Md-Ashfaqulla-Khan
শহিদ আসফাকুল্লা খান
জন্ম : ২২শে অক্টোবর ১৯০০ খ্রীঃ
মৃত্যু : ১৯শে ডিসেম্বর ১৯২৭ খ্রীঃ
কিশোর আসফাকুল্লা একদিন একদল সঙ্গী নিয়ে গিয়ে ছিলেন প্রতিবেশীর বাগানবাড়িতে। গাছে আম ঝুলছে। আহা, এই লোভ কী সংবরণ করা যায়? আম চুরি করা হল। টের পেয়ে সেই প্রতিবেশী তাঁকে শাস্তি দেবার জন্য খুঁজতে লাগলেন। সমস্ত পাড়া খুঁজেও দুষ্টু আসফাকুল্লার সন্ধান পাওয়া গেল না। শেষ অব্দি প্রতিবেশী আসফাকুল্লার খোঁজ ছেড়ে বাড়িতে ফিরে এলেন। কারণ তাঁর ছেলে অসুস্থ। বিছানাতে শুয়ে আছে। বাড়ি ফিরে এসে ওই প্রতিবেশী ভদ্রলোক অবাক হয়ে গেলেন। এ কী, যে দুষ্টু ছেলেটির সন্ধানে তিনি সাত পাড়া চষে ফেললেন, যাকে শাস্তি দেবার জন্য চেষ্টা করেছেন, সেই ছেলেটি অর্থাৎ আসফাকুল্লা তাঁর পীড়িত পুত্রের শয্যার পাশে বসে এক মনে সেবা করছেন। ভদ্রলোক বুঝতে পারলেন না, এখন তাঁর কী করা উচিত। আসফাকুল্লাকে শাস্তি দেবেন, নাকি তাঁকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করবেন!
এই হলেন আসফাকুল্লা। একদিকে বেপরোয়া দুঃসাহসের প্রতীক, অন্যদিকে কোমল উদারমনা। বজ্রের মতো কঠোর আবার কুসুমের মতো কোমল এইসব বিশেষণ গুলি তাঁর নামেরই সাথেই খাপ খায়।
আসফাকুল্লার জন্ম হয়েছিল ২২শে অক্টোবর ১৯০০ খ্রীঃ উত্তরপ্রদেশের শাহজানপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে। তাঁর পরিবারের অনেকেই ব্রিটিশ সরকারের সাথে যুক্ত ছিলেন। অনেকে ছিলেন উচ্চপদস্থ কর্মচারী। তাই সেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো পরিবেশ ছিল না। তাছাড়া শাজাহানপুর একটি প্রাচীন পল্লী। সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ নিজ নিজ কাজেই ব্যস্ত থাকেন। অনাদৃত উপেক্ষিত ভারতবাসীদের জন্য তাঁদের মনে সহানুভূতি অথবা সমবেদনার কোনো স্থান ছিল না।
সেইসময় ধূর্ত ইংরেজ সরকার দ্বিজাতি নীতি প্রয়োগ করেছিল। তারা জানত ভারতবর্ষকে শাসনে রাখতে গেলে হিন্দু–মুসলমানের মধ্যে কাল্পনিক বিভেদের সৃষ্টি করতে হবে। মুসলিম তোষণ করতে হবে। হিন্দুদের আধিপত্যে মুসলিমরা মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তাই ব্রিটিশ সরকার একটি অদ্ভুত নীতি প্রণয়ন করল। তারা সরকারের চাকরিতে আরও বেশি করে মুসলমানদের নিয়োগ করার চেষ্টা করল।
ছোটোবেলা থেকে আসফাকুল্লা ছিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক। হিন্দু বন্ধুদের সাথে খোলা মনে মেলামেশা করতেন। তাঁর বন্ধুদের বেশির ভাগই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের। কিশোর আসফাক বুঝতে পারলেন, তাঁর পরিবারদের এইভাবে ইংরেজকে তোষণ করা উচিত নয়। তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর জীবন উৎসর্গ করে পরিবারের কলঙ্ককে মুছে দিতে।
পরাধীন ভারতের অনেক মুসলমান ইংরেজদের বিভেদ নীতিতে বিশ্বাস করতেন না। তাঁরা মনেপ্রাণে উপলব্ধি করতেন যে, ধর্ম মানুষে মানুষের অন্তরায় সৃষ্টি করে না। সব ধর্মের মূল সুরে মানবিকতার মহামন্ত্র উচ্চারিত হয়। কিন্তু কুচক্রী কিছু মানুষ ধার্মিক বিভাজনের চেষ্টা করে। তারা এইভাবে মানবিকতাকে অপমান করে।
