
রঙ্গিন মাছের খাবার
Discover the best fish food for your aquarium with our comprehensive guide. Learn about different types of fish food, feeding schedules, and tips for keeping your fish healthy and happy.
মাছের খাবার
মাছেদের অনেক রকম খাবার দেওয়া যেতে পারে কিন্তু যে খাবারই দিন খুব অল্প পরিমাণে দিতে হবে যা মাছেরা 10 মিনিটের মধ্যে খেয়ে ফেলবে এবং অবশিষ্ট কিছু পড়ে থাকবে না। দিনে 1 বার বা 2 বার দেওয়া যেতে পারে। রোজ সকালে ও বিকালে দিতে পারলে ভালো হয়। একদিন খেতে না দিলে ক্ষতি হবে না কিন্তু বেশি খেতে দিলে মাছের ক্ষতি হবে। কারণ সব খাবার মাছ খেতে পারবে না, তলায় পড়ে থেকে সেই খাবার পচে গিয়ে জলকে দূষিত করে তুলবে।
মাছের খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস বিভিন্ন। সাধারণত বসবাসের জায়গার প্রকৃতি, শারীরবৃত্তীয় কাজ, জীবন সংগ্রাম, খাদ্য উপকরণের সহজলভ্যতা, আকারগত ও পুষ্টিমূল্য ও উপযোগী অভিযোজন দ্বারা মাছের খাদ্যাভ্যাস তৈরি হয়। আবার শারীরবৃত্তীয় কারণে একই প্রজাতির মাছের বিভিন্ন দশায় খাদ্যাভ্যাস বিভিন্ন হয়। খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী মাছকে প্রধানত 3 ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—
(1) শাকাশী—যে সব মাছ প্রধানত উদ্ভিজ্জ খাদ্য খায় তাদের শাকাশী মাছ বলে। উদ্ভিজ্জ খাদ্য বলতে খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনুবীক্ষণিক উদ্ভিদকণা (ফাইটোপ্লাঙ্কটন), ছোট ছোট জলজ উদ্ভিদ এমনকি বড় বড় জলজ উদ্ভিদও বোঝায়। শাকাশী মাছের পৌষ্টিকনালীর দৈর্ঘ্য বড় হয়। যেমন, পুঁটিমাছ।
(2) মাংসাশী–যে সব মাছ প্রধানত প্রাণীজ খাদ্য খায় তাদের মাংসাশী মাছ বলে। প্রাণীজ খাদ্য বলতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনুবীক্ষণিক প্রাণীকণা (জুপ্লাঙ্কটন), জলজ কীটপতঙ্গ ও তাদের লার্ভা, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর বাচ্চা এমনকি পরিণত মাছকেও বোঝায়। এদের পৌষ্টিকনালীর দৈর্ঘ্য শাকাশী মাছের তুলনায় ছোট হয়। যেমন—চিতল, শিঙ্গি, মাগুর প্রভৃতি ।
(3) সর্বভুক—যে সব মাছ উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ দু‘রকম খাদ্য খায় তাদের সর্বভুক মাছ বলে। এদের পৌষ্টিক নালীর দৈর্ঘ্য শাকাশী মাছের থেকে ছোট ও মাংসাশী মাছের থেকে বড় হয়। যেমন, ফায়ার মাউথ, গোল্ড ফিশ প্রভৃতি।
মাছের শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, খনিজ লবণ, ভিটামিন ইত্যাদি প্রয়োজন। কার্বোহাইড্রেট ক্ষমতা বা শক্তি যোগায়, প্রোটিন শরীর গঠন বা কোষের বৃদ্ধি ঘটায়, ফ্যাট শক্তি সঞ্চয় করতে ও হরমোনের উৎস যোগায়, খনিজ লবণ ও ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ ও রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
