
Bisa-sataker-bharate nari-chatra-o-prantika-janagosthira-andolan
বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন
Bisa-sataker-bharate nari-chatra-o-prantika-janagosthira-andolan
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর হরিচাঁদ ঠাকুর।
ঊষা মেহেতা কোন আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন ?
উত্তর ভারতছাড়ো।
‘গান্ধিবুড়ি‘ নামে কে পরিচিত ছিলেন?
উত্তর মাতঙ্গিনি হাজরা ।
ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠনের নাম কী ?
উত্তর দীপালি ছাত্রী সংঘ ৷
কবে ‘অরন্ধন‘ দিবস পালিত হয় ?
উত্তর 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর।
‘অলিন্দ যুদ্ধ‘ কবে হয়েছিল?
উত্তর 1930 খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর।
মহাত্মা গান্ধি দলিতদের কী নামে অভিহিত করেন?
উত্তর হরিজন।
‘ভারতের নাইটিঙ্গেল‘ কাকে বলা হয় ?
উত্তর সরোজিনী নাইডুকে।
বাঘা যতীনের প্রকৃত নাম কী ?
উত্তর যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।
“বীরাষ্টমী ব্রত’ কে প্রবর্তন করেন ?
উত্তর সরলাদেবী চৌধুরাণী।
ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময় ভগিনী সেনা‘ কোথায় গঠিত হয়েছিল ?
উত্তর মেদিনীপুরের তমলুকে।
‘অগ্নিকন্যা‘ নামে কে পরিচিত?
উত্তর কল্পনা দত্ত।
ভারতে বিপ্লববাদের জনক‘ কাকে বলা হয় ?
উত্তর বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে–কে।
কবে রাওলাট আইন পাশ হয় ?
উত্তর 1919 খ্রিস্টাব্দের 18 মার্চ।
কে ‘প্রতাপাদিত্য‘ উৎসব চালু করেন ?
উত্তর সরলাদেবী চৌধুরাণী।
কে অরন্ধন দিবস‘ পালন করার আবেদন জানান ?
উত্তর রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী।
‘পরো না রেশমী চুড়ি‘ গানটি কে রচনা করেন?
উত্তর মুকুন্দ দাস।
কে ‘তিলক স্বরাজ তহবিল‘ গড়ে তোলেন?
উত্তর গান্ধিজি।
ভারতের বুলবুল নামে কে পরিচিত?
উত্তর সরোজিনী নাইডু ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয় ?
উত্তর ব্রিটিশ সরকারের বিচারে আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন আব্দুল রশিদ আলিকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে কলকাতায় রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে রশিদ আলি দিবস পালন করা হয় 1946 খ্রিস্টাব্দের 12 ফেব্রুয়ারি।
অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি‘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং স্বদেশি আন্দোলনের প্রচার ও প্রসার ঘটানোর জন্য 1905 খ্রিস্টাব্দে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ‘অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি‘ প্রতিষ্ঠা করেন।
ধরসানার সত্যাগ্রহ কী ?
উত্তর গুজরাটের সুরাট জেলায় ধরসানা ছিল ব্রিটিশ সরকারের একটি লবণগোলা। গান্ধি অনুগামী আব্বাস তায়েবজি এই লবণগোলা লুণ্ঠন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হলে সরোজিনী নাইডুর নেতৃত্বে যে সত্যাগ্রহ শুরু হয় তা ধরসানার সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।
মাতঙ্গিনি হাজরা স্মরণীয় কেন?
উত্তর মাতঙ্গিনি হাজরা ছিলেন ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময় একজন গান্ধিবাদী নেত্রী। 73 বছর বয়সে মাতঙ্গিনি হাজরা তমলুক থানা অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ‘গান্ধিবুড়ি‘ নামেও পরিচিত ছিলেন।
1905 সালের 16 অক্টোবর বাংলার নারীসমাজ কেন অরন্ধন উৎসব পালন করে ?
উত্তর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী 1905 সালের 16 অক্টোবর অরন্ধন দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তিনি বাংলার মহিলাদের রন্ধনকার্য ইত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। অরন্ধন দিবস পালনের মাধ্যমে বঙ্গভঙ্গের বিষয়টি ‘জাতীয় শোক’–এ পরিণত করতে চাওয়া হয়েছিল।
ননীবালা দেবী স্মরণীয় কেন ?
উত্তর ননীবালা দেবী বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকালে বিপ্লবীদের আশ্রয়দান করেন ও গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করেন। এই অপরাধে তাঁকে ব্রিটিশ সরকার আটক করে। অকথ্য নির্যাতন চালিয়েও পুলিশ তাঁর কাছ থেকে বিপ্লবীদের কোনো গোপন তথ্য আদায় করতে পারেনি।
দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তর অসহযোগ–খিলাফত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজনীতি যখন উত্তাল সেই পটভূমিতে বিপ্লববাদকে সম্প্রসারিত করতে 1923 খ্রিস্টাব্দে লীলা নাগের নেতৃত্বে ঢাকায় গড়ে ওঠে দীপালি সংঘ নামে এক নারীসংগঠন। দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল নারীশিক্ষার উন্নয়ন, নারীদের কুপ্রথার কবল থেকে মুক্ত করা, নারীবাদী চেতনা তৈরি করা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা জাগানো ।
গুরুচাঁদ ঠাকুর স্মরণীয় কেন ?
উত্তর গুরুচাঁদ ঠাকুর ছিলেন একজন বাঙালি সমাজসংস্কারক ও শিক্ষাব্রতী। তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, দলিত হিন্দুদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের পথিকৃৎ। তৎকালীন সমাজে ব্রাহ্মণ কর্তৃক চণ্ডাল তথা নীচুজাতের মানুষের প্রতি নিপীড়ন ও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সহ সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে তিনি তাদের ‘নমঃশূদ্র’ নামকরণ করেন।
হরিজন আন্দোলন কী ?
