
রঙিন মাছের প্রজনন
Learn everything you need to know about aquarium fish breeding, from selecting the right species to creating the perfect breeding environment. Find tips and tricks for successful breeding and raising healthy fish in your own home aquarium.
রঙিন মাছের প্রজনন
বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন মাছের চারার যোগান আবশ্যক। এই যোগানের জন্য প্রয়োজন মাছের নিয়ন্ত্রিত কৃত্ৰিম প্ৰজনন Aquarium Fish Breeding ।
অ্যাকোয়ারিয়ামে পালিত মাছের প্রজনন ঘটানো বেশ জটিল ও শ্রমসাপেক্ষ কাজ। প্রথমত কৃত্রিম পরিবেশে মাছের প্রজনন ঘটাতে প্রয়োজন প্রজাতিভিত্তিক আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করা। এর জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজাতিভিত্তিক প্রজনন বৈশিষ্ট্য ও আদর্শ পরিবেশ বিষয়ে সম্যক জ্ঞান। কারণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজাতি ভেদে প্রজনন প্রজাতিগুলিকে প্রধানত দু‘ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, (1) বাচ্চা প্রসবকারী গোষ্ঠীভুক্ত মাছ যারা আন্তঃনিষেকের পর সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। (2) ডিম নিঃসরণকারী গোষ্ঠীভুক্ত মাছ যারা অনিষিক্ত ডিম প্রসব করে ও পরিবেশে বহিঃনিষেক প্রক্রিয়ায় ডিম নিষিক্ত হয় ও পরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। তবে সমস্ত ডিম প্রসবকারী মাছের প্রজনন বৈশিষ্ট্য একরকম নয় ।
ডিম নিঃসরণকারী মাছের প্রজনন Aquarium Fish Breeding বৈশিষ্ট্য ডিমের প্রকৃতি ও ডিমের স্থিত হওয়ার প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের হয়। যেমন—
(1) ডিম আলগা ও ছড়ানো প্রকৃতির।
(2) ডিম আঠালো ও ছড়ানো প্রকৃতির।
(3) ডিম মুখে পরিস্ফুটিত হয় ও
(4) ডিম বুদবুদের বাসায় ভাসমান প্রকৃতির।
1. বাচ্চা প্রসবকারী মাছ—বাচ্চা প্রসবকারী মাছ বিভিন্ন প্রকারের হয়। যেমন—
(ক) জরায়ুজ : এসব মাছের ভ্রূণ মাতৃজঠরে অমরা নালী দ্বারা পুষ্টিরস শোষণ করে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। শার্কজাতীয় মাছ এর অন্তর্গত।
(খ) অন্ত–জরায়ুজ : ডিমের মাতৃদেহে অন্তঃনিষেক ঘটে ও মায়ের দেহের মধ্যে কুসুমগুলি থেকে পুষ্টি পায় ও বৃদ্ধি হয়। নির্দিষ্ট সময়কাল পরে সরাসরি বাচ্চা বাড়ে ও বাচ্চা প্রাকৃতিক খাদ্যগ্রহণে সক্ষম হয়। গাপ্পি, প্লাটি, সোর্ডটেইল প্রভৃতি মাছ এর অন্তর্গত।
2. ডিম নিঃসরণকারী মাছ—এই গোষ্ঠীর স্ত্রী মাছ জলে ডিম পাড়ে ও পুরুষ মাছ ডিমের ওপর শুক্রাণু নিঃসরণ করে অর্থাৎ জলেই নিষেক ক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই বহিঃনিষেকের পর প্রজাতি ও পরিবেশের তারতম্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ডিম ফুটে বাচ্চা (ডিমপোনা) বের হয়। ডিম সাধারণ নিঃসরণ ও প্রজননকালীন আচরণগত তারতম্য অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের হয়। যেমন–
(ক) ডিম আলগা ও ছড়ানো প্রকৃতির : এই গোষ্ঠীর মাছ জলে একসঙ্গে প্রচুর সংখ্যক ডিম পাড়ে ও জলে নিষিক্ত হয়। ডিমগুলো আলাদা আলাদা জলে ভাসে। ভাসতে ভাসতে কোনো কিছুর গায়ে জমা হয় ও অনুকূল পরিবেশে ৪– 10 ঘণ্টা পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। যেমন—বার্ব, টেট্রা, ড্যানিও জাতীয় মাছ।
(খ) ডিম আঠালো ও ছড়ানো প্রকৃতির : এই গোষ্ঠীর মাছ জলে ডিম পাড়ে। ডিমগুলি আঠালো প্রকৃতির হয় ও কোনো কিছুর গায়ে আটকে যায়। অনুকূল পরিবেশে 48-72 ঘণ্টা পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। যেমন—গোল্ডফিশ জাতীয় মাছ ।
