টুরিস্ট বাসে ভ্রমণ
[ ভূমিকা—টুরিস্ট বাস–টুরিস্ট বাসে যাত্রা — ভ্রমণের স্থান — বর্ণনা — অভিজ্ঞতা—প্রয়োজনীয়তা—উপসংহার ]
ভূমিকাঃ ধন্য এই মানব জীবন। বিধাতার দেওয়া আমাদের দুটি চোখ। চোখ মেলে আমরা দেখি পৃথিবীর রূপ; প্রকৃতির অপূর্ব দৃশ্যাবলী। ভ্রমণ নয়নের তৃপ্তি—ননের সুখ–অফরত আনন্দদায়ক। নয়নের তৃপ্তি আমরা পাই ঘরের বাইরে পা ফেললেই । এই ঘরের বাইরে পা ফেলার আর এক নাম ভ্রমণ । ভ্রমণের দ্বারা আমরা বিচিত্র জ্ঞানের অধিকারী হই। বই পড়ে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি—ভ্রমণের দ্বারা তা মনের মাঝে পাকা—স্থায়ী আসন লাভ করে। ভ্রমণে আমরা বাস্তব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করি। শধুমাত্র বদ্ধ পরিবেশ থেকে, গতানুগতিকতা থেকে, একঘেয়েমি থেকে মক্তি পাওয়াই নয়—তার সাথে অনাবিল আনন্দ পাবার দুর্বার হাত ছানিই আমাদের ভ্রমণের ডাক দেয় ৷ সে ডাক যার ঠিক ঠিক কানে পৌঁছায়—তাকে ঘরে ধরে রাখাই দায়।
টুরিস্ট বাসঃ আধুনিক যুগে অতীতের ভ্রমণ কালে পথের বিভীষিকা সমূহে সর্বাংশে বিদূরিত হয়েছে “টারিস্ট বাসের” আবির্ভাবে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষেদের ভ্রমণের স্বাদ মেটানোর জন্য দূর পাল্লার গদি আঁটা আরামপ্রদ বিশাল বিশাল বাসকেই ট্যুরিস্ট বাস বলে। বিভিন্ন ট্রাভেলিং এজেন্সী মানুষের অবাধ ও আরাম– দায়ী ভ্রমণের উদ্দেশে “টুরিস্টবাসের” আবির্ভাব ঘটিয়েছে। ইংরেজী শব্দ “tour” এর বাংলা প্রতিশব্দ হবে “ভ্রমণ” । কাজেই ভ্রমণ রসিক যাত্রীদের নিয়ে যে সব বাস দূরদূর স্থানে নির্দিষ্ট দিনের জন্য নিয়ে যায় আবার যাত্রারম্ভের স্থানে ফিরিয়ে আনে তাদেরই “টারিস্ট বাস” বলে ।
টারিস্ট বাসে যাত্রাঃ গত বছর অর্থাৎ সদ্য শেষ হওয়া, ২০২৪ সালের গরমের ছুটিতে আমরা মাস্টার মশায়দের সাথে এক টারিস্ট বাসে দীঘা ভ্রমণে যাই । মাস্টার মশাইরা এবং তাঁদের পরিবারবর্গ ছেলেমেয়েরাও দীঘা ভ্রমণের সঙ্গী হয়েছিল।যাওয়ার জন্য গাড়ী ভাড়া ও খাওয়া দাওয়া প্রভৃতির জন্য ২৫০০ টাকা করে মাথা পিছু, চাঁদা ধরা হয়েছিল । ২৫শে জুন ২০২৪ আমাদের যাত্রা করার দিন স্থির হয়। আমাদের স্কুলের কাছ থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় বাস ছাড়বে ঠিক হয় এবং চলার পথে ৪/৫ জন মাস্টারমশাইদের তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা আগে থেকেই
ঠিক করা ছিল।
ভ্রমণের স্থানঃ ভ্রমণের স্থানটি হল, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বঙ্গোপসাগরের তীরে ঝাউবন অধ্যূষিত যৌবন মদমত্তা দীঘা। সমদ্র তীরবর্তী সুন্দর স্থান দীঘা।