এল ১৯২৯ সাল সমস্ত দেশ জুড়ে গান্ধীজির আন্দোলন শুরু হয়েছে। গান্ধীজি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে জনগণমন অধিনায়ক হিসেবে দেখা দিয়েছেন। আসমুদ্র হিমাচল কম্পিত হল তাঁর আহ্বানে। সেদিনের কিশোর আসফাকুল্লা গান্ধীজির আহ্বানে সাড়া দিলেন। বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বিদ্যালয় ত্যাগ করলেন। যোগ দিলেন অসহযোগ আন্দোলনে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আসফাকুল্লা অহিংস নীতিকে বিসর্জন দিয়েছিলেন। তখন তাঁর মনের মধ্যে নানান প্রশ্ন জেগেছে। তিনি বারবার মনকে শান্ত ও স্থির করার চেষ্টা করছেন। তিনি ভাবছেন যে অহিংস নীতি অবলম্বন করলে কি ঈপ্সিত স্বাধীনতা পাওয়া সম্ভব? পরম শক্তিশালী ইংরেজদের বিরুদ্ধে কি আমরা খালি হাতে লড়াই করতে পারব? না, একদিন মধ্যরাতে অসফাকুল্লা স্থির করলেন, অহিংস নীতি পরিত্যাগ করতে হবে। সশস্ত্র সংগ্রামের ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে হবে।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু সশস্ত্র সংগ্রামীর সাথে তাঁর গোপন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আসফাকুল্লা বাড়ি ছেড়ে সেইসব বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করতে শুরু করলেন।
যোগাযোগ হল শাহজানপুরের বিপ্লবী নেতা রামপ্রসাদ বিসমিলের সঙ্গে। রামপ্রসাদ ছিলেন সব অর্থেই এক যথার্থ নেতা। যে কোনো তরুণ তরুণীকে চোখের পলকে চিনে নেবার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তাঁর।
তরুণ আসফাককে দেখে রামপ্রসাদ বুঝতে পারলেন যে, এই তরুণের মনের ভেতর এক টুকরো আগুনের স্ফুলিঙ্গ আছে। ঠিকমতো লালন পালন করতে পারলে আসফাক বিপ্লবী দলের সম্পদ হয়ে উঠবেন। বিপ্লবী হতে গেলে যে সমস্ত গুণাবলী দরকার, সেদিনের সদ্য তরুণ আসফাকের মধ্যে সবকটি গুণ ছিল। তিনি বন্দুক ছুঁড়তে খুবই দক্ষ ছিলেন। ঘোড়ায় উঠতে পারতেন। চোখের নিমেষে ঘোড়াটিকে দূরে নিয়ে যেতে পারতেন। তাছাড়া ভালো সাঁতার কাটতে পারতেন। অতি দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দৌড়োতে পারতেন। আসফাকের স্বাস্থ্য ছিল খুবই সুঠাম। নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। কোনো রকম নেশা করতেন না। আর সবার ওপরে ছিল জ্বলন্ত দেশপ্রেমে ভরা মানবদরদী মন।
কিছুদিন বাদে আসফাকুল্লার ওপর একটি কঠিন কাজের দায়িত্ব দেওয়া হল। ইতিমধ্যেই বিপ্লবীরা নানা উপায়ে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। প্রচুর গোলাবারুদ কিনতে হবে। বোমা তৈরির মালমশলা দরকার। কীভাবে অর্থ সংগ্রহ করা যায়? কেন? শেষ অব্দি অনেক আলাপ আলোচনার পর ঠিক করা হল সরকারি তহবিল লুঠ করতে হবে। এই কাজে এগিয়ে এলেন পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল। তিনি ছিলেন এক মহান বিপ্লবী। অকুতোভয় যোদ্ধা, তাঁকে সাহায্য করার জন্য হাজির হলেন চন্দ্রশেখর আজাদ এবং আসফাকতুল্লাহ খান। এলেন মন্মথ গুপ্ত, শচীন্দ্রনাথ বক্সি, কেশব চক্রবর্তী, মুরারীলাল, মুকুন্দলাল, বনোয়ারীলাল, রাজেন্দ্রনাথ। তাঁরা সকলে মিলে কাকোরি ট্রেন ডাকাতি করার কথা ঘোষণা করলেন।
পরিকল্পনা অনুসারে এই দশজন সদস্য এলেন লখনৌতে। তাঁরা ছেদিলাল ধর্মশালায় উঠলেন। দ্বিতীয় দিন তাঁরা পৌঁছলেন শাহজাহাপুরে। ১৯২৫ সালের ৯ আগস্ট, রাত্রি আটটা—একটি ট্রেন হরদোই থেকে লখনৌর দিকে যাচ্ছে। শাহজাহাপুর স্টেশনে বিপ্লবীরা সেই ট্রেনে উঠে বসলেন। সেকেন্ড ক্লাসের যাত্রী বিপ্লবীরা ট্রেনের চেন টেনে দিলেন। ট্রেন তখন কাকোরি এবং আলমনগরের মাঝামাঝি জায়গায়। গাড়ি থেমে গেল। বিপ্লবীরা গার্ডের কামরায় উঠে পড়লেন। গার্ডকে মাটিতে ফেলে সঙ্গে সঙ্গে টাকার সিন্দুকটি বাইরে ফেলে দিলেন। ছেনি হাতুড়ির সাহায্যে সিন্দুক ভেঙে দশ হাজার টাকা লুট করা হল।