বদল আনুন ডায়েটে
যত্ন ও ঠিকমতো খাওয়া–দাওয়া। সুন্দর ত্বকের রহস্য এখানেই।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট
অক্সিডেশনের ফলে শরীরে প্রতিনিয়ত ক্ষয় চলতে থাকে। দেহকোষ নষ্ট হয়। এই ক্ষয় বেশি হলে শরীরের নানারকম ক্ষতি হয়, অসুখের উপদ্রব বাড়ে। ত্বক নির্জীব হয়ে পড়ে। দেখা দেয় বলিরেখা। আমাদের হাতের কাছে এমন কিছু খাবার আছে যেগুলোর মধ্যে থাকা উপাদান যা এই অক্সিডেশন পদ্ধতিকে বাড়তে দেয় না। সেগুলোকেই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বলে।
ফ্রি–র্যাডিক্যাল
ফ্রি–র্যাডিক্যাল এমন জিনিস যা অক্সিডেশনকে বাড়িয়ে দেয়। লাগামছাড়া অক্সিডেশন ত্বকের তারুণ্যে প্রভাব ফেলে। প্রধানত বিভিন্ন ধরনের খাবারের মাধ্যমে এটি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
কোলাজেন
ত্বকের কোষ গঠনকারী প্রধান প্রোটিনজাত উপাদান।
সেবাম
এটি একধরনের ঘন তরল। সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হয়। সেবামের মূল উপাদান হল ফ্যাট, কোলাজেন আর সেলুলার ডেব্রিস।
֎ খাওয়া–দাওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম, নাহলে চোখে–মুখে ছাপ পড়বেই।
֎ নিয়ম করে ব্যায়াম করুন।
֎ প্রতিদিন কিছুটা সময় খোলামেলা জায়গায় কাটান। ত্বকের স্বাস্থ্য ফেরাতে টাটকা হাওয়ার জুড়ি মেলা ভার।
֎ এমন খাবার খেতে হবে যার মধ্যে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও প্রোটিন পর্যাপ্ত রয়েছে।
֎ সবজি আর ফল খাওয়া মাস্ট।
֎ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ত্বকের বন্ধু। এটি ফ্রি–র্যাডিকল তৈরি কমিয়ে ত্বকের বয়স ধরে রাখে। সেইজন্য খাবারে যত বেশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকবে ততই মঙ্গল।
֎ ত্বকের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান কোলাজেন। ডিমে প্রোটিনের সঙ্গে থাকে ভরপুর কোলাজেন। সেইজন্য রোজকার ডায়েটে এটি রাখতেই হবে।
֎ ত্বকের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান সিলেনিয়াম। ডিমের কুসুমে এটি পাওয়া যায়।
֎ ডিমে এগুলোর সঙ্গে রয়েছে জিংক। ত্বকের জন্য সেটিও উপকারী।
֎ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক সুন্দর ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু শরীরে নিজে থেকেই এটি তৈরি হতে পারে না। সেইজন্য এমন খাবার খেতে হবে যাতে এটি রয়েছে। যেমন, ইলিশ মাছ।
֎ এছাড়া যে–কোনও ধরনের সি–ফুডে রয়েছে ভরপুর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
֎ এই ফ্যাটি অ্যাসিড কোষে পুষ্টি জোগায় এবং কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ত্বকের ক্ষেত্রে।
֎ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়, কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে, ত্বক চকচকে ও সজীব থাকে।
֎ লাল বেলপেপার খাওয়া খুব ভাল। এটিতে রয়েছে ভিটামিন সি। এটিও কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে এবং চামড়া ঝুলে যাওয়া আটকায়।
֎ এছাড়াও বেলপেপার ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
֎ আমে রয়েছে কেরাটিনয়েড। এছাড়া আম কোলাজেন তৈরিতেও সাহায্য করে। এগুলো ত্বক কোমল করে এবং নির্জীব ত্বকের জেল্লা ফিরিয়ে আনে।
