
বাগ্ধারা
Bisistarthaka Sabda ba Bagdhara in Bengali Grammar | বিশিষ্টার্থক শব্দ বা বাগধারা Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Bisistarthaka Sabda ba Bagdhara in Bengali Grammar | বিশিষ্টার্থক শব্দ বা বাগধারা and select needs one.
লক্ষ্যার্থ বা ব্যাঙ্গার্থ-বিশিষ্ট শব্দসমষ্টি বা ব্যাক্যাংশকে বাগ্ধারা (Bagdhara) বা বিশিষ্টার্থক বাক্যাংশে ( Idioms ) বলা হয়।এই বাগ্ধারা (Bagdhara) প্রত্যেক ভাষার একটি বিশিষ্ট সম্পদ।এই বাগ্ধারা (Bagdhara) কখন কিভাবে গঠিত হয়েছে তার ইতিহাস প্রায়ই খুঁজে পাওয়া যায় না। জনসাধারণ অজ্ঞাতসারে এদের সৃষ্টি ও ব্যবহার করে চলেছে। সুনির্বাচিত প্রত্যয়-সমাস নিষ্পন্ন শব্দের অর্থের অপেক্ষা অনেক সময় এই বাগ্ধারা (Bagdhara) অধিক শক্তির পরিচয় দেয়।বাঙলা ভাষায় এগগুলি অসংখ্য বলা চলে। এগুলির প্রয়োগ সম্বন্ধে সাবধান হতে হয়, কারণ এগুলির অপপ্রয়োগ হলেই এদেয় সার্থকতা। নিয়ত ব্যবহারের দ্বারা এইসব বাগধারা যুগ যুগ ধরে বিশেষ অর্থ— প্রকাশ করে আসছে। তাই বাগধারাকে ভাষার প্রাণ বলা যায়।
১। অকুলে কূল পাওয়া (বিপদ হতে মুক্তি) —ভিটে মাটি ছাড়া সাহিত্যিক পরিচিত সম্পাদকের সাহায্যে অকূলে কূল পেলেন ৷
২। অক্কা পাওয়া (মারা যাওয়া– ব্যঙ্গ্যার্থ) – চোরটা মার খেতে খেতেই অক্কা পেল ।
৩। অকাল কুষ্মাণ্ড (অপদার্থ)-‘অকাল কুষ্মাণ্ড’ পত্ৰ মহিমকে নিয়ে কর্ম দক্ষ পিতা হরিচরণ সমাদ্দার বড়ই অসুবিধায় পড়েছে; কারণ ছেলের দ্বারা তাঁর তো কোন উপকারই হবে না ।
৪। অগাধ জলের মাছ (সুচতুর ব্যক্তি) — রথীনবাবু অগাধ জলের মাছ, তাঁর কাছ থেকে মামলার কথা আদায় করা সহজ হবে না ।
৫। অথৈ জল (অসহায় অবস্থা) — নিঃসহায় বিধবার একমাত্র রোজগারী ছেলে মারা যাওয়ায় মা সরলাদেবী অথৈ জলে পড়লেন ৷
৬। আকাশ ভেঙে পড়া (আকস্মিক বিপদ আসা) —ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক লাল বাতি জ্বেলেছে শুনে শ্যামলবাবুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, কারণ তাঁর যথাসর্বস্ব ঐ ব্যাঙ্কেই গচ্ছিত ছিল ।
৭। আক্কেল সেলামী (বোকামীর জন্য দণ্ড) — সুজিতের বইখানা পড়তে নিয়েছিলাম।আমার কাছ থেকে পুলিন বইখানা নিয়ে হারিয়ে ফেলায় আমাকে পাঁচ টাকা অক্কেল সেলামী দিয়ে বইটা কিনে দিতে হল ।
৮। আদা জল খেয়ে লাগা (অতি উৎসাহে কাজ করা) – নবীন এবার প্রথম হবেই, সে আদা জল খেয়ে পড়তে লেগেছে ।