(গ) ডিম স্থাপনকারী :এই গোষ্টীর মাছ জলে জলজ উদ্ভিদের পাতা, শাখা, নুড়ি– পাথর এমনকি কাঠের টুকরোর ওপর আঠালো প্রকৃতির ডিম পাড়ে। অনুকূল পরিবেশে প্রায় 72 ঘণ্টা পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এদের সন্তান বাৎসল্য দেখা যায়। যেমন, অ্যাঞ্জেল, ডিসকাস, ফায়ার মাউথ, রোমি রোজি, সাকার মাউথ ক্যাটফিশ ও ক্রোকোডাইল ফিশ জাতীয় মাছ।
(ঘ) ডিম মুখে পরিস্ফুটিত হয় : এই গোষ্ঠীর স্ত্রী মাছ আধারের মাটি বা বালির মধ্যে গর্ত করে বাসা তৈরি করে ও তার মধ্যে ডিম পাড়ে। এই বাসাতেই নিষেক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। নিষিক্ত ডিম স্ত্রী মাছ মুখগহ্বরে তুলে নেয় ও ডিম ফুটে বাচ্চা বের না হওয়া পর্যন্ত মুখ গহ্বরেই রাখে ও কোনো প্রকার খাদ্য গ্রহণ করে না। যেমন—অরেটাস, ব্লুমফ, তিলাপিয়া জাতীয় মাছ।
(ঙ) ডিম বুদবুদের বাসায় ভাসমান প্রকৃতির : এই গোষ্ঠীর পুরুষ মাছ জলে লালার সাহায্যে বুদবুদ তৈরি করে, যাকে বলে বাবল নেস্ট। এই বাবল নেস্টে স্ত্রী মাছ ডিম পাড়ে ও পুরুষ মাছ ডিমগুলিকে নিষিক্ত করে। যেমন—গোরামী, ফাইটার জাতীয় মাছ।
বিভিন্ন প্রকার রঙিন মাছের প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় জলের প্রকৃতি, প্রজনন ঋতু, প্রজনন বৈশিষ্ট্য ও ডিমের প্রকৃতি এবং ডিমের যত্ন নিচে বর্ণনা করা হলো—
প্রজাতি |
জলের প্রকৃতি |
প্রজনন ঋতু |
প্রজনন বৈশিষ্ট্য |
ডিমের প্রকৃতি/যত্ন |
মলি |
ক্ষর জল |
প্রায় সারা বছর |
বাচ্চা প্রসব করে |
সরাসরি বাচ্চা হয় |
গাপ্পি |
ক্ষর জল |
প্রায় সারা বছর |
বাচ্চা প্রসব করে |
সরাসরি বাচ্চা হয় |
প্লাটি |
ক্ষর জল |
প্রায় সারা বছর |
বাচ্চা প্রসব করে |
সরাসরি বাচ্চা হয় |
সোর্ড টেইল |
ক্ষর জল |
প্রায় সারা বছর |
বাচ্চা প্রসব করে |
সরাসরি বাচ্চা হয় |
ব্লু গোরামী |
মৃদু ও ক্ষর জল |
গ্রীষ্ম/বর্ষাকাল |
বাসা তৈরি করে |
পুরুষ মাছ ডিম পাহারা দেয় |
পার্ল গোরামী |
মৃদু ও ক্ষর জল |
গ্রীষ্ম/বর্ষাকাল |
বাসা তৈরি করে |
পুরুষ মাছ ডিম পাহারা দেয় |
রোসি বার্ব |
মৃদু ও ক্ষর জল |
গ্রীষ্ম/বর্ষাকাল |
ডিম ছড়িয়ে দেয় |
আঠালো ডিম |
গোল্ড ফিশ |
মৃদু ও ক্ষর জল |
গ্রীষ্ম/বর্ষাকাল |
ডিম ছড়িয়ে দেয় |
আঠালো ডিম |
ড্যানিও |
ক্ষর জল |
গ্রীষ্ম/বর্ষাকাল |
ডিম ছড়িয়ে দেয় |
আঠালো ডিম |
ফাইটার |
মৃদু ও ক্ষর জল |
গ্রীষ্ম/বর্ষাকাল |
বাসা তৈরি করে |
পুরুষ মাছ ডিম পাহারা দেয় |
ক্যাট ফিশ |
মৃদু ও ক্ষর জল |
বর্ষা/শীতকাল |
ডিম কোনো জায়গায় স্থাপন করে |
জায়গা পরিবেষ্টনের প্রয়োজন |
অ্যাঞ্জেল |
মৃদু জল |
গ্রীষ্ম/বর্ষাকাল |
ডিম কোনো জায়গায় স্থাপন করে |
পুরুষ ও স্ত্রী মাছ ডিমে জল সিঞ্চন করে |
চিখলিড |
মৃদু জল |
গ্রীষ্ম/বর্ষাকাল |
ডিম কোনো জায়গায় স্থাপন করে |
জায়গা পরিবেষ্টনের প্রয়োজন |
টেট্রা |
মৃদু জল |
গ্রীষ্ম/বর্ষাকাল |
ডিম ছড়িয়ে দেয় |
আঠালো ডিম |
ম্যানিলা কার্প |
মৃদু জল |
গ্রীষ্ম/বর্ষাকাল |
ডিম ছড়িয়ে দেয় |
আঠালো ডিম |
কয়েকটি রঙিন মাছের ডিমের সংখ্যা ও বাৎসরিক প্রজনন চক্র বর্ণনা করা হলো–
মাছের প্রজাতি |
গড় ডিমের সংখ্যা |
বাৎসরিক প্রজনন হার |
মলি, গাপ্পি, সোর্ড টেইল |
20 |
12 বার |
ব্লু গোরামি |
3500 |
10 বার |
পার্ল গোরামি |
800 |
10 বার |
রোসি বার্ব |
700 |
10 বার |
টাইগার বার্ব |
500 |
10 বার |
ড্যানিও |