এখানেই মাউজার পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছিল। অতি দ্রুত কাজ শেষ করে বিপ্লবীরা বন্দেমাতরম ধ্বনি দিয়ে চলে গেলেন।পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেল। বিপ্লবীদের এত দুঃসাহস? এখনই এর বিহিত করা দরকার। ব্যাপক তল্লাশি শুরু হল। একে একে বিপ্লবীরা ধরা দিতে বাধ্য হলেন। আসফাকের বাড়ি ঘেরাও করা হল। কিন্তু আসফাককে ধরা সম্ভব হল না। আসফাক এখন এক পাকা বিপ্লবী, তাঁকে ধরা কী এতই সহজ? পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দীর্ঘদিন আসফাক আত্মগোপন করে রইলেন।
কিশোর বয়স থেকেই আসফাক ছদ্মবেশ ধরতে পারতেন খুব সুন্দরভাবে। আত্মগোপন কালে বেশিরভাগ সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশে থাকতেন। হিন্দু বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁর নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হিন্দু সমাজের আচার আচরণ সব কিছু প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এমনকি হিন্দুদের দৈনন্দিন চালচলন কেমন তাও জেনেছিলেন। তাই এভাবেই হিন্দু ছদ্মবেশ ধারণ করতে আসফাকের কোনো অসুবিধা হয়নি।
আসফাক তখন একটি পরিকল্পনা করছেন। ভারত ত্যাগ করে কাবুলের মধ্য দিয়ে রাশিয়াতে যেতে হবে। তাঁর মনে সাম্যবাদী ভাবনার স্ফুরণ জেগেছে। রাশিয়ার কাছে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। সেদিনের তরুণ আসফাক এই নিষ্ক্রমণের পরিকল্পনা ভালোভাবে তৈরি করলেন। এর জন্য তাঁকে দিল্লি যেতে হবে। আসফাক দিল্লিতে চলে এলেন। সেখানে এসে এক মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করলেন। তাঁর সৌম্য, আকৃতি, মার্জিত রুচি এবং ভদ্র চালচলন দেখে এক মুসলমান ইঞ্জিনীয়ার এগিয়ে এলেন। ওই ইঞ্জিনীয়ার আসফাককে তাঁর মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চান। আসফাক পড়লেন মহা মুশকিলে। তিনি এক মহান বিপ্লবী। বিয়ে করে সাংসারিক জীবনের সন্ধান করবেন কেমন করে? শেষ অব্দি নিরুপায় হয়ে আসফাক নিজের আসল পরিচয় বলতে বাধ্য হলেন।
তিনি পরিস্কারভাবে বললেন—আমি বিপ্লবী, যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যু এসে আমাকে আলিঙ্গন করতে পারে। দোহাই আমাকে এভাবে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। আপনার কন্যার এই সর্বনাশ আমি করতে পারব না। আপনার এই আদেশ আমি পালন করতে পারব না, আমাকে মার্জনা করুন।
আসফাক বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে ওই অহংকারী ইঞ্জিনীয়ারের মনে অপমান বোধের জন্ম হল। তিনি পুলিশের কাছে আসফাকের আসল পরিচয় জানিয়ে দিলেন। এক বছরের ওপর আত্মগোপন থাকার পর আসফাক অবশেষে ধরা পড়তে বাধ্য হলেন। বিচারের জন্য তাঁকে দিল্লি থেকে লক্ষ্মৌতে আনা হল।
ট্রেনে তাঁর সঙ্গে এক মুসলমান ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রমণ করছিলেন। ঐ মুসলমান ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের মুসলমান অফিসাররা। তাঁরা নানাভাবে সেদিনের তরুন আসফাকের মন বিষিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা বললেন, আপনি মুসলমান, আমাদের স্বধর্মী। বিধর্মী হিন্দুদের হাতে হাত মিলিয়ে কেন নিজের জীবনটাকে নষ্ট করছেন। হিন্দুদের উদ্দেশ্য কী আপনি জানেন না। তারা ব্রিটিশদের উৎখাত করে ভারতবর্ষের বুকে হিন্দু রাজত্ব স্থাপন করবে। এই কাজে আপনি কেন হিন্দু রামপ্রসাদ বিসমিলকে সাহায্য করছেন ?
