পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
Paribesh dushan o tar pratikar Rochona Bengali
[ ভূমিকা – বিভিন্ন প্রকারের দূষণ — দূষণের ভয়াবহতা — পরিবেশ দূষণের প্রতিকার—উপসংহার ]
ভূমিকাঃ “অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মক্ত বাযু,
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু ”
—রবীন্দ্রনাথ
আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক অবস্থার সমষ্টিই আমাদের পরিবেশ। অর্থাৎ আমরা যে বিভিন্ন ধরনের অবস্থার মধ্যে বাস করি তা–ই আমাদের পরিবেশ। স্বাভাবিকভাবেই আমরা সব সময়েই এই পরিবেশের সাথে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত। পরিবেশ বিশুদ্ধ থাকলে আমরা সহজেই এই পৃথিবীতে জীবন নির্বাহ করতে পারি, আর পরিবেশ বিষাক্ত হলে আমাদের জীবন বিষময় হয়ে ওঠে । মানব সভ্যতার প্রথম প্রভাতে পরিবেশ ছিল বিশুদ্ধ, মানষের জীবন ধারণের উপযোগী । নগর সভ্যতার যতই সম্প্রসারণ ঘটছে ততই নির্বিচারে প্রকৃতি সংহার ও আবহাওয়া দূষণে মানুষ অতি দ্রুত এই পৃথিবীতে ডেকে আনছে ধ্বংস ও অবক্ষয়ের মহামারী।
বিভিন্ন প্রকার পরিবেশ দূষণঃ আমাদের এই পরিবেশ নানাভাবে দূষিত হতে পারে । কলকারখানা নিঃসৃত দূষিত গ্যাস, রাসায়নিক পদার্থ তৈরীর কারখানা, রাস্তায় চলাচলকারী অগণ্য যানবাহন নিঃসৃত বিষাক্ত গ্যাস, তৈলশোধনাগার, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, বাড়ীর জ্বালানীর ধোঁয়ার কার্বন–মনোক্সাইড, উচ্চাকাশে জেটপ্লেন নিঃসৃত অতি বিষাক্ত গ্যাস ফ্লুরোকার্বন প্রভৃতি বায়ু, দূষিত করে । জল দূষণের উপাদানও অনেক । শহরের কলকারখানা নিঃসৃত বর্জ্য– পদার্থ মিশ্রিত জল নদীতে পড়লে নদীর জল দূষিত হয় । এছাড়া গবাদী পশুর স্নান, ময়লা, আবর্জনা, মানষের মল–মূত্র, পয়ঃপ্রণালী বাহিত জল জলাশয় বা নদীতে পড়লে জল দূষিত হয় । এছাড়া রয়েছে শব্দ দূষণ। বর্তমানে রাস্তাঘাটে চলাচলকারী যানবাহনের সাংঘাতিক ইলেকট্রিক হর্ন, পাড়ায় পাড়ায় মাইক, মিউজিক সিস্টেমের অপব্যবহার শব্দ দূষণ তথা পরিবেশ দূষণ করে ।
পরিবেশ দূষণের স্বরপ ও ভয়াবহতাঃ জল, বায়ু ,ভূমি, শব্দ ইত্যাদি পরিবেশের প্রধানতম উপাদান সমূহের ক্ষতি হচ্ছে প্রতিনিয়তই । হুগলী শিল্পাঞ্চলের পাশ দিয়ে বয়ে আসা হুগলী নদীর জল প্রতি মুহুর্তে‘ বিষাক্ত হচ্ছে। আশপাশের হাজার হাজার কলকারখানা নিঃসৃত ক্ষতিকর তরল বর্জ্যপদার্থ নলদ্বারা বাহিত হয়ে হুগলী নদীতে এসে প‘ড়ে জল দূষিত করছে। গ্রামাঞ্চলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হবার সময় এই নদীর বিষাক্ত জল যখন গ্রামবাসীরা ব্যবহার করছে তখন তারা নানা ধরণের পেটের রোগ ও চর্ম রোগের শিকার হচ্ছে। এরফলে অনেকের মৃত্যুও হচ্ছে ।বায়ু দূষিত হবার জন্য বাতাসে আমাদের প্রাণদায়ী অক্সিজেনের পরিমাণ কমেছে আর ভীষণভাবে বাড়ছে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন, সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদি প্রাণঘাতি গ্যাসের পরিমাণ। বায়ুমণ্ডলে এই দূষণ ক্রিয়া বৃদ্ধির অর্থ আমাদের দেহে ক্যানসার, ফুসফুসের ক্ষতরোগ, আর ঘটছে মানসিক গোলযোগ । আর শব্দ দূষণ –এর ফলে রোগী, বৃদ্ধ ও শিশুর মৃত্যুতো এক সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে । বাড়ছে বধিরতা । শহর তথা শহরাঞ্চলের রাস্তায় অসংখ্য যানবাহন নিঃসৃত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বাতাসে মিশে চলেছে মারাত্মকভাবে। প্রভাবে প্রাণ প্রদায়ী ‘ওজোন গ্যাস‘ তার মাত্রা সমতা হারাচ্ছে ।
