শ্বেতি সারাতে
আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে রয়েছে শ্বেতি সারানোর উপায়।
চামড়ায় সাদা দাগ। ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে সারাশরীরে। একসময় এই রোগ নিয়ে ভয় থাকলেও বর্তমানে সারানো সম্ভব।
⸙ ত্বকের সবথেকে বাইরের ভাগটির নাম এপিডারমিস। এপিডারমিসের নীচের স্তরটি হল বেসাল স্তর। মেলানোসাইট কোষ এই স্তরেই থাকে। এদের কাজ হল ত্বকের রং তৈরি করা। রং তৈরির এই পদ্ধতিকে বলা হয় মেলানোজেনেসিস।
⸙ ত্বকের বাকি কোষ কেরাটিনোসাইটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৈরি করে এক–একটি ছোট ইউনিট। এইসব রং তৈরির কারখানায় হঠাৎ বিভিন্ন কারণে কাজ বন্ধ হতে পারে। নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে মেলানোসাইটের কাজ। ক্রমশ ত্বক রং হারাতে থাকে। একসময় ফ্যাকাশে হতে হতে ধবধবে দুধসাদা হয়ে যায়।
⸙ব্যথা, জ্বালা কিচ্ছুটি থাকে না। শুধু আয়তনে বাড়তে থাকে। এরই নাম শ্বেতি।
⸙জেনে রাখুন, শ্বেতি ছোঁয়াচে নয়
⸙আর শ্বেতির সঙ্গে কুষ্ঠরোগের কোনওরকম সম্পর্কই নেই
⸙পারিবারিক ইতিহাস থাকলেই শ্বেতি হতে পারে— এই ধারণাও ঠিক নয়
⸙শ্বেতি মানেই সাদা দাগ কিন্তু সাদা দাগ মানেই কিন্তু শ্বেতি নয়
⸙শরীরের কোনও অংশ পুড়ে গিয়েও সাদা হতে পারে, সেটিকে বলা হয় পোস্টবার্ন লিউকোডার্মা
⸙ঠোটে জ্বর ফোসকা হলেও সাদা দাগ হতে পারে
⸙কিছু জড়ুল ফ্যাকাশে এবং সাদা হয় কিন্তু সেগুলো শ্বেতি নয়
⸙শ্বেতি ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে মিল দেখা যায়
⸙ডান হাতের কনুইয়ে হলে বাঁ হাতের কনুইতে হতে পারে, একদিকের হাঁটুতে হলে অন্যদিকেরটায়।
⸙শরীরের সব জায়গাতেই এই রোগ হতে পারে, এমনকী গোপনাঙ্গেও।
⸙শ্বেতি হওয়া ত্বকের লোমও সাদা হয়ে যায়। এটিকে বলা হয় লিউকোট্রিকিয়া বা অ্যাক্রোমোটিকিয়া
⸙লোমের গোড়ায় থাকা হেয়ার ফলিকল মেলোনোসাইট তৈরির কারখানা। সেইজন্য লোম সাদা হয়ে গেলে বুঝতে হবে গোড়াতেই গলদ। সেইজন্য শ্বেতির দাগে সাদা লোম খুব একটা ভাল সংকেত নয়
⸙শ্বেতির শুরুটা হয় খুব আস্তে। কোনওরকম সমস্যা না করে শুধু চামড়ায় সাদা ছোপ ফুটে উঠতে শুরু করে
⸙প্রথমে ভীষণ হালকা, তার পরে ক্রমশ গাঢ় হতে থাকে
⸙অনেকসময় কেটে গেলে শুকিয়ে যাওয়ার পর হালকা বাদামি রঙের দাগ হয়। কিন্তু এই দাগ বাদামির বদলে সাদা হলেই সাবধান
⸙মানসিক চাপ, আঘাত থেকেও শ্বেতির অবনতি হতে পারে
⸙গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পর সাদা দাগ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে
⸙শ্বেতি দু‘ধরনের— সেগমেন্টাল ও নন– সেগমেন্টাল
⸙প্রথম ধরন শরীরের নির্দিষ্ট সেগমেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে
⸙তবে সবসময় এই সীমাবদ্ধতা বজায় থাকবে এর কোনও যুক্তি নেই। যে–কোনও মুহূর্তে সেটা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে
⸙নন–সেগমেন্টাল শরীরজুড়ে হতে পারে। এটিকেই বলা হয় ভিটিলিগো ভালগারিস
⸙এরই একটা ধরন হল অ্যাক্রো– অরিফিসিয়াল। এক্ষেত্রে হাত ও পায়ের আঙুল, তালু, ঠোট, যৌনাঙ্গ ও পায়ুর আশপাশে হতে পারে
⸙শ্বেতির আর একটি ধরন হল লিপ–টিপ। ঠোঁট আর আঙুলের ডগায় হয় এই ধরনের শ্বেতি
⸙এছাড়া হয় ফোকাল শ্বেতি
⸙শ্বেতির সঙ্গে লড়াই করা সহজ হয়েছে সোরালেন–এর ঠিকঠাক প্রয়োগের পর থেকে
⸙ট্রাই মিথক্সি সোরালেন বা ট্রায়োক্সালেন আর ৮+ মিথক্সি সোরালেন— এই দুটো ওষুধই ব্যবহার করা হয়