অ্যাকোয়ারিয়ামে রঙিন মাছ প্রতিপালন ও তার প্রজননের জন্য মাছের প্রজাতি উপযোগী পুষ্টিকর খাদ্য নিয়মিত সরবরাহ করতে হয়। সাধারণত জীবন্ত খাদ্য বা প্রাকৃতিক খাদ্য ও কৃত্রিম খাদ্য বা যেকোনো এক প্রকার বা দু‘ প্রকার খাদ্যও প্রয়োগ করা যায়। অ্যাকোয়ারিয়ামে এই দু‘ প্রকার খাদ্য প্রয়োগে মাছের ও জলের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের কিছু সুবিধা ও কিছু অসুবিধা আছে। তবে সুবিধা ও অসুবিধা মূলত অ্যাকোয়ারিয়াম পরিচর্যা ও পরিচালনার ওপর নির্ভর করে। কিছু মাছ জীবন্ত খাদ্য বেশি পছন্দ করে ও কিছু মাছ কৃত্রিম খাদ্য পছন্দ করে।
মাছের খাদ্য গ্রহণের চাহিদা জলের তাপমাত্রা, পরিবেশ, মাছের বয়স প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে। সহনশীল তাপমাত্রার মধ্যে তাপমাত্রা বাড়লে মাছের খাদ্য চাহিদা বেশি হয়। পরিবেশ স্বাভাবিক বৃদ্ধির অনুকূল হলেও মাছের খাদ্য চাহিদা বেশি হয়। আবার বিভিন্ন বয়সে ও পর্যায়ে মাছের খাদ্য চাহিদা বিভিন্ন রকম হয়। কম বয়সের মাছের খাদ্য চাহিদা বেশি হয় তাই বার বার খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়।
সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যাবেলা অ্যাকোয়ারিয়ামে পরিমাণ মতো খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়। তবে শীতকালে দিনে একবার খাদ্য প্রয়োগ করা উচিত। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাদ্য কখনই প্রয়োগ করা উচিত নয়। সাধারণত খাদ্য প্রয়োগের 10 মিনিট পর যতটা খাদ্য অবশিষ্ট থাকে ততটাই হল অতিরিক্ত খাদ্য। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাদ্য প্রয়োগ করলে অ্যাকোয়ারিয়ামের জল দূষিত হয়। এমনকি মাছ মারা যেতে পারে। খাদ্যগ্রহণের পর মাছের অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ে। তাই খাদ্য প্রয়োগের 15-20 মিনিট পর অ্যাকোয়া– রিয়ামের বেশি সংখ্যক মাছ থাকলে বায়ু সঞ্চালন যন্ত্র চালু করতে হয়।
প্রাকৃতিক বাসস্থানে বিভিন্ন প্রকার রঙিন মাছ বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক খাদ্য খায়। কিন্তু অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছের প্রজাতিভিত্তিক প্রাকৃতিক খাদ্য যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যুক্ত বিভিন্ন প্রকার সহজলভ্য খাদ্য প্রয়োগ করা যায়। প্রধানত মাছের খাদ্য দু‘ প্রকার। যেমন—
(ক) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী বা তার লার্ভা জীবন্ত বা সংরক্ষিত রেখে প্রয়োগ করা যায়। এদের জীবন্ত খাদ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
(খ) বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ পদার্থ বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে শুকনো অবস্থায়ও প্রয়োগ করা যায়। এদের কৃত্রিম খাদ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