উত্তর গান্ধিজি অনুন্নত সম্প্রদায় তথা দলিতদের নামকরণ করেছিলেন হরিজন। সমাজে এরা অস্পৃশ্যরূপে পরিগণিত হতো। এই জন্য গান্ধিজি অস্পৃশ্যতা দূর করা, তাদের সামাজিক অবস্থার উন্নতি প্রভৃতির জন্য আন্দোলন গড়ে তোলেন যা হরিজন আন্দোলন নামে পরিচিত।
নমঃশূদ্র আন্দোলন কী ? অথবা, নমঃশূদ্র নামে কারা পরিচিত?
উত্তর পূর্ববাংলার খুলনা, যশোর, ফরিদপুর ও বরিশালের প্রান্তিক কৃষিজীবী সম্প্রদায় নমঃশূদ্র নামে পরিচিত। সামাজিক দিক থেকে এরা ছিল হিন্দুসমাজে অস্পৃশ্য ও অন্ত্যজ । এরূপ সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে তারা যে আন্দোলন গড়ে তোলে তা নমঃশূদ্র আন্দোলন নামে পরিচিত।
ভাইকম সত্যাগ্রহ কী ?
উত্তর 1924 খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারতে শ্রীনারায়ণ গুরুর নেতৃত্বে একটি হিন্দু মন্দিরমুখী রাস্তা নিম্নবর্ণের মানুষ যথা—এজহাবা ও পুলায়াদের কাছে নিষিদ্ধ হলে এরই বিরুদ্ধে শুরু হয় ‘ভাইকম সত্যাগ্রহ আন্দোলন‘। উচ্চশিক্ষা, সরকারি চাকরি, সামাজিক মর্যাদা, রাজনৈতিক অধিকার আদায় ইত্যাদি ছিল এর লক্ষ্য।
কে, কোন পত্রিকার মাধ্যমে সর্বপ্রথম বয়কট আন্দোলনের ডাক দেন ?
উত্তর কৃষ্ণকুমার মিত্র ‘সঞ্জীবনী পত্রিকা’য় সর্বপ্রথম বয়কট আন্দোলনের ডাক দেন।
পুনা চুক্তির শর্ত কী ছিল ?
উত্তর (1) হিন্দুদের মধ্যে বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের নীতি পরিত্যাগ করা।
(2)কেন্দ্রীয় আইনসভায় দলিতদের জন্য 18 শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কয়েক জন নারীর নাম লেখো।
উত্তর সরলাদেবী চৌধুরাণী, হেমাঙ্গিনী দাস, কুমুদিনী মিত্র, লীলাবতী মিত্র, নির্মলা সরকার প্রমুখ ।
ডান্ডি অভিযান কী ?
উত্তর ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইন ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধি তাঁর 78 জন অনুগামী শিক্ষার নিয়ে সমুদ্রতীরবর্তী ডান্ডি নামক স্থানের উদ্দেশে যাত্রা করেন। 241 দিনব্যাপী এই যাত্রা ডান্ডি অভিযান নামে পরিচিত।
ভারতছাড়ো আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দু‘জন মহিলার নাম লেখো।
উত্তর সুচেতা কৃপালনী ও অরুণা আসফ আলি ।
সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি কাকে বলে ?
উত্তর অনুন্নত হিন্দু বা দলিতদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে 1932 সালের 16 আগস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামজে ম্যাকডোনাল্ড প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের নীতি ঘোষণা করেন। একে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি বলা হয়।
কারা, কবে ‘জাস্টিস পার্টি‘ প্রতিষ্ঠা করে ?
উত্তর মাদ্রাজের ‘ভেলান‘ নামে দলিত শ্রেণির মানুষেরা 1916 খ্রিস্টাব্দে ‘জাস্টিস’ পার্টি প্রতিষ্ঠা করে ।
‘দলিত‘ কাদের বলা হয় ?
উত্তর সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষ নিম্নবর্ণের যে মানুষদের দমিয়ে রাখে, তাদের দলিত বলা হয়। দলিত কথাটি এসেছে ‘দলন‘ শব্দ থেকে যার অর্থ হলো দমিয়ে রাখা ।
কে, কবে সত্যশোধক সমাজ‘ প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে 1873 খ্রিস্টাব্দে ‘সত্যশোধক সমাজ‘ প্রতিষ্ঠা করেন।
বীণা দাস স্মরণীয় কেন ?
উত্তর বীণা দাস ‘ছাত্রী সংঘ‘-এর সদস্য ছিলেন এবং প্রত্যক্ষভাবে বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 1932 সালে তিনি বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
‘অলিন্দ যুদ্ধ’ বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের তিন সদস্য বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত 1930 সালের ৪ ডিসেম্বর মহাকরণ অভিযান করে সিম্পসন ও ক্রেগকে গুলি করে হত্যা করেন। এই ঘটনাই ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার‘ কেন গঠিত হয় ?
উত্তর স্বদেশি আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। তাই বাংলাদেশে স্বদেশি আন্দোলনের সময় সরলাদেবী চৌধুরাণী ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার‘ প্রতিষ্ঠা করেন।
আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অন্তত দু‘জন নারীর নাম লেখো।
উত্তর বাসন্তী দেবী ও ঊর্মিলা দেবী।
মাস্টারদা সূর্য সেন কেন বিখ্যাত ?
উত্তর বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন সূর্য সেন। তিনি পেশায় স্কুলশিক্ষক ছিলেন বলে ‘মাস্টারদা‘ নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি‘ নামে একটি বাহিনী গঠন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হলো চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মরণীয় কেন ?
