পার্লারে মেনিকিয়োর করানোর পাশাপাশি প্রয়োজন ঘরোয়া যত্ন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, যাঁরা হাত বাড়ির কাজ করেন হাতের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন তাঁদের বেশি হয়। কারণ, রান্নাবান্না ও ঘরের কাজ থেকে হাতের ক্ষতি হয় অনেক বেশি।
প্রতিদিনের যত্নআত্তি
১। হাতে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না। এসির মধ্যে থাকলে কিছুক্ষণ পর পর অল্প ক্রিম হাতে মেখে নিন, চামড়া নরম থাকবে।
২। রান্নাঘরে কাজ করার সময় গ্লাভস পরুন।
৩। গ্লাভস পরার আগে হাতে ক্রিম বা তেল মেখে নেবেন। মনে রাখবেন, নামীদামি নয়, সাধারণ নারকেল বা সর্ষের তেলও একই রকম উপকারী।
৪। কাজকর্ম সেরে হাতে ঘষুন পাতিলেবু। নোংরা, কালচে ছোপ উঠে যাবে। হাত একইরকম উজ্জ্বল থাকবে।
৫। জীবাণু মারতে কয়েক ফোঁটা লবঙ্গ তেল যথেষ্ট। অবসর সময়ে কিছুক্ষণের মাসাজ করলেই নিশ্চিন্ত।
ঘরোয়া মেনিকিয়োর
১। ঈষদুষ্ণ জলে শ্যাম্পু মিশিয়ে হাত ডুবিয়ে রাখুন।
২। মিনিট দশেক পর ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন।
৩। পুরনো নেল পালিশ আগেই তুলে নেবেন
৪। নখ বড় থাকলে কেটে সুন্দর করে শেপ করুন।
৫। নখের ওপর নেল সফটনার বা নেল ক্লিনার লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন।
৬। নখ নরম হয়ে গেলে পুশার দিয়ে নখের ওপরের এনামেল ঘষে পরিষ্কার করুন।
৭। নখের ওপরের অর্ধেক চাঁদের মতো অংশ যেন ঠিকমতো পরিষ্কার হয়
৮। খেয়াল রাখবেন, নখের নীচে ও কোণে যেন ময়লা জমে না থাকে।
৯। কিউটিকল সিজার দিয়ে সাবধানে বাড়তি কিউটিকল কেটে নিন।
১০। হালকা গরম অলিভ অয়েল বা কোল্ড ক্রিম দিয়ে নখ, আঙুল মাসাজ করুন।
১১। শেষে নেল পালিশ লাগিয়ে নিন।
হাতের মাসাজ পদ্ধতি
১। হাতের তালু পিছনের দিকে ঘষে ঘষে মাসাজ করুন।
২। হাতের তালু ও প্রতিটি আঙুল একবার ডান দিকে আর একবার বাঁ দিকে ঘুরিয়ে মাসাজ করুন।
৩। হাতের তালুর পিছন দিকে মাসাজের সময় হালকা চাপ দিতে হব।
৪। মাসাজের সময় প্রতিটা আঙুল টেনে মাসাজ করুন।
৫। হাতের আঙুল তালুর দিকে ভাঁজ করে মাসাজ করতে হবে।
৬। কবজি মাসাজের সময় হালকা চাপ দিয়ে টিপে মাসাজ করতে হবে।
৭। হাতেও সার্কুলার মোশনে মাসাজ কর।
৮। মাসাজের সময় দু’আঙুল দিয়ে হাতের চামড়া টেনে দেবেন।
কনুইয়ের যত্নে
১। কনুইয়ে সহজেই কালচে ছোপ ধরে। প্রতিদিন স্নানের সময় নরম ব্রাশ দিয়ে কনুই ঘষে পরিষ্কার করুন। কালো দাগ বেশি হলে পাতিলেবুর রসের সঙ্গে নুন মিশিয়ে ঘষে ঘষে কনুইতে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ক্রিম লাগিয়ে নিন। ক‘দিন নিয়ম করে লাগালেই তফাত বুঝবেন।
২। কাঠবাদাম বাটার, সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে লাগালেও কালচে ছোপ কাটে।
৩। প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার লাগানোর অভ্যাস করুন।
৪। চামড়া অতিরিক্ত খসখসে মনে হলে ১ চামচ ধনেপাতার রস, ১টা জামরুল ও দু‘চারটে কালোজামের বীজ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে সপ্তাহে দু‘দিন লাগান। ২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন
ঘরোয়া পেডিকিয়োর
১। প্রথমে এসিটোন ভেজানো তুলো দিয়ে পুরনো নেল পালিশ তুলে ফেলুন।