(ক) জীবন্ত খাদ্য : অ্যাকোয়ারিয়ামে রঙিন মাছ প্রতিপালন ও তার প্রজননের জন্য জীবন্ত খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিয়মিত জীবন্ত খাদ্য প্রয়োগ করলে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির পাশাপাশি রঙের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। মাছের রঙের ঔজ্জ্বল্য বেশি হলে চাহিদা বাড়ে।
(1) আর্টেমিয়া লার্ভা
আর্টেমিয়া এক প্রকার সামুদ্রিক প্রাণী। বিশেষ প্রতিকূল পরিবেশে এদের সিস্ট দশায় রূপান্তর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এদের লার্ভায় শতকরা 40-60% প্রোটিন থাকায় অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছের খাদ্য হিসাবে খুব উপযোগী। সাধারণত এদের ডিম বাজারে খোলসহ ও খোল ছাড়া দু‘ রকমের পাওয়া যায়। এই ডিম ফুটে লার্ভা বের হলে তা মাছের খাদ্য হিসাবে প্রয়োগ করা হয়।
একটি কাচের পাত্রে 1 লিটার উষ্ণ জল ঠাণ্ডা করে ঢেলে তার মধ্যে 20-35 গ্রাম সাধারণ লবণ মেশাতে হয়। জলের পি.এইচ. ক্রম 7.5-8.5-এর মধ্যে হলে ভালো হয়। সাধারণত 12-14 ঘণ্টার মধ্যে লার্ভা বের হয়।
এরপর বায়ু সঞ্চালক যন্ত্র চালু করতে হয়। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী 500 মিলিগ্রাম থেকে 1 গ্রাম আর্টেমিয়ার সিস্ট মেশাতে হয়। সাধারণত 27-30 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্রায় 24 ঘণ্টায় লার্ভা বের হয়। এই লার্ভা আলোর দিকে আকৃষ্ট হয়। সাধারণত 1000 লাক্সের আলো ব্যবহার করে এদের 100 মিলি মাইক্রন ফাঁসের জাল দিয়ে সংগ্রহ করতে হয়। সংগৃহীত লার্ভা সামুদ্রিক জলপূর্ণ পাত্রে সংরক্ষণ করতে হয় ও প্রয়োজন মতো অ্যাকোয়ারিয়ামে প্রয়োগ করতে হয়।
(2) ব্লাড ওয়ার্ম বা কাইরোনোমিড
ব্লাড ওয়ার্ম হলো কাইরোনোমিড মাছির লার্ভা। এদের দেহের রঙ লাল হয় কারণ এদের রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকে। এরা গড়ে 1-1.5 সে.মি. লম্বা হয়। সাধারণত 3-5 দিন লার্ভা দশায় থাকে তারপর পূর্ণাঙ্গ মাছিতে রূপান্তরিত হয়। অ্যাকোয়ারিয়ামে বড় মাছ প্রতিপালন করতে ব্লাড ওয়ার্ম প্রয়োগ করা যায়।
(3) মশার লার্ভা
মশার লার্ভা মাছের খাদ্য হিসাবে অ্যাকোয়ারিয়ামে প্রয়োগ করা যায়। বিশেষ করে গাপ্পি, প্যারাডাইস প্রভৃতি মাছ মশার লার্ভা খেতে খুব ভালোবাসে। দেখা গেছে, একটি সুস্থ ও সক্রিয় মাছ তার দেহের সমান ওজনের মশার লার্ভা খেতে পারে। তবে মশার লার্ভা চাষ না করাই ভালো এবং কোনো জায়গা থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করলে সেগুলো খুব ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
(4) টিউবিফেক্স
রঙিন মাছের বিশেষ করে অ্যাকোয়ারিয়ামে প্রতিপালনের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় জীবন্ত খাদ্য হল টিউবিফেক্স। সরু সরু সুতোর মতো প্রায় 2 সেন্টিমিটার দীর্ঘ লালচে রঙের হয়। হালকা স্রোতযুক্ত নোংরা জলে জন্মায়। তবে নোংরা জল থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছের খাদ্য হিসাবে প্রয়োগ করা উচিত নয়। অন্যথায় খুব ছোট জলাধারে এদের উৎপাদন করা যায়।
