হয়ে তার প্রতিবেশীর ভোগ ব্যয়ের অনুকরণ করে, অর্থাৎ, প্রতিবেশী ভোক্তাদের ভোগব্যয়ের প্রদর্শিত পথে সে চলতে চায় ; তখন তাকে বলা হয় প্রদর্শন প্রভাব (Demonstration Effect)। অধ্যাপক ডুসেনবেরি তাঁর আপেক্ষিক আয় উপতত্ত্বে প্রদর্শন প্রভাবের ধারণাটিকে প্রবর্তন করেন।
প্রশ্ন ১৯০। খোলাবাজারি কারবার বলতে কী বোঝ ?
উত্তর। খোলাবাজারি কারবার বলতে বোঝায় যখন দেশে ব্যাংক ক্রেডিটের পরিমাণ কমে যায় তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি সিকিউরিটি ক্রয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যাতে ক্রেডিট সরবরাহ বাড়ে, এবং যখন দেশে ব্যাংক ক্রেডিটের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন ক্রেডিট সরবরাহ কমাবার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলা বাজারে সিকিউরিটি বিক্রি করে এবং উদ্বৃত্ত টাকা নিজের হাতে নিয়ে আসে।
প্রশ্ন ১৯১। মন্দাস্ফীতি কাকে বলে ?
উত্তর। ব্যবসায় ও উৎপাদনে মন্দা একই সঙ্গে চলতে থাকলে মন্দাস্ফীতির সৃষ্টি হয়। মন্দাস্ফীতিতে চাহিদা কম থাকে এবং সেজন্য উৎপাদনও কম হয় ; তার ফলে কর্মসংস্থানের পরিমাণ কম থাকে। কেননা দ্রব্যের উৎপাদনের অনুপাতে চাহিদা হ্রাস যদি বেশি হয় তবে তার দামও কমে যায় ।
প্রশ্ন ১৯২। অদমিত এবং দমিত মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পার্থক্য কর।
উত্তর। যখন আর্থিক আয়ের বৃদ্ধি হওয়ার দরুন এবং তার ফলে জনসাধারণের চাহিদা বেড়ে যাবার দরুন পণ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যায় তখন তাকে অদমিত বা খোলা মুদ্রাস্ফীতি (Open Inflation) বলে। আবার মুদ্রাস্ফীতি দমন করার জন্য বিভিন্ন নীতি প্রয়োগ করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য ক্রেতার চাহিদা পুঞ্জিভূত (pent-up) হতে থাকে এবং সুযোগ পেলেই তার বিস্ফোরণ হয়। এই অবস্থাকে দমিত মুদ্রাস্ফীতি
(Suppressed Inflation) বলা হয়।
প্রশ্ন ১৯৩। প্রত্যক্ষ কর এবং পরোক্ষ করের মধ্যে দুটি পার্থক্য কর।
উত্তর। প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ করের মধ্যে দুটি পার্থক্য হল :
(i) প্রত্যক্ষ কর হল সেই কর যেখানে করদাতাকেই সরাসরি কর প্রদান করতে হয়। পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে করদাতা কর প্রদানের বোঝা আরেকজনের উপর (ক্রেতার উপর) চালান করতে পারে।
(ii) প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে কর ধার্য করার সময় কর প্রদানের সামর্থ্য নীতি (Ability to Pay Principle) অনুসরণ করা সম্ভব ; কিন্তু পরোক্ষ কর ধার্যের ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করা হয় না।
প্রশ্ন ১৯৪। প্রগতিশীল কর কী?
উত্তর। যখন লোকের আয় বেড়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে করের হার বেড়ে যায়, তখন তাকে প্রগতিশীল কর (Programme Tax) বলা হয়। এই কর ধার্য করা হলে বড় লোকদের বেশি কর দিতে হয়।
প্রশ্ন ১৯৫। ঋণ ফাঁদ কী?
উত্তর। একটি ঋণ পরিশোধ করার জন্য অথবা ঋণের উপর সুদ প্রদান করার জন্য যখন সরকারকে নতুন একটি ঋণ গ্রহণ করতে হয় তখন তাকে ঋণ ফাঁদ (debt trap) বলা হয়।
প্রশ্ন ১৯৬। প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা বলতে কী বোঝ?