৯। অহি–নকুল সম্পর্ক (চিরশত্রুর মত ভাব) – সামান্য একটু জমি নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে যে শেষে এমন অহি-নকুল সম্পর্ক দাঁড়াবে, কেউ তা ভাবেনি।
১০।আদায় কাঁচকলায় (পরস্পর বিরুদ্ধে সম্পর্ক)-তাদের দুভায়ের সম্পর্ক এখন আদায় কাঁচকলায় কেউ কারু নাম পর্যন্ত সহ্য করতে পারে না ।
১১। অষ্টরম্ভা (ফাঁকি)—-তোমার খালি বড় বড় কথা আছে, কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা।
১২। আক্কেল সেলামি (নির্বুদ্ধিতার শাস্তি)—ওরকম একটা ধাপ্পাবাজ লোকের কথা বিশ্বাস করে আমাকে এতগুলো টাকা আক্কেল সেলামি দিতে হলো।
১৩। আকাশ থেকে পড়া (স্তম্ভিত হওয়া)—এতটুকু বাচ্চার মুখে এসব কথা শুনে তো আমার আকাশ থেকে পড়ার দশা।
১৪। আঠারো মাসে বছর (দীর্ঘসূত্রতা, কুঁড়ের বাদশা)—তুমি তো জানই যে, ওর আঠারো মাসে বছর, তবু ওকেই দিলে এত বড় কাজের দায়িত্ব।
১৫। আষাঢ়ে গল্প (অবাস্তব গল্প) — টাকাটা এখন দেবে না বললেই পারতে, তার জন্যে এমন আষাঢ়ে গল্প ফাঁদার কোন দরকার ছিল না।
১৬। আঁতে ঘা (মর্ম–পীড়া)—অমন আঁতে ঘা দিয়ে কথা বলো না বউমা, তুমিও একদিন মা হবে।
১৭। ইঁচড়ে পাকা (অকাল পক্ক) – ছেলেটি বড় ইঁচড়ে পাকা, বড়দের সঙ্গে সমানে রসিকতা করে চলেছে।
১৮। উত্তম মধ্যম (প্রহার) — পকেটমারটা ধরা পড়তেই বাসের সকলে তাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিসের হাতে দিলে।
১৯। উভয় সংকট (দুদিকেই বিপদ) — কথা না শুনলে রাবণের হাতে মৃত্যু, আর কথা শানলে রামের হাতে মৃত্যু- মারীচের তখন উভয় সঙ্কট ।
২০। একাই একশ (যথেষ্ট সমর্থ)—ওর মতন একটা ক্ষুদে মাস্তানের মোকাবিলার জন্যে তোমাদের দরকার হবে না, আমি একাই একশ।
২১। ওজন বুঝে চলা (নিজের ক্ষমতানুযায়ী কাজ করা) — নিজের ওজন বুঝে চললে কি ছেলে-ছোকরারা আর এভাবে মণিবাবুকে অপমান করতে সাহস পায়!
২২। একাদশে বৃহস্পতি (অত্যন্ত সুসময়) — রমেশবাবুর এখন একাদশে বৃহস্পতি যে ব্যবসায়েই তিনি হাত দিচ্ছেন তাতেই তিনি ফুলে উঠছেন ।
২৩। কথার কথা (বাজে কথা) – সেদিন কথাটা বলায় রাগ করেছিলে কিন্তু, ওটা তো কথার কথা, ওতে রাগ কোর না যেন ।
২৪। কপাল ফেরা (ভাগ্য পরিবর্তন হওয়া) – সাহেবের নজরে পড়ায়— কেরাণীটির কপাল ফিরেছে, চাকরীতে বছরে দুটো করে প্রমোশন পাচ্ছে ।
২৫। কড়ায়–গণ্ডায় (পুরোপুরি)—এতদিন পরে এসে আমার কাছে কড়ায়-গণ্ডায় হিসেব চাইতে তোমার লজ্জা করছে না?
২৬। কেউ কেটা (গণ্যমান্য ব্যক্তি)—তুমি কি এমন কেউ কেটা যে, তোমার কথা আমাকে শুনতে হবে?