কাঁচা গোবর ও পুকুরের পাঁক আধাআধি (50:50) মিশিয়ে ছোট ফাঁসের নাইলন জালে ছেঁকে নিতে হয়। নির্ধারিত ট্রেতে এই মিশ্রণের 5 সেন্টিমিটার মোটা স্তর তৈরি করতে হয় যা টিউবিফেক্সের পোষক মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। প্রতি 4 দিন অন্তর প্রতি বর্গ সেন্টিমিটার জায়গায় 250 মিলিগ্রাম কাঁচা গোবর মেশালে দীর্ঘদিন যাবৎ উৎপাদন পাওয়া
যায়।
একটি 500 লিটার জল ধারণ ক্ষতার সিমেন্টের ট্যাঙ্কে 400 লিটার নলকূপের জল দিয়ে তার মধ্যে 1 কিলোগ্রাম কাঁচা গোবর, 1 কিলোগ্রাম শুয়োরের মল ও 1 কিলোগ্রাম বাদাম খোল মেশাতে হয়। তারপর জলে বায়ু নিষ্কাশন যন্ত্র চালিয়ে দূষিত গ্যাস দূরীভূত করতে হয়। এর 3 দিন পর এই পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ জল টিউবিফেক্স চাষের জন্য উপযোগী হবে।
পোষক মাধ্যমযুক্ত ট্রেতে 10-20 গ্রাম টিউবিফেক্স দিয়ে ট্রের একপ্রান্তে 3 দিন আগে তৈরি করা পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ জল খুব ধীরে ধীরে প্রবেশ করাতে হয় যেন এই জল ট্রের সম্পূর্ণ পোষক মাধ্যম অতিক্রম করে অপরপ্রান্ত দিয়ে নির্গত হয়। টিউবিফেক্স প্রায় 20 দিন পর প্রথমবার এবং তারপর 20 দিন অন্তর খুব ভোরে বা সন্ধ্যায় সংগ্রহ করা যায়। পোষক মাধ্যম থেকে কিছুটা অংশ নিয়ে স্বাদু জলে রাখলে টিউবিফেক্সগুলো এক জায়গায় জড়ো হয়। এগুলিকে সংগ্রহ করে নিরবচ্ছিন্ন জলের ধারায় সারা রাত ধুয়ে পরদিন মাছের খাদ্য হিসাবে দেওয়া যায়।
(5) ইনফিউসোরিয়া
ইনফিউসোরিয়া হল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আনুবীক্ষণিক এককোষী প্রাণীকণা। প্যারামেসিয়াম ও স্টাইলোনাইচিয়া এই গোত্রের অন্তর্গত। মাছের লার্ভার এটি একটি আদর্শ খাদ্য। একটি 50 লিটার জল ধরে এমন পাত্র কোনো ছায়া ঘেরা জায়গায় রাখতে হবে যেন সেখানে আলোর আভা থাকে। ঐ পাত্রে 40 লিটার দূষণমুক্ত জল ভালো করে ফোটানোর পর ঠাণ্ডা করে ভর্তি করতে হয়। এরপর 2-3টি পাকা কলার খোসা ঐ পাত্রে যোগ করে মশারির জাল দিয়ে পাত্রটিকে ভালো করে ঢেকে দিতে হয় যেন মশা না ঢুকতে পারে। এক বা দু‘দিনের মধ্যে জল ঘোলাটে হয়ে যায় ও পচা গন্ধ পাওয়া যায়। এর 4-5 দিন পর জলের রঙ প্রথমে স্বচ্ছ ও পরে হলুদ হয়। এই অবস্থায় ইনফিউসোরিয়া সুতির কাপড় দিয়ে ছেঁকে আহরণ করতে হয় ও মাছের লার্ভাকে খাওয়ানো যায়।
(6) হোয়াইট ওয়ার্ম
