দেশভ্রমণের উপযোগিতা
Deshbhramaner Upayogita (Roshona Bengali)
[ ভূমিকা—দেশভ্রমণের অনুভূতি – দেশভ্রমণের শিক্ষা–ভারতের পর্যটন ক্ষেত্র—উপসংহার ]
ভূমিকাঃ চলিষ্ণতাই জীবন ধর্ম । ঋষিদের চরৈবেতি মন্ত্রে, বেগ‘স–এর তত্ত্ববাদী ভাবনা ও ‘বলাকার‘ রবীন্দ্রনুভূতি থেকে আমরা পেয়েছি এগিয়ে চলার প্রেরণা। চলার মন্ত্রটি তাই কোন এক যুগের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয় ৷ চলাই আমাদের মক্তির দিশারী, আমাদের প্রেরণা । বৈচিত্র্যবিহীন ছকে বাঁধা জীবন থেকে তাই আমরা প্রতিনিয়ত মুক্তি পেতে চাই । এই ভাবনাই আমাদের প্রেরণা দেয় দেশভ্রমণে ।
দেশভ্রমণের অনভূতিঃ দেশভ্রমণের মধ্যে দিয়ে আমাদের মনে বিভিন্ন রকমের অনুভূতি জাগে। এক গ্লাস জল দেখলে আমাদের কিছুই মনে হয় না । কিন্তু ঐ জলই যখন পাহাড়ের বুক চিরে ঝরণার আকারে নেমে আসে তখন আমরা ঝরণার কস্তুরী নেশায় মাতাল হয়ে যাই । অনন্ত সাগর কল্লোল দেখে মনে হয় এটা শুধুই জল । আমরা নদী, সমুদ্র, ঝরণা, জলপ্রপাতের বিচিত্র ধরনের কথা বলা শানতে পাহাড়ের চড়াই, উৎরাই পথে চলতে গিয়ে আমাদের এই জীবনটাকে সহজেই সুন্দর বলে মনে করতে পারি ।
দেশভ্রমণের শিক্ষাঃ দেশভ্রমণের শিক্ষামূলক উপযোগিতাও কিছ, কম নয়। বই–এর কালো কালো অক্ষরগুলি থেকে কোনো দেশের ভৌগোলিক অবস্থা সম্বন্ধে যতটকু জানতে পারি, নিয়মিত দেশভ্রমণ করলে আপনা হতেই সে সমস্ত বিষয়ে জ্ঞান অর্জিত হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর— একথাটি বই পড়ে বোঝার চেয়ে একবার দীঘা ঘুরে এলে সাগরের ধারণাটি অনেক বেশী স্পষ্ট হয়ে যায়। বই এর বর্ণনা থেকে কোন কিছুর প্রকৃত সৌন্দর্য উপলখি কেমন করে সম্ভব হবে ? উত্তরের তুষার শুভ্র হিমতনু হিমালয়ের প্রকৃত বর্ণনা দেওয়া বাস্তবে অসম্ভব। অভিজ্ঞতা না থাকলে কেবল বই পড়ে মরু, সাগর ও হিমশৈলের ভয়ংকর সৌন্দর্যে‘র কথা উপলব্ধি করা যায় না। আসলে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কোনো ঠিকানা নেই । তাই, প্রতিটি দেশেই শিক্ষাদানের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে ভ্রমণের উপযোগিতা স্বীকৃত হয়েছে ।
ভারতের পর্যটন ক্ষেত্রঃ ভারতবর্ষ‘ বিশ্ব ভ্রমণ পিপাসুদের তীর্থ স্থান, ভস্বর্গ কাশ্মীর, তুষাররাতে হিমালয়, মন্দিরের দেশ দক্ষিণ ভারত। রহস্যময় সাগরের বুকে বিবেকানন্দ শিলা, ইলোরা, অজতা ভাস্কর্য‘, তাজমহলের কারুকার্য, সমুদ্রে তরঙ্গ মেলা গয়া, পুরী, দীঘা, কন্যাকুমারীর অমোঘ আকর্ষণে আকৃষ্ট হয় দেশ– বিদেশের হাজারো মানুষ। এছাড়া এদেশের কুম্ভমেলা, মকর–সংক্রান্তির গঙ্গা– সাগর মেলা, শোনপুরের মেলায় বহ, পর্যটক ভীড় জমান।
দেশ ভ্রমণ শুধুমাত্র শিক্ষার অঙ্গ—এমন কথা ভাবলে ভুল হবে ৷ কাশ্মীরের সুক্ষকারুকার্য খচিত শাল অনেক বিদেশী পর্যটকরাও কিনে নিয়ে যান। বিদেশী পর্যটকদের তাই ঠিকভাবে আমাদের দেশে আনতে পারলে আমাদের দেশের কোষাগারে অনেক বিদেশী মুদ্রা জমা পড়বে । আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতেও সার্বিক উন্নয়নে বিদেশী মুদ্রার এক বিরাট ভূমিকা আছে। তাই বিদেশীদের কাছে ভারত ভ্রমণকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে ৷ অনেক সময় বিদেশীরা বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি ধরতে গিয়ে মুষ্টিমেয় ছিনতাইবাজ ও অসাধু ট্যাক্সি ওয়ালাদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে যান ৷ এইভাবে যদি আমাদের পর্যটন ব্যবস্থার ত্রুটিগুলি ধরা পড়ে যেতে থাকে তাহলে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নতি ঘটবে না। নিত্য নতুন পর্যটন ক্ষেত্র তৈরী করার সাথে সাথে সেই সমস্ত জায়গায় রাত্রিবাসের পর্যাপ্ত সুযোগ করে দিতে হবে। আশার কথা সংবাদপত্রের মাধ্যমে ভারতের প্রতিটি রাজ্যই তাদের পর্যটন ক্ষেত্রের কৌতুহল উদ্রেককারী বিজ্ঞাপন দানের ব্যবস্থা করেছেন। দেশী বিদেশী পত্র–পত্রিকার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে এই ধরণের দেবার ব্যবস্থা করতে পারলে হয়ত আরো অনেক বেশী বিদেশী পর্যটককে আমরা আমাদের দেশে পেতে পারি ।
উপসংহারঃ বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতির সাথে সাথে এবং যানবাহন ব্যবস্থার প্রভুত উন্নতির ফলে পৃথিবীর সর্বত্রই এই দেশভ্রমণের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মার্কিন দেশের চন্দ্রলোক ভ্রমণের অভিনব পরিকল্পনাটি এখন আর আমাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হয় না। কিন্তু এসব পরিকল্পনা বাস্তবের ছোঁয়া পাক, বা না পাক, প্রতিদিনের একঘেয়েমি থেকে জীবনকে মাক্ত করার জন্য ফি–বছর পাজোর ছুটিতে ট্রেনে চেপে পাহাড় কিংবা সাগরের কাছাকাছি ছুটে যাওয়া সম্ভব করে তুলতে পারলেই আমরা দেশভ্রমণের অসীম আনন্দের অংশীদার হয়ে জীবনের মাঝে বেচে থাকার সঠিক অর্থটাকে খুঁজে নিতে পারব ।