উত্তর। প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা হল অতিরিক্ত আয় হেতু অতিরিক্ত সঞ্চয়ের অনুপাত। অর্থাৎ প্রান্তিক সঞ্চয় অনুপাত (Marginal propensity to save) হল,ΔSΔY
প্রশ্ন ১৯৭। করপাত (Impact) ও করঘাত বা করভারের (Incidence) মধ্যে পার্থক্য
উত্তর। কর ধার্য করা হলে করের ভিত্তিতে সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে অর্থ প্রদান করার বোঝাকে বলা হয় করপাত (impact) বা তাৎক্ষণিক প্রভাব। প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে এই করপাত করদাতাকে বহন করতে হয়। করদাতা করপ্রদানের যে বোঝা নিজে বহন করে (প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে) অথবা করদাতা যদি করের বোঝা নিজে বহন না করে অন্যের উপর চালান করে দেয় (যেমন, পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে বিক্রেতা করের বোঝা ক্রেতার উপর চালান করে দেয়) তখন তাকে বলা হল করভার বা করঘাত (incidence)।
প্রশ্ন ১৯৮। অর্থের সক্রিয় চাহিদা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর। ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের জন্য বর্তমানে অর্থের জন্য চাহিদা এবং লেনদেন করার জন্য অর্থের জন্য চাহিদার সমষ্টিকে সক্রিয় চাহিদা বলা হয়। অর্থের জন্য সক্রিয় চাহিদা আয়ের উপর নির্ভরশীল। নীচের সমীকরণে Lf(y) এটা সূচিত করে। কেইনসের মতে LP = Lf(y) + L(r) |
প্রশ্ন ১৯৯। গড় সঞ্চয় প্রবণতা বলতে কী বোঝ?
উত্তর। গড় সঞ্চয় প্রবণতা হল মোট সঞ্চয় এবং মোট আয়ের অনুপাত (ratio of total saving to total income)। অর্থাৎ,
গড় সঞ্চয় প্রবণতা = মোট সঞ্চয়মোট আয় = sy
‘s’ হল মোট সঞ্চয় এবং ‘y’ হল মোট আয়।
প্রশ্ন ২০০। মূলধনের অবচয়পূর্তি ব্যয় বলতে কী বোঝ? অথবা, অবচয় বলতে কী বোঝ?
উত্তর। ক্রমাগত ব্যবহারের দরুন যন্ত্রপাতি এবং কারখানার বাড়িঘরের মূল্যহ্রাস হতে পারে। যন্ত্রপাতির মূল্যহ্রাসকে উৎপাদন ব্যয়ের একটি অংশ বলে ধরে নেওয়া হয় এবং এটাকে বলা হয় মূলধনের অবচয় (depreciation)। বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়ার জন্য মূলধনের অবচয় পূর্তির জন্য কর ছাড় দেওয়া হলে অথবা বিনিয়োগ অনুদান (investment grant) দেওয়া হলে তাকে বলা হয় ‘মূলধনের অবচয় পূর্তি‘।
প্রশ্ন ২০১। দ্রব্য ভোগের ক্ষেত্রে বাদ দেওয়ার নীতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর। বাজার অর্থনীতিতে বাদ দেওয়া নীতির ভিত্তি হল, যদি কোনও ব্যক্তি দ্রব্যের ভোগের জন্য দাম দিতে প্রস্তুত না থাকে, তবে তাকে সেই দ্রব্য ভোগ করা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
প্রশ্ন ২০২। বিনিয়োগের প্রান্তিক প্রবণতা কাকে বলে?
উত্তর। বিনিয়োগ নির্ভর করে একদিকে মূলধনের প্রত্যাশিত প্রান্তিক প্রতিদান (Marginal efficiency of capital) এবং অপরদিকে সুদের হারের উপর। সুদের হার কম হলে বিনিয়োগ – ব্যয় কমে যায় এবং মূলধনের প্রত্যাশিত প্রতিদান বাড়লে বিনিয়োগ বাড়ে। সুতরাং বিনিয়োগের প্রান্তিক প্রবণতা নির্ভর করে, মূলধনের প্রত্যাশিত প্রতিদান কতটা বাড়লে এবং সুদের হার কতটা কমলে বিনিয়োগের পরিমাণ কতটা বাড়ল সেই অনুপাতের উপর।
প্রশ্ন ২০৩। ডাম্পিং কাকে বলে?
উত্তর। কোনো দ্রব্য যদি স্বদেশের বাজারের প্রচলিত দামের তুলনায় বিদেশের বাজারে কম দামে বিক্রি করা হয় তবে তাকে বলা হয় ডাম্পিং (Dumping)।
প্রশ্ন ২০৪। অ–ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনগুলিকে বলা হয় ?
উত্তর। পুরোপুরি বাণিজ্য ব্যাংক নয়, অথচ জনসাধারণের কাছ থেকে আমদানি গ্রহণ করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের মক্কেলদের ঋণ প্রদান করে যে–সব প্রতিষ্ঠান সেগুলিকে অ–ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে–সব পালনীয় নির্দেশ প্রদান করে অথবা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি যে–সব নীতি অনুসরণ করে সেগুলি অ–ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বদা প্রযুক্ত হয় না।
প্রশ্ন ২০৫। বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত কাকে বলে ?