এরা এনসাইট্রিয়াস গোত্রের অন্তর্গত। সাধারণত কাদাযুক্ত জলে পাওয়া যায়। লম্বায় 0.5-1.0 সেন্টিমিটার হয়। একটি পাত্রের তিনভাগ বিশুদ্ধ ও সিক্ত দোআঁশ মাটি পূর্ণ করতে হয়। তারপর সামান্য ভেজা পাউরুটির টুকরো মাটির স্তরের ওপর ছড়িয়ে দিতে হয়। পাত্রটিকে উষ্ণ ও অন্ধকার জায়গায় রাখতে হয়। পাত্রের মধ্যে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। চিমটের সাহায্যে পাউরুটির নিচ থেকে খুব সহজেই হোয়াইট ওয়ার্ম সংগ্রহ করা যায়। এক মাসের মধ্যে এর সংখ্যা দ্বিগুণ ও দু‘ মাসে সংখ্যা অনেক বেশি হয়।
(7) ডাফনিয়া
ডাফনিয়া মাছের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জীবন্ত খাদ্য। সাধারণত স্রোতবিহীন বন্ধ জলাশয়ে পাওয়া যায়। প্রথমে একটি ছোট পাত্রে পাতিত জল নিয়ে তার মধ্যে 0.5-4.0% হিসাবে গ্লুকোজ বা ল্যাকটোজ মিশিয়ে ডাফনিয়া সংগ্রহ করে কালচার মাধ্যম দিয়ে সংখ্যা বাড়িয়ে নিয়ে বড় পাত্রে চাষের জন্য ব্যবহার করতে হয়।
প্রথমে পুকুরের জল ছেঁকে 20 লিটারের একটি কাচের পাত্রে ভর্তি করতে হয়। এরপর লিটার প্রতি 10টি করে ডাফনিয়া ছাড়তে হয়। ডাফনিয়ার খাদ্য হিসাবে শুকনো ঈষ্ট পাউডার 1 মিলিগ্রাম প্রতি লিটার জলে 1 দিন অন্তর যোগ করতে হয়। সাধারণত 18-21 দিন পর ডাফনিয়া সংগ্রহ করা যায়।
প্রায় 600 লিটার জল ধরে এমন কোনো সিমেন্টের জলাধারে 4 সে.মি. মাটির স্তর দিতে হয়। এরপর হেক্টর প্রতি হিসাবে 400 কেজি চুন ও 10,000 কেজি হারে কাঁচা গোবর প্রয়োগ করতে হয়। জলাধারটি পুকুরের জলে ভর্তি করতে হয়। জলের পি.এইচ. ক্রম 7.3-7.5-এর মধ্যে রাখলে ভালো হয়। সপ্তম দিনে লিটার প্রতি 10টি করে ডাফনিয়া ছাড়তে হয়। ডাফনিয়ার খাদ্য হিসাবে শুকনো ঈষ্ট পাউডার 1 মিলিগ্রাম প্রতি লিটার জলে বা ফাইটোপ্লাঙ্কটন 1 দিন অন্তর যোগ করতে হয়। সাধারণত 17-তম দিনে বংশবৃদ্ধির সূচনা ঘটে ও 26-তম দিনে ডাফনিয়া সংগ্রহ করা যায়।
(৪) ময়না
ময়না মাছের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জীবন্ত খাদ্য। সাধারণত বদ্ধ জলাশয়ে পাওয়া যায়। একটি পাত্রে 2 লিটার পরিমাণ জলে ময়না ছেড়ে তাতে গবাদি পশুর বর্জ্য পদার্থের নির্যাস যোগ করলে বিশুদ্ধ ময়নার প্রজাতি পাওয়া যায়। ময়না চাষের জন্য সাধারণত 500 লিটার জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জলাধারে 300 লিটার জল, 10 কেজি মুরগি বা শূয়োরের বর্জ্য পদার্থ, 5 কেজি বাদাম খোল, 2.5 কেজি সিঙ্গেল সুপার ফসফেট একযোগে রাখতে হয়। এই জলীয় মিশ্রণে ধারাবাহিকভাবে বায়ু প্রবাহ ঘটাতে হয় যাতে ক্ষতিকারক গ্যাসীয় পদার্থ দূরীভূত হয়। এটা তিনদিন রাখার পর এই জলীয় মিশ্রণটি অন্য একটি জলপূর্ণ 500 লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন জলাধারে 30-40 মি.লি./লিটার এই হারে যোগ করতে হয় ও সেই সাথে লিটার প্রতি জলে 50টি ময়না যোগ করতে হবে। কিছুদিনের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ময়না পাওয়া যায়। স্কুপ নেট দ্বারা ময়না সংগ্রহ করা হয়। এটা সর্বদা ভোরবেলা অথবা সন্ধ্যাবেলা সংগ্রহ করতে হয়। কারণ এই সময়ে তারা জলের উপরিতলে বিচরণ করে।
(9) রটিফেরা