২৭। কেঁচে গণ্ডূষ (নতুন করে আরম্ভ)—সেই কবে গানের চর্চা ছেড়ে দিয়েছিলাম, মেয়ের জন্যে আবার তা কেঁচে গণ্ডূষ করতে হলো।
২৮। খাল কেটে কুমীর আনা (অজ্ঞাতে শত্রুকে ডেকে আনা) — ঐ ধূর্ত লোকটাকে নিয়ে যখন ব্যবসা ফেঁদেছ, তখনই তোমায় বলেছিলাম খাল কেটে কুমীর এনো না—এখন হোল তো, সে তোমায় আর পাত্তা দিচ্ছে না ।
২৯। খেই হারান (সুত্র হারান) – কথা বলতে বলতে বক্তা ভাবাবেগের বশে যে কথার খেই হারিয়ে ফেললেন তা নিজে বুঝতে পারলেনই না; কিন্তু শ্রোতারা সবাই বুঝতে পেরে হাসতে লাগল ।
৩০। গা ঢাকা দেওয়া (আত্মগোপন করা) — দলের সর্দারকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে ঠিক গা ঢাকা দিয়েছে।
৩১। গোড়ায় গলদ (মূলেই ত্রুটি) – গোড়ায় গলদ বলেই শিক্ষাব্যবস্থার আজ এই হাল।
৩২। গদাই লস্করি চাল (মন্থর ভাব, ঢিলেমি ভাব)—তোমার এই গদাই লস্করি চাল-এর জন্যেই জীবনে কিছু করতে পারলে না।
৩৩। ঘোড়ার ডিম (অলীক বস্তু, কিছুই না)—এত আশা করে সেখানে গেলাম, শেষ পর্যন্ত ঘোড়ার ডিম।
৩৪। চক্ষুদান করা (চুরি করা) – লিখতে লিখতে কলমটা টেবিলের উপর রেখেছিলাম, কে চক্ষুদান করেছে— তাই তা অনেক খুঁজেও পেলাম না ।
৩৫। চিনির বলদ (ভারবাহী, কিন্তু ফলভোগী নয়) – ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার চিনির বলদ মাত্র, দিনের মধ্যে কত টাকা তাঁরা হাত দিয়ে নাড়া ঘাটা করেন— কিন্তু, ভোগে আসেনা কিছই ।
৩৬। চোখের বালি (যাকে সহ্য করা যায় না) – নতুন বৌটি বড় ননদের চোখের বালি হয়ে উঠলো। তার কোন কাজ বা কথাই এখন ননদের ভাল লাগে না।
৩৭ চাঁদের হাট (বহু গুণী ব্যক্তির একত্র সমাবেশ) – প্রতুলবাবুর মেয়ের বিয়েতে বহু কবি সাহিত্যিক অধ্যাপক সাংবাদিক খেলোয়াড় অভিনেতার সমাগমে যেন চাদের হাট বসে গিয়েছিল।
৩৮। চোখে চোখে রাখা (সতর্ক নজর)—এত চোখে চোখে রাখার পরও ছেলেটা সেই বদ সংসর্গেই গিয়ে মিশল!
৩৯। চুনো পুঁটি (সামান্য লোক) – চুনো পুঁটিদের ওপরই তোমাদের যত আইনের অত্যাচার, রাঘব বোয়ালদের তো আর ধরার ক্ষমতা নেই তোমাদের!
৪০। ছেলের হাতের মোয়া (সহজে ঠকিয়ে নেওয়ার বস্তু)—–কাশ্মীর কি ছেলের হাতের মোয়া যে সামান্য ভয় দেখালেই ওটা পাকিস্তান হয়ে যাবে?
৪১। ছিঁচ–কাঁদুনে (যে একটাতেই কেদে ফেলে–একটু ঠাট্টা করতেই কান্না,এমন ছিঁচ-কাঁদুনে কেন তুমি?
৪২। ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করা (সামান্য লাভের জন্য বদনাম কেনা) —তোমায় দুচার টাকা দিয়ে আমি ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করতে চাই না ।
৪৩। জিব কাটা (লজ্জা বোধ করা) – তাড়াতাড়িতে মাষ্টার মশাইয়ের সাথে ধাক্কা লাগায় ছাত্রটি জিব কেটে সরে গেল ।
৪৪। জগা খিচুড়ি (বিশৃঙ্খল)—তোমাদের এই জগা খিচুড়ি কাজ দেখলে মাথায় আমার রক্ত উঠে যায়।
৪৫। জলের আলপনা (যা স্থায়ী হয় না)—এত অপমানের পরেও লোকটা আবার সেই একই কাজ করে বসল, এ যে দেখছি জলের আলপনা, কিছুই দাগ কাটে না।
৪৬। ঝাল ঝাড়া (গাল দিয়ে উত্তেজনা লাঘব করা) — একদিন দশজনের সামনে তাঁর স্বরূপে প্রকাশ করেছিলাম, তাই আজ আমার সামান্য ত্রুটির সুযোগ পেয়ে তিনি ঝাল ঝাড়তে লাগলেন ।
৪৭। ঝোপ বুঝে কোপ মারা (সুযোগ মত কাজ করা) – ইলেকসন সামনে,পাড়ার ছেলেরা বরেনবাবুকে সমর্থন করার পরিবর্তে মোটা টাকা ক্লাব ঘর তৈরীর জন্য আদায় করে নিল – কেবারে ঝোপ বুঝে কোপ মারা।
৪৮। টনক নড়া (চৈতন্য হওয়া) — এবারের ফাইন্যাল পরীক্ষা স্কুলের ফল ভাল না হওয়ায় দশম শ্রেণীর ছাত্রদের টনক নড়েছে, পড়াশোনায় এবার একটু মনোযোগ দিয়েছে ।
৪৯। টাকার গরম (ধনের গর্ব) – সীতেশ বাবুর চার ছেলে রোজগারী, নিজেও মোটা টাকা আয় করেন—তাঁর এখন টাকার গরম হওয়া অস্বাভাবিক নয়, তিনি এখন আমাদের চিনবেন কি করে।
৫০। টইটুম্বুর (কানায় কানায় পূর্ণ)—বংশে প্রথম নাতি হওয়ায় সুবিমলবাবু খুশীতে এমন টইটুম্বুর হয়ে আছেন!