উত্তর। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে বিধিবদ্ধভাবে আমানতের একটি নির্দিষ্ট অনুপাত রূপান্তরযোগ্য সরকারি সিকিউরিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা রাখতে হয়। এটাকে বিধিবদ্ধ তারল্যের অনুপাত বলা হয়।
প্রশ্ন ২০৬। ব্যক্তিগত ভোগ ও সামাজিক ভোগের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর। ব্যক্তিগত ভোগ (Private Consumption) বলতে বোঝায় ব্যক্তির নিজস্ব আয় থেকে ভোগের প্রবণতা (Propensity to Consume)। কেইনসীয় তত্ত্বে সাধারণত বলা যায়, প্রথমত অল্প পরিমাণে আয় বেড়ে গেলে সেই অনুপাতে ব্যক্তির ভোগ প্রবণতা বেশি থাকে। তারপর যত আয় বাড়তে থাকে তত আয় বৃদ্ধির অনুপাতে ভোগের প্রবণতা কমতে থাকে। একটি স্তরে দেখা যায় যত আয় হচ্ছে ঠিক সেই পরিমাণেই ব্যক্তির ভোগ হচ্ছে। যদি আয় আরও বাড়তে থাকে তবে ভোগের প্রবণতা আর না বেড়ে সঞ্চয়ের পরিমাণ এখন বাড়তে থাকে, সরকারের ক্ষেত্রে মোট ব্যয়ে বিনিয়োগের যে অংশ থাকে সেটা বাদ দিলে অবশিষ্ট ব্যয় হল সরকারি ভোগ (Public Consumption) বা সামাজিক ভোগ। সামাজিক ক্ষেত্রে সরকার বিনিয়োগ বহির্ভূত যে ব্যয় করে যেমন, গরিবদের অর্থ সাহায্য করা এবং দেশের অধিবাসীদের জন্য বিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থা করা, অথবা সরকারি কর্মচারীদের মাইনে দেওয়া এগুলি হল সামাজিক ভোগ।
প্রশ্ন ২০৭। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম লেখ।
উত্তর। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম হল রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া
প্রশ্ন ২০8। MPC = 0.5 হলে বিনিয়োগ গুণকের মান কত হবে?
উত্তর। MPC = 0.5 হলে বিনিয়োগ গুণকের মান হবে 2।
প্রশ্ন ২০৯। প্রগতিশীল ও অধোগতিশীল করব্যবস্থার পার্থক্য কী ?
উত্তর। যখন আয় বেশি হলে করের হার বেশি হয় এবং আয় কম হলে করের হার কম হয় তখন সেই করকে প্রগতিশীল কর বলা হয়।
যখন আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করের হার আপেক্ষিকভাবে কমে যায়, তখন তাকে বলা হয় প্রতিক্রিয়াশীল বা অধোগতিশীল কর।
প্রশ্ন ২১০। পরোক্ষ কর কি জাতীয় আয়ের অংশ হয় ?
উত্তর। পরোক্ষ কর জাতীয় আয়ের অংশ নয়। জাতীয় আয় নির্ধারণের সময় নিট জাতীয় উৎপাদন থেকে পরোক্ষ কর বাদ দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ২১১। যদি আয় ৩০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০০ টাকা হয় এবং ভোগব্যয় ২৭০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩২০ টাকা হয়, তবে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মান নির্ধারণ কর।
উত্তর। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা হল ΔCΔY । অর্থাৎ, আয়ের বৃদ্ধি হেতু ভোগের পরিমাণ যতটা বাড়ে তার অনুপাত। এক্ষেত্রে ∆C হল ৫০ টাকা (৩২০–২৭০) এবং ∆Y হল ১০০ টাকা (৪০০–৩০০)। সুতরাং ΔCΔY = ১২ = ০.৫ । প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মান হল এক্ষেত্রে ০.৫ ; এটা ১–এর চেয়ে কম ।
প্রশ্ন ২১২। তিনটি বিভিন্ন ধরনের চেকের নামোল্লেখ কর।
উত্তর। (১) বাহক–দেয় চেক (Bearer Cheque), (২) রেখাঙ্কিত চেক (Crossed Cheque) এবং (৩) আদিষ্ট চেক (Order Cheque)।
প্রশ্ন ২১৩। একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংজ্ঞা নির্দেশ কর।
উত্তর। যে সব ব্যাংক জনসাধারণের কাছে থেকে আমানত গ্রহণ করে এবং জনসাধারণ ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান এবং বাণিজ্যভিত্তিক বিভিন্ন ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করে সেগুলি হল বাণিজ্যিক ব্যাংক।
প্রশ্ন ২১৪। উদ্ভূত আমানত কী?
উত্তর। ব্যাংক কোনও ঋণ প্রাপককে ঋণ দেওয়ার সময় ঋণের টাকা সেই ব্যাংকেই ঋণগ্রহীতার অ্যাকাউন্টে জমা দেয় অথবা সেই ব্যাকে ঋণ প্রাপকের অ্যাকাউন্ট না থাকলে তার নামে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে ঋণের টাকা জমা দেয়। এভাবে ঋণের টাকা থেকে যে আমানতের সৃষ্টি হয় তাকে উদ্ভূত আমানত (Derivative Deposit) বলা হয়।
প্রশ্ন ২১৫। বাণিজ্য শর্ত কাকে বলে?
উত্তর। বাণিজ্য শর্ত বা Terms of Trade হল, আমদানির মোট মূল্যরপ্তানির মোট মূল্য
=প্রতি ইউনিট আমদানির যে মূল্য (Pm) x আমদানির পরিমাণ (M)প্রতি ইউনিট রপ্তানির মূল্য (Px)×রপ্তানির পরিমাণ (X)