মাছের খাদ্য হিসাবে খুব ছোট আকারের প্রাণীকণা যেমন—রটিফেরা (ব্রাকিওলাস, কেরাটেল্লা, অ্যাচপ্লাঙ্কল, ফিলিনিয়া প্রভৃতি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরা সাধারণত 1 মিলিমিটারের 50 ভাগের 1 ভাগ থেকে 2 মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় ও 2-3 সপ্তাহ বাঁচে।
প্রতি 1000 লিটার জলে 5 গ্রাম ইউরিয়া, 100 গ্রাম অ্যামোনিয়া সালফেট, 20 গ্রাম ক্যালসিয়াম সুপার ফসফেট ও 3 গ্রাম ধাতব মিশ্রণ (কপার, জিঙ্ক ও ম্যাগনেসিয়াম) মিশিয়ে কয়েকদিন রেখে দিতে হয়। জলে পর্যাপ্ত পরিমাণে উদ্ভিদকণা উৎপাদন হলে বিশুদ্ধ রটিফেরা সংগ্রহ করে জলে মেশাতে হয়। তবে রটিফেরার খাদ্য হিসাবে ক্লোরেল্লা নামক উদ্ভিদকণা সরবরাহ করলে রটিফেরার উৎপাদন বেশি হয়। সাধারণত 1 সপ্তাহ পর 77 মাইক্রোমিটার ফাঁসের বোলিং সিল্ক কাপড়ের জাল দিয়ে রটিফেরা সংগ্রহ করা হয়। পর পর 3 দিনে বেশিরভাগ রটিফেরা সংগ্রহ করে পুনরায় জলে ক্লোরেল্লা মিশিয়ে পরবর্তী চাষের শুরু হয় ।
(10) অন্যান্য জীবন্ত খাদ্য
বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ মাছেরা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। এছাড়া কেঁচো, পিঁপড়ের,ডিম, ব্যাঙাচি, গঙ্গা ফড়িং–এর লার্ভা ইত্যাদিও মাছেরা খায়।
(খ) কৃত্রিম খাদ্য : অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ প্রতিপালনের জন্য শুধুমাত্র জাবন্ত খাদ্যের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। বিভিন্ন কারণে সময়মতো পর্যাপ্ত জীবন্ত খাদ্য না পাওয়া গেলে অন্য কোনো খাদ্যের যোগান দিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে হিমায়িত জীবন্ত খাদ্য বা কৃত্রিম খাদ্য দেওয়া যায়। তবে হিমায়িত জীবন্ত খাদ্য সকলের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে কৃত্রিম খাদ্য দেওয়া অনেক সহজ। কৃত্রিম খাদ্য কয়েক রকমের হতে পারে। যেমন–
(1) বড়ির মতো কৃত্রিম খাদ্য : সাধারণত বড়ির মতো কৃত্রিম খাদ্য দু রকমের তৈরি হয়। এক রকমের খাদ্য জলের ওপরে ভাসে যা জলের উপরিতলের মাছ খায় আর অন্য রকমের খাদ্য সহজেই ডুবে যায় যা জলের নিচের স্তরের মাছ খায়।
(2) দানাদার কৃত্রিম খাদ্য : দানাদার খাদ্য খুব তাড়াতাড়ি জলে ডুবে যায়। সাধারণত নিচের স্তরের মাছের জন্য এই খাদ্য ব্যবহার করা হয়।
(3) ট্যাবলেটের মতো কৃত্রিম খাদ্য : এই খাদ্য অ্যাকোয়ারিয়ামের কাচের দেওয়ালে লাগিয়ে রাখা যায়। তাই যে কোনো স্তরের মাছ এই খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
(4) ফলকাকৃতি কৃত্রিম খাদ্য : এই খাদ্য প্রয়োগের পর কিছু সময় জলে ভাসে, তারপর ধীরে ধীরে জলে ডুবতে থাকে। তাই পরিমাণ মতো প্রয়োগ করলে সব স্তরের মাছ এই খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
মাছের চারার খাদ্য
মাছের প্রজাতি |
পর্যায় ১ম বাচ্চা |
পর্যায় ২য় বাচ্চা |
পর্যায় ৩য় বাচ্চা |