উত্তর চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন অভিযানের অন্যতম নেত্রী ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির‘ সহযোদ্ধা হিসেবে তিনি 1930 সালের 18 এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন। পরে তাঁর নেতৃত্বে বিপ্লবীরা পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ
কার্লাইল সার্কুলার কেন জারি করা হয় ? অথবা, কার্লাইল সার্কুলার কী ?
উত্তর 1905 খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লে ছাত্র আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে বাংলা সরকারের মুখ্যসচিব কার্লাইল একটি দমনমূলক সার্কুলার বা ঘোষণা জারি করেন। এটি কার্লাইল সার্কুলার নামে পরিচিত। এই সার্কুলারের দ্বারা ছাত্রদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ, ‘বন্দেমাতরম‘ ধ্বনি প্রভৃতি নিষিদ্ধ হয়।
লীলা নাগ (রায়) কেন বিখ্যাত ?
উত্তর লীলা নাগ (রায়) 1923 খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন একজন নারী বিপ্লবী। 1931 খ্রিস্টাব্দে তিনি জয়শ্রী নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নোত্তর
ভারতছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারীদের ভূমিকা লেখো।
অথবা, ভারতছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারীদের অংশগ্রহণ।
উত্তর
সূচনাঃ 1942 খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে শুরু হওয়া ভারতছাড়ো আন্দোলনে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মতো মহিলাদেরও সক্রিয় ভূমিকা ছিল। কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা কারারুদ্ধ হলে কিছু বিখ্যাত মহিলা নেত্রী নজিরবিহীনভাবে পুলিশি অত্যাচারের মুখে আন্দোলন সুসংবদ্ধভাবে পরিচালনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। ভারতছাড়ো আন্দোলনে মহিলারা দু‘টি ভিন্ন ধারায় আন্দোলন করেছিল।
প্রথম পর্বঃ শহরাঞ্চলে মেয়েরা ধর্মঘট, প্রতিবাদসভা এমনকী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল।
দ্বিতীয় পর্বঃ গ্রামাঞ্চলে করবৃদ্ধি, জমিদারি শোষণ, পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে নারীরা প্রতিবাদে অংশ নেয়।
সুচেতা কৃপালনীর নেতৃত্বঃ গান্ধিজির ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে সুচেতা কৃপালনী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন। ভারতছাড়ো আন্দোলন চলাকালীন কংগ্রেসের মহিলা শাখার নেত্রী হিসেবে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে আন্দোলনের বার্তা এবং নেতানেত্রীদের সঙ্গে সংযোগরক্ষা করেছিলেন। 1944 খ্রিস্টাব্দে তাঁকে গ্রেপ্তার করে লখনউ জেলে একজন ‘dangerous prisoner’ হিসেবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়।
আসামের নেতৃত্বঃ আসামের গহপুর থানায় ভারতছাড়ো আন্দোলনে প্রাণ হারান কিশোরী কনকলতা বড়ুয়া। এছাড়া নগাঁওয়ে অসম সাহসের পরিচয় দেন গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফুকননী।
পাঞ্জাবে নারীদের ভূমিকাঃ পাঞ্জাবে রাজকুমারী অমৃত কাউর, অমর কাউর, পুষণ গুজরাল সম্মিলিতভাবে আন্দোলন পরিচালনা করেন।
মেদিনীপুরে নেতৃত্বঃ তমলুকে জাতীয় সরকার নারী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলে যার নাম হয় ‘ভগিনী সেনা’। এই দলে ছিলেন কাদম্বিনী মাইতি, সুরাইয়াসুন্দরী মাইতি, কুসুমবালা দেবী, রাধারানি পাত্র। মেদিনীপুরের বেশ কিছু জায়গায় মূলত তমলুকে খাজনাবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। জনসাধারণ পুলিশচৌকি আক্রমণে উদ্যত হয়। 1942 খ্রিস্টাব্দের 29 সেপ্টেম্বর তমলুকের কিছু আন্দোলনকারী থানা ঘেরাও করতে অগ্রসর হয়। সশস্ত্র পুলিশবাহিনী তাদের বাধা দেয়। এইসময়ে 73 বছরের বিধবা নারী মাতঙ্গিনি হাজরা এগিয়ে এসে পতাকা তুলে নেন এবং এবং জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন, আন্দোলনকারীদের এগিয়ে যেতে বলেন। পুলিশের বাধা এড়িয়ে এগোতে গেলে গুলিতে প্রাণ হারান মাতঙ্গিনি হাজরা ।
অন্যান্য স্থানেঃ ভারতছাড়ো আন্দোলনে বাঁকুড়ার শান্তিশীলা পালিত, ঢাকার আশালতা সেন, বালুরঘাটের প্রভা চট্টোপাধ্যায়, শ্রীহটের সরলাবালা দেবী, নোয়াখালিতে সুশীলা মিত্র, সিউড়িতে লাবণ্যপ্রভা দত্ত, কুমিল্লায় মায়া ঘোষ প্রমুখ সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
মূল্যায়নঃ আইন অমান্য আন্দোলনকালে দেখা গিয়েছিল পুরুষ সদস্যরা ডান্ডি পৌঁছানো পর্যন্ত মহিলাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। ডান্ডি পৌঁছনোর পর তাদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে সংগ্রাম এবং প্রতিরোধ চালিয়েছে এবং একই ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছিল।
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর
সূচনাঃ অসহযোগ আন্দোলন অপেক্ষা 1930 খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া আইন অমান্য আন্দোলনকালে তুলনামূলকভাবে নারীদের যোগদান ছিল অনেক বেশি ও স্বতঃস্ফূর্ত। গান্ধিজি লবণকে আইন অমান্যের বিষয়ে পরিণত করে নারীদের কাছে এই আন্দোলনকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চেয়েছিলেন।
আইন অমান্য আন্দোলনের কর্মসূচিঃ নারীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সভা–সমাবেশ, মিছিল, পিকেটিং, বিদেশি পণ্য বয়কট প্রভৃতি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে সরকারি আইন অমান্য করে। কলকাতা, দিল্লি, বোম্বাই, মাদ্রাজ, পাঞ্জাব, এলাহাবাদ প্রভৃতি অঞ্চলে নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। দিল্লিতেই প্রায় 1600 নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইন অমান্য আন্দোলনের প্রসারঃ ডান্ডি অভিযানের পরের দিন 1930 খ্রিস্টাব্দের 13 মার্চ কলকাতার নারীরা ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি‘ প্রতিষ্ঠা করে। সরোজিনী নাইডু গঠন করেন ‘রাষ্ট্রীয় স্ত্রী সংঘ’। রাজকুমারী গিদেলোর নেতৃত্বে নাগাল্যান্ডে নারীআন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সরোজিনী নাইডু ধরসানা লবণগোলা এবং কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় ওয়াডালা লবণগোলা দখলে নেতৃত্ব দেন। বহু নারীসংগঠন আন্দোলনে অংশ নেয়, যেমন –বোম্বাইয়ের সেবিকা সংঘ, বাংলার মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ, কলকাতা ছাত্রী সংঘ ইত্যাদি।
আইন অমান্য আন্দোলনের নেতৃত্বঃ কস্তুরবা গান্ধি, কমলা নেহরু, নেলী সেনগুপ্ত, বাসন্তী দেবী, আশালতা সেন, কুমিল্লার লাবণ্যলতা, সিলেটের জোবেদা খাতুন প্রমুখ অংশ নেন।
মূল্যায়নঃ শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়–এর মতে, বোম্বাইয়ের আন্দোলন ছিল সংঘটিত, বাংলার আন্দোলন ছিল উগ্র এবং মাদ্রাজের আন্দোলন ছিল সীমিত। বেডসফোর্ড বলেছেন, “আইন অমান্য আন্দোলনে মহিলাদের কোনো অবদান না থাকলে ও নারীমুক্তির ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
দলিত আন্দোলন পর্বে গান্ধিজি ও আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখো।
অথবা, দলিত আন্দোলনের বিকাশ ও বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করো।
উত্তর
সূচনাঃ বৈদিক যুগ থেকেই ভারতবর্ষের সামাজিক কাঠামো গড়ে উঠেছে (MP 2017) শ্রেণিবিভক্ত সমাজ ও বর্ণব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। যুগের পরিবর্তন হলেও সামাজিক কাঠামোয় উঁচু–নীচু বর্ণের ভেদাভেদ বর্তমান। উচ্চবর্ণের ধনী মানুষেরা যাদের দমিয়ে বা পদদলিত করে রাখে তারাই সমাজে দলিত নামে পরিচিত। পরাধীন ভারতে এই দলিত শ্রেণির মানুষদের অধিকারের বিষয়ে ড. বি. আর. আম্বেদকর এবং মহাত্মা গান্ধির মধ্যে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল, ইতিহাসে তা দলিত বিষয়ে গান্ধিজি ও আম্বেদকর বিতর্ক নামে পরিচিত।
সমাজে বর্ণব্যবস্থার বিষয়ে বিতর্কঃ ড. আম্বেদকর সমাজের বর্ণব্যবস্থার বিরোধী হলেও গান্ধিজি শ্রেণিবিভক্ত সমাজে বর্ণব্যবস্থার সমর্থক ছিলেন। কারণ গান্ধিজি মনে করতেন বর্ণব্যবস্থা ভারতীয় জাতির ভিত্তিস্বরূপ। তাই তিনি এই ব্যবস্থার সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার চেয়েছিলেন।
পৃথক নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিতর্কঃ গান্ধিজির মতে, দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলে হিন্দুধর্ম ও দলিত সম্প্রদায় উভয়ের স্বার্থই বিঘ্নিত হবে। তাঁর মতে, দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচনের অর্থ হলো অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের পথে বাধা সৃষ্টি করা। কিন্তু আম্বেদকর দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবি করেছিলেন।
পুনা চুক্তিঃ গান্ধিজি ও বি.আর. আম্বেদকরের মধ্যে 1932 খ্রিস্টাব্দে পুনা চুক্তির মাধ্যমে অবশেষে দলিতদের পৃথক নির্বাচনের বিষয়টি বাতিল করা হয়।
দলিত আন্দোলনের বিকাশঃ ঔপনিবেশিক ভারতে দলিত আন্দোলনের বিকাশে বিশেষ ভারে ভূমিকা পালন করেছিল তৎকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সংগঠন। যেমন—বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা, এ ছাড়া অন্যান্য সভাসংগঠনের মধ্যে ছিল সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির সমিতি, 13 নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এবং নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি প্রভৃতি। এইসকল সভাসমিতি ও সংগঠন দলিত শ্রেণির আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক মানবৃদ্ধির জন্য একাধিক আন্দোলন ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল।
মূল্যায়নঃ দলিতদের নিয়ে গান্ধিজি ও আম্বেদকর–এর বিতর্কের নির্দিষ্ট কোনো সুরাহা না হলেও গান্ধিজি চেয়েছিলেন সমাজের অস্পৃশ্যতা দূর করতে। অন্যদিকে বি.আর. আম্বেদকর চেয়েছিলেন দলিতদের আর্থসামাজিক অবস্থার মান উন্নয়ন করতে।
টীকা লেখো : ভগৎ সিং।
অথবা, ভগৎ সিং স্মরণীয় কেন?