1000 |
10 বার |
অ্যাঞ্জেল |
800 |
12 বার |
টেট্রা |
3000 |
10 বার |
সার্পে টেট্রা |
800 |
10 বার |
গোল্ড ফিশ |
3000 |
3 বার |
রঙিন মাছের ( Aquarium Fish Breeding ) প্রজননে সতর্কতা
রঙিন মাছের প্রজনন ঘটাতে গেলে কিছু নিয়ম মানতে হবে—
(ক) প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ মাছ সনাক্ত করতে পারা ও তাদের চারিত্রিক, বিশেষ করে প্রজনন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
(খ) প্রজননের আগে প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে।
(গ) আদর্শ গুণমানের দূষণমুক্ত জলের ব্যবস্থা করা।
(ঘ) মাছের প্রজাতিভিত্তিক ও উপযোগী প্রজনন পরিকাঠামো (প্রজনন আধার বা ট্যাঙ্ক, পালন আধার বা ট্যাঙ্ক), যন্ত্র সামগ্রী (বায়ু সঞ্চালক যন্ত্র, জল পরিশোধক যন্ত্র, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক যন্ত্র) উপকরণ (প্রজনন উপকরণ, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম খাদ্য, ঔষধপত্র, হাত জাল ইত্যাদি) ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।
প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ মাছ সনাক্তকরণ
রঙিন মাছ সাধারণত বাহারি রঙের ও আকৃতির হয়। তবে একই প্রজাতির পুরুষ ও স্ত্রী মাছের রঙের ঔজ্জ্বল্য ও রঙের ব্যাপকতা এক রকমের নাও হতে পারে। আবার একই প্রজাতির পুরুষ ও স্ত্রী মাছের কোনো এক বা একাধিক অঙ্গের আকারগত বা আকৃতিগত তারতম্য থাকে। এই পুরুষ ও স্ত্রী মাছের বহিরঙ্গের পার্থক্য সাধারণত প্রজনন ঋতু বা সময়ের আগে প্রকট হয়।
প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ মাছ সনাক্তকরণের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো—
পুরুষ মাছ |
স্ত্রী মাছ |
1. দেহের রঙ খুব উজ্জ্বল হয়। |
1. দেহের রঙ পুরুষ মাছের তুলনায় ফ্যাকাসে হয়। |
2. স্ত্রী মাছের তুলনায় দৈর্ঘ্যে ছোট হয়। পেট স্ফীত হয়। |
2. পুরুষ মাছের তুলনায় দৈর্ঘ্যে বড় হয়। পেট স্ফীত হয়। |
3. বাচ্চা প্রসবকারী মাছে পায়ু পাখনার তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পাখনা রশ্মি পরিবর্তিত হয়ে গোনোপোডিয়াম সৃষ্টি হয়। |
3. এরকম গোনোপোডিয়াম দেখা যায় না। |
অ্যাকোয়ারিয়ামে রঙিন মাছ প্রজনন (Aquarium Fish Breeding ) পদ্ধতি
রঙিন মাছের সফল প্রজননের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হয়। যেমন—
1. প্রজনন ক্ষেত্র নির্মাণ করা।
2. প্রজননক্ষম মাছ নির্বাচন করা।
3. প্রজননক্ষম মাছকে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো।
4. প্রজননে উদ্বুদ্ধ করা বা ঘটানো।
5. বাচ্চা প্রতিপালন করা।
1. প্রজনন ক্ষেত্র নির্মাণ করা
(ক) প্রজাতিভেদে প্রত্যেক মাছের ক্ষেত্রেই তার প্রজননের জন্য জলের ভৌত রাসায়নিক ও পরিবেশগত অবস্থার বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তাই নির্দিষ্ট কোনো মাছের প্রজননের জন্য সেই মাছের উপযোগী প্রজনন পরিবেশ প্রজনন আধারে সৃষ্টি করতে হয়। তবে জলের ভৌত–রাসায়নিক অবস্থার মধ্যে জলের গভীরতা, তাপমাত্রা, অম্লত্ব (pH), ক্ষারত্ব ইত্যাদি বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
(খ) প্রজননের পর যাতে পুরুষ বা স্ত্রী মাছ ডিম বা বাচ্চা খেতে না পারে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