অভিজ্ঞতাঃ আমাদের টুরিস্ট বাসের নাম ছিল ‘মঙ্গলা‘। ‘মঙ্গা‘ আমাদের নিয়ে, মানে আমাদের বাহান্ন জন যাত্রী নিয়ে দৌড় শুরু করল সন্ধ্যা সাড়ে ছ‘টায় ৷ উলুবেড়েতে বোম্বে রোড ধরে সোজা কোলাঘাট। কোলাঘাটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের সকলকে আলোর বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিল। রাত বারোটাকে মালুমই হয়নি রাত বলে। বহুলোক, হোটেল, চাপান বিড়ির দোকান রাস্তার ধারে খোলা ৷ ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম করে নরঘাট ব্রীজ পেরিয়ে কখনো আলো, কখনো অন্ধকারকে হেডলাইট ও হর্ন–এর তীব্র চীৎকারে ফালাফালা করে আমাদের ‘মঙ্গলা‘ দীঘা পৌঁছাল ভোর ৪টা নাগাদ। আলো–আঁধারের পাতলা ঘোমটায় ঢাকা তরুণী দীঘাকে আমরা সমদ্র গর্জন সাক্ষী করে দেখবার জন্য সঙ্গে সঙ্গেই সামনের বাঁধানো দীঘা তীরে গেলাম । প্রতীক্ষা করতে থাকলাম সূর্যোদয়ের ঠিক পাঁচটা বেজে একচল্লিশ মিনিটে সমদ্রের কালো জলকে লালাভ করে গোল একটা বড় থালার মত লাল সূর্য হঠাৎ আকাশ পটে যেন আটকে গেল ৷ দীপ্তি নেই তার। তারপর ধীরে ধীরে অরুণ রাগে রঞ্জিত হয়ে সূর্যদেব স্ব–মহিমায় প্রকাশিত হোল। আঁধার দীঘা হোল আলোকিত । ইতি মধ্যে ৬/৭টা টুরিস্ট বাস লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে আর পিল পিল করে ভ্রমণ যাত্রী সমদ্রের টানে এগিয়ে আসছে ।
বেলা বাড়ার আগেই আমরা নির্দিষ্ট আস্তানা বাসায় হাজির হয়ে জামা কাপড় বদলিয়ে জলখাওয়া সেরে আর এক প্রস্থ দীঘার তীর ধরে বেড়ালাম । সমদ্রের জলে ঢেউয়ের নাচের তালে তাল মিলিয়ে স্নান—না ঠিক বলা হোল না– ‘আনন্দ–স্নান‘ সারা হোল । তারপর হোটেল মাংস–ভাত–চাটনি । কি সে তৃপ্তি । তা বলে বোঝানো যায় না। বিকালে উড়িষ্যার সীমারেখা ধরে চন্দনেশ্বরের মন্দির দেখতে যাওয়ার আনন্দও মনে রাখার মত ।
প্রয়োজনীয়তাঃ ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা অনেক দিক দিয়ে। বই পড়ে যে অভিজ্ঞতা আমরা পাই—তা সম্পর্ণ হয় চোখে দেখার জিনিষ চোখে দেখতে পেয়ে । দীঘার যত ভাল ভাল বর্ণনাই আমরা কোন পুস্তকে পড়ি না কেন দীঘা স্থানটা ঠিক কেমন তা জানতে হলে অতি অবশ্য দীঘা ভ্রমণ দরকার । চোখে দেখে হাতে স্পর্শ করে আমরা যে অভিজ্ঞতা পা–তাই বইয়ের পাতায় ধরা যেতে পারে না ।
উপসংহারঃ যৌবন মদমত্তা দীঘা – সমূদ্র তরঙ্গের একান্ত সখী, নব নব রূপে সজ্জায় সজ্জিতা দীঘা, ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে বার বার আহ্বান জানাবে। যত দিন যাচ্ছে—দীঘা তত অপরূপ রূপে গড়ে উঠছে। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ প্রান্তে সমদ্রের তীরে ভ্রমণের এমন এক অপূর্ব স্থান প্রকৃতির দানে সমৃদ্ধ। সমদ্র তীরের সৌন্দর্যে‘র বিচারে পুরীর পরেই দীঘার স্থান—একথা একবাক্যে বলা যায় ৷