এতরকমভাবে পরিবেশ দূষণের ফলে মাতৃগর্ভ থেকে শিশু বধির, বিকলাঙ্গ, অন্ধ হয়ে জন্ম নিচ্ছে । রোগের প্রকারও বেড়ে চলেছে হন হন করে । এই দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে না পারলে পরিবেশের ভারসাম্য হারানোর সাথে সাথে মানব অস্তিত্ব হয়ে পড়বে বিপন্ন।
পরিবেশ দূষণের প্রতিকারঃ পরিবেশ দূষণ তথা প্রকৃতির অবক্ষয়ের কারণ তথা এর প্রতিকার করার বিষয়ে বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই সচেতন হয়েছে। সমগ্র বিশ্বের উপলব্ধ হয়েছে এখনই পরিবেশ দূষণের প্রতিকার করা ছাড়া ধরণীতে মানষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্য কোন উপায় নেই । চিন্তাগ্রস্থ সকলেই । পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আশংকা চিন্তিত পরিকল্পনা মাফিক কাজ এখন থেকে শুরু করে না দিলে কেবল পরিবেশ নয়, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক প্রকৃতিও আয়ত্বের বাইরে চলে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে এই আধুনিক পৃথিবী। রাষ্ট্রপুঞ্জের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিশ্বের প্রতিটি নাগরিককে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বৎসর ৫ই জুন তারিখটি তাদের নির্দেশে পথিবীতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসাবে পালিত হয়। প্রতি বৎসর বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে এই দিনটিতে পরিবেশ দূষণরোধে সমাজ কল্যাণকর নানান ধরনের কাজ করা হয়। যেখানে সেখানে শিল্পনগরী স্থাপন না করে, বনভূমি সংরক্ষণ ও বনসৃজনের ব্যবস্থা করে, পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষামূলকভাবে না ঘটিয়ে, কলকারখানায় আইন করে বর্জ্যপদার্থ জলে না ফেলে মাটির নীচে জমা করার ব্যবস্থা করে, শব্দদদূষণ রোধ করে পরিবেশ দূষণের প্রতিকার করা যায় । তবে শধুমাত্র আইন করে পরিবেশকে দূষণের হাত হতে রক্ষা করা যাবে না । এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য ।
উপসংহারঃ পরিবেশ দূষণের সমস্যা আজ পৃথিবীর প্রতিটি দেশের ; প্রতিটি মানষের সমস্যা । মানব সভ্যতা আজ এক ভয়ংকর সংকটের মুখোমুখি। আমেরিকা, রাশিয়া, জার্মানী ফ্রান্স, বৃটেন, জাপান প্রভৃতি উন্নত দেশ পরিবেশ দূষণের প্রতিকারে মস্ত ভূমিকা গ্রহণ করেছে । ভারতের সংবিধানেও পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের সর্ত আরোপ করা হয়েছে। জল, স্থল ও অন্তরীক্ষে যে ব্যাপক দূষণ শুরু হয়েছে তার প্রতিকার করা দরকার। অবিলম্বে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ, প্রতিটি জাতিকে এ ব্যাপারে এক সাধনার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে । এই সাধনায় কৃতকার্য হতে পারলেই আগামী পৃথিবী মানুষের জীবনের পরিপোষণে সহায়ক হয়ে উঠতে পারবে ও মানুষের ভবিষ্যৎ সরক্ষিত ও সুনিশ্চিত থাকবে ।
অনরপে প্রবন্ধঃ
(১) বায়ু দূষণঃ
[ ভূমিকা – আধনিক সভ্যতার অভিশাপ – বায়ু দূষণের কারণ—বায়ু দূষণের ফল—বাযু দূষণ থেকে মুক্তির উপায়—উপসংহার ]
(২) জল দূষণঃ
[ ভূমিকা — গ্রামে ও শহরে জল দূষণ—জল দূষণের কারণ—দূষণের কুফল— প্রতিকারের উপায় – উপসংহার ]