(গ) প্রজননের জন্য অ্যাকোয়ারিয়ামের স্থান এমনভাবে নির্বাচন করতে হয় যাতে যে সব মাছ প্রজননের সময় সূর্যালোক পছন্দ করে (যেমন—ডোয়ার্ফ গোরামি) তাদের জন্য আলোকিত জায়গা ও যে সব মাছ প্রজননের সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গা পছন্দ করে (যেমন—নিওন টেট্রা বা কার্ডিনাল টেট্রা) তাদের জন্য কম আলোসম্পন্ন জায়গা নির্বাচন করতে হয়। সাধারণত যে সব মাছের ডিম খেয়ে নেওয়ার প্রবণতা আছে তাদের প্রজননের জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গা নির্বাচন করতে হয়।
(ঘ) অ্যাকোয়ারিয়ামের আকার রঙিন মাছ প্রজননের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বড় অ্যাকোয়ারিয়ামে ছোট অ্যাকোয়ারিয়ামের তুলনায় তাপমাত্রার তারতম্য কম হয় ৷ যে সব মাছের প্রজননের জন্য জলের তাপমাত্রা খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তাদের প্রজননের জন্য বড় আয়তনের অ্যাকোয়ারিয়ামের প্রয়োজন হয়।
(ঙ) কোনো নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছের প্রজননের জন্য জলজ উদ্ভিদের প্রয়োজন হলে তা অ্যাকোয়ারিয়ামে স্থাপন করার আগে ভাল করে পরিষ্কার করে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ধুয়ে নিতে হবে। যে সব মাছ নিজেদের বাচ্চা খেয়ে নেয় তাদের ক্ষেত্রে প্রজননের পর পুরুষ ও স্ত্রী মাছ অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে সরিয়ে নিতে হয় অন্যথায় জলজ উদ্ভিদ দিয়ে বাচ্চা রক্ষা করা যায়।
2. প্রজননক্ষম মাছ নির্বাচন করা
(ক) প্রজননক্ষম মাছ নির্বাচনের ওপর প্রজননের সাফল্য নির্ভর করে। নির্বাচিত প্রজননক্ষম মাছ পরিণত, সুস্থ ও সবল হতে হয়। কোনো প্রকার রোগে আক্রান্ত, বিকৃত দুর্বল মাছ নির্বাচন করা উচিত নয়।
(খ) আন্তঃ প্রজনন প্রতিরোধের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। এর জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে প্রজননক্ষম মাছ সংগ্রহ করা ও আন্তঃপ্রজনন নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরুষ ও স্ত্রী মাছগুলির মধ্যে বংশপরম্পরায় প্রজনন যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়।
3. প্রজননক্ষম মাছকে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো
(ক) প্রজননক্ষম মাছ সংগ্রহ করে প্রাক্–প্রজননকালে অন্তত 2 সপ্তাহ পরিবর্তিত পরিবেশে খাপ খাওয়ানো প্রয়োজন। এই সময়ে যথাসম্ভব মাছের প্রজাতিভিত্তিক প্রাকৃতিক খাদ্য বা জীবন্ত খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
(খ) ডিম নিঃসরণকারী মাছের ক্ষেত্রে প্রাক্–প্রজননকালে অনেক সংখ্যক পুরুষ ও স্ত্রী মাছ একসঙ্গে (যেমন, ড্যালিও) বা একটি করে পুরুষ ও স্ত্রী মাছ (যেমন, অস্কার) রাখতে হয়। তবে বাচ্চা প্রসবকারী মাছের ক্ষেত্রে প্রাক্–প্রজনন পরিচর্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়।
4. প্রজনন ঘটানো
(ক) সাধারণত প্রজননে উপযুক্ত মাছ সন্ধেবেলায় প্রজনন ক্ষেত্রে ছাড়তে হয়। স্ত্রী মাছ প্রথমে ছেড়ে তার দু‘দিন পর পুরুষ মাছ ছাড়লে ভাল হয়। অনেক সংখ্যক পুরুষ ও স্ত্রী মাছ একসঙ্গে ছাড়লে স্ত্রী মাছের তুলনায় পুরুষ মাছের সংখ্যা বেশি হওয়া উচিত। তবে পূর্বে নির্বাচিত জোড়বাঁধা মাছকে একসঙ্গে ছাড়তে হয়।
(খ) সরাসরি বাচ্চা প্রসবকারী মাছেদের ক্ষেত্রে সর্বদা একই প্রজাতির ও একই রঙের পুরুষ ও স্ত্রী মাছ প্রজনন ক্ষেত্রে ছাড়তে হয়। তবে প্রজননের পর মাছের বাচ্চা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পরিচর্যা করতে হয় ।
(গ) প্রজনন ক্ষেত্রে প্রজননক্ষম মাছ ছাড়ার পর মাছগুলির গতিবিধির পর্যবেক্ষণ করতে হয়। অনেক সময় পুরুষ মাছ খুব আক্রমণাত্মক হয়। সেক্ষেত্রে স্ত্রী মাছ পাল্টাতে বা বেশি সংখ্যক স্ত্রী মাছ ছাড়তে হয়।