⸙আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ও সোরালেন একসঙ্গে ব্যবহার করে শ্বেতির চিকিৎসা করা হয়
⸙অর্থাৎ, Psoralen+ Ultraviolet A মিলিয়ে এই PUVA। এটি শ্বেতির চিকিৎসায় নতুন দিক এনেছে
⸙প্রাচীন ভারতে ব্যবহৃত ‘ভাসূচিকা’ ও মিশরের ‘অ্যাম্মি মেজাস‘ আর প্রাচীন চিনা পুঁথিতে লেখা ‘পু–কু–সি’ আসলে একজাতীয় গুল্ম প্রকৃতির উদ্ভিদ। এর ভিতরেই রয়েছে সোরালেনের বীজ
⸙সেইসঙ্গে বহুকাল আগেই চিকিৎসকরা জানতে পেরেছেন শ্বেতিতে সূর্যালোকের শুভ প্রভাব
⸙এখনও সেই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয় শ্বেতি সারাতে
⸙এছাড়াও ক্লোরোকুইন, ফিনাইল অ্যালানিন, খেলিন, লিভামিসোল, ফেনোথায়াজিন, গ্রিসিয়োফুলভিন, ক্লোফজিমিন ও ড্যাপসন ওষুধ শ্বেতির চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়
⸙পরবর্তী সময় শ্বেতির চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি আসে NB-UVB (311nm) বা ন্যারোব্যান্ড Ultraviolet-B (311nm) রশ্মির সুচিন্তিত ও সুনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগে
এক্ষেত্রে কোনওরকম ওষুধ খেতে হয় না
⸙প্রতি সপ্তাহে দু‘তিনবার রশ্মি প্রয়োগ করা হয় নির্দিষ্ট মাত্রায়
⸙পাঁচ বছরের শিশু থেকে গর্ভবতী মহিলা যে–কেউ এই চিকিৎসা নিতে পারেন
⸙লোমের গোড়ায় থাকা ফলিকল শ্বেতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আগেই বলা হয়েছে। সেইজন্য শরীরের যেখানে লোম রয়েছে যেমন— মুখ, গাল, পা, ঊরু, বুক, পেট, হাতের নীচের অংশে শ্বেতি হলে চিকিৎসায় ফল পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি
⸙যে–অংশে রোদ লাগে, সেখানে অন্যান্য জায়গার তুলনায় রং ফেরে অনেক দ্রুত
⸙তুলনামূলক ঢাকা অংশের রং ফেরানো কঠিন
⸙চিকিৎসায় প্রথমে রং ফেরে লোমের গোড়ার চারদিকে। একে বলা হয় পেরিফলিকুলার পিগমেন্টেশন
⸙মূলত ঠোঁট, হাত, পায়ের নীচে, লিঙ্গের অগ্রভাগ— অর্থাৎ, যেসব জায়গায় কোনও লোম নেই, সেখানকার শ্বেতি সারাতে চায় না
⸙এক্ষেত্রে হতাশাগ্রস্ত হয়ে মাঝপথে চিকিৎসা ছাড়া উচিত নয়
⸙চিকিৎসা বন্ধ করে দিলে রোগ তো বাড়বেই, অনেকসময় হাতুড়ে মলম, লোশন লাগিয়ে ত্বক পুড়েও যায়। সেক্ষেত্রে সমস্যা আরও বাড়ে
⸙মনে রাখবেন, শ্বেতির সঙ্গে লিভারের অসুখের কোনও সম্পর্ক নেই
⸙খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ নেই
⸙শ্বেতি আক্রান্ত হলে নির্দ্বিধায় টক, ঝাল, মিষ্টি খাওয়া চলে
⸙শ্বেতিতে ভিটামিন সি খাওয়া বারণ নয়
⸙দুধও খাওয়া যায়
⸙বাবা–মায়ের শ্বেতি থাকলে ছেলে–মেয়ের হয় না
⸙বেশিরভাগ সময় ওষুধেই কাজ হয়
⸙প্রয়োজনে রয়েছে আধুনিক শল্যচিকিৎসাও
⸙অনেকসময় দেখা যায় একটা জায়গায় শ্বেতি হয়েছে কিন্তু সেটা বাড়ছেও না আবার কমছেও না। এটিকে বলা হয় স্থিতিশীল শ্বেতি
⸙এর মানে রং তৈরির কারখানায় জোগানের অভাব পড়েছে
⸙এই অবস্থায় বাইরে থেকে আমদানি করা ছাড়া উপায় থাকে না
⸙বাইরে থেকে ত্বকে রং পৌঁছনোর এই পদ্ধতিকে বলা হয় পাঞ্চ গ্রাফটিং
⸙এটি কোনওরকম প্লাস্টিক সার্জারি নয় এমনকী কসমেটিক সার্জারির মধ্যেও এটিকে ফেলা যায় না
⸙ত্বকের এমন অসুখ যা ওষুধে সারছে না সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এই বিশেষ শল্যচিকিৎসা
⸙এছাড়া বেশ কিছু শল্যপদ্ধতি যেমন— ডার্মাব্রেশন, মাইক্রোপিগমেন্টেশন, ব্লিস্টার গ্রাফটিং, প্লিট থিকনেস, স্কিন গ্রাফটিং, কালচার ও ননকালচার মেলানোসাইট গ্রাফটিং করা হয় শ্বেতি সারাতে