উত্তর
সূচনাঃ পাঞ্জাব তথা ভারতবর্ষের বিপ্লবী আন্দোলনের বিশেষ করে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছিলেন ভগৎ সিং। 1907 খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবে বিপ্লবী ভগৎ
সিং–এর জন্ম হয়। তিনি ছিলেন পাঞ্জাবের বিখ্যাত বিপ্লবী অজিত সিংহের ভ্রাতুষ্পুত্র। লাহোরে জাতীয় কলেজে পড়ার সময় তিনি বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হন।
রাজনৈতিক জীবনঃ ছোটোবেলা থেকেই ভগৎ সিং বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি চন্দ্রশেখর আজাদের সান্নিধ্যে আসেন। 1923 খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং হিন্দুস্থান রিপাবলিকান পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ভগৎ সিং নিজের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন নতুন রাজনৈতিক সংগঠন ‘নওজোয়ান ভারতসভা‘। 1928 খ্রিস্টাব্দে তিনি হিন্দুস্থান রিপাবলিকান পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ভগৎ সিং এই দলের নতুন নামকরণ করেন ‘হিন্দুস্থান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন‘।
বিপ্লবী কার্যকলাপঃ সংগ্রামী ভগৎ সিং পরাধীন ভারতে যেসকল বিপ্লবী কার্যকলাপ করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল 1928 খ্রিস্টাব্দে লালা লাজপত রাই–এর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ও এর প্রতিশোধ নিতে লাহোরের পুলিশ ইন্সপেক্টর স্যান্ডার্সকে গুলি করে হত্যা।
এরপর 1929 খ্রিস্টাব্দের 4 এপ্রিল ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত দু‘জনে মিলে কেন্দ্রীয় আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ করেন। এই ঘটনায় তাঁরা ধরা পড়েন।
লাহোর ষড়যন্ত্র মামলাঃ আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ–এর পর দিল্লির সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ হলে ভারতীয় জনস্বার্থবিরোধী ট্রেড ডিসপিউট বিল ও পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট নিয়ে অধিবেশন চলছিল। এইসময় হামলা করতে গিয়ে ভগৎ সিং ধরা পড়লে তাঁদের বিরুদ্ধে শুরু হয় ঐতিহাসিক লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা। 1931 খ্রিস্টাব্দের 23 মার্চ তাঁদের ফাঁসি হয়
মূল্যায়নঃ ভগৎ সিং–এর ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পর পাঞ্জাবের বিপ্লবী আন্দোলনের এক আলোড়নকারী অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। ফাঁসির মঞ্চে তাঁর আত্মবলিদান ও দেশপ্রেম এদেশের যুবসমাজে জুগিয়েছিল এক অপরিসীম অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহ।
বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে লীলা নাগের অবদান উল্লেখ করো ।
অথবা, বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলনে লীলা নাগ তথা দীপালি সংঘ–এর অবদান কী ছিল?
উত্তর
সূচনাঃ ভারতীয় বিপ্লবী আন্দোলনের পীঠস্থান বাংলা। বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম নারী নেত্রী ছিলেন লীলা নাগ (রায়)। বাংলার বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘দীপালি সংঘ’-এর ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয় ৷
দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠাঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুগামী লীলা নাগ 1923 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ‘দীপালি সংঘ‘। পরবর্তীতে কল্পনা দত্ত, বীণা দাস, শান্তি দাস, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখ এই সংঘের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন।
দীপালি সংঘের লক্ষ্যঃ ‘দীপালি সংঘে‘র মূললক্ষ্য ছিল সমকালীন ভারতীয় নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা জাগ্রত করা।
কর্মসূচি গ্রহণঃ দীপালি সংঘের হাত ধরে বাংলায় তথা ভারতীয় নারীদের মধ্যে সাহস ও শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিয়মিত লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্রচালনা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ ছাড়া শিল্পকর্ম, হস্তশিল্পের মাধ্যমে নারীদের স্বনির্ভর করে তুলতেও ‘দীপালি সংঘ‘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
শিক্ষার প্রসারে ‘দীপালি সংঘঃ ‘দীপালি সংঘ‘ শিক্ষার প্রসারে ঢাকায় 1 2টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। এ ছাড়া দীপালি স্কুল, নারীশিক্ষা মন্দির ও শিক্ষাভবন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান শিক্ষাপ্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।
মন্তব্যঃ ভারতবর্ষে বিপ্লববাদের প্রসারে বাংলায় লীলা নাগ (রায়) এবং দীপালি সংঘের অবদান অবিস্মরণীয়। খুবই অল্পসময়ের মধ্যে দীপালি সংঘের কার্যকলাপ বাংলা থেকে অসম পর্যন্ত বিস্তারলাভ করে।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মরণীয় কেন ?