5. মাছের বাচ্চা প্রতিপালন করা
(ক) সফল প্রজননের পর মাছের বাচ্চার সঠিক প্রতিপালন করলেই প্রজননের সাফল্য পাওয়া সম্ভব। প্রাথমিকভাবে মাছের বাচ্চার বৃদ্ধির আদর্শ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ ও নিয়মিত রোগ প্রতিরোধক দ্রব্য প্রয়োগ
করতে হয়।
(খ) যেসব মাছের বাচ্চা রোগে আক্রান্ত হয় সেগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে প্রতিষেধক প্রয়োগ করতে হয়।
প্রজনন অ্যাকোয়ারিয়াম বা ট্যাঙ্ক
রঙিন মাছের প্রজননের জন্য আলাদা অ্যাকোয়ারিয়ামে বা ট্যাঙ্কের ব্যবহারে বেশি সুফল পাওয়া যায়। এতে মাছের বাচ্চার সংখ্যা ও বাচ্চা বাঁচার হার বেশি হয়। প্রজনন কালের আগে এই প্রজননক্ষেত্র মাছের প্রজাতি অনুযায় সুসজ্জিত করে রাখতে হয়।
স্থান নির্বাচন : প্রজনন অ্যাকোয়ারিয়াম বা ট্যাঙ্কে সকালের সূর্যালোক অল্প সময়ের জন্য যাতে পাওয়া যায় সেটা পর্যবেক্ষণ করে স্থান নির্বাচন করা প্রয়োজন। তবে অবশ্যই মাছের প্রজাতিভিত্তিক পরিবেশ বিবেচনা করে স্থান নির্বাচন করা প্রয়োজন।
পরিস্রুতকরণ : প্রজননক্ষেত্রের জল নিয়মিত পরিশোধনের জন্য আভ্যন্তরীণ বক্স ফিল্টার ব্যবহার করতে হয়। এতে জল পরিস্রুত হয় ও জলে স্রোতের সৃষ্টি হয়, ফলে মাছের বাচ্চার বাঁচার হার বেশি হয়। তবে পাথরের তলদেশোস্থিত ফিল্টার ব্যবহার করা উচিত নয়।
বায়ু সঞ্চালন : প্রজননের সময় মাছের অক্সিজেনের চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়। তাই প্রজনন অ্যাকোয়ারিয়াম বা ট্যাঙ্কে মাছের সংখ্যা ও আকৃতি অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হয়। সাধারণত বায়ু সঞ্চালক যন্ত্রের সাহায্যে এই অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। তবে অক্সিজেন সরবরাহের মতো নিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজন আছে।
তাপমাত্রা : সহনশীল তাপমাত্রার বিস্তৃতির মধ্যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় মাছ প্রজননে বেশি উদ্দীপিত হয়। সাধারণত বেশিরভাগ উষ্ণমণ্ডলীয় রঙিন মাছ 25-28 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্রজনন করে। তবে অ্যাকোয়ারিয়ামের জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে 2 ডিগ্রি কম বা বেশি করলে তা মাছের প্রজনন উদ্দীপকের কাজ করে। আবার করিডোরাস মাছের প্রজাতির ক্ষেত্রে প্রজনন অ্যাকোয়ারিয়ামের জল সাইফন করে 2 সেন্টিমিটার মতো কমিয়ে সম পরিমাণ ঠাণ্ডা জল প্রবেশ করালে তা মাছের প্রজননে উদ্দীপকের কাজ করে।
জলজ উদ্ভিদ : সাধারণত প্রজনন অ্যাকোয়ারিয়ামে বা ট্যাঙ্কে মাছের প্রজাতি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার জলজ উদ্ভিদ স্থাপন করতে হয়। এক্ষেত্রে নিমজ্জিমান জলজ উদ্ভিদ পৃথক কোনো পাত্রে রোপণ করে প্রজনন আধারে বসানো হয়।
প্রজনন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মাছের প্রজনন আধার ও সরঞ্জাম
মাছের প্রজনন পদ্ধতির ওপর প্রজনন আধারের আকৃতি ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হয়। সাধারণত গোলাকার জলাধারে অন্য কোনো আকারের (আয়তাকার, বর্গাকার) জলাধারের তুলনায় মাছের চলাফেরার সুবিধা বেশি। তবে কাচের তৈরি গোলাকার জলাধার বেশি বড় আকৃতির করা সম্ভব নয় ও স্থানান্তরেরও অসুবিধা হওয়ায় আয়তাকার বা বর্গাকার জলাধার বেশি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত বড় প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে 60- 90 সেন্টিমিটার লম্বা ও ছোট প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে 30-35 সেন্টিমিটার লম্বা প্রজনন অ্যাকোয়ারিয়াম ব্যবহার করা যায়।