পর্যায় ৪র্থ বাচ্চা |
পর্যায় ৫ম বাচ্চা |
ছোট প্রজাতির মাছ (গোরামী,বেটা ইত্যাদি) |
ক্লোরেল্লা |
শুষ্ক খাদ্য |
ইনফিউসুরিয়া |
ইনফিউসুরিয়া ও আর্টেমিয়ার লার্ভা |
ডাফনিয়াশুষ্ক খাদ্য |
মাঝারি প্রজাতির মাছ (বার্ব,চ্যারাসিনস ইত্যাদি) |
ইনফিউসুরিয়া বা ডিমেরকুসুম |
রটিফেরা বা শুষ্ক খাদ্য |
আর্টেমিয়া ও ক্ল্যাডোসেরা (প্রাণীকণা) |
ছোট শুষ্ক খাদ্য |
ডাফনিয়া ও কেঁচো |
বড় প্রজাতির মাছ (চিখলিড) বা অন্তজ প্ৰসূ মাছ (ব্ল্যাকমলি) |
আর্টেমিয়া বা শুষ্ক খাদ্য |
ডাফনিয়া |
বড় ক্ল্যাডোসেরা (প্রাণীকণা) |
কেঁচো ও শুষ্ক খাদ্য |
কেঁচো ও শুষ্ক খাদ্য |
রঙিন মাছের জীবন্ত খাদ্য এর বৈশিষ্ট্য
(ক) প্যারামেসিয়াম : এরা এককোষী আদ্যপ্রাণী। দৈর্ঘ্যে 50-350 um হয়। দেহ সিলিয়া বেষ্টিত ও এটা গমন অঙ্গ হিসাবে কাজ করে। সিলিয়াযুক্ত মুখগহ্বর থাকে। সংকোচনশীল গহ্বরের দ্বারা জলের ভারসাম্য বজায় রাখে। প্রধানত মিষ্টি জলে পাওয়া যায়।
(খ) ডাফনিয়া : এরা ক্ল্যাডোসেরা বর্গের অন্তর্গত ক্ষুদ্রাকৃতির ক্রাস্টসিয়া। এটা অন্যতম প্রাণীকণা বা জুপ্লাঙ্কটন ও মাছের জীবন্ত খাদ্য। দৈর্ঘ্যে 0.2-5 মিলিমিটার হয়। দেহ খণ্ডক সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। মস্তক নিম্নাভিমুখী ও খাঁজ দ্বারা উদর খণ্ড থেকে বিভক্ত হয়। মস্তক ছাড়া সমস্ত দেহ ক্যারাপেস দ্বারা আবৃত। অঙ্কীয় দেশে 5-6 জোড়া পা থাকে। এদের কৌণিক অক্ষি ও উদরে এর জোড়া সিটা থাকে ।
(গ) ময়না : এরা দৈর্ঘ্যে 1-1.22 মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। মস্তক গোলাকার ও দেহ স্বচ্ছ হয়। বৃহদাকারের সরল চক্ষু। দেহে 5-6 জোড়া পা থাকে। এদের সংবেদনশীল সিলিয়া আছে।
(ঘ) ব্র্যাকিওনাম : এরা রটিফেরার অন্তর্গত। এরা দৈর্ঘ্যে 0.1-0.5 মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। এরা নানা আকারের ও দ্বি–পার্শ্বীয় প্রতিসম। দেহ তিনটি অংশ— মস্তক, ধড় ও পদ – এ বিভক্ত। দেহ চোঙাকৃতি। শক্ত ও পুরু কিউটিকলে দেহ আবৃত থাকে। মস্তকে সিলিয়া নির্মিত কোরোনা থাকে।
(ঙ) টিউবিফেক্স : এদের দেহ সুতোর মত। সাধারণত লাল রঙের হয়। তবে কালো রঙেরও দেখতে পাওয়া যায়। দেহে বহু খণ্ডকে বিভক্ত ও উভলিঙ্গ প্রাণী। প্রায় 10টি প্রজাতির টিউবিফেক্স পাওয়া যায়।
(চ) আর্টেমিয়া : পরিণত প্রাণীতে 3টি চক্ষু থাকে। দেহে 11 জোড়া পা থাকে। রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকে। পুরুষের মস্তকে দুটি বড় অ্যান্টেনা ও দুটি জননঅঙ্গ থাকে। স্বাভাবিক ও পার্থেনোজেনেসিস দুই পদ্ধতিতে স্ত্রী আর্টেমিয়া ডিম পাড়ে।
(ছ) কাইরোনোমিড লার্ভা : এরা কাইরোনোমিড মাছির লার্ভা। সাধারণত 1 সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এদের রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকে। জলাশয়ের জৈব দূষণের মাত্রা এদের আধিক্য থেকে বুঝতে পারা যায়।