অথবা, সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার–এর অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর
সূচনাঃ ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র বাংলায় নারীসমাজের কাছে অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তিনি সমকালীন বাংলা তথা ভারতীয় নারীদের মনে বিপ্লবী ভাবধারা জাগিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর দেশপ্রেম, আদর্শবোধ এবং আত্মোৎসর্গ সমকালীন বাংলা তথা ভারতের নারীজাতিকে বিপ্লবী করে তুলেছিল
পরিচয়ঃ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম মহিলা শহিদ প্রীতিলতা 1911 খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা প্রতিভা দেবী।
বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণঃ শিক্ষাজীবনেই প্রীতিলতা প্রথমে ‘দীপালি সংঘ’ এবং পরে কলকাতার ‘ছাত্রী সংঘ–এ’ যোগদান করে লাঠিখেলা, ছোরাখেলা প্রভৃতির প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি সূর্য সেনের বিপ্লবী দলে যোগদান করেন এবং সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে ‘Triggering and Targetting’-এর প্রশিক্ষণ নেন। এইসময় তাঁর ছদ্মনাম হয় ‘ফুলতার’।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনঃ 1930 খ্রিস্টাব্দের 18 এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনায় প্রীতিলতা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি পুলিশ লাইন দখল, টেলিফোন লাইন ধ্বংস, টেলিগ্রাম, টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস ছাড়াও জালালাবাদের যুদ্ধ, ধলঘাটের যুদ্ধ প্রভৃতি সশস্ত্র বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণঃ পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রামের পাহাড়তলি স্টেশনের কাছে ইউরোপিয়ান ক্লাবটি ছিল ব্রিটিশদের একটি প্রমোদ কেন্দ্র। 1932 খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে প্রীতিলতার নেতৃত্বে শান্তি চক্রবর্তী, কালীকিঙ্কর দে প্রমুখ মিলিত হয়ে এই ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন। এই আক্রমণে একজন নিহত ও এগারো জন আহত হয়।
মূল্যায়নঃ ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের অপরাধে পুলিশের কাছে ধরা পড়ার আগেই পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। ভারতের প্রথম মহিলা শহিদ মৃত্যুর আগে তাঁর মাকে লিখেছিলেন, “মাগো! তুমি আমায় ডাকছিলে…..? মা! আমায় তুমি ক্ষমা করো—তোমায় বড়ো ব্যথা দিয়ে গেলাম।”
কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন? অথবা, টীকা লেখো—কল্পনা দত্ত।
অথবা, সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে কল্পনা দত্তের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর
সূচনাঃ বাংলা তথা ভারতবর্ষের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের একজন স্মরণীয় নারী নেত্রী ছিলেন কল্পনা দত্ত। তিনি শিক্ষাজীবন থেকেই মাস্টারদা সূর্য সেনের ‘ছাত্রী সংঘে’ যোগদান করে তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সূচনা করেন। তিনি বাংলার চট্টগ্রামের অন্যতম নারী নেত্রী ছিলেন।
পরিচয়ঃ 1917 খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার চট্টগ্রামের শ্রীপুর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কল্পনা দত্ত। কলকাতার বেথুন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি।
বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগদানঃ শিক্ষাজীবনেই মাস্টারদা সূর্য সেনের ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি‘র চট্টগ্রাম শাখায় কল্পনা দত্ত যোগদান করেন। কানাইলাল বসু ও শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেথুন কলেজে ‘ছাত্রী সংঘে‘ যোগদান করেন তিনি।
বিপ্লবী কর্মসূচিঃ কল্পনা দত্ত কলকাতা থেকে বিস্ফোরক নিয়ে এসে গানকটন তৈরি করেছিলেন। এর দ্বারা তিনি জেলে ডিনামাইট বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিলেন। যদিও তাঁর এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গিয়েছিল।
ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণঃ 1932 খ্রিস্টাব্দে সূর্য সেন চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আক্রমণের কিছুদিন পূর্বেই তিনি ধরা পড়েন এবং জেলবন্দি হন।
পরবর্তী জীবনঃ দীর্ঘ কারাদণ্ডের পর 1939 খ্রিস্টাব্দে কল্পনা দত্ত মুক্তিলাভ করেন। এরপর তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। পরবর্তী জীবনে কল্পনা দত্ত চট্টগ্রামে ফিরে যান এবং মহিলা ও কৃষক সংগঠনকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেন।
মূল্যায়নঃ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একজন নারী বিপ্লবী হিসেবে কল্পনা দত্ত চিরস্মরণীয়। তাঁর নির্ভীক দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও দুঃসাহসিক কার্যকলাপ সমগ্র ভারতবর্ষের নারীসমাজে নতুনভাবে জাগরণ ঘটিয়েছিল।
?
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা উল্লেখ করো।
অথবা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা উল্লেখ করো।
উত্তর
সূচনাঃ বিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকেই ভারতের ছোটো–বড়ো প্রায় সকল বিপ্লবী কর্মসূচিতে নারীদের যোগদান লক্ষ করা যায়। 1920 খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া অহিংস অসহযোগ _আন্দোলনেও ব্যাপক সংখ্যক ভারতীয় নারীর যোগদান একদিকে যেমন আন্দোলনকে শক্তিশালী করেছিল অন্যদিকে তেমনি আন্দোলনকে গতিশীল করে তুলেছিল।
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা
বিক্ষোভ কর্মসূচিঃ 1921 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের যুবরাজ ভারত সফরে এলে বোম্বাইয়ে ও কলকাতা শহরে চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবী ও তাঁর বোন উর্মিলা দেবী প্রকাশ্যে রাজপথে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই আন্দোলনে সুনীতি দেবী চট্টগ্রামে খদ্দর বিক্রয়ের কর্মসূচি এবং হরতাল পালন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন।
নারী কর্মমন্দিরঃ স্বদেশপ্রেম, স্বদেশি চরকা ও খদ্দরকে আন্দোলনকালে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ঊর্মিলা দেবী 1921 খ্রিস্টাব্দে ‘নারী কর্মমন্দির‘ প্রতিষ্ঠা করেন।