মাছের প্রজাতিভেদে প্রজননের জন্য বিভিন্ন প্রকার সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়। কিছু সরঞ্জাম মাছকে প্রজননে সহায়তা করে ও কিছু সরঞ্জাম ডিম ও বাচ্চার রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে। যেসব মাছ নিজেদের ডিম খেয়ে নেয় তাদের ক্ষেত্রে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। কিছু মাছ আছে যারা গর্ত করে তার মধ্যে ডিম ছাড়ে। সেক্ষেত্রে মাছ যাতে গর্ত করতে পারে তার প্রয়োজনীয় উপকরণ রাখতে হয়। কিছু মাছ আছে যারা জলজ উদ্ভিদের পাতা, ডাল ইত্যাদি ব্যবহার করে ডিম ছাড়ার আগে বাসা তৈরি করে। এদের জন্য উপযুক্ত জাতের ও পরিমাণ মত জলজ উদ্ভিদের ব্যবস্থা রাখতে হয়। এদের জন্য উপযুক্ত জাতের ও পরিমাণ মত জলজ উদ্ভিদের ব্যবস্থা রাখতে হয়। আবার কিছু মাছ গোপন জায়গায় ডিম ছাড়ে। তাদের জন্যও উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখতে হয়।
(ক) ডিম বিস্তারণকারী মাছের প্রজনন আধার
(1) সাধারণত যেসব মাছের ডিম আঠালো নয় তারা বিক্ষিপ্তভাবে সারা অ্যাকোয়ারিয়াম জুড়ে ডিম ছাড়ে ও ডিম ভেসে বেড়ায়। এদের নিজেদের ডিম খেয়ে নেওয়ার প্রবণতা আছে। তাই ডিম রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হয়।
(2) যেসব মাছের ডিম আঠালো (যেমন, গোল্ড ফিশ) তাদের প্রজনন আধারে প্রয়োজনমত জলজ উদ্ভিদ (যেমন, সেরাটোফাইলাম জাতীয়) শক্ত করে তলদেশে রোপণ করতে হয়। যাতে ডিমগুলি উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে আটকে থাকতে পারে ও মাছ সাঁতার কাটার জন্য কম জায়গা পায় ।
(3) যেসব মাছের ডিম আলগা ও জলে নিমজ্জিত থাকে তাদের প্রজনন অ্যাকোয়ারিয়ামের জলের গভীরতা কম রাখতে হয় ও তলদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে নুড়িপাথর দিতে হয়। নিজেদের ডিম নিজেরা খেয়ে নেয় এমন মাছের প্রজননের সময় ব্রিডিং ট্র্যাপ ও গ্রিড বা জালের খাঁচা ব্যবহার করলে ডিমের ও মাছের বাচ্চার বাঁচার হার বাড়ে। তবে জালের ফাঁসের মাপ মাছের ডিমের আকৃতির ওপর নির্ভর করে যাতে ডিম সহজেই জালের ফাঁস দিয়ে গলে যেতে পারে কিন্তু মাছ যেতে না পারে। যেমন, ডিমের আকৃতি ছোট এমন মাছের ক্ষেত্রে 3 মিলিমিটার × 3 মিলিমিটার ও ডিমের আকৃতি বড় এমন মাছের ক্ষেত্রে ও মিলিমিটার × 3 মিলিমিটার ফাঁসের জাল ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে প্রজনন অ্যাকোয়ারিয়ামে জাল স্থাপন করা হয়। অ্যাকোয়ারিয়ামের আকার ও আকৃতি অনুযায়ী একটি 5 সেন্টিমিটার পুরু প্লাস্টিক নির্মিত কাঠামোর সঙ্গে জাল আটকে এমনভাবে বসাতে হয় যাতে ঠিকমত স্থাপিত হয় ও জাল ও অ্যাকোয়ারিয়ামের তলদেশের মধ্যে অন্তত 5 সেন্টিমিটার জায়গা থাকে।
(খ) ডিম স্থাপনকারী মাছের প্রজনন আধার
যে সব মাছ ডিম স্থাপন করে সে সব মাছ বাচ্চার প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল হয়। সাধারণত চিখলিড পর্বের মাছেদের মধ্যে বাচ্চা রক্ষণাবেক্ষণের গুণ দেখা যায়। এই জাতীয় অধিকাংশ মাছই নিজেরাই নিজেদের সঙ্গী খুঁজে নেয়। এদের ডিম স্থাপনের জন্য অ্যাকোয়ারিয়ামের তলদেশে নুড়ি–পাথর পাতা, মার্বেল ইত্যাদি দিতে হয়। (গ) ডিম মুখে পরিস্ফুরণকারী মাছের প্রজনন আধার