২। এবার নেল কাটার দিয়ে নখ কেটে নিন।
৩। নখ কাটার পরে ফাইল দিয়ে শেপ ঠিক করার পালা।
৪। শেপ করার পর এমারি বোর্ড দিয়ে ঘষে নখ মসৃণ করে দিন।
৫। গামলায় গরমজল নিন।
৬। জল গনগনে গরম হলে পা ভাল পরিষ্কার হবে, এটা ঠিক নয়। উল্টে চামড়ার ক্ষতি হবে।
৭। গরমজলে লিকুইড সাবান বা শ্যাম্পু মিশিয়ে ৫ মিনিট পায়ের পাতা ডুবিয়ে রাখুন
মাসাজ সবসময় নীচ থেকে ওপরে হাত চালিয়ে করতে হবে।
৮। সবশেষে পছন্দসই নেল পালিশ লাগান
সুন্দর রাখার মাসাজ
১। রোজ রাতে একটু সময় বের করে মাসাজ করুন। সারাদিনের ক্লান্তি কাটবে, পা দু‘টিও সুন্দর থাকবে
২। মাসাজের সময় আঙুলের মাঝে মাঝে চাপ দিতে হবে
৩। পাতার সামনের অংশ টেপার সময় হাত সামান্য কাঁপিয়ে চাপ দিতে হবে
৪। পায়ের পাতায় ভাল করে ঘষতে হবে
৫। হাতের তালু দিয়ে গোড়ালি চেপে ধরে মাসাজ করতে হবে।
৬। পাঁচ মিনিট পরে পা ঘষার ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে নিন।
৭। গোড়ালি রুক্ষ ও খরখরে হলে পিউমিট স্টোন দিয়ে ঘষে মরামাস তুলে দিন।
৮। গামলা থেকে পা তুলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।
৯। অরেঞ্জস্টিকে তুলো জড়িয়ে নখের কোনা পরিষ্কার করুন।
১০। কিছুক্ষণ নখে কিউটিকল সফটনার বা অলিভ অয়েল মাখুন।
১১। কিউটিকল নরম হলে স্টিক দিয়ে ঠেলে পিছনে নখের দিকে সরিয়ে দিন।
১২। এই কিউটিকলের মরা চামড়া খুব সাবধানে কাঁচি দিয়ে কেটে দিন।
১৩। কিউটিকল নখের গার্ড হিসেবে কাজ করে, তাই খুব বেশি কেটে ফেলবেন না।
১৪। এবার সামান্য ক্রিম নিয়ে নখ ও পায়ের পাতায় ৫ মিনিট মাসাজ করুন।
বর্ষায় বিশেষ যত্ন
১। ওয়াটারপ্রুফ মেটিরিয়াল দিয়ে তৈরি জুতো পরার চেষ্টা করুন।
২। পা–ঢাকা জুতো বর্ষায় ভাল। নোংরা জল পায়ে লাগবে না।
৩। জলকাদা লাগলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পা ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
৪। অফিসে মেডিকেটেড সোপ বা সলিউশন রাখুন। অফিসে ঢুকে সেটা দিয়ে পা ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
৫। একজোড়া জুতো–মোজা অফিসের ক্যাবিনেটে রাখতে পারলে তো কথাই নেই!
৬। বর্ষার বড় সমস্যা ফাংগাল ইনফেকশন। সেইজন্য জুতো বা মোজা পরার সময় পায়ে অ্যান্টিফাংগাল পাউডার ছড়িয়ে নেবেন রাতে অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম মাখুন। সারাদিনের জমা জীবাণু নষ্ট হবে
৭। জুতো ভিজে থাকলে কখনওই সেটা পরবেন না। নাহলে পায়ে হাজা, চুলকানি হবেই হবে। ভেজা জুতো পরিষ্কার জলে ধুয়ে ভাল করে শুকিয়ে তবেই ব্যবহার করুন।
৮। নখের কিউটিকল কাটবেন না। বর্ষায় এটাই আপনার রক্ষাকবচ।
৯। বর্ষায় মরামাস জমার প্রবণতা বেড়ে যায়। স্নানের সময় গোড়ালি ঘষে মরামাস তুলে দিন
১০। স্নানের জলে নিম বা লবঙ্গ তেল মেশান। বর্ষার সংক্রমণ আটকাবে।
হাতের প্যাক
১। দু‘চামচ মধু, কেওলিন পাউডার, শসার রস মিশিয়ে মাখুন
২। ডিমের কুসুম ও ফটকিরি ভাল করে ফেটিয়ে নখ–কনুইতে লাগান। এই প্যাক ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
৩। ডিমের সাদা অংশ ও কেওলিন পাউডারের পেস্ট খুব ভাল
৪। ১ চামচ অলিভ অয়েল, ২ চামচ ময়দা ও ৪ চামচ দুধ মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন লাগান