গঠনমূলক কর্মসূচিঃ অসহযোগ আন্দোলনকালে নারীশ্রেণির নেতৃত্বে বিভিন্ন গঠনমূলক কর্মসূচি যেমন—চরকায় সুতোকাটা, কাপড়বোনা, স্বদেশি দ্রব্য বিক্রি করা প্রভৃতি কাজে মেয়েদের উৎসাহিত করা হতো। বহু নারী নিজেদের অর্থ, অলংকার ‘তিলক স্বরাজ তহবিলে‘ দান করে স্বদেশি ভাবনার প্রসার ঘটিয়েছিলেন।
মূল্যায়নঃ অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের যোগদানের সংখ্যা নিতান্ত কম হলেও সমকালীন যুগের অনুপাতে তা ছিল যথেষ্ট। তবে মুসলিম নারীদের যোগদান কম ছিল। তা সত্ত্বেও নারীশ্রেণির যোগদানের গুরুত্ব কোনো অংশে কম ছিল না।
অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি ছাত্র আন্দোলনে কীভাবে শক্তি প্রদান করে তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি 1905 খ্রিস্টাব্দে কালাইল সার্কুলারের প্রতিবাদে গড়ে ওঠে। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের দমন করবার জন্য কার্লাইল সার্কুলার দ্বারা ছাত্রদের মিটিং–মিছিল–সভাসমিতিতে যোগদান নিষিদ্ধ করা হয়। এর বিরুদ্ধে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু 1905 খ্রিস্টাব্দে অ্যান্টি সার্কুলার সমিতি গঠন করেন।
এই সমিতির উদ্দেশ্যগুলি ছিল—
ছাত্রদের আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা।
আন্দোলনে ছাত্রদের যোগদান করানো।
ছাত্রদের আন্দোলনে উৎসাহিত করা।
স্কুল ও কলেজ থেকে বিতাড়িত ছাত্রদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
কার্যাবলিঃ শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু আন্দোলনে ছাত্রদের উৎসাহিত করার কাজ চালাতে থাকেন। অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটির নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলন গতিপ্রাপ্ত হয়। তবে শেষপর্যন্ত শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুকে গ্রেপ্তার করে রাওয়ালপিন্ডি জেলে বন্দি করা হয়।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
সূচনাঃ ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতীয় পুরুষদের থেকে নারীরা কোনো অংশে পিছিয়ে ছিল না। বিশেষ করে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ভারতীয় নারীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ছোটো–বড়ো একাধিক সভাসমিতির মাধ্যমে ভারতীয় নারীরা সশস্ত্র বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে নিজেদের যুক্ত করেছিল। সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অবদান
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের অবদানঃ ভারতের সশস্ত্র আন্দোলনে বাংলার প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার–এর অবদান অবিস্মরণীয়। মাস্টারদা সূর্য সেনের ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির অন্যতম সদস্য ছিলেন প্রীতিলতা। 1930 খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে এবং 1932 খ্রিস্টাব্দে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
বীণা দাসের অবদানঃ ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বীণা দাস বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেন। বাংলার অনেক নারীকে তিনি বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগদানের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
লীলা নাগের অবদানঃ বাংলায় দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন লীলা নাগ। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল 1920-র দশকে বাংলার নারীশক্তিকে জাগরিত করা, শরীরচর্চা করা এবং মুক্তি সংগ্রামে নারীদের যোগদানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। সমকালীন ভারতে তা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সরলাদেবী চৌধুরাণীর অবদানঃ সরলাদেবী চৌধুরাণী নিজ বাড়িতে বিপ্লবীদের শরীরচর্চা ও অস্ত্রশিক্ষা দেবার ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া তিনি ‘প্রতাপাদিত্য উৎসব’ ও ‘বীরাষ্টমী ব্রত‘ পালনের ব্যবস্থা করেন। এ কারণে তিনি আজও ভারতবাসীর কাছে স্মরণীয়।
কল্পনা দত্তের অবদানঃ মাস্টারদা সূর্য সেনের ছায়াসঙ্গিনী ছিলেন কল্পনা দত্ত। শিক্ষাজীবনেই তিনি ডিনামাইট ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েন। এ ছাড়াও তিনি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দেন এবং চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন ।
আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর অবদানঃ আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর নাম ছিল ‘ঝাঁসি রানি ব্রিগেড’। এই ব্রিগেডের মহিলা ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন–এর নেতৃত্বে নারীরা সামরিক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল। এই নারীবাহিনীর অবদান কোনোদিনই ভোলার নয়।
সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি ঘোষের অবদানঃ পূর্ববঙ্গের কুমিল্লার দু‘জন সশস্ত্র বিপ্লবী ছিলেন সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি ঘোষ। শিক্ষাজীবন থেকেই তাঁরা বিপ্লবী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁরা ব্রিটিশ শাসনে কুমিল্লার জেলাশাসককে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
মূল্যায়নঃ উপরিউক্ত আলোচনায় স্পষ্ট ভারতবর্ষের নারীরা সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যে আত্মদান করেছেন ও বীরত্ব প্রদর্শন করেছেন তা চিরস্মরণীয়। স্বাধীনতার স্বার্থে তাঁরা নিজেদের পুরোপুরি উৎসর্গ করেছিলেন।
দীপালি সংঘ কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
অথবা, বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অবদান লেখো।
উত্তর
সূচনাঃ ভারতীয় বিপ্লবী আন্দোলনের পীঠস্থান বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম নারী নেত্রী ছিলেন লীলা নাগ (রায়)। বাংলার বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দীপালি সংঘ–এর ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয়।
‘দীপালি সংঘে‘র প্রতিষ্ঠাঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুগামী লীলা নাগ 1923 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ‘দীপালি সংঘ‘। পরবর্তীতে কল্পনা দত্ত, বীণা দাস, শান্তি দাস, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখ এই সংঘের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন।