৫১। টনক নড়া (চৈতন্য হওয়া)—তখন এত করে বলা হলো যে, এসব সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার পেছনে বৃহৎ শক্তির উস্কানি আছে, তা নেতারা শুনলেন না, এখন টনক নড়েছে।
৫২। ঠুঁটো জগন্নাথ (নিশ্চেষ্ট)—এভাবে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগে তোমার?
৫৩। ঠোঁট কাটা (অপ্রিয় স্পষ্ট বক্তা)—তুমি এমন ঠোঁট কাটা বলেই তো কেউ তোমাকে পছন্দ করে না।
৫৪। ডুব মারা (হাজির না থাকা— হীনার্থে)—বড়বাবুকে না জানিয়ে এক কেরানী অফিসে তিনদিন ডুব মেরেছে, বড়বাবু তাই রেগে অস্থির।
৫৫। ডুবে ডুবে জল খাওয়া (গোপনে কাজ করা) — মুখে ধর্ম আর মানবতার বুলি, কিন্তু, ব্যবসা চলে চোরা কারবার তাঁর এই ডুবে ডুবে জল খাওয়া এখন সবাই টের পাচ্ছে—তাই কেউ তার কথা শোনে না ।
৫৬। ডুমুরের ফুল (অদৃশ্য)—কি হে বাণী, তুমি যে দেখছি ডুমুরের ফুল হয়ে উঠলে, এখন আর দেখাই পাওয়া যায় না তোমার, কি ব্যাপার?
৫৭। ঢাকের বাঁয়া (ব্যক্তিত্বহীন অনুবর্তী)—তোমার ভেতরে তো কিছু ছিল জানতাম, শেষে তুমিও কি করে প্রিয়র ঢাকের বাঁয়া হয়ে গেলে সেটাই আশ্চর্যের!
৫৮। তাসের ঘর (ভঙ্গুর)—আটাত্তরের বিধ্বংসী বন্যায় স্ত্রীপুত্রকে হারিয়ে সজলবাবুর জীবনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে গেল।
৫৯। তাক লাগান (বিস্মিত করা) — কোন রকমে পাস করা ছেলে সুবীর বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিল ।
৬০। তীর্থের কাক (দীর্ঘ প্রত্যাশী) — চাকরীর উমেদারী করতে এসে গজেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীর্থের কাকের কত বড়বাবুর বাড়ীর সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইল।
৬১। দু‘মুখো সাপ (এক একজনের কাছে এক এক রকম সাজা)—খবরদার অরূপকে মোটেই বিশ্বাস করো না, ও একটা দু’মুখো সাপ, তোমাকে এক রকম বলে, অন্যকে আরেক রকম।
৬২। দু‘ নৌকায় পা (উভয় দিক রক্ষার চেষ্টা)—ধর্ম আর অধর্মের দু’নৌকায় পা দিয়ে কেউ বাঁচে না।
৬৩। ধরাকে সরা জ্ঞান করা (অহংকারে সকলকে অগ্রাহ্য করা) — যুদ্ধের দৌলতে মোটা টাকা কামিয়ে ধরনীবাবু এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন – যাকে যা খুশী অপমান করছেন।
৬৪। চক্ষুশূল (অপ্রিয়)—অমিয় যে কি করে হঠাৎ বিমলবাবুর এত চক্ষুশূল হয়ে উঠল, বোঝা গেল না।
৬৫। চোখে সর্ষে ফুল দেখা (একান্ত কাতর হওয়া)—অল্প মাইনেয় এত বড় সংসার চালাতে আমি এখন চোখে সর্ষে ফুল দেখছি।