সাধারণত এই জাতীয় মাছ জলের তলায় ছোট গর্ত করে তার মধ্যে ডিম পাড়ে ও সেখানে ডিমের বহিঃনিষেক সম্পন্ন হয়। প্রজনন অ্যাকোয়ারিয়ামের তলদেশে 5 সেন্টিমিটার পুরু মিহিবালি বা মাটির স্তর দিতে হয়। নিষেকের পর ডিমগুলি নিজের মুখের গহ্বরে স্থানান্তরিত করে ও সেখানে পরিস্ফুরণ হয়।
(ঘ) জলের তলায় গর্তে ডিম পাড়ে এমন মাছের প্রজনন ‘আধার
সাধারণত এই জাতীয় মাছ জলের তলায় গর্তে ডিম পাড়ে। তাই প্রজনন অ্যাকোয়ারিয়ামের তলদেশে নরম মাটির স্তর দিতে হয়। অ্যাকোয়ারিয়ামে মাটি দেওয়ার আগে মাটিকে ভাল করে শোধন করে নিতে হয়।
(ঙ) বাসা নির্মাণকারী মাছের প্রজনন আধার
কিছু মাছ প্রজননের সময় অ্যাকোয়ারিয়ামের গায়ে বা জলজ উদ্ভিদের ভাসমান পাতার ওপর শ্লেষ্মা সমন্বিত বুদবুদের বাসা তৈরি করে। এদের জন্য অ্যাকোয়ারিয়ামে হাইগ্রোফিলা, সেরাটোফাইলাম ইত্যাদি জলজ উদ্ভিদ দিতে হয়। যেহেতু বায়ু সঞ্চালনে এই বাসা নষ্ট হয় তাই এ সময়ে বায়ু সঞ্চালন বন্ধ রাখতে হয়। ডিম ছাড়ার পর স্ত্রী মাছটিকে সরিয়ে নিতে হয়। পুরুষ মাছ ডিম রক্ষণাবেক্ষণ করে। মাছের বাচ্চা একটু বড় হলে পুরুষ মাছটিকেও সরিয়ে নিতে হয়।
(চ) বাচ্চা প্রসবকারী মাছের প্রজনন আধার
বাচ্চা প্রসবকারী মাছ খুব সহজেই অ্যাকোয়ারিয়াম বা ট্যাঙ্কে প্রজনন করে। প্রজনন আধারে জলে নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ দিতে হয়। বাচ্চা প্রসব করার পর স্ত্রী মাছটিকে সরিয়ে নিতে হয়। প্রজনন খাঁচা ব্যবহার করলে বাচ্চার বাঁচার হার বেশি হয়।
প্রজনন আধারের জলের প্রকৃতি
মাছের যেমন প্রজনন বৈচিত্র্য আছে তেমনি প্রজননের জন্য জলের গুণাবলীর প্রজাতিভিত্তিক তারতম্য আছে। যদিও দূষণমুক্ত জল সকল প্রজাতির মাছের জন্য অপরিহার্য। কিছু মাছ মৃদু আম্লিক জলে, কিছু মাছ মৃদু ক্ষারীয় জলে ও কিছু মাছ ক্ষারীয় জলে ডিম পাড়ে। তাই প্রজননের জন্য মাছের প্রজাতিভিত্তিক প্রজনন সহায়ক গুণমানের জলের ব্যবস্থা প্রজনন আধারে করতে হয়।
রঙিন মাছের প্রজনন কাল
অধিকাংশ রঙিন মাছের প্রজনন কাল হল গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকাল। সাধারণত সন্তান প্রসবকারী মাছেরা সারা বছর বাচ্চা প্রসব করে। আবার গোল্ড ফিশ ও ক্যাটফিশ বর্ষাকাল ও গ্রীষ্মকালে প্রজনন করে।
মাছের প্রজনন নির্ধারক কারণ
যেসব মাছ বছরের নির্দিষ্ট ঋতুতে প্রজনন করে তাদের প্রজনন কতগুলো বাহ্যিক কারণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বাহ্যিক কারণগুলো মাছের শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে প্রজননে উদ্দীপিত করে। যেমন— ঋতু পরিবর্তন, দিনের দৈর্ঘ্য ও জলের ভৌত–রাসায়নিক অবস্থা মাছের প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এসব বাহ্যিক কারণ প্রজনন সহায়ক হলেও সফল প্রজননের জন্য মাছের সঠিক পুষ্টি ও প্রজননক্ষম বয়স হওয়া আবশ্যক।
মাছের বাচ্চা প্রতিপালন
রঙিন মাছের সফল প্রজননের জন্য এদের প্রজাতিভিত্তিক অপত্য যত্নের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। অন্যান্য মাছ বা প্রাণীর আক্রমণের হাত থেকে নিজেদের বাচ্চাকে রক্ষা করা, ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য আদর্শ, পরিবেশ সৃষ্টি করা ও অন্যান্য সমস্যা থেকে রক্ষা করাই এদের মূল লক্ষ্য। যেমন—
বুদবুদের বাসা নির্মাণ—এই প্রকারের মাছেরা (সায়ামিজ ফাইটার, গোরামি প্রভৃতি) বাতাস ও মুখের শ্লেষ্মা মিশিয়ে বুদবুদের বাসা তৈরি করে। পুরুষ মাছ ডিমগুলো বুদবুদের বাসায় প্রতিস্থাপিত করে। বাচ্চারা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত পুরুষ মাছ বাচ্চা পাহারা দেয়।