দীপালি সংঘের লক্ষ্যঃ দীপালি সংঘের মূললক্ষ্য ছিল সমকালীন ভারতীয় নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা জাগ্রত করা ।
কর্মসূচি গ্রহণঃ দীপালি সংঘের হাত ধরে বাংলায় তথা ভারতীয় নারীদের মধ্যে সাহস ও শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিয়মিত লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্রচালনা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ ছাড়া শিল্পকর্ম, হস্তশিল্পের মাধ্যমে নারীদের স্বনির্ভর করে তুলতেও দীপালি সংঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
শিক্ষার প্রসারে দীপালি সংঘঃ দীপালি সংঘ শিক্ষার প্রসারে ঢাকায় 12টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। এ ছাড়া দীপালি স্কুল, নারীশিক্ষা মন্দির ও শিক্ষাভবন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান শিক্ষাপ্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।
ভারতবর্ষে বিপ্লববাদের প্রসারে বাংলায় লীলা নাগ (রায়) এবং দীপালি সংঘের অবদান অবিস্মরণীয়। খুবই অল্পসময়ের মধ্যে দীপালি সংঘের কার্যকলাপ বাংলা থেকে অসম পর্যন্ত বিস্তারলাভ করে।
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা
প্রথমত, 1905 খ্রিস্টাব্দে ছাত্রদের দমনে কঠোর আইনের বিরুদ্ধে ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু প্রতিষ্ঠা করেন ‘অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি‘।
দ্বিতীয়ত, সশস্ত্র ছাত্র আন্দোলনে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে প্রাণ দেন ৷
তৃতীয়ত, হেমচন্দ্র ঘোষ ও সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স‘ ছিল ব্রিটিশবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নতুন অধ্যায়।
চতুর্থত, বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করেন।
পঞ্চমত, মেদিনীপুরে জেলাশাসক পোডকে হত্যা করেন বিমল দাশগুপ্ত। অন্যদিকে জেলাশাসক ডগলাসকে হত্যা করেন প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য।
ষষ্ঠত, 1946 খ্রিস্টাব্দের 12 ফ্রেব্রুয়ারি ‘রশিদ আলি দিবস‘ পালন উপলক্ষে ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করে এবং কলকাতার প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে অচল করে দেয়।
মূল্যায়নঃ এই আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করে। ছাত্ররা বিপ্লবী কার্যাবলি দ্বারা ব্রিটিশ শাসকদের সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল। সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্ররা ছিল মূল চালিকাশক্তি।
বিশ শতকে ভারতের জাতীয় আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো
অথবা, সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর
সূচনাঃ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মতো ছাত্ররাও কোনো অংশে পিছিয়ে ছিল না। আসলে ছাত্রসমাজ ছিল ভারতে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি। বিশ শতকের গোড়া থেকেই প্রায় প্রতিটি সর্বভারতীয় আন্দোলনে এবং বিভিন্ন সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্ররাই শক্তিশালী ভূমিকা নিয়েছিল। প্রবল প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে অনমনীয় মনোভাব নিয়ে ছাত্ররা ছিল ভারতবর্ষের প্রথম সারির স্বাধীনতা সংগ্রামী।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনঃ 1905 খ্রিস্টাব্দের বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা ছিল স্বনিয়োজিত প্রচারক। এইসময় ছাত্ররা সভাসমিতি, পিকেটিং, মিছিল, সমাবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। ছাত্র আন্দোলন দমনে ব্রিটিশ সরকার ‘কার্লাইল সার্কুলার‘ জারি করলে এর বিরুদ্ধে ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ‘অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি‘ গঠন করেন।
অসহযোগ আন্দোলনঃ অসহযোগ আন্দোলনে অসংখ্য ছাত্র মিলিত হয়ে শপথ নিয়ে বলে, “স্বরাজ না পেলে আমরা কলেজে ফিরব না।” 1921 খ্রিস্টাব্দে প্রায় 90000 ছাত্র বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে আন্দোলনে যোগ দেয়।
আইন অমান্য আন্দোলনঃ আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে বাংলার মেদিনীপুর জেলায় ছাত্ররা হিংসাশ্রয়ী ও বিপ্লবী আন্দোলনে মেতে ওঠে। এ ছাড়া আমেদাবাদ, মধ্যপ্রদেশ, লখনউ, এলাহাবাদ, বেনারস, আসাম, সুরাট প্রভৃতি স্থানের কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
ভারতছাড়ো আন্দোলনঃ ভারতছাড়ো আন্দোলনে বাংলার ছাত্ররা উগ্র রূপধারণ করেছিল। প্রচুর ছাত্র ‘বিদ্যুৎ বাহিনীতে’ যোগদান করে। অসংখ্য ছাত্র তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা নেয়। ওড়িশায় ছাত্ররা ছিল প্রধান ভূমিকায়, এখানে ছাত্ররা “স্বরাজ পঞ্চায়েত‘ প্রতিষ্ঠা করে।
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা
প্রথমত, 1905 খ্রিস্টাব্দে ছাত্রদের দমনে কঠোর দমনমূলক আইনের বিরুদ্ধে ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু প্রতিষ্ঠা করেন ‘অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি‘।
দ্বিতীয়ত, সশস্ত্র ছাত্র আন্দোলনে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে প্রাণ দেন।
তৃতীয়ত, হেমচন্দ্র ঘোষ ও সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স‘ ছিল ব্রিটিশবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক নতুন অধ্যায়।
চতুর্থত, বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করেন।
পঞ্চমত, মেদিনীপুরে জেলাশাসক পোডকে হত্যা করেন বিমল দাশগুপ্ত। অন্যদিকে, জেলাশাসক ডগলাসকে হত্যা করেন প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য।
ষষ্ঠত, 1946 খ্রিস্টাব্দের 12 ফ্রেব্রুয়ারি ‘রশিদ আলি দিবস‘ পালন উপলক্ষে ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করে এবং কলকাতার প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে অচল করে দেয়।
মূল্যায়নঃ ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করে। ছাত্ররা বিপ্লবী কার্যাবলি দ্বারা ব্রিটিশ শাসকদের সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল। সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্ররা ছিল মূল চালিকাশক্তি।