৬৬। ননীর পুতুল (আরাম প্রিয়, কঠিন পরিশ্রমে অক্ষম) — জীবনটা কঠোর সংগ্রামক্ষেত্র এখানে ননীর পাতুল হয়ে পারি না পারব না বলে ঘরে বসে থাকলে জীবন কাটবে না।
৬৭। নাম ডোবানো (সুনাম নষ্ট করা) — আমাদের ইংরাজীর ভাল শিক্ষক মহিমবাবার ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করে বাপের নাম ডোবাল ।
৬৮। নয়নের মণি (একান্ত প্রিয়)—নরেন কিভাবে যে শিবনাথবাবুর এমন নয়নের মণি হলো বুঝতে পারি না।
৬৯। পটল তোলা (মৃত্যু–ব্যাঙ্গার্থে) — পটল যে এই সামান্য জরেই পটল তুলে চিরবিদায় নেবে একথা আমরা কেউই ভাবিনি ।
৭০। পকুর চুরি (বড় রকমের চুরি)—যুদ্ধের বাজারে সিমেন্টের পারমিট পেয়ে ধীরেনবাব, বস্তা বস্তা নয় গাড়ী গাড়ী সিমেন্ট ব্ল্যাক করতে লাগলেন, একেবারে পকুর চুরি।
৭১। পাকা ধানে মই (গুরুতর ক্ষতি করা)—আমি তোমার কি এমন পাকা ধানে মই দিয়েছি যে, তুমি আমার সঙ্গে এমন শত্রুতা করছ?
৭২। ব্যাঙের আধুলি (কষ্টার্জিত সামান্য অর্থ) – অনেক কষ্টে ব্যাঙের আধলি পাঁচ শ’টাকা জমিয়েছি, তা যদি বাজে খরচ কর তাহলে দঃখ হয় না কি ৷
৭৩। বালির বাঁধ (ক্ষণস্থায়ী)—আমি তখনই জানতাম, কোটিপতি ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা মানে বালির বাঁধ ছাড়া কিছুই নয়।
৭৪। বুকের পাটা (সাহস)—তোমার বুকের পাটা তো কম নয় হে, তুমি গেছ আবার শন্তু মাস্তানের কাছে এর কৈফিয়ত চাইতে!
৭৫। বাপের বেটা (সাহসী) – সাবাস! বাপের বেটার মতই বলেছিস কথাটা।
৭৬। ভুতের বেগার খাটা (পণ্ডশ্রম করা) — সারা জীবন ভুতের বেগার খেটে মরছি –এতে না আসে তেমন পয়সা, না আসে কোন খ্যাতি।
৭৭। মগের মুলুক (অরাজক দেশ)—এটা কি মগের মুলুক পেয়েছ যে বলা নেই কওয়া নেই, আমার বাড়ী থেকে জিনিষ নিয়ে যাচ্ছ?
৭৮। মামা বাড়ির আবদার (চাইলেই যা পাওয়া যায়) – এই সেদিন ছেলের ভর্তির জন্যে টাকা নিয়ে গেলে, আজ আবার এসেছ মেয়ের বিয়ের জন্যে টাকা চাইতে, একি মামা বাড়ির আবদার পেয়েছ?
৭৯। মান্ধাতার আমল (অতি প্রাচীনকাল)—আজও আমাদের দেশের চাষবাস সেই মান্ধাতার আমলের।
৮০। মাটির মানুষ (খুব শান্ত শিষ্ট)—আর কতকাল তুমি এভাবে মাটির মানুষ থেকে ওদের দৌরাত্ম্য সহ্য করে যাবে, এবার একটু ফোঁস করতে শেখো।
৮১। মিছরির ছুরি (আপাতমধুর হলেও প্রকৃতপক্ষে যন্ত্রণাদায়ক)—গোপালের কথাগুলো মিষ্টি হলে হবে কি, আসলে ওটা মিছরির ছুরি, আঁতে গিয়ে লাগে।
৮২। মুখের কথা (হালকা কথা)—পাঁচ ক্রোশ পথ হাঁটা কি মুখের কথা?