ত্বকের নিঃসরণ—এই প্রকার মাছের (ডিসকাস) বাচ্চারা পিতা–মাতার দেহের সংলগ্ন থাকে ও তাদের ত্বক নিঃসৃত রস থেকে পুষ্টি সাধন করে।
জল সিঞ্চন—এই প্রকার মাছেরা (অ্যাঞ্জেল) ডিমের ওপর জল সিঞ্চন করে যাতে ডিম পরিস্ফুরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায়।
উদ্ভিদ বাসা নির্মাণ—এই প্রকারের মাছের (স্টিবল ব্যাক) পুরুষ মাছটি উদ্ভিজ্জ অংশ ও স্ববৃক্ক নিঃসৃত রস দিয়ে বাসা নির্মাণ করে। স্ত্রী মাছ এই বাসায় ডিম পাড়ে। পুরুষ মাছ ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়া পর্যন্ত ডিম পাহারা দেয়।
পাউচ বা পেটের থলিতে যত্ন—এই প্রকারের মাছেরা (সী হর্স ও পাইপ ফিশ) ডিমগুলি পেটের থলিতে পরিস্ফুরণের জন্য রাখে।
গাছের পাতায় ডিম পাড়া—এই প্রকারের মাছেরা জলজ উদ্ভিদের পাতায় ডিম পাড়ে। তারপর ডিম পরিষ্কার করে তাতে জল সিঞ্চন করে। 5 দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর বালির গর্তে বাচ্চাগুলিকে স্থানান্তরিত করে ও বাচ্চা পাহারা দেয়। গর্তে লুকিয়ে রাখা—এই প্রকারের মাছেরা (গোবি জাতীয়) খালি ঝিনুকের খোলে, পাথরের খাঁজে বা তলদেশ খুঁড়ে গর্ত করে ডিম রাখে!
জলের ঝাপটা দেওয়া—এই প্রকারের মাছেরা (টেট্রা) ডিমগুলিতে কিছু সময় অন্তর প্রায় 7 দিন যাবৎ জলের ঝাপটা দেয় যতক্ষণ না বাচ্চা বের হয়।
মুখগহ্বরে স্ফুরণ করা—এই প্রকারের মাছেরা (চিখলিড জাতীয়) ডিমগুলি মুখের মধ্যে রাখে ও সেখানে ডিম পরিস্ফুরিত হয়। বাচ্চা পরিস্ফুরণের পর মায়ের সঙ্গে চলাফেরা করে ও বিপদ আশঙ্কা করলে মায়ের মুগগহ্বরে আশ্রয় নেয়।
ডিম পরিস্ফুরণের সময়কাল
মাছের প্রজাতি ভেদে ডিমের পরিস্ফুরণের সময় বিভিন্ন হয়। সাধারণ ডিম বিস্তারণকারী ও বাসা নির্মাণকারী মাছেদের ডিম 18-72 ঘণ্টার মধ্যে ফুটে বাচ্চা বের হয় ও 2 দিন পর স্বাবলম্বী হয়। ডিম স্থাপনকারী মাছের ডিম 18-72 ঘন্টার মধ্যে ফুটে বাচ্চা বের হয় ও 7-10 দিন পর স্বাবলম্বী হয়। মুখে পরিস্ফুরণকারী মাছের বাচ্চারা স্বাবলম্বী হতে প্রায় 2 সপ্তাহ সময় লাগে।
রঙিন মাছের প্রণোদিত প্রজনন
কোনো উদ্দীপক প্রয়োগ করে মাছকে প্রজননে উদ্দীপিত করে প্রজনন করানোর পদ্ধতিকে প্রজনন বলে। সাধারণত একই প্রজাতির বা নিকটতম প্রজাতির মাছের পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাস প্রয়োগ করে অধিকাংশ মাছের প্রণোদিত প্রজনন করা হয়। তবে পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাস তৈরি করা ও তার সংরক্ষণের অসুবিধার জন্য সমগুণ সম্পন্ন রাসায়নিক উদ্দীপক (যেমন ওভাপ্রিম) ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়েছে। কার্প জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে প্রণোদিত প্রজনন করানো হয়।
সাধারণত রঙিন মাছের ক্ষেত্রে নির্যাস মাত্রা অন্যান্য বড় কার্পজাতীয় মাছের তুলনায় অনেকগুণ বেশি প্রয়োগ করতে হয়। যেমন; রেড টেইল ব্ল্যাক শার্কের জন্য নির্যাস মাত্ৰা প্রতি 100 গ্রাম মাছের দেহ ওজনের জন্য 2-3 মিলিগ্রাম।
প্রণোদিত প্রজননের দ্বারা মাছের গুণগত মানের উন্নয়ন করা যায়। এছাড়া প্রয়োজন মতো কৃত্রিম পরিবেশে মাছের বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। নানা প্রজাতির রঙিন মাছের প্রণোদিত প্রজনন সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে। যেমন, গোল্ড ফিশ, মিষ্টি জলের শার্ক, গোরামি, চিখলিড প্রভৃতি মাছ।