֎ অ্যাভোকাডোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। সকালে স্মুদিতে বা স্প্রেড বানিয়ে খেতে পারলে খুব ভাল। এটিও শরীরকে ভিতর থেকে আর্দ্রতা জোগায়, নরম রাখে।
֎ পালং শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। বলাই বাহুল্য, এটি ত্বকের জন্য কতটা উপকারী।
֎ হলুদে আছে কিউকুমিন। কিউকুমিন অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি, ত্বকের বন্ধু।তবে, হলুদ খাওয়ার আগে জেনে নিন আপনার ওজন–বয়স–উচ্চতা অনুযায়ী কতটা কিউকুমিন প্রয়োজন।
֎ হলুদ দিয়ে তৈরি সাপ্লিমেন্ট খেলেও কিউকুমিন পাওয়া সম্ভব।
֎ কাচাহলুদের সঙ্গে একটু গোলমরিচ খাওয়া প্রয়োজন। কারণ, পেপারিন কিউকুমিন অ্যাবজর্ব করতে সাহায্য করে।
֎ পাশাপাশি হলুদ অ্যান্টিবায়োটিক। মাখলে শরীর জীবাণুমুক্ত রাখে, উজ্জ্বলতা বাড়ায়
֎ হলুদে রয়েছে অফুরন্ত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও।
֎ পাশাপাশি এতে রয়েছে ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, তামা, জিংকের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ।
֎ মনে রাখতে হবে, পেট ঠিক থাকলে তবেই ত্বক ভাল থাকবে। নাহলে যতই যত্ন নিন সব নষ্ট। সেইজন্য পেটে সয় এমন খাবার খান। প্রয়োজনে পরামর্শ নিন।
֎ টিন–এজে মেয়েদের শরীরে লোহার ঘাটতি দেখা যায়। অল্পেতেই ক্লান্তি, মাথাঘোরা এর লক্ষণ। এই সময় আয়রন রয়েছে এমন খাবার খাওয়া দরকার। যেমন ডিমের কুসুম, মুরগির মাংস, পালং শাক, ডুমুর, থোড়, মোচা, কাঁচকলা, মাছ, বিনস, পাস্তা, কিশমিশ, ছোলা, চকলেট, কোকো, কুমড়োবীজ, ব্রকোলি, আলু, গাজর, সয়াবিন ইত্যাদি।
֎ সচারচর বাজারে যে–ধরনের সবজি ও মরশুমি ফল পাওয়া যায় সেগুলো খান। এমন ভাবার দরকার নেই দামি খাবারই পুষ্টিকর।
֎ রসুন খুব উপকারী। তবে কাঁচা রসুন। খেতে হবে টাটকা সঙ্গেসঙ্গে খোসা ছাড়িয়ে।
֎ ডায়াবিটিস থাকলে ডায়েট প্ল্যান হবে আলাদা। সেক্ষেত্রে কার্বহাইড্রেট কাউন্টিং করে চার্ট বানানো হয়। খাবারের পরিমাণ এমন রাখা হয় যাতে শরীর ঠিক থাকে, ত্বকও সুন্দর হয়।
֎ ডার্ক চকলেটে থাকে ফ্লাবোনয়েড। এটি এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ত্বক সুরক্ষিত রাখে। তবে, কেনার সময় দেখে নেবেন তারমধ্যে যেন অন্তত ৭০% কোকো থাকে।
֎ এছাড়া গ্রিন টিতেও রয়েছে ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। রোজকার ডায়েটে যোগ করুন এটিও।
֎ ব্রকোলিতে পাবেন লিগন্যানস। এটি একধরনের অ্যান্টি–এজিং এজেন্ট, ক্যানসার প্রতিরোধকও।
֎ শসা শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে। লো–ক্যালরি ফুড, তাই ওজন বাড়ায় না। রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।
֎ স্ট্রবেরি হোক বা কালোজাম, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভর্তি। আছে আয়রনও।
֎ আপেলে পাবেন ভিটামিন সি। এই ভিটামিনটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। সেইসঙ্গে আছে ফাইবার যা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। পেট পরিষ্কার মানেই সুন্দর ত্বক।
֎ বিনসে রয়েছে প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের সুষম সহাবস্থান। সেল ড্যামেজ আটকায়, মাসল তৈরিতে সাহায্যও করে। নিরামিষাশীদের জন্য প্রোটিনের উৎস
֎ বেটা গ্লুক্যান অ্যান্টি–এজিং। ওটস–এ এটি পাওয়া যায়। ওটস কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