৮৩। রাশভারী (গম্ভীর প্রকৃতির) — আমাদের প্রধান শিক্ষক এমনই রাশভারী যে, একবার তাঁর সামনে পড়ে গেলে ছোট ছেলেরা ভয়ে কাঁপে এবং বড় ছেলেদের বাচালতাও স্তব্দ হয়ে যায় ৷
৮৪। রাঘব বোয়াল (খুব লোভী) – শেষ পর্যন্ত চোরাকারবারের রাঘব বোয়ালরা পুলিসের ফাঁদে ধরা পড়ল।
৮৫। রফা নিষ্পত্তি (মিটমাট করা)—এ নিয়ে আর কত টালবাহানা করবে, একটা রফা নিষ্পত্তি করে নাও, ঝামেলা চুকে যাক।
৮৬। শিবরাত্রীর সলতে (একমাত্র অবলম্বনে) — বংশীবদন রায় বাড়ীর শিবরাত্রির সলতে, সে ছাড়া বংশে বাতি দিতে কেউ আর বেঁচে নেই ।
৮৭। সোনায় সোহাগা (মনিকাঞ্চন যোগ)–ছেলেটির যেমন সুন্দর চেহারা, তেমনি অশেষ গুণ; যেন সোনায় সোহাগা।
৮৮। হাতটান (চুরি স্বভাব) – চাকরটার একটু হাতটান আছে, ভাল করে লক্ষ্য রেখো নইলে এটা ওটা ফাঁক পেলেই সরিয়ে ফেলবে ।
৮৯। হাটে হাঁড়ি ভাঙা (গুপ্ত কথা প্রকাশ করে দেওয়া) – আমাকে বেশী ঘাঁটিও না বলছি, হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব, তখন সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না ।
৯০। হিতে–বিপরীত (ভাল করতে গিয়ে মন্দ)—তার ভালর জন্যেই আমি কথাটা বলতে গেলাম, সে গেল চটে- হিতে বিপরীত হল ।
৯১। হাত করা (মতে আনয়ন) – পুলিসকে হাত করে রায়বাড়ীর খুনের ঘটনাটা চাপা দেবার চেষ্টা পাড়ার লোকদের হস্তক্ষেপে ভেস্তে গেল ।
৯২। হাতের পাঁচ (শেষ সম্বল)—প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের টাকাটাই এই বুড়ো বয়সে আমার হাতের পাঁচ, এটা আমি তোমাদের জন্যে খরচ করতে পারব না ।
৯৩। হ–য–ব–র–ল (বিশৃঙ্খল)—তোমাদের এই হ-য-ব-র-ল কাজের মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝি না।
[ বিঃ দ্রঃ—বাগধারাকে সার্থক বাক্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাত্র–ছাত্রীদের একটি দরকারী কথা মনে রাখতে হবে। তা হচ্ছে এই যে, বাক্যের গঠন এমনই হবে যার মাধ্যমে বাগ্ধারার অন্তর্নিহিত অর্থ পাঠকের কাছে পরিষ্কার হবে।প্রয়োজন হলে একাধিক বাক্য ব্যবহার করেও বাগ্ধারার অর্থ প্রকাশ করা যেতে পারে। বাক্যে বাগ্ধারার প্রয়োজনের অর্থ—বিশেষ শব্দযোগে বাক্য গঠন নয়, এটা সবার আগে মনে রাখতে হবে । একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝালে পরিষ্কার হবে।‘আকাশ কুসুম’ একটা বাগধারা ।যার অন্তর্নিহিত অর্থ— ‘অলীক কল্পনা‘ বা যে চিন্তা কোনদিন বাস্তবায়িত হবে না।এই অন্তর্নিহিত অর্থ না বুঝে কেউ যদি লেখে—শ্যামল ‘আকাশ কুসুম‘ দেখে। তাহলে বাগধারাটির অপ–প্রয়োগ হবে এবং অর্থ— জটিল হয়ে ভাবটি মাঠে মারা যাবে। লিখতে হবে— ‘লেখাপড়া না জানা লোকটির বড় কবি হবার ইচ্ছা আকাশ কুসম চিন্তা ছাড়া আর কিছু নয়।”অতএব বাগ্ধারাকে বাক্যে প্রয়োগের সময় তার অন্তনিহিত অর্থ বুঝে বাক্যের মধ্যে দিয়ে তাকে এমন ভাবে প্রকাশ করতে হবে যাতে ভেতরের অর্থটবেরিয়ে আসে । ]