আসফাকুল্লা দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিয়েছিলেন—শুনুন, আমার কাছে রামপ্রসাদজীর সবচেয়ে বড়ো পরিচয়, উনি একজন খাঁটি বিপ্লবী। যে কোনো মুহূর্তে হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে উঠে জীবনের জয়গান গাইতে পারেন। উনি হিন্দু কী মুসলমান, সেটা আমার কাছে কোনো বড়ো কথা নয়। আমাদের দুজনেরই একই লক্ষ্য দেশের স্বাধীনতা। আপনারা বলেছেন, ওরা হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটা সম্পূর্ণ অসত্য কথা। আর যদি আপনাদের কথা মেনে নিই, তাহলে বলব, ইংরাজ প্রভুর থেকে হিন্দু প্রভু আমার কাছে বেশি বাঞ্ছনীয়। কারণ হিন্দুরা বিদেশি নয়, তারা আমারই স্বদেশবাসী।
ম্যাজিস্ট্রেট বুঝতে পারলেন, এভাবে আসফাকের মন বিষিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছেন, কোনো উৎকোচ বা প্রলোভনের কাছে যারা মাথা নত করে না, আসফাক হলেন সেই দলভুক্ত। বিচারের প্রহসনে আসফাকের ফাঁসির হুকুম হল। কারাগারে একদিন মা ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। ছেলে খুব রোগা হয়ে গেছেন দেখে মা খুব কাঁদতে শুরু করলেন।
আসফাক মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন—তুমি ভাবছ মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে আমি এমন রোগা হয়ে গেছি? মোটেই তা নয়। তোমার আসফাক কি কখনও ভয় পেতে পারে? এখানে খুব কম খাওয়া দাওয়া করছি, খাদ্যের সংযম আনছি। তাই আমার এমন চেহারা হয়েছে।
জেলে থাকার সময় আসফাকের চরিত্রে একটা পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। বেশিরভাগ সময় তিনি চোখ বুজে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে থাকতেন। তিনি দিব্য দৃষ্টিতে ভারতের ভবিষ্যত দেখার চেষ্টা করতেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে কৃষিপ্রধান ভারতবর্ষের উন্নতি করতে হলে কৃষকদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন করতেই হবে। জেলখানা থেকে এক বন্ধুকে একখানি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিতে বলা হয়েছে—
‘ভারতের স্বাধীনতা কৃষকদের ওপর নির্ভরশীল। তাই বলি ভাই, তাদের মধ্যে কাজ করুন। তাদের হতাশ করবেন না।‘
ফাঁসির আগের দিন ফৈজাবাদ জেলে এক বন্ধু এলেন দেখা করতে। আসফাককে দেখে ওই বন্ধু অবাক হয়ে গেলেন। কোথায় হারিয়ে গেছে মৃত্যুভয়। সমস্ত শরীর দিয়ে একটা তেজ নির্গত হচ্ছে।
_আসফাকুল্লা বললেন—কাল আমার বিয়ের দিন, জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমি তাই আজ খুশিতে অধীর। তুমি দুঃখ করছ? পরম প্রিয় বন্ধু হিসাবে আমাকে অভিনন্দন জানাও। আমি যেন হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করতে পরি।
এই হলেন আসফাকুল্লা, কোনো ভয় তাঁকে বিন্দুমাত্র চঞ্চল করতে পারেনি। অবশেষে এল সেই ভয়ংকর দিনটি। ১৯২৭ সালের ১৯শে ডিসেম্বর। উত্তর প্রদেশের কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলায় ফৈজাবাদ জেলে আসফাকুল্লা এবং তাঁর গুরু রামপ্রসাদ বিসমিল এই দুজনকে একসঙ্গে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হল। ফাঁসির দড়িকে চুম্বন করে আসফাক উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন—ভারত স্বাধীন হোক। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। ভারতীয়রা সুখে থাকুক। ভারতের বিপ্লবে অংশ গ্রহণের জন্য প্রথম মুসলমান হিসেবে ফাঁসিতে যেতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি।
খ্যাতনামা বিপ্লবী শহীদ আসফাকুল্লার আত্মবলিদানে উজ্জীবিত হয়ে ভারতের অসংখ্য মুসলিম যুবক স্বাধীনতার এই মহান যজ্ঞে আত্মাহুতি দিয়েছেন। তাঁদের কথা সোনার অক্ষরে লিখিত আছে।