֎ বেদানায় পাবেন ভরপুর ভিটামিন সি সঙ্গে আয়রনও। তবে রস নয়, খান বীজসমেত গোটা ফল।
֎ ভিটামিন সি–এর আর একটি উৎস কমলালেবু। ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। বাড়ায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। আর আছে ফাইবার।
֎ কুমড়োয় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। কুমড়োর বীজ থেকে পাওয়া যায় ফ্যাট ও মিনারেল। তাই সেগুলো একদমই ফেলবেন না।
֎ তরমুজে পাবেন একাধিক ভিটামিন, সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আর সিট্রুলিন যা শরীর থেকে টক্সিন বের করতে এবং মেটাবলিজম রেট ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
֎ টোম্যাটো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের রাজা। তবে টোম্যাটো খুব হালকা রান্না করে খেতে হবে। সবথেকে ভাল কাঁচা খাওয়া। তবে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে কিন্তু বীজ বাদ দিয়ে টোম্যাটো খাওয়া যায় উচিত।
֎ মধুর মধ্যে থাকা শর্করা রক্ত পরিষ্কার করে। ফলে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। এছাড়া মধু রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়
֎ এগুলো ছাড়াও এমন অনেক খাবার রয়েছে যা ত্বক এবং চুলের বুড়িয়ে যাওয়া আটকায়। যেমন ধরুন, টকদই, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের দানাশস্য, অলিভ অয়েল, সূর্যমুখী তেল, গোলমরিচ ও লঙ্কা, গাজর, মিষ্টি আলু, আম, পেঁপে, পেয়ারা, পার্সলে, পাতিলেবু, আঙুর, আনারস, রঙিন সবজি, চিজ ও পনির। তিসি, আখরোট, সয়াবিন ও বাঁধাকপিতে পাবেন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
প্রয়োজন পর্যাপ্ত জল
֎ ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতেও জলের জুড়ি মেলা ভার। শরীরের সবথেকে বড় অঙ্গ চামড়া। আকৃতিতে বড়, তাই এর পুষ্টির প্রয়োজনও সবথেকে বেশি। জলই পারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকে সব জায়গায় সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দিতে।
֎ তবে জল তেষ্টা পেলেই জল খাব, এটা একদম ঠিক নয়। এই অভ্যাস ছাড়তে হবে। কারণ, তেষ্টা পাওয়া মানে ততক্ষণে শরীরের ভিতরে জলের অভাব তৈরি হয়ে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।সেইজন্য সারাদিন অল্প অল্প করে জল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন
֎ সেবাম ন্যাচরাল লুব্রিকেটিং অয়েল। এটি ত্বক তেলতেলে ও নরম রাখতে সাহায্য করে। জল সেবাম তৈরি ও ক্ষরণের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
֎ দূষণের ফলে শরীরে নানা ক্ষতিকর পদার্থ জমা হয়। সেগুলো বেরিয়ে না গেলে নানারকম রোগ বাসা বাঁধে। জল এই নোংরা শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে।
֎ ভীষণ ঘাম হলে বা সারাদিন রোদে ঘোরাঘুরি করে কাজ করলে একটু বেশি জল খাওয়া দরকার।
֎ ওজন অনুযায়ী প্রত্যেকের জলের চাহিদা আলাদা। সেই ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারে ডায়াটেশিয়ান। তবে ৩৫ থেকে ৫০ মিলিলিটার জল প্রতি কেজিতে প্রয়োজন হয়।
֎ চা, কফি, ফলের রসের মতো তরলকে এই হিসেবে ধরবেন না
֎ নির্দিষ্ট ডায়েট প্ল্যান, ক্রনিক ডিজিজ বা মেডিকেশনে থাকলে জল খাওয়ার পরিমাণ হবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।